₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]
সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম
আমাদের এলাকার এক আপু আছে যে আমার প্রথম ক্রাশ। আমি যখন প্রথম বোঝতে পেরেছি ক্রাশ কি তখন থেকেই এই আপুর উপর আমি ক্রাশিত। আপুটার নাম পুতুল দেখতেও পুতুলের মতো লাগে। আমি তার সাথে কখনও তেমন ভাবো কোনো কথা বলিনি। রাস্তাঘাটে যখন আপুকে একা দেখি তখন একটা গান গাই, তোকে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে হৃদয়ের কোটরে রাখব...
পুতুল আপু আমাকে কিছু বলতে চায় মনেহয় কিন্তু কেনো জানি বলে না। একদিন কলেজ থেকে আসার পথে এই গান গেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম হঠাৎ একজায়গায় আপু দাড়ালো। আমি তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দূরে দাড়িয়ে থাকলাম। পেছন ফিরে আমাকে ডাক দিয়ে বললোঃ
-এই এদিকে আয়
আমি তার ডাক শোনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তারপরও তার কাছে গেলাম...
-এই তুই আমাকে দেখে এই গান গাছ ক্যান?
-তোমাকে দেখে গান গাই মানে? আমি তো সব সময় এই গান গাই
-আমার সামনে এই গান আর গাইবিনা
-কেনো?
-গাইবিনা ব্যাস।
-আমি যখন এই গান গাবো তখন তুমি আমার সামনে না আসলেই তো হয়। নিজেকে শাসন না করে আমাকে করছো?
-ভারি দুষ্টু হয়েছিস না
-দুষ্টু হবো ক্যান! জানো আমি যাকে বউ বানাবো তাকে আমি পুতুলের মতো করে রাখব।
-রাখিস রাখিস, এবার আমার সামনে থেকে দূর হ
.
পুতুল আপুর সামনে থেকে দূর হয়ে আমার পরিচয়টা দেই...
আমার নাম রাজ। আমি গ্রামে বেড়ে উঠা সাদাসিধা বাপের ফাজিল ছেলে। আমি এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। আর পুতুল আপু সেকেন্ড ইয়ারে। আমরা দুজন আবার একই কলেজে পড়ি
.
বাসায় এসে পুতুল আপুর কথা মনে করে করে হাসছি। মেয়েটাকে আমার বিষণ ভালো লাগে। কোনদিন তেমন ভাবে কোনো কথা বলি নাই। দুবার দুই প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন আম্মার কথা জিঙ্গেস করেছিল। আমিও বলে দিয়েছিলাম আম্মা ভালো আছে, এইতো...
এই মেয়েটা ক্যান যে আমার বয়সে বড় হয়ে জন্ম নিলো। নাহলে আজই প্রপোজ করে দিতাম।
পরদিন একই ভাবে গান গেয়ে যাচ্ছি। পুতুল আপু আমাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো। আমাকে কিছু বলেছে হয়তো কিন্তু আমি উল্টোদিকে হেঁটে পুতুল আপুর সামনে থেকে চলে গেলাম। আজ সামনে গেলে নিশ্চুই আমার খবর ছিলো।
পরদিন একই ভাবে রাস্তা দিয়ে দুজন কলেজে যাচ্ছি। আমি তো আমার মার্কা মারা গান গেয়ে যাচ্ছি। আমাকে বললো
-এই দাড়া
-হুম বলো?
-তোকে না বলেছি আমার সামনে গান গাবিনা
-কি মুসিবত... যে গান গেয়েছে তাকে বলো এই গান কেন আবিষ্কার করল! আমি গেয়েছি তার গাওয়া শোনে।
-ভারি ফাজিল হয়েছিস না! এই কথা বলে আমার গালে ঠাশশ টাশশ বসিয়ে দিলো। আমি নাছোড়বান্দার মতো কলেজে চলে গেলাম। কলেজ থেকে দুজন একই বাসে করে গ্রামের আাঁকা বাঁকা পথ বেয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে আসার আগে কিছু পথ পায়ে হেঁটে আসতে হয়। আজ রাস্তা দিয়ে আসার সময় আমি একদম চুপ ছিলাম। আপু আমাকে যেই থাপ্পড় দিয়েছে একসপ্তাহ ভরা মনে থাকবে। আমাদের বাড়ি থেকে দুই বাড়ি পর পুতুল আপুদের বাড়ি। আমি যখন আমাদের বাড়ির মেইন রাস্তা দিয়ে ঢুকছিলাম তখন দেখেছি পুতুল আপু পেছন ফিরে আমাকে বারবার দেখছে। কি সাঙ্ঘাতিক মাইয়া মাইয়ে। একটা জুয়ান ছেলের উপর হাত তোলতে পরোয়া করল না। আমি না হয়ে যদি অন্য ছেলে হতো তাহলে তো উল্টো ঠাশশ ঠাশশ...
না আমাকে তো মাত্র একটা থাপ্পড় দিয়েছে এটা এ আর এমন কি! কাউকে ভালোবেসেও এমন থাপ্পড় সচরাচর দেওয়া যায়।
ধ্যাত আমি এসব ভাবছি ক্যান। নিশ্চই পুতুল আপু রাগ করে আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে। অতিরিক্ত রাগ নাহলে মেয়েরা ছেলেদের উপর হাত তুলতে চায় না। এই টপিক নিয়ে আর কথা নাই বলি।
পরদিন কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম কিন্তু আমাদের বাড়ির সামনে দেখি পুতুল আপু। আমি তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে অন্য পথে কলেজে চলে গেলাম। কলেজে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে। ফাজিল ছেলেদের বন্ধুবান্ধব তো থাকারই কথা। সবাই নিজেকে ফাজিল বলেতে চায় না। কিন্তু আমি তাদের মতো না। আমি নিজে কি তা সবাইকে বলে দেই। আমার ভালো গুণের চেয়ে খারাপ গুনটাই বেশি। যাগ্গা কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি এমন সময় পুতুল আপু আমার সামনে এসে বললো...
-স্যরি
-কেন কি করেছ তুমি?
-এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?
.
আমি আর কিছু জানতে চাইনি। একটা মেয়ের হাতে থাপ্পড় খাওয়ার কথা বন্ধুদের সামনে বললে আমার নিজেরই তো প্যাক্টিজ লসস।
-তা এখন থেকে কি ওই গান গাইতে পারব
-তোর কি একটুও লজ্জা শরম নাই। স্যরি বলেছি বলে এই নয় যে তোকে গান গাওয়ার পারমিশন দিব।
-ওকে
কলেজ শেষে দুজন একই বাসে করে বাড়িতে চলে এলাম।
.
এইভাবে কিছুদিন গেলো। এখন আর পুতুল আপুকে দেখে গান গাই না। আগের থেকে অনেক ফ্রি এখন আমরা দুজন। এখন পুতুল আপুর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধত্ব গড়ে উঠেছে। আপু কলেজে যাওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আবার আসার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। পুতুল আপু আমার প্রতি নিশ্চুই ধুর্বল হয়েছে নাহলে এতো তাড়াতাড়ি আমার সাথে মিশে গেলো কিভাবে! একদিন কলেজ থেকে আসার পথে পুতুল আপু আমাকে বললো
-আচ্ছা আমার ক্লাসমেট রাজু ছেলেটা কেমন রে?
-মানে কি? আমার থেকে তুমিই তো ওকে ভালোভাবে চিনো। কারণ ছেলেটা তুমার ক্লাসমেট
-তোকে না দেখি সারাক্ষণ রাজুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে
-তো?
-তো আবার কি? তোর খেলার সাথীকে তুই চিনবিনা?
-তা চিনে কি করব? সত্যি করে বলতো কেইসটা কি?
-তোকে এসব জেনে কোনো লাভ নাই।
.
এই মাইয়ার মতলব কি! আমি তাকে পছন্দ করি আর সে অন্য ছেলের পিছু পিছু ঘরে। না এসব হতে দেওয়া যাবে না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করব কিছুই তো আইডিয়া আসছেনা। পরদিন কলেজে যাওয়ার আগে আব্বার পকেট থেকে ৫০ টাকা চুরি করলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে পুতুল আপু আমাকে ডাক দিলো। এক সাথে দুজন চলে গেলাম কলেজে। কলেজ ছুটির শেষে পুতুল আপুকে আসছি বলে কলেজ গেটের সামনে দাড় করিয়ে চলে গেলাম গোলাপ কিনতে। ২০ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ কিনলাম। আসার সময় ৩০ টাকা দিয়ে দুটা চিপস কিনে নিয়ে এলাম। চিপস একটা পুতুল আপুকে দিলাম। একটা আমার নিজের জন্য রাখলাম। আর হ্যা গোলাপটা কিন্তু আমার ব্যাগের ভেতর লোকিয়ে রেখেছি। গ্রামের আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে চলে এসেছি আমাদের গ্রামে। গাড়ি চড়া শেষে এবার আমাদের পায়ে হেঁটে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে। হেঁটে কিছুদূর আসার পর পুতুলকে বললাম...
-দাঁড়াও একটা কথা আছে
-হেঁটে হেঁটে বলি
-না হেঁটে হেঁটে বলা যাবে না
-ঠিক আছে বল?
আমি ব্যাগ থেকে গোলাপ বাহির করে গোলাপ দিয়ে পুতুল আপুকে প্রপোজ করলাম। পুতুল আপু আমাকে বললো
-ফাইজলামি করছ?
-ভালোবাসা ফাইজলামি না
-তুই কি সত্যিই আমার সাথে প্রেম করতে চাস?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বোধক শব্দ জানালাম।
অতপর ঠাশশ ঠাশশ বুঝতেই তো পারছেন। থাপ্পড় দিয়ে আমাকে বললো...
-তোকে খুব ভালো মনে করেছিলাম আর তুই...
-আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাইনা তোমাকে হারাতে।
-তুই জানিস তুই আমার বয়সে ছোট?
-ছোট হয়েছি তো কি হয়েছে তোমাকে আমি সুখে রাখব।
-যা আমার সামনে থেকে দূর হ।
.
আমি পুতুল আপুর কথা শুনে ভয়ে চলে আসলাম। যা থাপ্পড় দিয়েছে না ১ সপ্তাহ গালে ব্যাথা থাকবে। হাতে কি শক্তি মাইরে। কোন গুদামের চাল খায় আল্লাহ ভালো জানে
সামান্য প্রপোজের কারণে সব শেষ। ধ্যাত কেন যে প্রপোজ করতে গেলাম। এখন আমও গেলো ছলাও গেলো। না পুতল কে আমার প্রেমের জালে ফেলতেই হবে। আমি হার মেনে নেওয়ার পাত্র না। পরদিন আর কলেজে যাইনি। তার পরদিন গেলাম। আসার সময় এক সাথে দুজন আসলাম কিন্তু একজনের সাথে অন্যজনের কোনো কথা নাই। বাসায় এসে খাবার খেয়ে পুতুল আপুদের বাড়িতে চলে গেলাম। ওর আম্মার সাথে অনেক্ষণ গল্প করলাম। পুতুলের আম্মা খুব কিপ্টা। তাদের বাড়িতে প্রায় ১ ঘন্টা ছিলাম। আসার কিছুক্ষণ আগে আমাকে পান খাওয়ালেন। আমি সাধারণত পান খাই না কিন্তু উনার সাথে গল্প করে গলার পানি সব শুকিয়ে গেছে। পান খেয়ে গলায় রস করলাম। অতপর সালাম দিয়ে আমার বাড়িতে আমি সোজা রাস্তায় চলে এলাম...
পুতুল আপুদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি চলে আসলাম। পরদিন কলেজে গিয়ে বন্ধু জুয়েলকে বললাম...
-দোস্ত আমি তো পুতুল কে খুব ভালোবাসি রে।
-শ্লা কস কি! জানস না ও তোর সিনিয়র?
-মামা প্রেম ভালোবাসা সিনিয়র জুনিয়র মানে না।
-তা এখন তুই কি করতে চাস?
-আমি কি করব জানলে কি তোর সাথে এই কথা শেয়ার করতাম। কিভাবে কি করতে হবে একটু আইডিয়া দে না প্লিজ!
-কি আইডিয়া দিব কিছুই তো মাথায় ঢুকছেনা। চল আমাদের সকল ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়ে এই কথা শেয়ার করি
-ওকে চল!
.
আমার সকল ফ্রেন্ড টিনা, মিনি, কিনা, রুয়েল, কুয়েল সবাইকে আমার ভালোবাসার মানুষটার কথা শেয়ার করলাম। অনেকে অনেক ধরণের আইডিয়া দিলো। কেউ বললো চিঠি লিখে দিতে। কেউ আবার বললো সামনাসামনি প্রপোজ করে দিতে। কেউ আবার বললো পুতুল আপুর কোনো বান্ধবীকে দালাল হিসেবে মধ্যখানে রাখতে। বন্ধু ফাহিম বললো সে নাকি আমার কথা পুতুল আপুকে বলে দিবে। তবে সবচেয়ে বেস্ট আইডিয়াটা ছিলো মিনার। মিনা বললো, দোস্ত তুই এতোদিন ধরে পুতুলকে চিনিস। একসময় তোদের মধ্যে একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো, দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিলো। তুই যেকোন একটা মেয়ের হাত ধরে কলেজে পুতুলের সামনে যাবি। দেখবি পুতুলের খুব হিংসে হবে যদি সে তোকে একটু হলেও মন থেকে ভালোবাসে।
আমি মিনাকে বললাম, পুতুল আপু তা দেখে কি আমার সাথে রিলেশন করতে চাইবে? মনে মনে হয়তো ভাবতে পারে ছেলাটা যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে অন্য মেয়ের হাত ধরতো না।
টিনা বললোঃ হাহা তুই পুতুলকে ভালোবাসিস আর তাকে আপু বলে ডাকছিস?
এবার মিনা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ আরে পাগল তুই যা ভাবছিস তা না। আমার কথা একবার শুনেই দেখ! আমি তোর খুব ভালো বন্ধু। আমরা তোর ভালো চাই
-কিন্তু মেয়ে পাব কই (আমি)
-কোন মেয়ে (রুয়েল)
-যার হাত ধরে পুতুলের সামনে যাব?
রুয়েল বললো যে তোকে এই আইডিয়া দিয়েছে তাকে দিয়েই শুরু কর।
-মিনা চল না একটু পুতুলের সামনে আমার হাত ধরে ঘুরবি
-আমি পারব না বাবা। (মিনা)
-পারবিনা ক্যান? আমরা তো দুজন ভালো বন্ধু। আমার সাথে হাত ধরার হ্যাট্টিং করলে কি এমন ক্ষতি হবে?
-তোর হাত ধরে এখানে সারাক্ষণ বসে থাকতে পারব কিন্তু পাবলিক প্লেসে এইভাবে হাত ধরে আমি তোর সাথে হাঁটতে পারব না দোস্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিস।
.
কি আর করার। মিনা আসলে একটু লাজুক তো তাই এসবে যায় নি। অবশেষ সবার রিকুয়েস্ট এবং আমার কথা ভেবে টিনা আমার হাত ধরে পুতুলের সামনে যেতে রাজি হলো।
.
পরদিন বিরতির সময় পুতুলের সামনে গিয়ে আমি আর টিনা হাত ধরে ঘুরছি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি পুতুুল আমাদের সব কিছু দেখছে। ইয়া হু কাজ হয়েছে মনেহয়...
পুতুলের সামনে গিয়ে বললাম, জানো টিনা একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম বিনিময়ে থাপ্পড় পেয়েছি
-হাহা তাই নাকি (টিনা)
-হুম। কেনো যে তুমি আমার জীবনে আর কয়েকটা দিন আগে আসলে না! তাহলে ওই নাক বোচা মেয়েকে প্রপোজ করে এতো লজ্জা পেতাম না। পুতুলকে দেখে মনে হচ্ছে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। কিছু বলতে চাইবে তার আগেই সেই জায়গা ত্যাগ করলাম।
.
কলেজ শেষে প্রতিদিনের মতো বাড়িতে চলে আসলাম। একজনের সাথে অন্যজনের কোনো কথা নাই। বাস চড়া শেষে পায়ে হেঁটে আসছি। কিছুদূর আসার পর দেখলাম পুতুল দাড়িয়ে আছে। পুতুলের দাড়িয়ে থাকা দেখে আমিও আমার জায়গায় দাড়িয়ে আছি। সামনে গেলে সেদিন থাপ্পড় দিয়েছিলো আজ হাড়গোড় ভেঙে দিবে। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুতুল সামনে হেঁটে যাচ্ছে। আমিও হেঁটে যাচ্ছি। কিছুদূর যাওয়ার পর পুতুল আবার দাড়িয়ে গেলো। পুতুলের দাড়িয়ে থাকা দেখে আমিও আমার জায়গায় দাড়িয়ে রইলাম। দূর থেকে ডাক দিয়ে বললো, এই রাজ এই দিকে আয়?
আমি ভয়ে যাচ্ছি না। আজ সামনে গেলে নিশ্চই আমার মরার ঘন্টা বাজাবে যেই ভাবে সিলেটে বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের টেস্ট খেলার আগে ঘন্টা বাজিয়ে বাংলাদেশকে লজ্জাজনক ভাবে হারানো হয়েছে সেই ভাবে।
আবার বললো, মারব না চলে আয়।
.
মারবেনা শুনে খুব খুশি হলাম। অতপর তার কাছে চলে গেলাম...
-বলো কি বলবে?
পুতুল আমাকে বললো...
-তুই আমাকে নাক বোচা বললি ক্যান?
-কখন বললাম?
-কলেজে টিনাকে বললে নাক বোচা মেয়েকে প্রপোজ করেছিস তার বিনিময়ে তুই থাপ্পড় খেয়েছিস। যেহেতু থাপ্পড় আমি দিয়েছি তাহলে তোর মতে আমি নাক বোচা। তোর কি একটুও লজ্জা শরম নাই। নিজের প্রেমিকাকে বললি অন্য মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছিস।
-স্যরি। আর সে তো আমার প্রেমিকা না।
-হয়েছে হয়েছে আর কিছু লোকাতে হবেনা। আমাকে নাক বোচা বলার অপরাধে তোকে এবার শাস্তি দিব
-কি শাস্তি দিবা? আমাকে না বল্লা মারবা না।
-মারব না বেলেছি। শাস্তি দিতে তো আর না বলি নাই।
-এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর জীবনেও অন্যায় করব না।
-না তোকে ক্ষমা করা যাবেনা। তুই আমার সামনে ১০ বার কান ধরে উঠ বস কর। এটাই তোর শাস্তি।
-প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর কখনো তোমাকে নাক বোচা বলব না।
-না তোকে কোনো শাস্তি ছাড়া ক্ষমা করে দিলে রাতে আমার ঘুম হবেনা।
কি জেদি মাইয়া মাইরে
-প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমার মতো স্মার্ট ছেলেকে কান ধরে উঠ বস করালে লোকে আমাকে ও তোমাকে কি বলবে বলো?
-লোকে কি বললো তা আমি কেয়ার করিনা। ধরবি নাকি থাপ্পড় খাবি?
.
অবশেষে থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে কান ধরে ১০ বার উঠ বস করলাম। এটা কোনো ব্যাপার না। আসে পাশের কোনো লোক আমার কান ধরা দেখে নাই।
.
দৌড়ে বাড়ি চলে আসলাম। কি জল্লাদ মাইয়া, এই মেয়েকে যেই হালা বিয়ে করবে সে সারাজীবন পস্তাবে। না বাপু এই মেয়ের সাথে আমি কোনো রিলেশন করতে চাই না। পরদিন কলেজে গেলাম। আমাদের মধ্যে যা যা হয়েছিলো সব বন্ধুদের কাছে শেয়ার করলাম। মিনাকে ইচ্ছে মতো গালি দিলাম। মিনার কথায় টিনার হাত ধরে পুতুলের সামনে হেঁটেছি। এখন পুতুল ভাবছে আমার আর টিনার মধ্যে এফ্রিয়ার চলছে। সবাই আমাকে অনেক বোঝালো যাতে পুতুলের পিছু ছেড়ে না দেই। কিন্তু আমি মুখ দিয়ে ওদের বলেছি পুতুলের সাথে রিলেশন করতে চাই না কিন্তু মন থেকে চাই পুতুল যেনো আমার ঘরে শ্রুভা হয়। আমি পুতুলকে পুতুলের মতো করে রাখব। সবাইকে বললাম, ওরা কি আমাকে হেল্প করবে? ওরা সবাই রাজি হলো। আমিও এবার আশায় আছি। বন্ধুরা যখন সাপোর্ট দিচ্ছে তাহলে কোনো না কোনো ভাবে পুতুলকে পটিয়ে ফেলব।
.
এইভাবে কিছুদিন চললো। কিন্তু কোনো ঔষধেই পুতুলকে পটানো গেলো না। ওই দিকে হঠাৎ করে আব্বার শরীলে ক্যান্সার দেখা দিলো যার কারণে আব্বাকে মাসে একবার কেমোথেরাপি দিতে হয়। সব মিলিয়ে মাসে আব্বার ডাক্তারীর জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আমদের এতো টাকা খরচ করার সমর্ত নাই। ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগেই আমাকে পড়ালেখা বাদ দিতে হলো। আস্তে আস্তে মনের ভিতরের জমে থাকা সব ইচ্ছে গুলা মাটি হতে লাগলো। আব্বার কতই যে ইচ্ছে ছিলো আমি পড়ালেখা করে ডাক্তার হবো। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে রুজির তাগিদে অচিন শহর ঢাকাতে চলে গেলাম। একটা সিগারেট কোম্পানির স্যালার হিসেবে ১১ হাজার টাকা মায়নেতে চাকরি করা শুরু করে দিলাম। চাকরিতে যোগ দিয়েছি আজ দুদিন হলো। রাতে চাকরি শেষে মেসে ফিরে রান্নাবান্না করলাম। খাওয়া শেষে শুতে যাবো তার আগেই দেখি আননোন নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসছে। ফোন রিসিভ করে...
-হ্যালো (আমি)
-(মিষ্টি কন্ঠে) কই তুই?
-কে আপনি?
-আমাকে চিনতে পারলিনা?
-টিনা?
-না
-মিনা
-না
-তাহলে তুমি কে রে বইন? পরিচয় দাওনা ক্যান?
-যাকে ভালোবাসিস তাকে চিনতে পারলিনা?
-হুম একজনকে তো ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। তাই তাকে ভুলে গেছি। আর সে কখনো আমাকে কল দিবেনা। কিন্তু আপনি কে?
-আমি
মেয়েটি মিষ্টি কন্ঠে বললো...
-আমি পুতুল
-সত্যি তুমি পুতুল আপু! আমি স্বপ্ন দেখছি না
তো!
-স্বপ্ন না এটাই বাস্তব। টিনা তোর কথা
আমাকে সব বলেছে।
-ওহহ। তা কি মনে করে ফোন দিলা?
-তুই আমার সাথে কাল দেখা করতে পারবি?
-কাল কিভাবে সম্ভব। বাড়িতে আসতেই তো
পুরো ১দিন লাগে।
-তুই যেমন করেই হোক কাল বাড়িতে আয়
প্লিজ। অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে।
-কি প্রবলেম? আর আমি এসে প্রবলেম
কিভাবে সলভড করব?
-তুই আগে আয়। তারপর তোকে সব বুঝিয়ে বলব।
-দেখো আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি আজ
দুদিন হলো। কাল কিভাবে বাড়িতে যাই বলো?
-তুই কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসিস? যদি
সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাহলে কালই
বাড়িতে চলে আয়।
.
পুতুলের মুখে এই কথা শোনে আর এক মুহুর্ত
দেড়ি করলাম না। নিশ্চুই কোথাও কোনো
সমস্যা হয়েছে। সাথে সাথেই কাপড়চোপড়
গুছিয়ে রাত ৯টার বাসে রওনা দিলাম বাড়ির
উদ্দেশ্য। বাড়িতে ফিরলাম পরদিন আছরের
আজানের কিছুক্ষণ পর। বাড়িতে আসতে দেখে
বাড়ির সবাই তো অবাক। সবাই বললো, কেন
বাড়িতে এলাম। আমি সবাইকে মিথ্যা বললাম,
বলেছি আমি যেখানে থাকি তার পাশের
বাসায় আজ এক ছেলে খুন হয়েছে। ভয়ে চলে
এসেছি। আমার কথা শোনে আম্মা বললো,
দরকার নাই বাবা আমার চাকরির। তুই যে সুস্থ
অবস্থায় আমার বুকে ফিরে এসেছিস এটাই
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ পাওয়া।
.
আহা আজকাল সত্য কথার কোনো দাম নাই।
মিথ্যা বললাম তো সবাই খুশি। আম্মা খাবার
দিলো খাবার খাওয়া শেষে পুতুলকে ফোন
দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। মহা টেনশনে পরে
গেলাম। আম্মা এসে বললো, জানিস পুতুলের
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পরশুদিন বিয়ে। ওর
বাবা এসে আমাদের সবার দাওয়াত দিয়ে
গেছে। ছেলে লন্ডন থাকে।
এই কথা শোনে আসমান ভেঙে আমার মাথার
উপর পরলো। যাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি
তার বিয়ে অন্যজনের সাথে। আম্মার কথা
শোনে যতটা খারাপ লেগেছে তার থেকে
বেশি ভালো লাগলো পুতুলের কথা মনে পরে।
কারণ পুতুল তো আমাকে নিজেই ভালোবাসার
কথা বলেছে। আর এক মিনিটও দেড়ি করা
যাবেনা। দৌড়ে পুতুলদের বাড়িতে চলে
গেলাম। পুতুল আমাকে দেখে মনে হলো হাতে
আসমান পেয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। পুতুল
চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে বললো বাড়ির
পিছনে যেতে। আমি বাড়ির পিছনে বাঁশ
বাগানের পাশে দাড়িয়ে আছি কিন্তু পুতুল
তো আসছেনা। কি মশা মাইরে। মেয়েদের
ভালোবাসা পেতে হলে এমন দু একটা মশার
কামড় খেতে হয়। কিন্তু এখানে তো দু একটা না
হাজার হাজার মশা।
.
অবশেষে পুতুল আসলো।
-এই আমাকে মশার কামড় খাওয়ানোর জন্য কি
এখানে পাঠিয়েছো?
-আর বলিস না। বাড়িতে লোক ভর্তি মেহমান।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়েছে।
-ওকে, কি বলবা বলো?
- জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
-হুম আম্মা বলেছে।
-কিন্তু আমি এই বিয়ে করব না। তুই আমাকে
প্রপোজ কর...
পুতুলের মুখে এই কথা শোনে দুষ্টামি করে
পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বাহির করে হাঁটু
গেড়ে ১০০ টাকা দিয়ে পুতুলকে বললাম, l love
you
পুতুল ঠাশশ ঠাশশ বসিয়ে দিলো। তবে এই
থাপ্পড় রাগে নয় ভালোবেসে দিয়েছে
-বলদ একটা... টাকা দিয়ে কেউ প্রপোজ করে?
-আমার কাছে তো ফুল টুল নাই। মনে করো এই
টাকাই ফুল।
-ধ্যাত। ভালই ফাজিল হয়েছিস না! এই নে
গোলাপ। ঘর থেকে নিয়ে এসেছি।
-ফুল এনেছো আগে বলবা না!
আমি গোলাপ দিয়ে পুতুলকে প্রপোজ করলাম।
সে একসেপ্ট করলো। তারপর বাংলা মুভির
মতো গান হলো না। পুতুল আমাকে জড়িয়ে ধরে
কান্না শুরু করে দিলো। পরশু আমার বিয়ে।
আমি তোকে না পেলে যে বাঁচব না রে।
-তুমি বাঁচবে। বিয়াও ভঙ্গ হবে। এবার আমাকে
তুমি করে বলো।
-ওকে। তুমি, তুমি, তুমি
-এবার তোমার হবু স্বামীর ফোন নাম্বার দাও?
-আমার হবু স্বামী মানে?
-ওহহ স্যরি। যার সাথে তোমার বিয়া হবার
কথা তার নাম্বার দাও।
পুতুল আমাকে সেই ছেলের নাম্বার দিলো।
এবার পুতুলেকে নিয়ে কিছু অন্তরঙ্গ সেল্ফি
তোলে সেই ছেলেকে MMS করে পাঠালাম।
ফোন দিয়ে বললাম, আমি বাংলা ভাইয়ের
লোক। পুতুলকে বিয়া করা মানে মরার আগে
নিজের কবর নিজেই খনন করা। সেই ছেলে
ফোনে আমার এসব কথা শোনে অনেক ভয়
পেয়েছে মনে হয়। আমার কথার কোনো উল্টো
জবাব দেই নাই। আর এও বলেছি; বিয়েটা
যেনো ভেঙে দেয়। পুতুলের বাবা যেনো এই
সেল্ফি সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে।
ছেলেটা আমার কথা শুনেছে। ফোন রাখার
সময় সালাম দিয়ে ফোন রাখল।
পুতুলকে বললাম, বাসায় গিয়ে যেনো বলে এই
বিয়ে করবে না।
পতুল বললো...
-আব্বা যদি জানতে চায় কেনো বিয়ে করব না
তখন কি বলব?
-বলবা তুমি আরো পড়ালেখা করতে চাও।
তারপরও যদি না মানে তাহলে তোমার কিছুই
বলতে হবেনা। জামাই তো আর আসবে না। আর
জামাই না আসলে এতো কিছু বলে কি লাভ?
-ওকে তাহলে এখন যাই। তোর নিজের খেয়াল
রাখিস।
-উহহহ তুই না তুমি।
-স্যরি তুমি। তাহলে এবার যাই।
যাবে ভালো কথা। আমি আমার গাল বাড়িয়ে
দিলাম। পুতুল বললো এখন কিছু না। যা হবার
বিয়ের পর হবে।
.
আমি আমার বাড়ি চলে এলাম। পরশুদিন অর্থাৎ
শুক্রবারে পুতুলের বিয়ে হবার কথা ছিলো।
শুক্রবার সকালে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে আছি।
আম্মা দরজায় থাবা দিয়ে বললো...
-রাজ এই রাজ। তাড়াতাড়ি উঠ বিয়েতে যাবি।
-কার বিয়ে?
-পুতুলের।
-আমার বিয়ে আর আমি জানিনা।
-কি বল্লি।
-না কিছু না।
ঘুমের ঘোরে কি যে বলে ফেলেছি। আম্মাকে
ডাক দিয়ে বললাম; কে কে যাবে?
-শুধু তুই যবি। দেখ তোর বাবা পুতুল কে গিফট
দেওয়ার জন্য কি সুন্দর শাড়ি এনেছে। আব্বা
এই অসুস্থ শরীর নিয়েও বাজারে যায়! ওকে
আসছি আমি।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। আম্মা নাস্তা
দিলো নাস্তা খেলাম। আম্মাকে বললাম ভাত
দিতে।
-এখন ভাত খাবি ক্যান? বেলা ১২ টা বাঁজে।
কিছুক্ষণ পর বিয়ে আরাম্ভ। এখন খেলে
বিয়েতে গিয়ে খাবি কি?
-তুমি এসব বুঝবেনা। দাও তো...
পেট ভরে খাবার খেয়ে চলে গেলাম পুতুলদের
বাড়িতে। আব্বার দেওয়া শাড়ি তার হবু বৌমা
কে দিতে হবে। পুতুলকে শাড়ি দিয়ে চলে
এলাম। শুক্রবার আর বিয়ে হলো না। আর কখনও
বিয়ে হবেও না। ওহহ স্যরি হবেনা ক্যান হবে।
তবে সেটা আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে না।
সমাপ্ত
______________
সংগ্রহীত
আমাদের এলাকার এক আপু আছে যে আমার প্রথম ক্রাশ। আমি যখন প্রথম বোঝতে পেরেছি ক্রাশ কি তখন থেকেই এই আপুর উপর আমি ক্রাশিত। আপুটার নাম পুতুল দেখতেও পুতুলের মতো লাগে। আমি তার সাথে কখনও তেমন ভাবো কোনো কথা বলিনি। রাস্তাঘাটে যখন আপুকে একা দেখি তখন একটা গান গাই, তোকে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে হৃদয়ের কোটরে রাখব...
পুতুল আপু আমাকে কিছু বলতে চায় মনেহয় কিন্তু কেনো জানি বলে না। একদিন কলেজ থেকে আসার পথে এই গান গেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম হঠাৎ একজায়গায় আপু দাড়ালো। আমি তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দূরে দাড়িয়ে থাকলাম। পেছন ফিরে আমাকে ডাক দিয়ে বললোঃ
-এই এদিকে আয়
আমি তার ডাক শোনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তারপরও তার কাছে গেলাম...
-এই তুই আমাকে দেখে এই গান গাছ ক্যান?
-তোমাকে দেখে গান গাই মানে? আমি তো সব সময় এই গান গাই
-আমার সামনে এই গান আর গাইবিনা
-কেনো?
-গাইবিনা ব্যাস।
-আমি যখন এই গান গাবো তখন তুমি আমার সামনে না আসলেই তো হয়। নিজেকে শাসন না করে আমাকে করছো?
-ভারি দুষ্টু হয়েছিস না
-দুষ্টু হবো ক্যান! জানো আমি যাকে বউ বানাবো তাকে আমি পুতুলের মতো করে রাখব।
-রাখিস রাখিস, এবার আমার সামনে থেকে দূর হ
.
পুতুল আপুর সামনে থেকে দূর হয়ে আমার পরিচয়টা দেই...
আমার নাম রাজ। আমি গ্রামে বেড়ে উঠা সাদাসিধা বাপের ফাজিল ছেলে। আমি এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। আর পুতুল আপু সেকেন্ড ইয়ারে। আমরা দুজন আবার একই কলেজে পড়ি
.
বাসায় এসে পুতুল আপুর কথা মনে করে করে হাসছি। মেয়েটাকে আমার বিষণ ভালো লাগে। কোনদিন তেমন ভাবে কোনো কথা বলি নাই। দুবার দুই প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন আম্মার কথা জিঙ্গেস করেছিল। আমিও বলে দিয়েছিলাম আম্মা ভালো আছে, এইতো...
এই মেয়েটা ক্যান যে আমার বয়সে বড় হয়ে জন্ম নিলো। নাহলে আজই প্রপোজ করে দিতাম।
পরদিন একই ভাবে গান গেয়ে যাচ্ছি। পুতুল আপু আমাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো। আমাকে কিছু বলেছে হয়তো কিন্তু আমি উল্টোদিকে হেঁটে পুতুল আপুর সামনে থেকে চলে গেলাম। আজ সামনে গেলে নিশ্চুই আমার খবর ছিলো।
পরদিন একই ভাবে রাস্তা দিয়ে দুজন কলেজে যাচ্ছি। আমি তো আমার মার্কা মারা গান গেয়ে যাচ্ছি। আমাকে বললো
-এই দাড়া
-হুম বলো?
-তোকে না বলেছি আমার সামনে গান গাবিনা
-কি মুসিবত... যে গান গেয়েছে তাকে বলো এই গান কেন আবিষ্কার করল! আমি গেয়েছি তার গাওয়া শোনে।
-ভারি ফাজিল হয়েছিস না! এই কথা বলে আমার গালে ঠাশশ টাশশ বসিয়ে দিলো। আমি নাছোড়বান্দার মতো কলেজে চলে গেলাম। কলেজ থেকে দুজন একই বাসে করে গ্রামের আাঁকা বাঁকা পথ বেয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে আসার আগে কিছু পথ পায়ে হেঁটে আসতে হয়। আজ রাস্তা দিয়ে আসার সময় আমি একদম চুপ ছিলাম। আপু আমাকে যেই থাপ্পড় দিয়েছে একসপ্তাহ ভরা মনে থাকবে। আমাদের বাড়ি থেকে দুই বাড়ি পর পুতুল আপুদের বাড়ি। আমি যখন আমাদের বাড়ির মেইন রাস্তা দিয়ে ঢুকছিলাম তখন দেখেছি পুতুল আপু পেছন ফিরে আমাকে বারবার দেখছে। কি সাঙ্ঘাতিক মাইয়া মাইয়ে। একটা জুয়ান ছেলের উপর হাত তোলতে পরোয়া করল না। আমি না হয়ে যদি অন্য ছেলে হতো তাহলে তো উল্টো ঠাশশ ঠাশশ...
না আমাকে তো মাত্র একটা থাপ্পড় দিয়েছে এটা এ আর এমন কি! কাউকে ভালোবেসেও এমন থাপ্পড় সচরাচর দেওয়া যায়।
ধ্যাত আমি এসব ভাবছি ক্যান। নিশ্চই পুতুল আপু রাগ করে আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে। অতিরিক্ত রাগ নাহলে মেয়েরা ছেলেদের উপর হাত তুলতে চায় না। এই টপিক নিয়ে আর কথা নাই বলি।
পরদিন কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম কিন্তু আমাদের বাড়ির সামনে দেখি পুতুল আপু। আমি তাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে অন্য পথে কলেজে চলে গেলাম। কলেজে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে। ফাজিল ছেলেদের বন্ধুবান্ধব তো থাকারই কথা। সবাই নিজেকে ফাজিল বলেতে চায় না। কিন্তু আমি তাদের মতো না। আমি নিজে কি তা সবাইকে বলে দেই। আমার ভালো গুণের চেয়ে খারাপ গুনটাই বেশি। যাগ্গা কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি এমন সময় পুতুল আপু আমার সামনে এসে বললো...
-স্যরি
-কেন কি করেছ তুমি?
-এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?
.
আমি আর কিছু জানতে চাইনি। একটা মেয়ের হাতে থাপ্পড় খাওয়ার কথা বন্ধুদের সামনে বললে আমার নিজেরই তো প্যাক্টিজ লসস।
-তা এখন থেকে কি ওই গান গাইতে পারব
-তোর কি একটুও লজ্জা শরম নাই। স্যরি বলেছি বলে এই নয় যে তোকে গান গাওয়ার পারমিশন দিব।
-ওকে
কলেজ শেষে দুজন একই বাসে করে বাড়িতে চলে এলাম।
.
এইভাবে কিছুদিন গেলো। এখন আর পুতুল আপুকে দেখে গান গাই না। আগের থেকে অনেক ফ্রি এখন আমরা দুজন। এখন পুতুল আপুর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধত্ব গড়ে উঠেছে। আপু কলেজে যাওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আবার আসার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। পুতুল আপু আমার প্রতি নিশ্চুই ধুর্বল হয়েছে নাহলে এতো তাড়াতাড়ি আমার সাথে মিশে গেলো কিভাবে! একদিন কলেজ থেকে আসার পথে পুতুল আপু আমাকে বললো
-আচ্ছা আমার ক্লাসমেট রাজু ছেলেটা কেমন রে?
-মানে কি? আমার থেকে তুমিই তো ওকে ভালোভাবে চিনো। কারণ ছেলেটা তুমার ক্লাসমেট
-তোকে না দেখি সারাক্ষণ রাজুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে
-তো?
-তো আবার কি? তোর খেলার সাথীকে তুই চিনবিনা?
-তা চিনে কি করব? সত্যি করে বলতো কেইসটা কি?
-তোকে এসব জেনে কোনো লাভ নাই।
.
এই মাইয়ার মতলব কি! আমি তাকে পছন্দ করি আর সে অন্য ছেলের পিছু পিছু ঘরে। না এসব হতে দেওয়া যাবে না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করব কিছুই তো আইডিয়া আসছেনা। পরদিন কলেজে যাওয়ার আগে আব্বার পকেট থেকে ৫০ টাকা চুরি করলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে পুতুল আপু আমাকে ডাক দিলো। এক সাথে দুজন চলে গেলাম কলেজে। কলেজ ছুটির শেষে পুতুল আপুকে আসছি বলে কলেজ গেটের সামনে দাড় করিয়ে চলে গেলাম গোলাপ কিনতে। ২০ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ কিনলাম। আসার সময় ৩০ টাকা দিয়ে দুটা চিপস কিনে নিয়ে এলাম। চিপস একটা পুতুল আপুকে দিলাম। একটা আমার নিজের জন্য রাখলাম। আর হ্যা গোলাপটা কিন্তু আমার ব্যাগের ভেতর লোকিয়ে রেখেছি। গ্রামের আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে চলে এসেছি আমাদের গ্রামে। গাড়ি চড়া শেষে এবার আমাদের পায়ে হেঁটে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে। হেঁটে কিছুদূর আসার পর পুতুলকে বললাম...
-দাঁড়াও একটা কথা আছে
-হেঁটে হেঁটে বলি
-না হেঁটে হেঁটে বলা যাবে না
-ঠিক আছে বল?
আমি ব্যাগ থেকে গোলাপ বাহির করে গোলাপ দিয়ে পুতুল আপুকে প্রপোজ করলাম। পুতুল আপু আমাকে বললো
-ফাইজলামি করছ?
-ভালোবাসা ফাইজলামি না
-তুই কি সত্যিই আমার সাথে প্রেম করতে চাস?
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বোধক শব্দ জানালাম।
অতপর ঠাশশ ঠাশশ বুঝতেই তো পারছেন। থাপ্পড় দিয়ে আমাকে বললো...
-তোকে খুব ভালো মনে করেছিলাম আর তুই...
-আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাইনা তোমাকে হারাতে।
-তুই জানিস তুই আমার বয়সে ছোট?
-ছোট হয়েছি তো কি হয়েছে তোমাকে আমি সুখে রাখব।
-যা আমার সামনে থেকে দূর হ।
.
আমি পুতুল আপুর কথা শুনে ভয়ে চলে আসলাম। যা থাপ্পড় দিয়েছে না ১ সপ্তাহ গালে ব্যাথা থাকবে। হাতে কি শক্তি মাইরে। কোন গুদামের চাল খায় আল্লাহ ভালো জানে
সামান্য প্রপোজের কারণে সব শেষ। ধ্যাত কেন যে প্রপোজ করতে গেলাম। এখন আমও গেলো ছলাও গেলো। না পুতল কে আমার প্রেমের জালে ফেলতেই হবে। আমি হার মেনে নেওয়ার পাত্র না। পরদিন আর কলেজে যাইনি। তার পরদিন গেলাম। আসার সময় এক সাথে দুজন আসলাম কিন্তু একজনের সাথে অন্যজনের কোনো কথা নাই। বাসায় এসে খাবার খেয়ে পুতুল আপুদের বাড়িতে চলে গেলাম। ওর আম্মার সাথে অনেক্ষণ গল্প করলাম। পুতুলের আম্মা খুব কিপ্টা। তাদের বাড়িতে প্রায় ১ ঘন্টা ছিলাম। আসার কিছুক্ষণ আগে আমাকে পান খাওয়ালেন। আমি সাধারণত পান খাই না কিন্তু উনার সাথে গল্প করে গলার পানি সব শুকিয়ে গেছে। পান খেয়ে গলায় রস করলাম। অতপর সালাম দিয়ে আমার বাড়িতে আমি সোজা রাস্তায় চলে এলাম...
পুতুল আপুদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি চলে আসলাম। পরদিন কলেজে গিয়ে বন্ধু জুয়েলকে বললাম...
-দোস্ত আমি তো পুতুল কে খুব ভালোবাসি রে।
-শ্লা কস কি! জানস না ও তোর সিনিয়র?
-মামা প্রেম ভালোবাসা সিনিয়র জুনিয়র মানে না।
-তা এখন তুই কি করতে চাস?
-আমি কি করব জানলে কি তোর সাথে এই কথা শেয়ার করতাম। কিভাবে কি করতে হবে একটু আইডিয়া দে না প্লিজ!
-কি আইডিয়া দিব কিছুই তো মাথায় ঢুকছেনা। চল আমাদের সকল ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়ে এই কথা শেয়ার করি
-ওকে চল!
.
আমার সকল ফ্রেন্ড টিনা, মিনি, কিনা, রুয়েল, কুয়েল সবাইকে আমার ভালোবাসার মানুষটার কথা শেয়ার করলাম। অনেকে অনেক ধরণের আইডিয়া দিলো। কেউ বললো চিঠি লিখে দিতে। কেউ আবার বললো সামনাসামনি প্রপোজ করে দিতে। কেউ আবার বললো পুতুল আপুর কোনো বান্ধবীকে দালাল হিসেবে মধ্যখানে রাখতে। বন্ধু ফাহিম বললো সে নাকি আমার কথা পুতুল আপুকে বলে দিবে। তবে সবচেয়ে বেস্ট আইডিয়াটা ছিলো মিনার। মিনা বললো, দোস্ত তুই এতোদিন ধরে পুতুলকে চিনিস। একসময় তোদের মধ্যে একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো, দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিলো। তুই যেকোন একটা মেয়ের হাত ধরে কলেজে পুতুলের সামনে যাবি। দেখবি পুতুলের খুব হিংসে হবে যদি সে তোকে একটু হলেও মন থেকে ভালোবাসে।
আমি মিনাকে বললাম, পুতুল আপু তা দেখে কি আমার সাথে রিলেশন করতে চাইবে? মনে মনে হয়তো ভাবতে পারে ছেলাটা যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে অন্য মেয়ের হাত ধরতো না।
টিনা বললোঃ হাহা তুই পুতুলকে ভালোবাসিস আর তাকে আপু বলে ডাকছিস?
এবার মিনা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ আরে পাগল তুই যা ভাবছিস তা না। আমার কথা একবার শুনেই দেখ! আমি তোর খুব ভালো বন্ধু। আমরা তোর ভালো চাই
-কিন্তু মেয়ে পাব কই (আমি)
-কোন মেয়ে (রুয়েল)
-যার হাত ধরে পুতুলের সামনে যাব?
রুয়েল বললো যে তোকে এই আইডিয়া দিয়েছে তাকে দিয়েই শুরু কর।
-মিনা চল না একটু পুতুলের সামনে আমার হাত ধরে ঘুরবি
-আমি পারব না বাবা। (মিনা)
-পারবিনা ক্যান? আমরা তো দুজন ভালো বন্ধু। আমার সাথে হাত ধরার হ্যাট্টিং করলে কি এমন ক্ষতি হবে?
-তোর হাত ধরে এখানে সারাক্ষণ বসে থাকতে পারব কিন্তু পাবলিক প্লেসে এইভাবে হাত ধরে আমি তোর সাথে হাঁটতে পারব না দোস্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিস।
.
কি আর করার। মিনা আসলে একটু লাজুক তো তাই এসবে যায় নি। অবশেষ সবার রিকুয়েস্ট এবং আমার কথা ভেবে টিনা আমার হাত ধরে পুতুলের সামনে যেতে রাজি হলো।
.
পরদিন বিরতির সময় পুতুলের সামনে গিয়ে আমি আর টিনা হাত ধরে ঘুরছি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি পুতুুল আমাদের সব কিছু দেখছে। ইয়া হু কাজ হয়েছে মনেহয়...
পুতুলের সামনে গিয়ে বললাম, জানো টিনা একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম বিনিময়ে থাপ্পড় পেয়েছি
-হাহা তাই নাকি (টিনা)
-হুম। কেনো যে তুমি আমার জীবনে আর কয়েকটা দিন আগে আসলে না! তাহলে ওই নাক বোচা মেয়েকে প্রপোজ করে এতো লজ্জা পেতাম না। পুতুলকে দেখে মনে হচ্ছে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। কিছু বলতে চাইবে তার আগেই সেই জায়গা ত্যাগ করলাম।
.
কলেজ শেষে প্রতিদিনের মতো বাড়িতে চলে আসলাম। একজনের সাথে অন্যজনের কোনো কথা নাই। বাস চড়া শেষে পায়ে হেঁটে আসছি। কিছুদূর আসার পর দেখলাম পুতুল দাড়িয়ে আছে। পুতুলের দাড়িয়ে থাকা দেখে আমিও আমার জায়গায় দাড়িয়ে আছি। সামনে গেলে সেদিন থাপ্পড় দিয়েছিলো আজ হাড়গোড় ভেঙে দিবে। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুতুল সামনে হেঁটে যাচ্ছে। আমিও হেঁটে যাচ্ছি। কিছুদূর যাওয়ার পর পুতুল আবার দাড়িয়ে গেলো। পুতুলের দাড়িয়ে থাকা দেখে আমিও আমার জায়গায় দাড়িয়ে রইলাম। দূর থেকে ডাক দিয়ে বললো, এই রাজ এই দিকে আয়?
আমি ভয়ে যাচ্ছি না। আজ সামনে গেলে নিশ্চই আমার মরার ঘন্টা বাজাবে যেই ভাবে সিলেটে বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের টেস্ট খেলার আগে ঘন্টা বাজিয়ে বাংলাদেশকে লজ্জাজনক ভাবে হারানো হয়েছে সেই ভাবে।
আবার বললো, মারব না চলে আয়।
.
মারবেনা শুনে খুব খুশি হলাম। অতপর তার কাছে চলে গেলাম...
-বলো কি বলবে?
পুতুল আমাকে বললো...
-তুই আমাকে নাক বোচা বললি ক্যান?
-কখন বললাম?
-কলেজে টিনাকে বললে নাক বোচা মেয়েকে প্রপোজ করেছিস তার বিনিময়ে তুই থাপ্পড় খেয়েছিস। যেহেতু থাপ্পড় আমি দিয়েছি তাহলে তোর মতে আমি নাক বোচা। তোর কি একটুও লজ্জা শরম নাই। নিজের প্রেমিকাকে বললি অন্য মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছিস।
-স্যরি। আর সে তো আমার প্রেমিকা না।
-হয়েছে হয়েছে আর কিছু লোকাতে হবেনা। আমাকে নাক বোচা বলার অপরাধে তোকে এবার শাস্তি দিব
-কি শাস্তি দিবা? আমাকে না বল্লা মারবা না।
-মারব না বেলেছি। শাস্তি দিতে তো আর না বলি নাই।
-এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর জীবনেও অন্যায় করব না।
-না তোকে ক্ষমা করা যাবেনা। তুই আমার সামনে ১০ বার কান ধরে উঠ বস কর। এটাই তোর শাস্তি।
-প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর কখনো তোমাকে নাক বোচা বলব না।
-না তোকে কোনো শাস্তি ছাড়া ক্ষমা করে দিলে রাতে আমার ঘুম হবেনা।
কি জেদি মাইয়া মাইরে
-প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমার মতো স্মার্ট ছেলেকে কান ধরে উঠ বস করালে লোকে আমাকে ও তোমাকে কি বলবে বলো?
-লোকে কি বললো তা আমি কেয়ার করিনা। ধরবি নাকি থাপ্পড় খাবি?
.
অবশেষে থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে কান ধরে ১০ বার উঠ বস করলাম। এটা কোনো ব্যাপার না। আসে পাশের কোনো লোক আমার কান ধরা দেখে নাই।
.
দৌড়ে বাড়ি চলে আসলাম। কি জল্লাদ মাইয়া, এই মেয়েকে যেই হালা বিয়ে করবে সে সারাজীবন পস্তাবে। না বাপু এই মেয়ের সাথে আমি কোনো রিলেশন করতে চাই না। পরদিন কলেজে গেলাম। আমাদের মধ্যে যা যা হয়েছিলো সব বন্ধুদের কাছে শেয়ার করলাম। মিনাকে ইচ্ছে মতো গালি দিলাম। মিনার কথায় টিনার হাত ধরে পুতুলের সামনে হেঁটেছি। এখন পুতুল ভাবছে আমার আর টিনার মধ্যে এফ্রিয়ার চলছে। সবাই আমাকে অনেক বোঝালো যাতে পুতুলের পিছু ছেড়ে না দেই। কিন্তু আমি মুখ দিয়ে ওদের বলেছি পুতুলের সাথে রিলেশন করতে চাই না কিন্তু মন থেকে চাই পুতুল যেনো আমার ঘরে শ্রুভা হয়। আমি পুতুলকে পুতুলের মতো করে রাখব। সবাইকে বললাম, ওরা কি আমাকে হেল্প করবে? ওরা সবাই রাজি হলো। আমিও এবার আশায় আছি। বন্ধুরা যখন সাপোর্ট দিচ্ছে তাহলে কোনো না কোনো ভাবে পুতুলকে পটিয়ে ফেলব।
.
এইভাবে কিছুদিন চললো। কিন্তু কোনো ঔষধেই পুতুলকে পটানো গেলো না। ওই দিকে হঠাৎ করে আব্বার শরীলে ক্যান্সার দেখা দিলো যার কারণে আব্বাকে মাসে একবার কেমোথেরাপি দিতে হয়। সব মিলিয়ে মাসে আব্বার ডাক্তারীর জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আমদের এতো টাকা খরচ করার সমর্ত নাই। ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগেই আমাকে পড়ালেখা বাদ দিতে হলো। আস্তে আস্তে মনের ভিতরের জমে থাকা সব ইচ্ছে গুলা মাটি হতে লাগলো। আব্বার কতই যে ইচ্ছে ছিলো আমি পড়ালেখা করে ডাক্তার হবো। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে রুজির তাগিদে অচিন শহর ঢাকাতে চলে গেলাম। একটা সিগারেট কোম্পানির স্যালার হিসেবে ১১ হাজার টাকা মায়নেতে চাকরি করা শুরু করে দিলাম। চাকরিতে যোগ দিয়েছি আজ দুদিন হলো। রাতে চাকরি শেষে মেসে ফিরে রান্নাবান্না করলাম। খাওয়া শেষে শুতে যাবো তার আগেই দেখি আননোন নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসছে। ফোন রিসিভ করে...
-হ্যালো (আমি)
-(মিষ্টি কন্ঠে) কই তুই?
-কে আপনি?
-আমাকে চিনতে পারলিনা?
-টিনা?
-না
-মিনা
-না
-তাহলে তুমি কে রে বইন? পরিচয় দাওনা ক্যান?
-যাকে ভালোবাসিস তাকে চিনতে পারলিনা?
-হুম একজনকে তো ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। তাই তাকে ভুলে গেছি। আর সে কখনো আমাকে কল দিবেনা। কিন্তু আপনি কে?
-আমি
মেয়েটি মিষ্টি কন্ঠে বললো...
-আমি পুতুল
-সত্যি তুমি পুতুল আপু! আমি স্বপ্ন দেখছি না
তো!
-স্বপ্ন না এটাই বাস্তব। টিনা তোর কথা
আমাকে সব বলেছে।
-ওহহ। তা কি মনে করে ফোন দিলা?
-তুই আমার সাথে কাল দেখা করতে পারবি?
-কাল কিভাবে সম্ভব। বাড়িতে আসতেই তো
পুরো ১দিন লাগে।
-তুই যেমন করেই হোক কাল বাড়িতে আয়
প্লিজ। অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে।
-কি প্রবলেম? আর আমি এসে প্রবলেম
কিভাবে সলভড করব?
-তুই আগে আয়। তারপর তোকে সব বুঝিয়ে বলব।
-দেখো আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি আজ
দুদিন হলো। কাল কিভাবে বাড়িতে যাই বলো?
-তুই কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসিস? যদি
সত্যি ভালোবেসে থাকিস তাহলে কালই
বাড়িতে চলে আয়।
.
পুতুলের মুখে এই কথা শোনে আর এক মুহুর্ত
দেড়ি করলাম না। নিশ্চুই কোথাও কোনো
সমস্যা হয়েছে। সাথে সাথেই কাপড়চোপড়
গুছিয়ে রাত ৯টার বাসে রওনা দিলাম বাড়ির
উদ্দেশ্য। বাড়িতে ফিরলাম পরদিন আছরের
আজানের কিছুক্ষণ পর। বাড়িতে আসতে দেখে
বাড়ির সবাই তো অবাক। সবাই বললো, কেন
বাড়িতে এলাম। আমি সবাইকে মিথ্যা বললাম,
বলেছি আমি যেখানে থাকি তার পাশের
বাসায় আজ এক ছেলে খুন হয়েছে। ভয়ে চলে
এসেছি। আমার কথা শোনে আম্মা বললো,
দরকার নাই বাবা আমার চাকরির। তুই যে সুস্থ
অবস্থায় আমার বুকে ফিরে এসেছিস এটাই
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ পাওয়া।
.
আহা আজকাল সত্য কথার কোনো দাম নাই।
মিথ্যা বললাম তো সবাই খুশি। আম্মা খাবার
দিলো খাবার খাওয়া শেষে পুতুলকে ফোন
দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। মহা টেনশনে পরে
গেলাম। আম্মা এসে বললো, জানিস পুতুলের
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পরশুদিন বিয়ে। ওর
বাবা এসে আমাদের সবার দাওয়াত দিয়ে
গেছে। ছেলে লন্ডন থাকে।
এই কথা শোনে আসমান ভেঙে আমার মাথার
উপর পরলো। যাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি
তার বিয়ে অন্যজনের সাথে। আম্মার কথা
শোনে যতটা খারাপ লেগেছে তার থেকে
বেশি ভালো লাগলো পুতুলের কথা মনে পরে।
কারণ পুতুল তো আমাকে নিজেই ভালোবাসার
কথা বলেছে। আর এক মিনিটও দেড়ি করা
যাবেনা। দৌড়ে পুতুলদের বাড়িতে চলে
গেলাম। পুতুল আমাকে দেখে মনে হলো হাতে
আসমান পেয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। পুতুল
চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে বললো বাড়ির
পিছনে যেতে। আমি বাড়ির পিছনে বাঁশ
বাগানের পাশে দাড়িয়ে আছি কিন্তু পুতুল
তো আসছেনা। কি মশা মাইরে। মেয়েদের
ভালোবাসা পেতে হলে এমন দু একটা মশার
কামড় খেতে হয়। কিন্তু এখানে তো দু একটা না
হাজার হাজার মশা।
.
অবশেষে পুতুল আসলো।
-এই আমাকে মশার কামড় খাওয়ানোর জন্য কি
এখানে পাঠিয়েছো?
-আর বলিস না। বাড়িতে লোক ভর্তি মেহমান।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়েছে।
-ওকে, কি বলবা বলো?
- জানিস আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
-হুম আম্মা বলেছে।
-কিন্তু আমি এই বিয়ে করব না। তুই আমাকে
প্রপোজ কর...
পুতুলের মুখে এই কথা শোনে দুষ্টামি করে
পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বাহির করে হাঁটু
গেড়ে ১০০ টাকা দিয়ে পুতুলকে বললাম, l love
you
পুতুল ঠাশশ ঠাশশ বসিয়ে দিলো। তবে এই
থাপ্পড় রাগে নয় ভালোবেসে দিয়েছে
-বলদ একটা... টাকা দিয়ে কেউ প্রপোজ করে?
-আমার কাছে তো ফুল টুল নাই। মনে করো এই
টাকাই ফুল।
-ধ্যাত। ভালই ফাজিল হয়েছিস না! এই নে
গোলাপ। ঘর থেকে নিয়ে এসেছি।
-ফুল এনেছো আগে বলবা না!
আমি গোলাপ দিয়ে পুতুলকে প্রপোজ করলাম।
সে একসেপ্ট করলো। তারপর বাংলা মুভির
মতো গান হলো না। পুতুল আমাকে জড়িয়ে ধরে
কান্না শুরু করে দিলো। পরশু আমার বিয়ে।
আমি তোকে না পেলে যে বাঁচব না রে।
-তুমি বাঁচবে। বিয়াও ভঙ্গ হবে। এবার আমাকে
তুমি করে বলো।
-ওকে। তুমি, তুমি, তুমি
-এবার তোমার হবু স্বামীর ফোন নাম্বার দাও?
-আমার হবু স্বামী মানে?
-ওহহ স্যরি। যার সাথে তোমার বিয়া হবার
কথা তার নাম্বার দাও।
পুতুল আমাকে সেই ছেলের নাম্বার দিলো।
এবার পুতুলেকে নিয়ে কিছু অন্তরঙ্গ সেল্ফি
তোলে সেই ছেলেকে MMS করে পাঠালাম।
ফোন দিয়ে বললাম, আমি বাংলা ভাইয়ের
লোক। পুতুলকে বিয়া করা মানে মরার আগে
নিজের কবর নিজেই খনন করা। সেই ছেলে
ফোনে আমার এসব কথা শোনে অনেক ভয়
পেয়েছে মনে হয়। আমার কথার কোনো উল্টো
জবাব দেই নাই। আর এও বলেছি; বিয়েটা
যেনো ভেঙে দেয়। পুতুলের বাবা যেনো এই
সেল্ফি সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে।
ছেলেটা আমার কথা শুনেছে। ফোন রাখার
সময় সালাম দিয়ে ফোন রাখল।
পুতুলকে বললাম, বাসায় গিয়ে যেনো বলে এই
বিয়ে করবে না।
পতুল বললো...
-আব্বা যদি জানতে চায় কেনো বিয়ে করব না
তখন কি বলব?
-বলবা তুমি আরো পড়ালেখা করতে চাও।
তারপরও যদি না মানে তাহলে তোমার কিছুই
বলতে হবেনা। জামাই তো আর আসবে না। আর
জামাই না আসলে এতো কিছু বলে কি লাভ?
-ওকে তাহলে এখন যাই। তোর নিজের খেয়াল
রাখিস।
-উহহহ তুই না তুমি।
-স্যরি তুমি। তাহলে এবার যাই।
যাবে ভালো কথা। আমি আমার গাল বাড়িয়ে
দিলাম। পুতুল বললো এখন কিছু না। যা হবার
বিয়ের পর হবে।
.
আমি আমার বাড়ি চলে এলাম। পরশুদিন অর্থাৎ
শুক্রবারে পুতুলের বিয়ে হবার কথা ছিলো।
শুক্রবার সকালে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে আছি।
আম্মা দরজায় থাবা দিয়ে বললো...
-রাজ এই রাজ। তাড়াতাড়ি উঠ বিয়েতে যাবি।
-কার বিয়ে?
-পুতুলের।
-আমার বিয়ে আর আমি জানিনা।
-কি বল্লি।
-না কিছু না।
ঘুমের ঘোরে কি যে বলে ফেলেছি। আম্মাকে
ডাক দিয়ে বললাম; কে কে যাবে?
-শুধু তুই যবি। দেখ তোর বাবা পুতুল কে গিফট
দেওয়ার জন্য কি সুন্দর শাড়ি এনেছে। আব্বা
এই অসুস্থ শরীর নিয়েও বাজারে যায়! ওকে
আসছি আমি।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। আম্মা নাস্তা
দিলো নাস্তা খেলাম। আম্মাকে বললাম ভাত
দিতে।
-এখন ভাত খাবি ক্যান? বেলা ১২ টা বাঁজে।
কিছুক্ষণ পর বিয়ে আরাম্ভ। এখন খেলে
বিয়েতে গিয়ে খাবি কি?
-তুমি এসব বুঝবেনা। দাও তো...
পেট ভরে খাবার খেয়ে চলে গেলাম পুতুলদের
বাড়িতে। আব্বার দেওয়া শাড়ি তার হবু বৌমা
কে দিতে হবে। পুতুলকে শাড়ি দিয়ে চলে
এলাম। শুক্রবার আর বিয়ে হলো না। আর কখনও
বিয়ে হবেও না। ওহহ স্যরি হবেনা ক্যান হবে।
তবে সেটা আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে না।
সমাপ্ত
______________
সংগ্রহীত