নারী
ইন্টারভিউ রুমে দেখে নিজের বসকে দেখে থমকে যায় সোহান।ইনিই তো সেই মেয়ে যাকে সে ভীড়ের মাঝে রাতের আধারে বাজে ভাবে হ্যারাস করছিলো।তার স্পর্শকাতর স্থানগুলো স্পর্শ করে নিজের লালসা মিটাচ্ছিলো!ইরা খুব ভালোভাবেই সোহানকে চিনতে পেরেছিলো।শুরুতেই কোনো সিনক্রিয়েট না করে সে অতি ভদ্রতার সাথে সোহানকে বসার অনুরোধ জানায়।
"প্লিজ সিট।"
সোহান বসে।ইরা কাগজপত্র দেখতে দেখতে বলে,,,
"তো আপনিই সোহান মাহমুদ? "
"জ্বী।"
"প্রাতিষ্ঠানির শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া আপনার আর কোনো গুণ আছে?"
"সব মানুষেরই আলাদা ট্যালেন্ট থাকে।আমারও আছে হয়তো।কিন্তু তা আমার জানা নেই।"
বিচক্ষণতার সাথে উত্তর দেয় সোহান।ইরা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,
"কিন্তু আমার জানা আছে।আপনি খুব ভালোভাবে মেয়েদের হ্যারাস করতে পারেন।আমি কালকে তার প্রমাণও পেয়েছি।"
সোহান কি বলবে বুঝতে পারে না।মাথা নিচু করে বসে থাকে।ইরা আবার বলা শুরু করে,,,
"ভাগ্যের কি অদ্ভুত খেলা তাই না?আপনি যাকে ভীড়ে যাকে কালকে হ্যারাস করলেন।যাকে ভোগের সামগ্রী ভাবলেন আজ সেই আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছে।বাট সরি টু সে আমি আপনাকে চাকরিটা দিতে পারবো না।আমি চাই না আমার অফিসে মানুষ রূপী,পুরুষ লোভী কোনো জানোয়ার থাকুক।আপনি আসতে পারেন।"
সোহান মাথা নিচু করে বের হয়ে যাচ্ছিলো।পেছন থেকে ইরা ডাক দিয়ে বলে,,,
"আমি বলছিনা পুরুষ তুমি কম্বাইন সিটগুলো ছেড়ে দাঁড়াও আমার জন্য।আমি বলছি আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি তুমি গা ঘেষে দাঁড়িয়ো না,বিভিন্ন বাহানায় আমার বুকে,পিঠে ছুঁয়ে দিও না।এটা শুধু আমার কথা নয়,লোকাল বাসে ওঠা প্রতিটা নারীর কথা।আশা করছি আপনি নিজেকে শুধরে নেবেন।শুভ কামনা রইলো।"
মুচকী হাসে ইরা।সোহান কিছু না বলে চলে যায়।
নিজের স্বপ্ন ডাক্তারিকে ছাড়তে পারবো না বলে আমার ভালোবাসার মানুষটি,আমার প্রেমিক আমায় স্বার্থপর বলে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।আজ সেই আমিই সিজারের মাধ্যমে তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখালাম।তারও মেয়ে হয়েছে। ওটি থেকে বের হয়ে তাকে বললাম,,,
"কনগ্রেটস। মেয়ে হয়েছে। মিষ্টি কই?"
ও আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো।চোখে মুখে আফসোস, অপরাধ বোধের ছাপ স্পষ্ট।
"আমায় ক্ষমা করে দাও"
"কেন?"
"তোমায় স্বার্থপর বলেছিলাম।অথচ আজ তুমি না থাকলে আমার স্ত্রী সন্তানকে বাঁচানো যেত না।"
আমি কিছু এর কোনো প্রতিত্তোর দিই না।কি ই বা দিতাম প্রতিত্তোর?আল্লাহই তো সময়কে উছিলা করে আমার জবাব দিয়ে দিয়েছে।মুচকী হাসি দিয়ে চেম্বারের দিকে পা বাড়াই।
.
.
খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিলো শিউলির। ঘরের কোনো একটা কাজে একটু এদিক ওদিক হলেই স্বামী বলতো,,
"রোজগার তো করো না বুঝবা কী?,বের হয়ে যাও বাড়ি থেকে।"
তাছাড়া শ্বাশুড়ির অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও তো আছেই।বাবা-মা কে বলেছিলো শিউলি নিজের অবস্থানের কথা।তারা শিউলির মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,,,
"একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।"
হ্যাঁ,সব ঠিক হয়েছে।শিউলি মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে পরিস্থিতি পরিবেশের সাথে।ভেতর থেকে মরে গেলেও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নিয়েছে সব।ভেবেছিলো বাচ্চা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না!মেয়ে হওয়ায় সেই একই পরিস্থিতি। এক্টাই চাওয়া ছিলো শিউলির!ওর মেয়েকে যেন ওর মতো পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়।ওপরওয়ালা শিউলির ইচ্ছা পুরণ করেছেন।আজ শিউলির মেয়ে নাবিলা একজন পাইলট।এক হাতে সে যেমন ককপিট সামলাচ্ছে অন্য হাতে ঠিকই সংসার সামলাচ্ছে।বিয়ে সবারই করতে হবে।সংসার ধর্ম সবাইকেই পালন করতে হবে। তাই বলে যে মেয়েরা ঘর সামলানোর পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ করতে পারবে না এমন কোনো কথা নেই।সমাজে উন্নয়নে নারী পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা দরকার।তাই তো বেগম রোকেয়া নারী পুরুষকে গাড়ির চাকার সাথে তুলনা দিয়েছেন।ইসলামেও নারীদের স্বনির্ভর হওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। নবী করিম(সা) এর সহধর্মিণী হযরত খাদিজা (রা) নিজেই ছিলেন এক ব্যবসায়ী নারী। তিনি একই সাথে ঘর সংসার ব্যবসা সামলিয়েছেন।তাই ধর্মের দোহাই দিয়েও নারীকে আটকানো যাবে না।যে পুরুষ বলতো নারীদের লেখাপড়া চাকরি বাকরির কোনো দরকার নেই দিন শেষে দেখা যায় সেই পুরুষই নিজের মা,বোন,স্ত্রীর জন্য নারী ডাক্তার খোঁজেন।আমাদের লজ্জা লাগা দরকার আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারী পুরুষের ভেদাভেদ করি।প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের ছোট করি,হ্যারাস করি অসম্মান করি অথচ দিন শেষে নারীই আমাদের মা,বোন,স্ত্রী,প্রেমিকা।শুধু পুরুষদের দোষ দিলে হবে না!অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এক নারীর দ্বারাই আরেক নারী হয়রানির শিকার হয়।আশেপাশে তাকালে এমন অনেক ঘটনা দেখা যায় সেখানে নারীর দ্বারাই নারী অপমান,অসম্মানের শিকার হয়।সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভুমিকা প্রয়োজন। আর নারীদেরও কারও কথায় পিছিয়ে গেলে চলবে না।সবসময় মনে রাখতে হবে "আমি নারী, আমি সব পারি"
পাছে লোকে কিছু তো বলবেই।মনোবল হারালে চলবে না।নিজের লক্ষ্যে, নিজের সিদ্ধান্ত অটল থাকতে হবে।শ্রদ্ধা রইলো পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি।
সমাপ্ত
লেখাঃ লুৎফুন্নাহার আজমীন (কন্ঠ)