হ্যালো রাত্রি
-তোর আমাকে ভালো লাগে কেন?
ইভানের এই প্রশ্নে রাত্রি থতমত খেয়ে গেল। সে কখনো ইভানকে জানায় নি তার ইভান কে প্রচন্ড ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগাটা অল্প অল্প করে ভালোবাসাতে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
রাত্রি আমতা আমতা করে বলল,
-আ..আমার তো..কে ভালো লাগে এটা কখন বললাম?
-আরে এত নার্ভাস হচ্ছিস কেন? যাস্ট চিল।
রাত্রি ভাবছে এই ছেলেটা জীবনের অর্ধেকটা সময় হয়ত যাস্ট চিল বলেই কাটিয়ে দিয়েছে।
ইভান আর কোনো প্রশ্ন করল না। রাত্রি হাফ ছেড়ে বাঁচল। অনেকটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছিল সে।
রাত্রি চলে আসলো। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল দুজন। ইভান পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
-কোথায় যাচ্ছিস? ক্লাস করবি না আজকে?
-নাহ। ভালো লাগছে না।
বাসায় আসার পর থেকেই রাত্রি পায়চারি করছে। তাকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে তার ছোট বোন মোহনা জিজ্ঞেস করল,
-কী হলো, আপু? ঘরের মধ্যে জগিং করছ কেন?
মোহনার প্রশ্নে রাত্রির চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। সে মোহনার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল।
-জগিং কোথায় করছি? পায়চারি করছি।
-সেটাই তো। কেন করছ? চিন্তিত লাগছে তোমাকে।
-হ্যাঁ, আমার ইভানকে ভালো লাগে সেটা ইভান জানল কীভাবে?
-তুমি হয়ত ইভান ভাইয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো?
-নাহ।
-ইভান ভাইয়াকে নিশ্চয়ই তুমি অনেক কল বা মেসেজ করো?
-সেটাও না।
-তাকে কোনো উপহার দিয়েছো বা তার দিকে তাকিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাবে হেসেছো?
রাত্রি এবার রেগে মোহনার দিকে তাকাল।
-এসব কিছুই না। এমনকি অন্য এমন কিছুও করিনি যেটাতে ও সেটা সন্দেহ করতে পারে।
-আপু, তুমি বরং বেশি বেশি পায়চারি করো। তাহলে উত্তর পেয়ে যাবে।
দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে সে বলল,
-হুম। এখন তুই বের হ। আমাকে ভাবতে দে, আমি কি করেছি যেটাতে ও এই সন্দেহ টা করল ভেবে বের করতে হবে।
অনেক ভাবনা চিন্তা করেও রাত্রি সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেলো না।
পরের দিন আবার বাসের জন্য অপেক্ষা করছে দুইজনে। রাত্রি লজ্জায় ইভানের দিকে তাকাতে পারছে না। সে ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ইভান কয়েকবার তাকিয়ে রাত্রির হাবভাব খেয়াল করল। ইভানের মুখে হাসি লেগে আছে।
-তুই কি আমার ব্যাগ থেকে কিছু চুরি করেছিস, রাত্রি?
রাত্রি ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোর কি আমাকে চোর মনে হয়? আমি তোর জিনিস চুরি করতে যাব কেন? আশ্চর্য!
-আরে চিল! আজকে তোর হাবভাব দেখে এমন মনে হচ্ছিল যেন তুই কোনো কিছু চুরি করেছিস। তাই আমার দিকে লজ্জায় তাকাতেও পারছিস না।
রাত্রি এবার রেগে উঠে চলে যাচ্ছিলো। ইভান কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
-আজকে কিন্তু ক্লাসটেস্ট আছে। এভাবে রেগে চলে গেলে মিস করবি সেটা।
রাত্রি আবার ফিরে এসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। ইভান হেসে জিজ্ঞেস করল,
-আমার ফটো তোর ওয়ালপেপারে দিয়ে রেখেছিস কেন?
রাত্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাস এসে পড়ল। রাত্রি জবাব না দিয়ে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
টেবিলে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল রাত্রি। মোহনা এবারেও দুষ্টুমি করে বলল,
-মুনি ঋষিদের মত ধ্যান করছ কেন? কি হয়েছে?
-আমার ওয়ালপেপারে ওর ছবি দেয়া আছে সেটা ও জানলো কীভাবে? আমি তো ওর সামনে কখনো মোবাইলটা বেরও করিনি।
-আপু, আমার কি মনে হয় জানো?
-কি?
-ও তোমার পিছে স্পাই লাগিয়ে রেখেছে। তুমি কি করো, না করো সব খেয়াল করে।
-হ্যাঁ, হতে পারে।
-হু...
হঠাৎ যেন রাত্রির হুশ ফিরলো। মোহনা মুখ টিপে হাসছে। আর মোহনা যে ওর সাথে ফাইজলামি করছে সেটা বুঝতে পেরে ও রেগে বলল,
-তুই বের হলি..এক্ষুণি বের হ।
মোহনা দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল।
এত ভেবেও যখন রাত্রি কিছু খুঁজে পেলো না। ভাবলো সরাসরি ইভানকেই জিজ্ঞেস করবে। ইভান কীভাবে সব জানতে পারছে সেটা জানতেই হবে তার।
রাত্রি ইভানকে কল দিচ্ছে।
-হুম রাত্রি, ভেবে কিছু বের করতে পারলি আমি কীভাবে সব জানলাম?
রাত্রি থতমত খেয়ে গেল। সে বলল,
-মানে?
-তুই নাকি মুনি ঋষিদের মত ধ্যান করছিস?
-তোকে কে বলল?
-কে আবার তোর বোন, মোহনা।
কথাটা বলেই ইভান জিভে কামড় দিলো। ভুল করে মোহনার নামটা প্রকাশ করে ফেলেছে সে।
-মানে মোহনা তোর কাছে সব বলে?
-না..ভুল করে বলে ফেলেছি।
-একদম মিথ্যে বলবি না। সত্যি টা বল। আর কি বলেছে ও?
-হ্যাঁ, আর কে বলবে? বলেছে, তুই সারাক্ষণ আমার বিষয়েই কথা বলিস, আমার ফটো ওয়ালপেপারে দিয়ে রেখেছিস, আবার আমার কথা মনে করে মুচকি মুচকি হাসিস।
রাত্রি রাগে ফুসছে। তার মানে তার ঘরের মধ্যেই স্পাই রয়েছে। যে সব কথা ইভানের কাছে পাচার করে। রাত্রি ফোনটা রেখেই চেঁচাতে চেঁচাতে বাইরে গেল।
'মোহনা...ওই মোহনা...তুই সব কথা ওর কাছে পাচার করিস। তাইনা..তোর একদিন কি আমার একদিন।'
মোহনা তখন পানি খাচ্ছিলো। তার নাকে মুখে পানি উঠে গেল। মনে মনে বলছে,
'বারবার বলেছি আমার নামটা যেন না বলে। তবুও বলে দিলো!'
ইভান তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলে চলেছে,
'রাত্রি, আমিও তোকে খুব পছন্দ করি। হ্যালো রাত্রি...শুনছিস? কিরে, কথা বল। হ্যালো রাত্রি....
(সমাপ্তি)
লেখাঃ অরণী মেঘ