Posts

Showing posts from January, 2022

ভালোবাসার শুরু

  - হ্যালো, কেমন আছুইন? এই 'কেমন আছুইন' শুনেই কেমন যেন বিতৃষ্ণা চলে আসলো মানুষটার প্রতি। আমার সুন্দর ছেলেই পছন্দ কিন্তু তার সাথে চাই ভরাট গলা আর সুন্দর বাচনভঙ্গি। নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে। একটা মানুষ দেখতে এত সুন্দর আর তার কথায় এমন আঞ্চলিকতা, মানতেই কষ্ট হচ্ছে। আবার ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,  - হ্যালো, হুনতাছুইন না?  - হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি।  - তাইলে কইয়া লাইন, কেমন আছুইন? - আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?  - আমি তো বালাই আচি। দুপুরে কি দিয়া খাইছুইন? না কি এহনো খাইছুইন না? - না, খাই নি। খাব একটু পর। - ও মায়া-মায়া গো, কি কইন, বেলা বাজে পরায় সাড়ে তিনডা, অহনো খাইছুইন না? - খেয়ে নিব। আপনি খেয়েছেন? - হুম, আমি খাইছি। কি দিয়া খাইবাইন? - জানি না। রান্নাঘরে যাই নি। আম্মু কি রান্না করেছে জানি না। আপনি কি দিয়ে খেয়েছেন? - ভাত, চ্যাপা ভর্তা, মুরগীর সালুন আর মাশের ডাইল দিয়া। আফনেরে দেইখা তো বাচ্চা পোলাপান মনে অয় না, তয় যে মায়ে কি রানছে তাও কইতে পারলেন না। - পিঞ্চ কেটে কথা বললেন? রান্নাঘরে যাই নি বলে ঘরের কাজে হাত দেই না ব্যাপারটা এমন না। আমি ঘর গুছিয়েছি। - ও, তাই কইন। আমি আবার ভাইব

SHE HAS WRITTEN HER DEATH SENTENCES

 ডাক্তার হবারও অনেক ঝামেলা। তবে আজ অনেকদিন পর এক্টু সময় বের করে সৌরভকে নিয়ে বেরিয়েছে নিলিমা। আপদত নদীর পাড়েই খানিক চিনা বাদাম চিবিয়ে নেয়া যাক। বেশ হাওয়া দিচ্ছে আজ চারপাশে। লাশ কাটা ছেড়া করা আর বিভিন্ন রোগে নুইয়ে পড়া রুগিদের দেখতে দেখতে অনেকটা হাপিয়েই উঠেছিলো নিলিমা। তবে আজ খানিকটা সস্তি।পাশে সৌরভ বসা, মাথার উপর খোলা আকাশ আর নদীর জলে পা ডুবিয়ে রেখে দূরের ছইওয়ালা নৌকা দেখা.....একজন সাধারন প্রেমিকা হিসেবে আর কি চাই ? -“নীলিমা”......সৌরভের কন্ঠ শুনে আর চোখে নীলিমা তাকালো। -“হুম...বল।“ -“আমি যদি কখনো তোকে ছেড়ে চলে যাই। তুই কি করবি?” হঠাত সৌরভের এমন অবান্তর প্রশ্নে নিলিমা খানিক ভুরু কুচকালেও তেমন একটা আমলে নিলো না। তবু উদ্ভ্রান্তের মত উত্তর দিলো – -“তুই জীবনে আসার আগে যেমন ছিলাম সেরকম থাকবো...আমি সাধারণ মেয়ে ।কারো প্রতি অত ক্ষোভ পুষে রাখি না।“ সৌরভ স্মিত হাসি হেসে বলল, -“তোর মত আরও একজনও এই কথা বলেছিলো। মেয়েরা অত সহজ জিনিস না। ধোকাবাজদের অত সহজে ছেড়ে দেয় না। সেটা মেয়েরা নিজেরাও জানে না। আচ্ছা তোকে একজনের গল্প বলি। শোন......।“ -“কার গল্প?” -“নিলুফার ইয়াসমিন। ডা.নিলুফার ইয়াসমিন...তুই ওনাকে সম্

অন্ধকার পেরিয়ে

লন্ডনে পড়তে গিয়ে জনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে ছিলো আমার সহপাঠী। স্থানীয় ছেলে। পড়ার চাইতেও তার ঝোঁক ছিলো বেশি শিকারের প্রতি। তার বাবার কাছ থেকে এ ঝোঁক সে পেয়েছে। তার বাবা ছিলো নাম করা শিকারী। বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গলে শিকারে গিয়ে সেও শিকারের নেশায় পড়ে যায়। মাত্র বিশ বছর বয়সে সে প্রথম সিংহ শিকার করে। সে ছিলো এক ভয়াবহ ঘটনা। অবশ্য জনের জন্য নয়।   জন বলেছিলো,"হায়দার ঘটনাটি ঘটেছিলো মধ্য আফ্রিকার এক জঙ্গলে। আমি আর সিংহ মুখোমুখি। মাঝখানে পনের গজের মতো দূরত্ব। আমার দলের সঙ্গীরা পেছনে। সেদিন বাবাও ছিলো সঙ্গে। বাবা বললো,'জন পারবে তুমি? না পারলে পিছিয়ে এসো।' আমি শীতল কণ্ঠে বাবাকে বললাম,'তুমি ভুলে যাচ্ছো কেনো, আমি যে তোমার ছেলে। পিছিয়ে যাওয়া আমাদের রক্তে নেই। বাবা বললো,'সাবাস বেটা।' আমি স্থির চেয়ে আছি সিংহটার দিকে। সিংহটা চেয়ে আছে আমার দিকে। ওর শরীরের ভঙ্গি দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম যে কোনো সময় ও আমার দিকে দৌড়াতে শুরু করবে। আমার হাতে হান্টিং রাইফেল। আমি ধীরে রাইফেলটি দু হাতে ধরে ওটার দিকে তাক করলাম। আমার পরিকল্পনা হলো, ওটা যখন আমার দিকে তেড়ে আসবে তখন আমি গুলি ছুঁড়বো। আমি

দূর পাহাড়ের সন্ধানে

 এ্যাই পিটু!ওঠ না জলদি।দেখ বাইরে দেখ কি সুন্দর জোঁছনা! পিটু ছোখ মলতে মলতে ওঠে পড়লো ঘুম থেকে।ইদানীং বাবার পাগলামি বেশ বেড়েছে।রাত বিরাতে ছাদে ঘোরাফেরা করেন। এখন মধ্যরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছেন। পিটুর সাথে এই জোঁছনার আলোতে কফি খাবেন।ব্রাজিলিয়ান কফি।তারপর পিটুকে গল্প শোনাবেন।যদিও পিটু খুব বিরক্ত।কিন্তু পিটু জানে বাবার পাগলামি আর ভালোবাসার কাছে একটু পরই তার বিরক্তি হার মানবে। একবার হয়েছে কি!পিটুর বেশ সর্দি হলো।বুকে কফ বসে গিয়ে গড় গড় করে আওয়াজ করছে।পিটুর মা বেশ চিন্তিত।ইতিমধ্যে কয়েকবার ডাক্তার এসে চেকআপ করে গেছেন।কিন্তু পিটুর বাবা নির্বিকার।পিটুর মা যখন বকাঝকা শুরু করলেন তখন পিটুর বাবা মবিন সাহেব হ্যাঁচকা টানে পিটুকে বিছানা থেকে তুললেন।তারপর কাধে করে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।পেছনে পিটুর মা রেহানা বেগম চিল্লাচিল্লি করছেন।সেদিকে মবিন সাহেবের কোনো খেয়াল নেই। বাপ বেটা মিলে সাত মাইল হাটলেন।পিটু এখন বেশ ক্লান্ত।সে বললো,বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি ভেবেছি তুমি আমাকে কাধে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছো!কিন্তু তোমার সাথে বের হয়ে তো জানটাই যাবে বোধয়!!হাটতে হাটতে প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছে। মবিন সাহেব বললেন,ধূর ব্যাটা।ত

আনন্দাশ্রু

 মিতুর মামাতো বোন শারমীন এসে মিতুকে বলল, "আপা আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, তোকে যে ছেলে আজ দেখতে এসেছিল,  তাঁর মাথায় টাক আছে। চুলগুলো আসল না, নকল চুল লাগিয়ে এসেছে।" মিতু তখনও আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। নিজেকে হঠাৎ সুন্দর মনে হওয়াতে মনে মনে খুশি সে। শারমীন তাকে সাজিয়ে দিয়েছে। মেকাপের কারণে বুঝাই যাচ্ছে না যে, ফর্সা এই আবরণের নিচে শ্যামবর্ণ একটি চেহারা লুকিয়ে আছে। মিতুর নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। মানুষ অপরাধ করলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। সে কী অপরাধ করেছে? নিজের অপরাধ সম্পর্কে মিতু কিছুই জানে না। শারমীন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেছে।  গতকাল যখন মিতুর মামী তার মামার সাথে কথা বলছিল, মিতু আড়াল থেকে সব শুনেছে। মিতুর মামী জোর দিয়ে বলছে, "একটা ছেলে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারলে বিয়ে করেনি। বয়স তো আর তেমন বেশি না। ত্রিশ বত্রিশ বয়স ছেলেদের জন্য কিছুই না। তুমি কিন্তু এবার অমত করতে পারবে না।" মিতুর মামা বলেছিল, "আগে তারা আসুক। ছেলে দেখি, কথা বার্তা বলি। না দেখে তো আর আমার ভাগনিকে যার সাথে খুশি বিয়ে দিতে পারি না।" মিতু তখন সেখান থেকে চলে এসেছিল। তাঁর

বিষণ্ণ অবনী

 মৃত্তিকার কাফনে মোড়া নিথর দেহের খাটিয়ার সামনে বসে স্তব্ধ হয়ে আছেন শিরিনা জাহান। মেয়েটা যে আর নেই এই কঠিন বাস্তবতা গ্রহণ করতে পেরেছেন নাকি পারেননি তা দর্শকদের বোধগম্য হচ্ছে না। তাকে ডেকেও কেউ সাড়া পাচ্ছেন না। মেয়ে হারানোর শোকে হয়ত তার বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। তিনি তাকিয়ে রয়েছেন মেয়ের দিকে নির্নিমেষ, চোখের পলকও পড়ছে না।  " আপা আপনে এবার সরেন, মাইয়ার লাশ তো পরে শক্ত হইয়া যাইবো। " মহল্লার জনৈক মহিলা উক্তিটি করলেন। " এই কে বলেছে আপনাকে আমার মেয়ে নেই? কেউ বলেছে? আমার মেয়ে ঘুমাচ্ছে আপনারা বেরিয়ে যান। " মুহূর্তেই রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে চিৎকার করে উঠলেন শিরিনা। মাত্রাতিরিক্ত রাগে তার শরীর কাঁপছে। স্বামী হাবিব সাহেব এগিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে ধরতে চাইলেন, কিন্তু শিরিনা এক ধাক্কায় তাকে সরিয়ে দিলেন। চিৎকার করে বললেন, " তুই ছুবি না আমাকে? তোর জন্য আমার মেয়েটা আজকে নেই। তুই অমানুষ। " এটুকু বলে কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের লাশের সামনে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সবাই নিশ্চুপ হয়ে একজন সন্তানহারা মায়ের হৃদয়বিদারী আর্তচিৎকারের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে রইল। অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে অলক্ষ্যে, অগোচরে ফোটা কয়েক অশ

অদ্ভুত এক রাত

১১ঃ০০ টা।শীতের রাত। কালো রাতের আঁধারে সাদা কুয়াশায় মরিচা লাইটের আলো আবছা আবছা লাগছে।লাইটের ঝিলমিল আলো সাদা কুয়াশার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে।অদ্ভুত এক প্রকৃতি এবং তার মাঝে মরিচা লাইটের আলোর এক অদ্ভুত খেলা।শীতের হীম বাতাস বইছে। হাড় কাঁপানো শীতের বাতাস। বাতাসে লাইটগুলো নড়ছে আর তার আলোর ছায়া রাস্তার বুকে সাপের চলে যাওয়ার মতো এঁকে বেঁকে খেলছে। এই প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝে মুহিব শরীরের একটা চাদর পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাইটের আলোর খেলা দেখছে।সারা বাড়ী মরিচা লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়ির ছাদে স্পিকারের তীব্র গানের শব্দ মুহিবের কানে এসে লাগছে। আজ শাহানার গায়ে হলুদ।বাড়ীর নিচে বরপক্ষের লোকজনের গাড়ীর মেলা। বাড়ীর ভেতর থেকে মানুষদের আনন্দ আর হই হল্লোড়ের শব্দ।বরপক্ষের লোকজন মনে হয় এতক্ষণে শাহানার গায়ে হলুদ দিয়ে আনন্দ উৎসবে যোগ দিয়েছে। মুহিবের খুব ইচ্ছা করছে,বাড়ীর ছাদে উঠে শাহানাকে একটু দেখতে। কিন্তুু সেটা সম্ভব নয়। তাই মুহিব রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাহানার বাড়ীর ছাদে পর্দার অন্তরালে থাকা মানুষদের ছায়া দেখছে। আজ শাহানা কি পড়েছে? নিশ্চয়ই হলুদ কোনো জমকালো রংয়ের শাড়ী!মাথায় আর গলায় দামী কোনো ফুলের তৈরী মালা! দুই হাতে জু

মাটির ব্যাংক

 লিজা আর জাকির এর ছোট্ট সংসার। এক ছেলে এক মেয়ে।ছেলের বয়স সাত বছর আর মেয়ের তিন বছর। জাকিরের খুব ইচ্ছা বাচ্চাদের ভালো স্কুলে পড়াবে। ছেলেদের জন্য মতিঝিল আইডিয়াল তার খুব পছন্দ।এখন লটারির মাধ্যমে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়।তাই সাত বছর হতেই জাকির ভর্তি ফরম নিয়ে আসলো।আর আলহামদুলিল্লাহ জাকির এর ছেলে চান্স পেলো।প্রায় পাঁচ বছর পর লিজা জাকির দম্পতি আবার ঢাকায় এসে বাসা ভাড়া নিলো।            একটু পরিচয় করিয়ে দেই এখন।লিজা আর জাকির দুজনই ছোট বেলা থেকে ঢাকায় বড় হয়েছে। তাদের দুজনের পরিবারের প্রায় সব আত্মীয়রাই ঢাকায় থাকে।দুজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের। লিজা দেখেছে তার বাবা খুব হিসেব করে চলতো।তবে মোটামুটি সচ্ছল ভাবেই বড় হয়েছে। বিয়ের আগ পর্যন্ত সংসার এর এসব হিসাব এসবের কিছুই বুঝতো না।দুজন ঢাকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্ৰাজুয়েশন করেছে।লিজা ইচ্ছা থাকলেও সংসার সামলে চাকরি করার প্রয়োজন অনুভব করেনি।আসলে দরকার হয়নি।আর জাকির একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে।যা বেতন পেতো তা দিয়ে তাদের সুন্দর ভাবে চলে যেতো। চাকরির জন্যই লিজা জাকির পাঁচ বছর ধরে নারায়নগঞ্জ ছিলো।তবে পরিকল্পনা ছিলো যে ছ

আহাম্মক

 যাত্রাবাড়ী থেকে লোকাল বাসে উঠে উত্তরা যাচ্ছি। একটা মেয়েকে বেশ পছন্দ হয়েছে তাই মোবাইল বের করে চুরি করে দু একটা ছবি তোলার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু একটু পরে তার পাশের সিটে একটা মহিলা উঠে বসাতেই আমি আর তাকে ভালো করে দেখতে পেলাম না।  আমার পাশেও একটা আঙ্কেল বসে আছে, আর মেয়েটার পাশে এক আন্টি। মনে মনে ভাবলাম এরা দুজন যদি একসঙ্গে বসতো তাহলে আমি আর মেয়েটা একসঙ্গে বসতে পারতাম।  জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে লাভ কি? মনকে সেই সান্তনা দিয়ে বসে আছি, প্রচুর জ্যামে আটকা পড়ে গেছে গাড়ি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সামান্য আধা কিলোমিটার রাস্তা যেতে পারলাম না।  বাড়ি থেকে ভোরবেলা রওনা দিয়েছি তাই চোখে ঘুম টলমল করছে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিয়ে তন্দ্রা লেগে গেল। কড়া ব্রেক কষলো ড্রাইভার, ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমার। তাকিয়ে দেখি আমরা এখন রামপুরা চলে এসেছি।  হঠাৎ করে পাশের সিটে সেই মেয়েটাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলাম। মেয়েটা আমার পাশে কখন এলো? হায় আল্লাহ।  - রাতে কি চুরি করছেন? বাসের মধ্যে এভাবে কেউ ঘুমায় নাকি?  - ছি ছি চুরি করবো কেন? আমার দাদা গতবছর হজ্জ করে এসেছে। আমি কোনো অন্যায় করতে পারি নাকি?  - বাসের মধ্যে মেয়েদের ছবি লুকিয়ে ল

হ্যালো রাত্রি

 -তোর আমাকে ভালো লাগে কেন? ইভানের এই প্রশ্নে রাত্রি থতমত খেয়ে গেল। সে কখনো ইভানকে জানায় নি তার ইভান কে প্রচন্ড ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগাটা অল্প অল্প করে ভালোবাসাতে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। রাত্রি আমতা আমতা করে বলল, -আ..আমার তো..কে ভালো লাগে এটা কখন বললাম? -আরে এত নার্ভাস হচ্ছিস কেন? যাস্ট চিল। রাত্রি ভাবছে এই ছেলেটা জীবনের অর্ধেকটা সময় হয়ত যাস্ট চিল বলেই কাটিয়ে দিয়েছে।  ইভান আর কোনো প্রশ্ন করল না। রাত্রি হাফ ছেড়ে বাঁচল। অনেকটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছিল সে।  রাত্রি চলে আসলো। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল দুজন। ইভান পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল, -কোথায় যাচ্ছিস? ক্লাস করবি না আজকে? -নাহ। ভালো লাগছে না।  বাসায় আসার পর থেকেই রাত্রি পায়চারি করছে। তাকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে তার ছোট বোন মোহনা জিজ্ঞেস করল, -কী হলো, আপু? ঘরের মধ্যে জগিং করছ কেন? মোহনার প্রশ্নে রাত্রির চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। সে মোহনার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। -জগিং কোথায় করছি? পায়চারি করছি। -সেটাই তো। কেন করছ? চিন্তিত লাগছে তোমাকে। -হ্যাঁ, আমার ইভানকে ভালো লাগে সেটা ইভান জানল কীভাবে? -তুমি হয়ত ইভান ভাইয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো? -

ভুল সংশোধন

 সালমা আপার যখন দ্বিতীয় বিয়ে হলো তখন তার তিন বছরের ছেলে আবাবিলকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল। আপা তো কিছুতেই মানতে চাইছিলেন না এটা। বারবার তিনি বলছিলেন,'আমি পারবো না আমার কলিজার টুকরোটাকে এখানে রেখে গিয়ে অন‍্যের ঘর সংসার করতে!' কিন্তু আমাদের সবার জোর-জবরদস্তিতে তাকে মানতে হয়েছিল সেবার। অবশেষে আপার একটি সন্তান আছে এই কথাটি লুকিয়ে রেখেই বিয়ের কাজ সমাধা হলো। বিয়ের পর এক বছর পেরিয়ে গেলে কীভাবে যেন ঘটনা টা জেনে ফেললেন আপার শাশুড়ি। এরপর একে একে দুলাভাই সহ তাদের বাড়ির সবাই।আপা তো এ নিয়ে চিন্তায় অস্থির! তিনি আম্মাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। আম্মা আতঙ্কগ্রস্ত গলায় বললেন,'কী হয়েছে মা তোর? কাঁদছিস কেন এভাবে?' আপা বললেন,'আম্মাগো আম্মা, আমার বুঝি কপাল পুড়ছে!' বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন আপা।আম্মাও মেয়ের কান্না শুনে কেঁদে ফেললেন। কিন্তু আসলে কী হয়েছে তিনি কিছুই জানেন না। আম্মা কান্নাভেজা গলায় বললেন,'কী হয়ছে মা বল আমারে!' আপা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,'তোমাদের জামাই,তার মা,আর বাড়ির সবাই জেনে গেছে আবাবিলের বিষয়ে। আমার শাশুড়ি বিকেল বেলায় আমায় ডে

অপেক্ষা

 ভার্সিটি থেকে এসেই শুনলাম যে আবার কোন পাত্র দেখেছে। এবার নাকি আর কোন অজুহাত দেখাতে পারবোনা।শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। শুরু করেছে কি বাসার সবাই।সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। সত্যি এই বিয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম।তবে এবার আর কোন অজুহাত দেখিয়ে কাজ হয়নি।পাত্র আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। পাত্রের নাম রাফসান।একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে, ভালো স্যালারি পাচ্ছে, দেখতে ভালো,উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি,ভদ্র এক কথায় এমন ছেলে পাওয়া নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। নায়ক খুঁজছি তাই আমার জন্য নাকি নয়কের মতো পাত্র নিয়ে আসছে।তাই আর কিছুই করতে পারলাম না।এক সোমবার সকল নিয়ম উল্টে আমাদের বাসার সবাই পাত্রের বাসায় গেলো,আর পরের শুক্রবার রাতে বিয়ে হয়ে গেলো।         এবার একটু নিজের কথা বলি।আমি রাইসা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। খুব সুন্দরী কখনোই ছিলাম না।তবে নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম।বাবা-মা এর একমাত্র মেয়ে।চারটা ভাই আমার। অনেক আদরের মনে হলেও বড় হয়েছি বেশি শাসনের মধ্যে দিয়ে। তাই বেশি আদর বিরক্ত লাগতো।বাবার সামনে কথা বলার সাহস কোন সময়ই ছিলনা। মাকেও কখনো দেখিনি বাবার ক

জিলাপী

 আমার বিয়ের ১৯ দিন আগে আমি প্রথম চাকরি পাই। মাত্র ১৯ দিন আগে। প্রেম করেছিলাম আপনাদের ভাবীর সাথে। এক সাথেই পড়াশোনা করতাম। আমার হয়ত বিয়ের জন্য সঠিক সময় হয় নাই তখন কিন্তু তনু মানে আপনাদের ভাবীর তখন বিয়ের জন্য পারফেক্ট সময় ছিলো। তাই চাকরিটা পেয়েই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। আব্বা আম্মাও বেশ সাপোর্ট দিলো। তবে আমার বেতন একটা সংসার টানার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। একদমই না। তাই আমি একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম বিয়ের ব্যাপারে । যাই হোক নতুন অফিসে কেউ সিগারেট খেতেও আমাকে ডাক দিতো না। নতুন হিসেবে অফিসে আমাকে তেমন কেউ পাত্তাই দিত না। আমিই সেধে সেধে গিয়ে কথা বলতাম।অফিস শেষে মোটামুটি সবাইকে দেখতাম নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়। গল্প করে। কিন্তু একজন সিনিয়ির স্যারকে (রফিক) কখনো দাড়াতে দেখতাম না। অফিস ছুটির পর দেখতাম সে ডানে বামে না দেখে সোজা বাসার দিকে হাঁটা দিতো। একদিন খেয়াল করলাম আমাদের এক সিনিয়র ভাই তাকে সিগারেট খেতে ডাকছে। ঐ স্যার আসলেন না। একতা ভদ্রতা মূলক হাসি দিয়ে দুঃখিত বলে চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাকিরা বলে উঠলে “ এমন বৌ পাগলা বেডা জীবনেও দেখি নাই” কথাটা আমার কাছে কিছুটা আপত্তিকরই মনে হলো। নতুন তাই শ

নতুন খেলনা

  বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঝিমু নতুন একটা খেলনা গাড়িতে বুঁদ হয়ে রইলো ।মুখে ভুঁভুঁ শব্দ করে এ গাড়ি চালিয়ে সে ক্লান্ত।বাবা নতুন এ গাড়িটা ৩০০ টাকা দিয়ে কিনে আনছেন।মা বলেছেন দাম বেশি হয়েছে।কোনো দরকার ছিল না।ঝিমুর বেশ কয়েকটা গাড়ি আছে।এটা অপচয়। বাবা বলেছেন খেলনা আর সাজগোছের জিনিস কখনো অতিরিক্ত হয় না!এগুলো যত কেনা হয় ততই দরকারি,কখনো অপচয় হয় না! মা আর কথা বাড়ান নি। নতুন খেলনাটেলনা আনলে ঝিমু বাবাকে খুব খাতির করে।খেলনা ধরতে দেয়,খেলায় নেয়।বাবা হাত বাড়ালে কোলেও যায়।দুইটা চুমো দিতে বললে তিনটা চুমো দেয়,একটা বোনাস। দুদিন পর যেই লাউ সেই কদু!আবারো মায়ের শাড়ির আঁচল ধরা মাঝি হয়ে যায় ঝিমু! কন্যারা ছোট থেকেই একটু সেয়ানা হয়ে যায়।বড় হওয়ার সাথে সাথে আরো সেয়ানা হয়। ভুঁভুঁ করে গাড়ি চালানোর পর ঝিমু রান্নাবাটির প্লাস্টিকের হাড়িপাতিল গাড়ির ওপর রাখলো। বাবা বললেন কী করো মা? ঝিমু বললো রান্না করি। একটু আগে যেটা গাড়ি ছিল,সেটা এখন গ্যাসের চুলা।সে মন দিয়ে রান্না করে। মেয়ের সাথে বাবার ভালো সময়ই কাটলো।বাবার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ ঝিমু মায়ের কাছে জানায়নি।অন্য সময় হলে ঠিকই বলতো "মা,বাবা আমার চুল ধরে টান দিছে।" দুই মিনিট

তাদেরও জীবন আছে

 প্রাইভেট শেষে আমি আর ফাহিম চা খাচ্ছি। চারদিকে সবাই ব্যাস্ত নিজেকে নিয়ে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য হাসছে পশ্চিম আকাশে। হটাৎ আমি আর ফাহিম খেয়াল করলাম একটি ক্ষুদার্থ কুকুর তাকিয়ে আছে আমদের দিকে। ফাহিম কাছে গেলো এবং কুকুর টিকে স্পর্শ করলো। আবেগ প্রবণ ভাষায় মায়াবী দৃষ্টিতে কুকুরটি কি যে বলতেছিল। আমি আর ফাহিম বুঝার চেষ্টা করছি।  কিন্তু বোবা প্রানীর ভাষা কি আর বুঝা যায়?? . অবশেষে আমি আর ফাহিম এই সিদ্ধান্তে পৌছালাম যে কুকুরটি খাবার চাচ্ছে। আমরা রুটি কিনে দিলাম। ফাহিম কুকুরটিকে নিজ হাতে খাবার দিচ্ছিলো আর আমি তাকিয়ে দেখছিলাম। ফাহিম অনেক খুঁশি। সাথে কুকুরটি, দোকানদার মামা এবং আমিও খুঁশি। মনটা যেন অনেক বেশি হালকা  লাগছে। . চা খাওয়া শেষ! শেষ হলো কুকুরটির রুটি খাওয়া। এবার যে আমাদের ফিরতে হবে। চা ওয়ালা মামাকে টাকা দিয়ে ফেরার সময় কুকুরটিও পিছু নিলো। আমি আর ফাহিম তাকে থাকতে বলছি। সে যেন কিছু বুঝতে চায় নাহ্। কিছুখন মাঠের চারদিকের রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম কুকুরটির সাথে। অবশেষে কুকুরটিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় নিলাম। #নোট: এদেরও জীবন আছে। ক্ষুদা আছে, আবেগ ও অনুভূতি আছে আরও আছে হারানোর শোক। আমরা হয়তো আমাদের ভাষায় আমাদে

চিকিৎসক ও লেখক

ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, “এই, এই, তোমাদের কারো কাছে লিটম্যান আছে? আমাকে একটা দাও তো! পরীক্ষা শেষে ফেরত দিচ্ছি!” আমার বন্ধুদের কারো ব্যাগে লিটম্যান স্টেথোস্কোপ নেই। অগত্যা ব্যাগ থেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে স্টেথোস্কোপটা বের করে এগিয়ে দিতে হলো।  ব্যাগ থেকে বের করতে যতটুকু দেরি, ছেলেটার ছোঁ মারতে দেরি হলো না। একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না! আশ্চর্য! এইজন্য লোকের উপকার করতে হয় না। আমার প্লেসমেন্ট এখন মেডিসিন ওয়ার্ডে। ফিফথ ইয়ারের ক্লাস চলে। অবশ্য আজকে ক্লাস বন্ধ। ওয়ার্ডে আজকে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা চলছে। দূর থেকে দেখছি, পরীক্ষা হচ্ছে। সিনিয়র ভাই-আপুরা পরীক্ষা দিচ্ছে, টেনশনে ঘামছে, স্যাররা বেডে বেডে ঘুরে লং কেইস নিচ্ছেন। পুরো ওয়ার্ডের সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকায় আজকে আমাদের ক্লাস নেবার মতো কেউ নেই। পরীক্ষার জায়গাটা একটা সাদা পর্দা ঘিরে আলাদা করে দেয়া আছে। তার ফাঁকফোকর দিয়ে যতটুকু দেখা যাচ্ছে, আমরা সেইটা দেখতে দেখতে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে এক কোণায় জটলা করে আছি, মানে ছিলাম আর কী। এর মধ্যেই সেই পর্দা ফুঁড়ে ছেলেটার আগমন, আবার স্টেথোটা হাতে নিয়েই সেই পর্দার