Posts

Showing posts from September, 2020

হ্যাপি কাপল

ইদের দিন সকালে ঘুম ভেঙেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রোমেলের। আট মাসের সিয়াম ঘুম ভেঙে উঠে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। রোমেল আধো ঘুম আধো জাগরণে হাতড়ে হাতড়ে ছেলের গায়ে হাত চাপড়ে ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গলা চড়িয়ে নীরাকে ডাকল। “নীরা! নীরা!” নীরা রান্নাঘর থেকেই গলা উঁচু করে বলল, “পায়েস পুড়ে যাবে আমার, দাঁড়াও!” পায়েস? ওহ! রোমেলের মনে পড়ল আজ তো ইদের দিন। উঠে বসে সিয়ামকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলল, “ইদ মোবারক আব্বু!” সিয়ামকে কোলে নিতেই বিটকেল গন্ধ পেল সে। ব্যাটা বড় কাজ সেরেছে। এইজন্যই হৈচৈ করছে। ডায়াপার না বদলানো পর্যন্ত হাউকাউ করতেই থাকবে। রোমেল বাধ্য হয়ে মাথার পাশের সাইড টেবিল থেকে ডায়াপার আর ওয়েট টিস্যু নিয়ে ডায়াপার বদলাতে লেগে গেল সে। সিয়াম মনে হয় বুঝতে পেরেছে তার ডায়াপার বদলানো হচ্ছে। সে কান্নাকাটি থামিয়ে পিট পিট করে রোমেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রোমেল হাসিমুখে বলল, “ইদ মোবারক ব্যাটা!” নীরা ঘেমে নেয়ে এসে ঘরে ঢুকল। রান্নাঘরে ঢুকলেই তার গরমে অস্থির লাগে। রোমেল বলল, “নাও তোমার ছেলে সামলাও, আমি গোসল করে নামাজে যাই!” হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কোলে নিল নীরা। রোমেল গোসলে ঢুকতেই নীরার শাশুড়ি এসে বললেন, “বা

আলোয় ফেরার দিন

আজ দুপুরে আমার বাবা বাড়ীর সকলের সামনে আমার মাকে একটা চড় মারলেন। আমার মা বাবার চড় খেয়ে কয়েক সেকেন্ড হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে যে কাজটা করছিলেন সেটাই আবার মনোযোগ সহকারে করতে লাগলেন। আজ বিয়ের পর আমি প্রথম আমার স্বামী রেজাকে নিয়ে আমার বাবার বাড়ীতে এসেছি। আমার স্বামী বাবার এহেন কান্ড দেখে এতোই অপ্রস্তুত হয়ে গেল যে, মনে হলো সে বোধহয় আমাদের বাড়ীতে নয় বরং ভুল করে অন্য কোনো গ্রহে চলে এসে এসেছে।   রেজার এমন অপ্রস্তুত ভঙ্গি দেখে আমার ছোট বোন লামিয়া মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে একটু বাঁকা কণ্ঠে বললো, দুলাভাই আপনি শুধু শুধু মন খারাপ করছেন। আমার মায়ের বাবার এসব বাজে ব্যবহার সহ্য করবার অনেক আগে থেকেই অভ্যাস আছে। আজ তো তবুও মায়ের হাত থেকে দামী ফুলদানীটা পড়ে ভেঙেছে বলে বাবা মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করলো। অন্যদিন তো তরকারিতে একটু লবণ কম বেশী হলেও বাবার এমন দুচারটা চড় থাপ্পড় মাকে হজম করতে হয়। লামিয়ার এই ধরনের কথা শুনে আমি একটু সচকিত হয়ে চারপাশে তাকালাম। ভাগ্য ভালো বাবা আশেপাশে নেই। বোধহয় জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেছেন। অনেক ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত মসজিদে

স্ত্রী

"অফিসে এসে চেয়ারে বসতেই আমার স্ত্রীর কল । কল রিসিভ করলাম আমি । আজ বউয়ের কন্ঠ কেমন অস্বাভাবিক লাগছিল । খুব মলিন কন্ঠে বলে... - অফিসে ঠিক ভাবে পৌঁছেন । দুপুরে সময় করে টিফিন খেয়ে নিবেন। বিয়ের ৩ বছর হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের ভালোবাসার একটুও কমে নাই । অফিসে পৌঁছানোর পর শুধু কল করে জিঙ্গাসা করছে পৌঁছেছি কিনা, কখনো বলে না দুপুরে খেয়ে নিবেন ।  বরং সে দুপুরেই কল করে বলতো খেয়েছি নাকি! কপাল ভাঁজ করে বলি... - তুমি ঠিক আছো তো। - হুম, আমি ঠিক আছি । আপনি সময় মতো খেয়ে নিবেন । বেশি রাত করে ফিরবেন না । তারাতারি আসার চেষ্টা করবেন। - তুমি কি একটু লুকাচ্ছো । তোমার কন্ঠ অন্য দিনের থেকে আজ ভিন্ন রকম শুনাচ্ছে। তুমি কি অসুস্থ? আমার প্রশ্নে তোতলাতে থাকে সে।আমতা আমতা করে বলে... - একটু অসুস্থ  । তুমি চিন্তা করো না । ঔষধ নিছি ঠিক হয়ে যাবো। দুপুরের টিফিন ব্রেকে বসের সাথে দেখা করি । আমাকে দেখতেই সে বসতে বলে।আমি অল্প নড়েচড়ে বসে বললাম... - স্যার আজ একটু আগেই ছুটিটা ফেলে খুশি হতাম । আমার স্ত্রী অসুস্থ। - বুঝলাম না! আপনার স্ত্রী অসুস্থ আপনি বাসায়  যেয়ে করবেন কি? স্ত্রীর সাথে কি হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন নাকি। কোনো কি

বাটন ফোন

 রাত ২ টা। চ্যাট অফ করে নিউজফিড স্ক্রল করছি এমন সময়ে জাহিনের মেসেজ, "জেগে আছো?? কী করো??" জাহিনের মেসেজ দেখেই শঙ্কিত হয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, আমার রাতে জেগে থাকা জানার এ কোনো নতুন ফাঁদ নয়তো!  সেই ভাবনা থেকেই মেসেজের রিপ্লাই দিবনা বলে ঠিক করলাম। আর তাই মেসেজটা সিনও করলাম নাহ। মিনিট দুয়েক পর গ্রুপে ভাইয়া মেসেজ দিল, " কাল তোমাদের অনলাইন ক্লাস হবেনা।" আমিতো খুশিতেই "আলহামদুলিল্লাহ " লিখে মেসেজ দিয়ে দিলাম।  মেসেজ দেওয়ার পর মনে হলো, " আরেহ! এ কি করলাম! গ্রুপে তো জাহিনও আছে। সে যদি এখন মেসেজ দেখে তাহলে আমি শেষ! " এসব ভাবতে ভাবতেই জাহিনের ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অমুকের বাচ্চা তমুকের বাচ্চা বলে গালাগাল শুরু। আমি ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে উঠলাম, - এত রাতে ফোন দিয়ে গালি দাও কেন? - ওই চুপ। তোরে না কইসি রাত জাগবিনা। তাও তুই জেগে আছিস কোন সাহসে? - আমিতো ঘুমিয়েই ছিলাম। - তাহলে গ্রুপে মেসেজটা কে দিল শুনি? - আসলে ওয়াইফাই অফ না করেই ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই মেসেজ আসার সাথে সাথে টুং আওয়াজ পেয়েই আরকি! - তাহলে আমারটার রিপ্লাই দিলি না কেন? - আসলে ব্যাপারটা হইসে কী শুনোওতো..... -

ভালোবাসার দায়ভার

মাজেদ ভাইকে দেখতাম রোজ রাতে তার বারান্দার গ্রিল ধরে চিল্লিয়ে কাঁদতেন।মানুষটার জন্য আমার ভয়ংকর কষ্ট হতো।একসময় তার কাছে পড়তে যেতাম,বড় ভাইয়ের মতো। পাশাপাশি বিল্ডিং এ থাকায় দুজনের খুব জমতো।ভারি মজার মানুষ ছিলেন। মাজেদ ভাইয়ের ব্যাচ শুরু হতো বিকাল ৪ টায়। আমরা সব দলবল মিলে ৩ টার ভেতর হাজির হতাম।কখনো মাজেদ ভাই হয়তো ঘুমাচ্ছেন দেখতাম,কখনো খাচ্ছেন। কখনো রাগতেন না। দরজা খুলে হাসিমুখে বলতেন,  "শয়তানের দল হাজির?" সবার ভেতর আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন।সবসময় সাথে সাথে রাখতেন। আমাদের ব্যাচ শেষ হলে সন্ধ্যার পর আরেকব্যাচ পড়ত। ওনারা আমাদের বড় ছিলেন।বেশি আদরের ফলে মাজেদ ভাই আমার কানে ধরে সেই ব্যাচের সাথেও বসিয়ে পড়াতেন। আমি ঢুলুঢুলু চোখে বই খুলতাম।গাল টেনে বলতেন, "বই দেখলেই ঘুম না? আবির তুই ম্যাট্রিক পরিক্ষায় কি করে পাস করবি বলতো? আমি মাথা চুলকাতাম।অসহায়ভাবে বলতাম, "মাজেদ ভাই পড়তে ভালো লাগেনা যে।' বিনিময়ে পেতাম মাজেদ ভাইয়ের হাতের কানমলা।  নিতু আপা সেই ব্যাচেরই। পুরোদস্তর বাঙালি মেয়ে। একটা লম্বা বেনিতে লাল ফিতা আর চোখে কাজল।এর বাইরে কোনো দিন নিতু আপাকে সাজে দেখিনি। মাথানিচু করে আসত, আ

সম্পর্ক

মুরগীর মাংসের তরকারিটা মুখে দেয়ার আগে থেকে ই আমি জানতাম অনিন্দ্য আজ তরকারিতে দুই চামচ লবণ বেশি দিয়েছে।দেখেছি দূরে দাঁড়িয়ে কিন্ত ততোক্ষণ তরকারি বসানো ওর শেষ তাই আর কিছু বলিনি। - সম্পূর্ণা কেমন হলো বললে না? - অনেক ভালো রাঁধুনি তুমি।যথেষ্ট ভালো রেঁধেছ। ছেলেটার চোখে মুখে যেন এভারেস্ট জয় করার হাসি ফুটলো।কৌতহূলবশত নিজের প্লেটে এক পিস  মাংস নিলো, খেতে পারেনি। - এটা তুমি কিভাবে খেলে গো? - আরে তুমি তো জানো ই আমি লবণ বেশি খাই ওটা কোনো ব্যাপার না।তুমি আজ প্রথম রেঁধেছো সে তুলনায় বেশ ভালো রাঁধলে কিন্ত! সে আর কিছুই বলেনি তখন। কপালে একটু দীর্ঘ চুমু একে দিলো। আমি হাসছি মনে মনে এই পাগলটাকে নিয়ে। শরীরটা বেশ ভার ভার লাগছে গতরাত থেকেই।স্বামী-স্ত্রী এই দুইয়ে মিলে ই টুনাটুনির ছোট্ট সংসার।এদিকে আজ শরীর ভালো নেই বলে মশাই আমায় জোর করে বসিয়ে রাঁধতে লাগলেন।অথচ মায়ের মুখে শুনেছি এ ছেলে নাকি কখনো নিজে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত নিয়ে খায় নি। কলেজ লাইফে আমার দীর্ঘ একটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল।ছেলেটার নাম ছিল আকাশ।ভেবেছিলাম তার সঙ্গে ই সংসার হবে অথচ আজ আমি অনিন্দ্যের স্ত্রী। কোনো এক কারণে আকাশের সাথে আমার দীর্ঘ সম্পর্কের বিচ্

জীবনে ভালো কিছু করতে গেলে কি কি আপনাকে করতে হবে আসুন জেনে নেই

 -আয়নায় বার বার নিজেকে দেখবেন। - নিজের সঙ্গে কখনো কাউকে তুলনা করবেন না। - ভুল করলে যখনি জানতে পারবেন ক্ষমা চেয়ে নেবেন।  - অযথা কারো জন্য সময় নষ্ট করবেন না। - সকাল সন্ধ্যা, রাত দিন সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। - নিজেকে প্রচুর সময় দেবেন। - আপনার পাশের জনের কোন নেগেটিভ ম্যাটারে ইন্টারেস্ট দেখাবেন না। -  কে আপনাকে নিয়ে পরে থাকছে বা কে আপনাকে নিয়ে যাতা কমেন্ট করছে এসবে কখনো পাত্তা দেবেন না। - রিলেশন এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন যদি অনুভব করেন। সার্মথ্য অনুযায়ী বিয়ে করে নিন।  - জীবনে যেমনি সিচুয়েশনে আসুক,  কখনো সুখে বা দুঃখে তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেবেন না। - প্রিয়জনকে যতোটা পারবেন সময় দিন। - যেই সম্পর্কেই যান আপনার কোন এক্সিডেন্ট থাকলে অবশ্যই জানাবেন। - পড়াশোনা করুন, যেকোন বিষয় হোক না কেন তা যেন জ্ঞানের হয়। মনে রাখবেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হওয়ার জন্য জ্ঞান এবং মানসিকতার প্রয়োজন। - বড়দের সম্মান করবেন এবং ছোটদের স্নেহ করবেন। - জীবনে যেমনি সিচুয়েশন আসুক দুঃখের হোক বা কষ্টের প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করবেন। - নিজের প্রয়োজনে কাউকে প্রিয়জন নাম

রিং

(১) গভীর রাতে টেলিফোনের শব্দে আতঙ্কিত হবে না এমন মানুষের সংখ্যা এ পৃথিবীতে কম। আজগর ও এর ব্যতিক্রম নয়। তাকে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হয়। সুতরাং রাতের ঘুমটা তার হয় খুব গাঢ়। সেই ঘুম কাটিয়ে যখন সে টেলিফোন ধরল, তখন টেলিফোন কানে নিয়ে সে নিজের হৃদপিন্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। মনে হচ্ছে জিনিসটা বুক ফেটে বের হয়ে আসবে। হার্টের সমস্যা তাদের খানদানি অসুখ। তার দাদা এ রোগে মারা গেছে, তার তিন চাচা এই রোগে মারা গেছে। মনে হয় তার ভবিষ্যতেও একই ঘটনা ঘটবে। নিজেকে ধাতস্থ করে সে যখন, টেলিফোনের কথোপকথনে মন দিল, তখন তার বিছানার পাশের অ্যালার্ম ক্লকটিতে  বারোটা বেজে গেছে। যে খবর তার ছোটভাই শুনালো তাতে তার নিজেরও বারোটা বেজে যাবার জোগাড়। তার ছোট ভাই অত্যন্ত বাচাল একটা মানুষ। সামান্য কথা ফেনিয়ে ফেনিয়ে বিশাল লম্বা করে ফেলে। তার বাবার যে হার্ট এ্যাটাকের মত হয়েছে, এটা আবিষ্কার করতে তার পাঁচ মিনিট সময় নষ্ট হয়ে গেল। এ যাত্রায় তিনি টিকে গেছেন। তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত নয়। হার্টে একাধিক ব্লকেজ ধরা পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে মেডিকেটেড রিং পড়ানো দরকার। (২) তার পরিবারের সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সে এয

একটি সোনার চেইন কিবা সোনালী দিনের গল্প

বিয়ের পর বরকে নিয়ে প্রথম বাপের বাড়ি এলাম।সেই খুশিতে পাড়া প্রতিবেশিরা দলে দলে দেখতে এলো নতুন জামাইকে সাথে অবশ্যই আমাকে। দেখতে এলো,মেয়ে বিয়ে দিয়ে আব্বা আম্মা কতটুকু জিতেছে। সরাসরি বলতে গেলে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে কতটুকু সুখে থাকবে বা বহাল তবিয়তে থাকবে  তার পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে সারাদিন যাবৎ। খুটিয়ে খুটিয়ে আমার শাড়ি কতটা দামী,হাতের চুড়ি কত ক্যারেট গোল্ড,কানের দুল কতো ভারী,গলায় চেইন আছে কিনা সব বিশ্লেষণ করতে বসলো। পাশের বাড়ির চাচী তো বলেই বসলেন।কিরে মুনা, তোর গলায় চেইন নাই কেন? জামাই চেইন দে নাই? কি ভাবী মেয়ের গলা খালি কেন!! আম্মা আমতা আমতা করে বললেন,আর কইয়েন না ভাবী,মেয়ে আমার কোন্থেকে যে এতো আতইশ্যা হইছে, হাতে,কানে, গলায় কিছু রাখতে চাইনা। গলার চেইন পড়তে নাকি তার আজাব আজাব লাগতেছে।আর ভাবী চেইনটা ও যা ভারী মনে হয় তো গলা কাইটা যাইবো। তাই খুলে রাখতে বলছি। বাদ দেন ভাবী,জামাই কেমন লাগলো সেইটা বলেন। না ঠিক আছে, জামাই তো মাশাল্লাহ। বুঝছেন ভাবী, শিউলির বিয়েতে গোটা দশভরী অলংকার পাইছে।এই অলংকার, মোহরানা,এগুলো হইলো মেয়ের সিকিউরিটি। এগুলোর ব্যাপারে ছাড় দিতে নাই।মাইয়ারে বলছি,জামাই বেশি তিড়িং বিড়িং করলে সব গ

এক হাজার আয়নার বাড়ী

পাঠক, আপনি কখনও কোন বাড়ী দেখেছেন, যেখানে এক হাজারটি আয়না আছে?  এগুলো শুধু রূপকথাতেই পাওয়া যায়, তাইনা? না, তা সত্যি নয়। এ রকম বাড়ীও আছে। এক কুকুর গিয়েছিল এ রকম একটি বাড়ীতে বেড়াতে। ড্রইংরুমে ঢুকে তার চোখ কপালে উঠল। চারিদিকে অসংখ্য কুকুর তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কুকুর বলল, এত সুন্দর জায়গা আমি জীবনে কখনও দেখিনি। আমি এখানে আবারও আসব। কুকুর ফিরে এসে অন্য কুকুরকে বলল এ কাহিনী। সেই কুকুর বলল, তাই নাকি? আমিও যাব সেখানে। ড্রইং রুমে ঢুকে দেখে অসংখ্য কুকুর তারদিকে ঘৃণাভরে তাকিয়ে আছে। চোখে অহংকার, মুখ তিক্ত বিরক্ত। না, এখানে কোনদিন আমি আসবোনা। জঘন্য পরিবেশ। পাঠক, পৃথিবীটি অনেকটা সেই বাড়ীর মত যেখানে হাজারটি আয়না আছে।  আপনি যে চোখে পৃথিবীকে দেখবেন, পৃথিবীকে তাই মনে হবে। আপনি হাসুন, পৃথিবীটি স্বর্গ।  আপনি তিক্ত বিরক্ত হোন, পৃথিবীটি নরক। ( একটি বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে ) লিখা:  তারিক হক

বি লেটেড হ্যাপি বার্থডে

ধরুন, আপনি নব্য প্রেমে পড়েছেন। প্রেয়সীর ধরন-ধারণ কিছুই বুঝতে পারছেন না। রবি বাবুর ভাষায়- 'তুমি কোন্ কাননের ফুল, কোন্ গগনের তারা তোমায় কোথায় দেখেছি যেন কোন্ স্বপনের পারা।' প্রেমিকার সাথে কঠিন ঝামেলা করলেন। মন খারাপ করে বাড়ি এলেন। দুজনের কথা বন্ধ। রাতে শুয়ে মনে হল, ভুল আপনারি ছিল, কিন্তু ইগোর কারণে মেনে নিতে পারেন নি। সমস্যা নেই, এই সমস্যাই রবি বাবুও পড়েছেন। সেই গান শুনিয়ে দিন। কোনো পাষাণীর সাধ্য নেই আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। 'যে ছিল আমার স্বপনচারিণী তারে বুঝিতে পারি নি। দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিতে।। কে মোরে ফিরাবে অনাদরে, কে মোরে ডাকিবে কাছে, কাহারো প্রেমের বেদনায় আমার মূল্য আছে।' প্রেমিকার উপর কঠিন অভিমান করলেন। বার বার ফোন দিয়ে আপনার রাগ ভাংগানোর চেষ্টা চলছে। আপনি রবি বাবুর শরণাপন্ন হলেন। 'ডেকো না আমারে ডেকো না। দূরে যাব যবে সরে,  তখন চিনিবে মোরে আজ অবহেলা ছলনা দিয়ে ঢেকো না!' প্রেয়সীর সাথে সুদীর্ঘ বিরহকাল চলছে। প্রবল কাতরতা তাকে দেখার জন্যে। স্বপ্নে, জাগরণে শুধু একটাই মুখ ভাসে। রবি বাবুর ভাষায়- 'আমি আশায় আশায় থাকি। আমার তৃষিত আকুল আঁখি॥ ঘুমে-জাগরণে-মেশা  প্র

হাসি

 কলেজ থেকে বাসায় ফিরছি , মার্কেটর কাছে আসতেই হঠাৎ কে যেন পিছনের দিকে জামা টেনে ধরলো। আচমকা এমন হ্ওয়াতে ভয় নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা টোকাই। আমাকে তাকাতে দেখে হাত বাড়িয়ে বললো - আফা দুইডা টেহা দেন। ওর নির্লিপ্ত চাওয়াকে প্রধান্য না দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। বয়স পাঁচ কিংবা ছয় বছর, একটি মলিন ফ্রক পরা,চুল গুলো রোদে পোড়ে কেমন লালচে হয়ে গেছে।এই শহরটাতে টোকাইয়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো মার্কেট খুঁজে পঞ্চাশ জন পথশিশু পাওয়া যাবে। এদিক দিয়ে যাওয়াটা খুবই সমস্যাজনক হয়ে উঠেছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত ছাড়া পাওয়া যায় না। হাতে পায়ে ধরে আবার কেউ কেউ জড়িয়ে ধরে থাকে।কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মেয়েটির দিকে রাখি চোখে তাকিয়ে বললাম - এই মেয়ে জামা ছাড়, টাকা নেই আমার কাছে। - না, ছাড়তাম না। কয়ডা টেহা দিয়া যান আফা। - বললাম তো টাকা নেই আমার কাছে, ছাড় বলছি আমাকে। মেয়েটি জামা ছেড়ে এবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করেছে।আমি আবার ও বলছি ছাড়তে কিন্তু সে নাছোড়বান্দা টাকা না নিয়ে ছাড়বেই না।পথে হাজারো মানুষের আনাগোনা,এক বৃদ্ধা লক্ষ্য করে এগিয়ে এসে দিলো এক ধমক। মেয়েটি ভয়ে

বেলা শেষে

নয়নের চাচাতো ভাই আকাশের বিয়ে দু'দিন পরে। আকাশের জোর দাবি নয়নকে যেতেই হবে। সে না গেলে বিয়েই করবে না। কিন্তু নয়ন একা যাবে না, আমাকে সাথে নিয়ে যাবে। কোন উপায় না পেয়ে আমিও রাজি হলাম। বিয়েতে গেলে ভালোই আনন্দ ফুর্তি হবে। এমনিতেও নয়নের মন খারাপ কিছুদিন ধরে, বিয়ের সুবাদে ওর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।  আগে আমাদের ফেনী যেতে হবে নয়নের বাড়িতে। সেখান থেকে বর যাত্রী হিসেবে বরিশালে যেতে হবে। অনেক বড় জার্নি যদিও আমি যেতে চাইছিলাম না, এখন আমি চরম এক্সাইটেড। রাত্রের বাসে উঠে কানে হেডফোন লাগিয়ে দিলাম ঘুম। এক ঘুমে রাত কাবার। ভোর ছয়টা দিকে ফেনী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। তারপর সিএনজি দিয়ে নয়নের বাড়িতে যেতে লাগলো মাত্র পনেরো মিনিট।  বিয়ে বাড়িতে ঈদের থেকে বেশি আনন্দ। যাওয়া মাত্রই মানুষ গুলো আমাদের সাদরে গ্রহণ করে নিজের মানুষের মতো আপন করে নিলো। পরদিন সকাল।  নানান ধরনের লোকজনের আনাগোনা দেখতে ভালোই লাগছে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই মেতে আছে বরকে নিয়ে। আজকে বরের গায়ে হলুদ, নয়ন বরকে নিয়ে খুব ব্যাস্ত। আমি বরের গায়েহলুদের স্টেজের পাশে চেয়ারে বসে আছি। আকাশকে হলুদ দিয়ে গোসল করানো হচ্ছে। এদিকে ছোট ছেলে মেয়ে হলুদ নিয়ে খেলছে।