সম্পর্ক

মুরগীর মাংসের তরকারিটা মুখে দেয়ার আগে থেকে ই আমি জানতাম অনিন্দ্য আজ তরকারিতে দুই চামচ লবণ বেশি দিয়েছে।দেখেছি দূরে দাঁড়িয়ে কিন্ত ততোক্ষণ তরকারি বসানো ওর শেষ তাই আর কিছু বলিনি।

- সম্পূর্ণা কেমন হলো বললে না?

- অনেক ভালো রাঁধুনি তুমি।যথেষ্ট ভালো রেঁধেছ।

ছেলেটার চোখে মুখে যেন এভারেস্ট জয় করার হাসি ফুটলো।কৌতহূলবশত নিজের প্লেটে এক পিস  মাংস নিলো, খেতে পারেনি।

- এটা তুমি কিভাবে খেলে গো?

- আরে তুমি তো জানো ই আমি লবণ বেশি খাই ওটা কোনো ব্যাপার না।তুমি আজ প্রথম রেঁধেছো সে তুলনায় বেশ ভালো রাঁধলে কিন্ত!

সে আর কিছুই বলেনি তখন। কপালে একটু দীর্ঘ চুমু একে দিলো। আমি হাসছি মনে মনে এই পাগলটাকে নিয়ে।

শরীরটা বেশ ভার ভার লাগছে গতরাত থেকেই।স্বামী-স্ত্রী এই দুইয়ে মিলে ই টুনাটুনির ছোট্ট সংসার।এদিকে আজ শরীর ভালো নেই বলে মশাই আমায় জোর করে বসিয়ে রাঁধতে লাগলেন।অথচ মায়ের মুখে শুনেছি এ ছেলে নাকি কখনো নিজে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত নিয়ে খায় নি।


কলেজ লাইফে আমার দীর্ঘ একটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল।ছেলেটার নাম ছিল আকাশ।ভেবেছিলাম তার সঙ্গে ই সংসার হবে অথচ আজ আমি অনিন্দ্যের স্ত্রী।

কোনো এক কারণে আকাশের সাথে আমার দীর্ঘ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।দুজনে মিউচুয়ালভাবে ই সে সম্পর্কের ইতি টানি।এদিকে আমি আস্তে আস্তে পাগল প্রায় হয়ে যাই।নাওয়া নেই, খাওয়া নেই সারাক্ষণ জায়নামাজে পড়ে থাকতাম।হুট করে ই একদিন খালা কোথা থেকে যেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির।বাবা-মা ও চাইলেন। দেখা যাক ছেলে কেমন হয়।অবশেষে বিয়ে পাকাপোক্ত হলো।তবে প্রায়  পনেরো দিন পর বিয়ের দিন ধার্য করা হয়।

পাত্রপক্ষ দেখে যাবার দু চারদিন পর হুট করে ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।রিসিভ করার পর পরই,

- হ্যালো

- হ্যালো! কে বলছেন?

- আমি অনিন্দ্য।

- ঠিক চিনলাম না আপনায়!

- আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে।

- ও আচ্ছা।ভালো আছেন?

- এইতো।আপনি?

- ভালোই।

- আপনার সাথে কথা বলা যাবে একটু?

- জ্বী বলুন।

- দেখুন সম্পূর্ণা আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।আপনাকে বলার পর তবেই আমি আপনার সম্মতি নিয়ে আগাতে চাই এ সম্পর্কে।

- হুম... বলুন।

- আপনার জীবনে প্রেম ছিল জানেন? আপনি আমার জীবনে আসার পর চাইনা এসব জেনে কষ্ট পান।

- আচ্ছা।তারপর বিয়ে কেন করছেন না তাকে?

- তার সাথে আমার সম্পর্কে ইতি ঘটেছে কিছু দিন আগেই।

আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো অনিন্দ্যকে আমার জীবন নিয়েও সব বলা উচিত।বলে দিলাম আমিও।

- এবার বলুন আপনি কি আমায় বিয়ে করতে চান অনিন্দ্য?

- এই প্রশ্ন যদি আমি আপনাকেও করি সম্পূর্ণা।করবেন বিয়ে আমায়?


এই পনেরো দিনে অনিন্দ্যকে আমি যথেষ্ট চিনেছি।আমি মনে মনে দুজনের প্রাক্তনকেই ধন্যবাদ দিতাম যে ওদের কারণেই আমরা আমাদের জীবনের সঠিক মানুষকে খুঁজে পেয়েছি।আমরা নিজের জীবনের প্রতিটা বাজে অভিজ্ঞতা বলেছি, বলেছি মন ভাঙ্গার সব গল্পগুলি।

বিয়ের দিনটাও খুব তাড়াতাড়ি চলে আসছে।সব মেয়ের মতই আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো এদিকে ফোন অফ করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম।

 বারান্দায় বসে আছি এমন সময়ে দেখি সাদা শার্ট পড়া কে যেন আমার দিকে হাত নেড়ে সায় দেয়ার আহবান করছে।সোডিয়ামের হালকা আলোয় দেখলাম সে আর কেউ নয় অনিন্দ্য!

হুট করে মনে হলো ফোনটা যে বন্ধ করে রেখেছি।অন করতেই দেখি ৯৮টা মেসেজ।সে যাইহোক ফোন দিলাম অনিন্দ্যকে।

- আপনি এতোরাতে এখানে?

- আপনি ফোন ধরছিলেন না এতোক্ষণ ধরে তাই মনে হলো কি হলো আমার হবু বউয়ের।

- ওহ।আমি অত্যন্ত দুঃখিত!

- মন খারাপ?

- না তো!

- একটু নিচে আসবেন?

- উহু আসা যাবেনা। বাসায় খালা-মামারা আছেন।তারচেয়ে আপনি আসুন উপরে।

- না না! হবু জামাই এভাবে কিভাবে আসি বলুন।

- তাও ঠিক।

- আচ্ছা আসতে হবে না।আমি এমনি চলে যাচ্ছি।আপনি বরং একটু কায়দা করে গেটের সামনে আসবেন কেমন?

অনিন্দ্য চলে গেলো।আমি ভাবলাম কি হলো এমন যে নিচে আসতে বললো।গেটের কাছে যেতেই দাড়োয়ান কাকা আমার হাতে একটি প্যাকেট দিয়ে বললেন, অনিন্দ্য দিয়ে গেছে।বাসায় গেলাম কোনোরকম লুকিয়ে।প্যাকেটটা খুলে দেখি ১২টা আইসক্রিম সাথে অনেকগুলো চকোলেট। আমি ভাবতে লাগলাম ও জানে কিভাবে আমার মন খারাপ হলে আইসক্রিম চকোলেট খেলেই মন ভালো হয়ে যায়! সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট  তাতে গুটিগুটি হাতের লেখা, 


 প্রিয় হবু বউ, 

মন খারাপ কেন এতো শুনি?আচ্ছা আপনায় কথা দিলাম, বিয়ের পর যখন ইচ্ছে আসবেন বাপের বাড়ি।যদি মাঝরাতেও ঘুম থেকে তুলে বলেন, বাসায় যাবো! তখনো নিয়ে আসবো কিন্ত বাবা।তবে কখনোই যেন মন খারাপ না করেন আর বলে রাখলাম!

ইতি  

আপনার হবু বর। 


বাসর রাত।লোকটা আসলো একটু দেরি করে।কিছুক্ষণ বসে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, 

" সম্পূর্ণা একটু কষ্ট করে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসবেন ?"

আমিও কথা না বাড়িয়ে সায় দিলাম।দুজনে ওযু করে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম।নামাজ শেষে আমি দেখলাম মোনাজাতে অনিন্দ্য অঝোরে কাঁদছে।আমি বারেবার কি হয়েছে জানতে চাইলেও ও কিছু ই বলেনি।

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি দু'জনে।নীরবতা ভেঙ্গে ও ই প্রথমে বললো,

- তুমি আমার স্ত্রী। জানো কান্নাটা কেন ছিল?

খুশির।আমি ভাবিনি তুমি আমায় বিয়ে করবে। ভাবতে পারবেনা সম্পূর্ণা কোনো এক ছলনাময়ীর দেয়া কষ্টে এই আমি কত কেঁদেছি রাতের পর রাত।

- আমার জীবন থেকেও আকাশকে ভুলতে পারাটা খুব কঠিন।

- জানি।বেশ কয়েকদিন ধরেই টের পাচ্ছিলাম তুমি ওকে এখনো ভুলোনি! আমায় একটা কথা দিবে?

- বলেন।

- আমরা কেউ কারো জীবনে ই প্রথম প্রেম নই।এটা নিয়ে তোমার বা আমার দুজনের ই কারো প্রতি ই কোনো অভিযোগ নেই।না কখনো থাকবে!আজকের পর আমরা কেউ কারো অতীত নিয়ে কথা বলবো না।

- কথা দিলাম অনিন্দ্য।


আজ আমাদের টুনাটুনির সংসারের বয়স তিন বছর।এই তিন বছরে অনিন্দ্য বা আমি কখনো নিজেদের অতীত সামনে আনি নি। যেন আমরা দুজন দুজনের জীবনেরই প্রথম ও শেষ প্রেম।

বিকেলে একটু বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছি।অনিন্দ্য পাশে বসেছে একগাদা বাচ্চাদের নামের বই নিয়ে।একটার পর একটা চয়েস করছে ছেলে হলে কি রাখবে নাম আর মেয়ে হলে কি রাখবে।পাগল একদম!

পেটের ভেতর আবার উনি ছোটছোট পা দিয়ে লাথি দিচ্ছেন অনিন্দ্য শোনার জন্য তড়িঘড়ি করে পেটের উপর কান দিয়ে শুনছে আর হাসছে।বাপ-সন্তান মিলে কি কথা বলে আমি বুঝিনা।আমার দৃষ্টি মেরুন গাছের দুটি পাখির উপর।সেদিন ই দেখলাম কি সুন্দর ঘর ছিল ওদের।সম্ভবত ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে তাই দুজনে আবার বাড়ি বানাচ্ছে।আমাদের মনটাও ঠিক এমন।না ভাঙ্গলে জোড়া লাগবেই বা কিভাবে? কেউ যেমন মন ভাঙ্গে আবার সে মন  জোড়ার লাগাতেও কোনো একটা মানুষের প্রয়োজন হয় জীবনে।  


লেখা - Mahdia Ahmed

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]