অপেক্ষা

 ভার্সিটি থেকে এসেই শুনলাম যে আবার কোন পাত্র দেখেছে। এবার নাকি আর কোন অজুহাত দেখাতে পারবোনা।শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। শুরু করেছে কি বাসার সবাই।সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। সত্যি এই বিয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম।তবে এবার আর কোন অজুহাত দেখিয়ে কাজ হয়নি।পাত্র আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। পাত্রের নাম রাফসান।একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে, ভালো স্যালারি পাচ্ছে, দেখতে ভালো,উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি,ভদ্র এক কথায় এমন ছেলে পাওয়া নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। নায়ক খুঁজছি তাই আমার জন্য নাকি নয়কের মতো পাত্র নিয়ে আসছে।তাই আর কিছুই করতে পারলাম না।এক সোমবার সকল নিয়ম উল্টে আমাদের বাসার সবাই পাত্রের বাসায় গেলো,আর পরের শুক্রবার রাতে বিয়ে হয়ে গেলো।

        এবার একটু নিজের কথা বলি।আমি রাইসা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। খুব সুন্দরী কখনোই ছিলাম না।তবে নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম।বাবা-মা এর একমাত্র মেয়ে।চারটা ভাই আমার। অনেক আদরের মনে হলেও বড় হয়েছি বেশি শাসনের মধ্যে দিয়ে। তাই বেশি আদর বিরক্ত লাগতো।বাবার সামনে কথা বলার সাহস কোন সময়ই ছিলনা। মাকেও কখনো দেখিনি বাবার কথার বিপরীতে যেতে।তাই বেশি শাসন আর বাবার রাগ দেখে নিজের বর কেমন হবে এটা নিয়ে একটু চিন্তিত থাকতাম। বাবা খুব সৎ একজন মানুষ তবে অনেক রাগী।আর এজন্যই আমার রাগ জিনিসটা ভয় লাগতো।কারন আমি ছিলাম ভদ্র,নরম মনের বেশি ইমোশনাল একজন।সহজে মিশতে পারতাম না।তবে একবার কাউকে আপন করে নিলে সহজে ছাড়তে চাইতাম না।একটু বোকা, সহজেই অন্যকে বিশ্বাস করে ফেলা আমার অভ্যাস। তাই সবাই আমাকে টিউবলাইট বলে ডাকে।

 


          যাই হোক এসব বিভিন্ন কারণে বিয়ে আরো পরে করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।তাই বিয়েটা হয়েই গেলো। বিয়ের রাতেই প্রথম রাফসানের সাথে আমার সামনে বসে কথা।বয়সে আমার চেয়ে নয় বছরের বড়।ভাইয়া ডাকব নাকি অন্য কোন নামে,আপনি নাকি তুমি এক কথায় অনেক টেনশন।সাথে রাগ হচ্ছিল অনেক।এ যুগে কেউ পাত্রির সাথে কোন কথা না বলে কীভাবে বিয়ে করে এটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না।একই বিছানায় দুজনে কীভাবে ঘুমাবো। ভাইয়ার বন্ধু ভাবা যায় এসব?সকল ভাবনার অবসান ঘটিয়ে উনি প্রথম কথা বলল।সারা রাত অনেক গল্প হলো দুজনের।লোকটা খুব হাসি মুখে ছিলো। বিয়ে করে যে মহা আনন্দে আছে সেটা বোঝাই যাচ্ছিল।তবে আমার মনে ছিলো অনেক চিন্তা। সবাই কতো আজেবাজে কথা বলেছিল বাসর রাত নিয়ে।না বাবা না ভাবতেই কেমন যেন লাগছিল।আগে তো মানুষটাকে ভালো ভাবে জানতে হবে তারপর নাহয় দেখা যাবে।

              আমার সাথে গল্প করে রাফসান বুঝে গেল যে বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। তাই সেও সময় দিলো আমাকে।তবে গল্প শেষে হাতটা ধরতে চাইলো।তার অনুমতি নিয়ে হাত ধরার বিষয়টা খুব ভালো লাগলো আমার। এভাবেই শুরু হলো আমাদের নতুন জীবনের পথচলা।


           মানুষকে প্রভাবিত করার দারুন ক্ষমতা ছিল রাফসানের। সত্যি অনেক ভালো মনের মানুষ। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে। কখনো উচ্চ স্বরে কারো সাথে কথা বলতে পারেনা মানুষ টা। বাসায়, এলাকায়, অফিসে সব জায়গায় সে এক কথায় ভদ্র , দায়িত্ববান একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাই তার প্রেমে পড়তে খুব বেশি সময় আমার লাগেনি। অবশ্য এজন্য রাফসান কেও একটু কষ্ট করতে হয়েছিল। ধন্যবাদ মানুষটাকে কারন সব ধরনের সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সে আমাকে যথেষ্ট সময় দেয়।

          প্রথম প্রথম সারাক্ষন মোবাইলে কথা হয়,সব বিষয়ে খুব বেশি ভালোবাসা। আমিও আস্তে আস্তে ওর প্রেমে পুরো পুরি পাগল হয়ে যাই। বিয়ের পরের প্রেমে একটা পবিত্রতা আছে,মিষ্টি একটা অনুভুতি।মানুষটার ছোঁয়া, ভালোবাসা সব কিছুই অন্যরকম। একদিন আমি বলি বেশি ভালোবাসা ভালো না। কিন্তু ও খুব জোর দিয়ে বলে যে না বেশি ভালোবাসা ভালো।আর আমার সারাজীবন ওকে নাকি বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।


               হয়েছেও তাই। কীভাবে যেন আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলি। এতোটা যে আমার আমি আর থাকলাম না।খাওয়া, পোশাক প্রতিটি ক্ষেত্রে যা কিছুই ওর পছন্দ সেই সব কিছুই হয়ে উঠলো আমার পছন্দ।আর সব কিছু যা ওর অপছন্দ সেই সব হয়ে গেলো আমার অপছন্দ। নিজেকে পুরোপুরি ওর মতো করে পরিবর্তন করে ফেললাম।"জান"বলে ডাকি আমি। কিভাবে ওর যত্ন নিবো সারাক্ষণ শুধু এই চিন্তা। সবার কাছে আমি "জামাই পাগল"নামে পরিচিত।আমার অবশ্য এতে ভালোই লাগে।চিঠি লিখতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই প্রায়ই ওকে আমি চিঠি লিখি। অনেক পাগলামি করি ওর জন্য।ও অবশ্য আমার এসব ছোট ছোট ভালোবাসা খুব উপভোগ করে। আমার খুব বেশি চাওয়া না থাকায় ও খুব সন্তুষ্ট আমার প্রতি। খুব সুন্দর সময় কাটতে থাকে আমাদের।দুজন খুব ঠান্ডা মেজাজের তাই একেবারেই ঝগড়া ছাড়া আমাদের সংসার। আমাদের এদিকে সেরা জামাই হলো রাফসান। সত্যি এতো সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটা আমার জীবন সঙ্গী ভাবতেই একটা মিষ্টি অনুভূতি আসে এই মনে।ওর সম্পর্কে বলতে গেলে খারাপ কিছু কখনো মাথায় আসেনা। আল্লাহর কাছে শুধু শুকরিয়া আদায় করি যে এমন একজনকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।সব সময় ওকে বলেছি যেন ও কখনো পরিবর্তিত হয়ে না যায়।ও অবশ্য বলতো মানুষ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে, ভালোবাসার পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমি মানতে চাইতাম না।


          সময় কাটতে থাকে। বিয়ের অনেক বছর কেটে গেছে।এখন আমার দুই মেয়ে আছে। আমাদের চারজনের ছোট্ট সংসার। ভালোই কাটছে দিনকাল।ওর প্রমোশন হয়েছে ।এখন অনেক বড় পোস্টে আছে। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো স্যলারি।বেশ ভালো কাটছে আমাদের জীবন।


                 কিন্তু আজকাল কিছু না পাওয়ার যন্ত্রনা আমাকে খুব বিরক্ত করছে। অনেক কিছুই ভালো লাগে না আজকাল।এখন মনে হয় আসলেই বেশি ভালোবাসা ভালো না।প্রথম দুই বছর ফোনে কতো কথা হতো।কতো মিস করতো আমায়।এখন আর মিস করেনা। অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় যে। আমিও তো ব্যস্ত থাকি বাচ্চাদের পড়া, স্কুল,সংসার নিয়ে তবুও তো সারাক্ষন ওর ফোনের অপেক্ষায় থাকি আমি।

                  কতো চিঠি লিখেছি আমি ওকে তার কোন হিসাব নেই। সেই যে প্রথম বছর একটা চিঠি পেলাম।আরতো পেলাম না।অথচ এলাকায় সে সুন্দর হাতের লেখা এবং সুন্দর প্রেমপত্র লিখতে পারার জন্য নাকি জনপ্রিয় ছিল।ওর সব বন্ধুরা ওকে দিয়ে প্রেমপত্র লিখাতো।আর আমাকে চিঠির উত্তর দিবে না এটা নিয়ে বেশ মন খারাপ হয় আমার। তবুও অপেক্ষায় থাকি হয়তো সময় পেলে লিখবে চিঠি।

                     সবাই বউ এর কতো প্রশংসা করে।আমি জানি আমি বেশী সুন্দরী না।তবু মাঝে মাঝে একটু প্রশংসা করলে কি হয়। সাজগোজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। শাড়ি ওর খুব পছন্দ। তাই চেষ্টা করতাম শাড়ি পড়ার। কিন্তু অনুষ্ঠান ছাড়া যে এখন আর পড়তে পারিনা।বাচ্চা সামলে কি সব সময় শাড়ি পড়া যায়। অবশ্য এটা নিয়ে ও কখনো অভিযোগ করেনি।লম্বা চুল ওর পছন্দ।সেটাও আমার নেই।তবে আমি যেমন আছি তেমনি পরিপাটি হয়ে থাকার চেষ্টা করি।একটু কাজল, হালকা লিপস্টিক, কপালে কালো টিপ।এইতো আমাকে খুব ভালো না লাগলে ও খারাপ লাগছেনা।প্রথম দিকে বলতো ভালো লাগছে। কোন কাব্যিক ভাষায় কখনো প্রশংসা করতে পারেনা ও।মন শুনতে চাইলেও বারন করেছি। তাই বলে কেমন লাগছে সেটাও বলবেনা।নিজ থেকেই জানতে চাইতাম কেমন লাগছে।তখন বলত," ওওও তুমি সেজেছ।হুম ভালো লাগছে।"তখন রেগে বলতাম বুড়ো জামাই।তাই রোমান্টিকতা কম।"ও শুধু হাসতো।

এখন আর বলি না যে সেজেছি তোমার জন্য। অপেক্ষায় থাকি যাতে নিজ থেকেই বলে কেমন লাগছে আমায়।


                  সবাই দেখি যে কোন অনুষ্ঠানে বা কোন কারন ছাড়াই বউকে নিজ থেকে উপহার কিনে দেয়। কখনো বলবো না রাফসান আমাকে উপহার দেয়না।কখনো ওর সাধ্যের বাইরে কিছু চাইনি আমি তবে যা চেয়েছি তার চাইতে বেশি দিয়েছে আমাকে। কিন্তু নিজ থেকে কখনো কিছু আনেনা। আমাকে নিয়ে ভালোটা কিনবে আমার জন্য।আমি চাই ও নিজে পছন্দ করে কিছু আনুক আমার জন্য।হতে পারে একটা গোলাপ, কাঁচের চুড়ি, চুলের ক্লিপ বা অন্য কিছু। খুব দামী কিছু তো আমি চাইনা। একদিন বলেছিও কি আমার চাহিদা।এখন আর বলি না। অপেক্ষায় থাকি হয়তো একদিন নিজ থেকেই কিছু আনবে আমার জন্য।


            ওর বেলায় আমি অনেক সাহসী আর বেহায়া।প্রথম দিকে অফিসে যাওয়ার আগে কপালে,গালে চুমু খেতাম সাথে ওর থেকেও আদায় করতাম।ওর বুকে মাথা রেখে কেমন জানি শান্তি পেতাম তাই মন চাইলেই জরিয়ে ধরতাম।বাসা থেকে বের হলে দৌড়ে বারান্দায় যেতাম বাই বলতে। রাস্তায় হাত ধরে হাটতাম, রিকশায় আমায় জরিয়ে ধরে বসতো।এখন আর সেসব হয়না।এসব নাকি ছেলেমানুষি।বলে," সামনে আছি জরিয়ে ধরতে হবে কেন?যখন প্রয়োজন ভালোবাসি তো"। খুব অভিমান হতো।কারন আমারতো ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে শান্তি, বুকে মাথা রাখতে শান্তি।আমি না বললে আর অফিসে যাওয়ার আগে আদর দিয়ে যায়না। খুব বেশি মিস করি এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা গুলো।আগে জোর করে আদায় করলেও এখন আর করিনা। অপেক্ষায় থাকি কোন এক সময় নিজ থেকেই হয়তো দেবে এই ছোট্ট ভালোবাসা গুলো।


                 কোন বিশেষ দিনে কেক কাটা ওর পছন্দ না। তাই আমিও এড়িয়ে চলি।তবে ভালো রান্না করি।ওকে উইশ করি। চিঠির উত্তর দেয়না তাই চিঠি একটু কম লিখি।যখন খুব মিস করি ওকে তখন মেসজ পাঠাই।লম্বা মেসেজ। বিভিন্ন মোবাইল কম্পানি থেকে অনেক মেসেজ আসে। টুং টুং শব্দ হয়। রান্নার সময় আমি তারাতাড়ি আসি।এই বুঝি ও রিপ্লাই দিয়েছে। কিন্তু না। সারা দিন কেটে যায় তবু রিপ্লাই আসেনা। খুব কষ্ট হয় তখন। ছোট্ট একটি রিপ্লাই দিলে বুঝি অনেক কষ্ট হয়,অনেক সময় নষ্ট হয়? মনটাকে তখন মানাতে পারিনা। চোখে পানি চলে আসে। অনেক ছোট মনে হয় নিজেকে।তবু বেহায়া মনকে বোঝাই যে ও ব্যস্ত তাই হয়তো সময় পাচ্ছেনা।আর অপেক্ষায় থাকি হয়তো ওর রিপ্লাই আসবে।

                  ভালোবাসি শব্দটা বলতে বলতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে আমার। আচ্ছা আমারও তো শুনতে মন চায় নাকি। কিন্তু না সে এটা বলবেই না।বলতে বললে বলে এটা বলতে হবে কেন।মাঝে মাঝে ভালোবাসা টা প্রকাশ করতে হয় এটা তুমি কেন বুঝতে চাওনা। প্রকাশ করলে ভালোবাসা জীবন্ত থাকে নাহলে যে সেটা আস্তে আস্তে মরে যায়। তুমি শুধু শুনতে চাও বলতে চাওনা। তবুও বেহায়ার মতো শুনতে চাইতাম।তবে এখন আর শুনতে চাইনা।যখন ইচ্ছা হয় বলি আর ওর কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় থাকি।


                মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি খুব সুন্দরী হতাম তাহলে হয়তো ও আমার অনেক প্রশংসা করতো যতোটা আমি করি, আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো যেভাবে আমি তাকাই,আমাকে অনেক ভালোবাসত যতোটা আমি বাসি।


                  কেটে গেছে আরো কয়েকটি বছর। ষোল বছর শেষ হলো। মেয়েরা আরো বড় হয়েছে। আমাদের সুন্দর সুখের সংসার।সব আছে আলহামদুলিল্লাহ। রাফসান ওর সকল দায়িত্ব খুব সুন্দর ভাবে পালন করছে।কারো কোন কিছুতে কোন কমতি হতে দেয়না সে।আমি এখনো আগের মতই প্রতিদিন নতুন করেই ওর প্রেমে পড়ি।ওর সান্নিধ্য ভালো লাগে অনেক।এখন আমার মেয়েরাও বলে আমি ওদের বাবাকে একটু বেশি ভালোবাসি।ও যে কম ভালোবাসে তা নয় তবে প্রকাশভঙ্গি কম।আর যেটা আমার মন মানতে চায়না।

                 এখন অবশ্য ওকে মনে করিয়ে দেই যে সত্যি বেশি ভালোবাসা ভালো না।তবে তাই বলে যে আমার ভালোবাসা কমে গেছে সেটা কিন্তু নয়।বরং ভালবাসার সাথে সাথে এখন একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতাও বেড়ে গেছে।তবে মনটা খুব করে চাইলেও এখন আর বিবাহ বার্ষিকী ছাড়া চিঠি লিখি না।যে চিঠির মুল্য বোঝেনা তাকে কি চিঠি লিখব?আর উত্তরের আশাও করিনা।

                এখনো যখন মন চায় তখন কাজল লাগাই, হালকা সাজগোজ করি তবে রাফসান আমার প্রশংসা করবে, আমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখবে সেটা আশা করিনা।মনটা যে খারাপ হয়না তা নয় তবে প্রকাশ করিনা। কারন আমি জানি আমি সুন্দরী না।ভুল বললাম হয়তো তার মন মতো সুন্দরী না।


            এখন আর নিজ থেকে উপহার দেবে তাও আবার চুড়ি, গোলাপ?যখন যেটা দরকার সেটাতো দিচ্ছে তাই ওসবের আশা করে আর মন খারাপ করিনা।

              রাফসান চায়না তাই  এখন আর ভালোবাসার কথা বলিনা সবসময়। শুনতেও চাইনা।তবে খুব বেশী যখন আবেগি হয়ে যাই তখন ছোট করে মেসেজ পাঠাই যে অনেক ভালোবাসি।তবে আফসোস এই মেসেজ এরও কোন উত্তর আসেনা। হতাশ হই খুব তবে বুঝতে দেইনা।

                  দুপুরে একবার ফোন করে খবর নেয় সবার। তবে এখন আমি নিজেই ফোনে কি বলব খুঁজে পাই না। দরকারি কথা শেষে তারাতারি রেখে দেই।

                  সবার সামনে তার প্রতি আমার ভালোবাসায় সে অপ্রস্তুত হয় ,আগে ভালো লাগলেও এখন বিরক্ত হয় তাই আর প্রকাশ করিনা।"জান"বলে ডাকলেও আজকাল বিরক্ত হয়।আমি নাকি বেশি বাড়াবাড়ি করি।যেদিন এ কথা বলেছিল খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শুধু তোমার এই আমাকে তুমি কথাটি বলতে পারলে?তাইতো এখন আর "জান"বলে ডাকিনা।এজিএম সাহেব ডাকি।এতো দিনের অভ্যাস যদিও সময় লেগেছে তবু দেখলাম পেরেছি। কারন আজকাল আবার আমার আমি কে একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছি। খুব আত্মসম্মানে লেগেছিল ঐ দিন। তাই রাফসান বিরক্ত হতে পারে এমন আবেগ, ভালোবাসা কম দেখাই।কি দরকার আমার ভালোবাসার মানুষটির মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করার।

                মানুষ হিসেবে রাফসান এক কথায় অসাধারণ।শতো চাইলেও ওর খারাপ আমি বলতে পারিনা।তবে এই সব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অনেক অভিমান জমছে মনের মাঝে। যেগুলো কাউকে বলতে ও পারিনা।কারন সবাই বলবে এসব শুধুমাত্র ছেলেমানুষি ছাড়া অন্য কিছু না। কিন্তু আমার যে এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা গুলো খুব দরকার।জানিনা এই অভিমান দিন দিন কমবে নাকি বাড়বে।এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষা আদৌ কখনো শেষ হবে কিনা সেটাও জানিনা। তবুও অপেক্ষায় আছি যেন একদিন রাফসান ব্যস্ত সময় শেষ করে আমার এই অপেক্ষার অবসান ঘটায়। মনের মাঝে লুকিয়ে না রেখে বলবে,বউ আমিও অনেক ভালোবাসি।নিজ থেকেই জরিয়ে ধরবে আমায়, লুকিয়ে রাখবে বুকের মাঝে।আছি সেই সুন্দর দিনটার  অপেক্ষায়।


               



লিখাঃ মৌমিতা হোসেন।

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]