অদ্ভুত এক রাত



১১ঃ০০ টা।শীতের রাত। কালো রাতের আঁধারে সাদা কুয়াশায় মরিচা লাইটের আলো আবছা আবছা লাগছে।লাইটের ঝিলমিল আলো সাদা কুয়াশার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে।অদ্ভুত এক প্রকৃতি এবং তার মাঝে মরিচা লাইটের আলোর এক অদ্ভুত খেলা।শীতের হীম বাতাস বইছে। হাড় কাঁপানো শীতের বাতাস। বাতাসে লাইটগুলো নড়ছে আর তার আলোর ছায়া রাস্তার বুকে সাপের চলে যাওয়ার মতো এঁকে বেঁকে খেলছে।


এই প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝে মুহিব শরীরের একটা চাদর পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাইটের আলোর খেলা দেখছে।সারা বাড়ী মরিচা লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়ির ছাদে স্পিকারের তীব্র গানের শব্দ মুহিবের কানে এসে লাগছে। আজ শাহানার গায়ে হলুদ।বাড়ীর নিচে বরপক্ষের লোকজনের গাড়ীর মেলা। বাড়ীর ভেতর থেকে মানুষদের আনন্দ আর হই হল্লোড়ের শব্দ।বরপক্ষের লোকজন মনে হয় এতক্ষণে শাহানার গায়ে হলুদ দিয়ে আনন্দ উৎসবে যোগ দিয়েছে। মুহিবের খুব ইচ্ছা করছে,বাড়ীর ছাদে উঠে শাহানাকে একটু দেখতে। কিন্তুু সেটা সম্ভব নয়। তাই মুহিব রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাহানার বাড়ীর ছাদে পর্দার অন্তরালে থাকা মানুষদের ছায়া দেখছে।


আজ শাহানা কি পড়েছে? নিশ্চয়ই হলুদ কোনো জমকালো রংয়ের শাড়ী!মাথায় আর গলায় দামী কোনো ফুলের তৈরী মালা! দুই হাতে জুড়ে মেহেদীর রংয়ের খেলা! হাতে হাজারও রংয়ের কাঁচের চুড়ি!দুই পায়ে নুপূর! নিশ্চয়ই ওর সামনে গায়ে হলুদের সব জিনিষ পড়ে রয়েছে। ও চুপচাপ বসে আছে আর পাশে ওর বান্ধবীরা ওর সাথে মজা করছে। এতক্ষণে ওর সাদা দুই গাল নিশ্চয়ই হলুদের রংয়ে রাঙানো হয়ে গেছে। ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলছে। হাজারও ক্যামেরার সাদা আলো সেকেন্ডে সেকেন্ডে ঝলকানী দিয়ে উঠছে। শাহানার হাসিমাখা মুখ কতো ক্যামেরার মাঝে বন্দি হয়ে গেছে। আর নিচে একাকী নিঃসঙ্গ দাঁড়ানো মুহিবের ছবি প্রকৃতি তার কালো আঁধারের রংয়ে এঁকে দিচ্ছে। সাদা কুয়াশায় কালো রাতের আঁধারে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা মুহিবের দুই চোখ বেয়ে পড়া জলের রং রাতের আঁধার ছাড়া আর কেউ দেখতে পারছে না।


আজ শাহানার গায়ে হলুদ। কাল ওর বিয়ে। এরপর এই রাস্তার বুকে মাঝে মাঝে হয়তো শাহানার পদচিহ্ন পড়বে।যখন শাহানা ওর বাড়ীতে আসবে তখন হয়তো মুহিব জানতে পারবে না।এতো দিনের কষ্টের ভালোবাসা কাল চিরতরে হারিয়ে যাবে। আর তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে বারান্দায় শাহানাকে খুঁজতে হবে না। রাতের আঁধারে  বারান্দায় দাঁড়িয়ে শাহানার আকাশ দেখা মুহিবের আর দেখা হবে না। কলেজ থেকে শাহানার তীব্র গরমে কপাল বেয়ে ঘাম গাল চুয়ে পড়া আর মুহিবের দেখা হবে না। এতো দিনের সাদা ক্যানভাসে আঁকা সব স্বপ্নের ছবি হারিয়ে যাবে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা।এতো দিন ঘড়ির কাঁটা ঘুরতেই চাইতো না অথচ আজ ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে করুন সুর মনে বাজিয়ে দ্রুতো চলে যাচ্ছে।


মুহিব ঘড়ির কাঁটা আটকে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তুু ঘড়ির কাঁটা লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মতো টগবগ টগবগ করতে করতে চলে যাচ্ছে। মুহিব হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে - রাত ১ঃ০০টা।এই ক্ষণিকের মাঝেই সময় এতো দ্রুতো চলে গেলো। শাহানাদের বাড়ী থেকে বরপক্ষের লোকজন বের হতে শুরু করেছে। তারা তাদের গাড়ীতে উঠছে আর গাড়ী গুলো সাই সাই করে মুহিবের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। মুহিবের দুই চোখ বেয়ে চোখের কষ্টের জল উপচে পড়ছে। বুকের বাম পাশটা তীব্র ব্যাথা করছে। বুকের ভেতরে একটা চাপা আর্তনাদের সুর হু হু করে কেঁদে উঠছে। সেই আর্তনাদের সুর দুই চোখ বেয়ে মাটিতে টপ টপ করে পড়ছে।


মুহিব যেনো গাছ হয়ে গেছে। পা দুটো গাছের শিকড়ের ন্যায় মাটি ভেদ করে অতলে হারিয়ে গেছে। মুহিব হারানো তীব্র কষ্টের ব্যাথা আর সহ্য করতে পারছে না। কিন্তুু মুহিবের পা দুটো শাহানাদের বাড়ীর সামনে থেকে নড়তেই চাচ্ছে না।


রাতের কালো আঁধারে রাস্তার বুকে শাহানা আর ওর  বান্ধবীরা নেমে এসেছে। মুহিব যেভাবে চিন্তা করেছে, তার থেকেও বেশী সুন্দর লাগছে শাহানাকে। শাহানার রূপের আলোয় কালো রাতের আঁধারে যেনো এক খন্ড পূনির্মার চাঁদ ধরনীর বুকে নেমে এসেছে।ফটোগ্রাফার রা একেক ভাবে শাহানার ছবি তুলছে। কখনো লাইটের আলোর মাঝে থেকে উঁকি দিচ্ছে শাহানা! কখনো দুই হাত পাখির ডানার মতো দুই পাশে ছড়িয়ে আকাশে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা! মাথা নিচু করে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া শাহানা! কতো অদ্ভুত সব ভঙ্গিতে ফটোগ্রাফার রা ছবি তুলছে।শাহানার বান্ধবীরা শাহানাকে আরো অনেক ভঙি শিখিয়ে দিচ্ছে। ফটোগ্রাফার ছবি তুলতে গিয়ে রাস্তার বুকে শুয়ে পড়েছে। ফটোগ্রাফারের অবস্থা দেখে শাহানা খিল খিল করে হেসে উঠলো। শাহানার মুক্তা মাখা হাসির শব্দে প্রকৃতিও যেনো আরো আনন্দে ভেসে একাকার হয়ে গেলো।


দুই হাত দুই পাশে ঘুরিয়ে শাহানা যখন ঘুড়লো, শাহানার চোখ যেয়ে পড়লো কালো রাতের আঁধারে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ একাকী মুহিবের উপর। শাহানা তাকিয়ে দেখলো - মুহিবের দুই চোখ বেয়ে কান্নার জল মাটিতে পড়ছে। শাহানা মুহিবের কান্না দেখেও না দেখার ভান করে, ছবি তুলতে লাগলো। রাতের আঁধারে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার তীব্র ক্লিক ক্লিক শব্দ বাজছে।


শাহানার এমন আচরন দেখে মুহিব বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।শাহানা কি আমাকে একদিনের মাঝেই ভুলে গেলো? এটা কিভাবে সম্ভব?এটা কিভাবে সম্ভব? এটা কি ভাবে সম্ভব?


মুহিব আর্তনাদের তীব্র এক চিৎকার দিয়ে বললো - এটা কি সম্ভব?


কালো রাতের আঁধারে মুহিবের তীব্র  চিৎকারে শাহানা মুহিবের দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখে - মুহিব দর দর করে ঘামছে আর কান্না করছে।


- এ্যাই, তোমার কি হইছে?এমন করছো কেনো, তুমি?

- না মানে,স্বপ্নে দেখলাম তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?

-কি বলছো এসব? পানি খাবে?

-না।

-যত সব ফালতু স্বপ্ন দেখো আর চিৎকার করে উঠে ঘুম ভাঙিয়ে দাও।ঘুমাও এখন।


শাহানার কাছে ঝাড়ি খেয়ে মুহিব বিছানায় শুয়ে পড়লো। শাহানা মুহিবের বুকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।শাহানাকে ফিরে পেয়ে মুহিব শাহানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।আহ! শাহানা কোথাও হারিয়ে যাই নি। শাহানা হারিয়ে যায় নি দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে মুহিব অতল ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো। একটু পর মুহিবের নাক দিয়ে শব্দ বের হতে লাগলো - ঘ্রোর. র. ঘ্রোরর..


মুহিবের তীব্র নাক ডাকার শব্দে শাহানা বিরক্ত হয়ে মুহিবের বুকে থাপ্পড় মেরে বললো - ওই, তুমি নাক ডাকা বন্ধ করবা? 

মুহিবের ঘুমজড়িত উত্তরঃহুহুম...


লেখাঃ মোঃ তানভীর রহমান

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]