বাটন ফোন
রাত ২ টা। চ্যাট অফ করে নিউজফিড স্ক্রল করছি এমন সময়ে জাহিনের মেসেজ, "জেগে আছো?? কী করো??"
জাহিনের মেসেজ দেখেই শঙ্কিত হয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, আমার রাতে জেগে থাকা জানার এ কোনো নতুন ফাঁদ নয়তো!
সেই ভাবনা থেকেই মেসেজের রিপ্লাই দিবনা বলে ঠিক করলাম। আর তাই মেসেজটা সিনও করলাম নাহ।
মিনিট দুয়েক পর গ্রুপে ভাইয়া মেসেজ দিল, " কাল তোমাদের অনলাইন ক্লাস হবেনা।"
আমিতো খুশিতেই "আলহামদুলিল্লাহ " লিখে মেসেজ দিয়ে দিলাম।
মেসেজ দেওয়ার পর মনে হলো, " আরেহ! এ কি করলাম! গ্রুপে তো জাহিনও আছে। সে যদি এখন মেসেজ দেখে তাহলে আমি শেষ! "
এসব ভাবতে ভাবতেই জাহিনের ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অমুকের বাচ্চা তমুকের বাচ্চা বলে গালাগাল শুরু। আমি ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে উঠলাম,
- এত রাতে ফোন দিয়ে গালি দাও কেন?
- ওই চুপ। তোরে না কইসি রাত জাগবিনা। তাও তুই জেগে আছিস কোন সাহসে?
- আমিতো ঘুমিয়েই ছিলাম।
- তাহলে গ্রুপে মেসেজটা কে দিল শুনি?
- আসলে ওয়াইফাই অফ না করেই ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই মেসেজ আসার সাথে সাথে টুং আওয়াজ পেয়েই আরকি!
- তাহলে আমারটার রিপ্লাই দিলি না কেন?
- আসলে ব্যাপারটা হইসে কী শুনোওতো.....
- ওই চুপ। তোর আসল নকল বুঝিনা। ফোন রাখ। রেখে এখনই ঘুমা।
বলেই ফোন কেটে দিল।
পরেরদিন সকাল ৭ টায় আবার জাহিনের ফোন। রিসিভ করতেই,
- উঠসো তুমি ঘুম থেকে?
- কেবলই তো ঘুমালাম। এখনই কীসের উঠা?
- কেবলই ঘুমালা মানে?
- আরে নাহ বলতে চাইসিলাম কেবলই ঘুম থেকে উঠলাম।
- এইতো ভালো ছেলের মত কথা। মনে থাকে যেন বিকাল ৫টায় আসার কথা।
- আচ্ছা।
বিকাল ৫টায় টি-বাঁধে গিয়ে দেখি ম্যাডাম বসে আছে। আমি বাদামওয়ালার কাছ থেকে বাদাম নিয়ে গিয়ে জাহিনের পাশে বসলাম। আমাকে দেখেই,
- যাক সময়মতো এসেছ।
- হুম। এই নাও( বাদামের ঠোঙা হাতে ধরিয়ে)।
- বাহ! এটাও মনে আছে।
- থাকবেই তো।
- তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
- কী গিফট?
- এই নাও।( একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে)
- খুলেই দেখ।
প্যাকেটটা খুলে আমি হতাশ হয়ে জাহিনের দিকে তাকিয়ে,
- এটা কেন?
- তোমার স্মার্টফোন আজ থেকে আমার কাছে জমা থাকবে। যতদিন না এডমিশন হবে ততদিন তুমি এই বাটন ফোন ব্যবহার করবা।
- কিন্তু কেন?
- তাহল তোমার ওয়াইফাই অফ করারও ঝামেলা থাকবেনা। আবার রাতও জাগতে হবেনা।
- হাই আল্লাহ! এই কী ছিল কপালে।
- এটাই তোমার রাত জাগার উপহার।
তারপর থেকে আমি বর্তমানে বাটন ইউজার।
লিখা: ফরাজ ফারদিন সাকিব