₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]



ছোট বোনের সেই ৫ টাকার ঋণ আজও পরিশোধ হলো না।

একটা সময় ভিডিও গেমসের প্রতি চরম নেশা ছিল।দুই বেলা না খেয়ে,একবেলা ভিডিও গেমস খেললে পাহাড় সমান ক্ষুধা চলে যেতো। আমার প্রিয় গেমস ছিল 2002,97(যারা খেলছে তারা বুঝবে)।নেশা বলতে ভয়াবহ টাইপের নেশা।

আমি ছিলাম আন্তর্জাতিক সনদ প্রাপ্ত অলস।আম্মা পিটায়েও কোনোদিন মাছ, মাংসের বাজারে নিতে পারে নাই।এই দিক থেকে আম্মু ব্যর্থ।কিন্তু পকেটে টাকা না থাকলে আমি নিজেই গিয়া বলতাম,আম্মু বাজার লাগবে?টাকা দেও বাজার করে আনি।
আম্মু সব তরকারির দাম জানতো।দাম বলে দিতো আর সেই পরিমাণে টাকা দিতো।আমিও দোকানদারের সাথে খেচাখেচি কইরা দুই,পাচটাকা বাচাতে পারলে সেটাই আমি চুরি করতাম আর গেমস খেলতাম।

আম্মু স্কুলে যাইতে রিকশা ভাড়া দিতো,টিফিনের টাকা দিতো।আমি হাইটা স্কুলে যাইতাম আর টিফিন খাইতাম বন্ধুদের টা চাইয়া চাইয়া।বন্ধুরাই বলতো খা,আমিও না করতাম না।খাওয়ার দিক থেকে আমি সবসময় অভদ্র।খাইতে বললে না করতাম না।হাত বাড়াই দিয়া বলতাম দে দোস্ত।
আমার এমন খাওয়ার অভ্যাস দেখে বন্ধুরাও দূরে দূরে গিয়া খাইতো।সামনাসামনি পরলে, আমি যে খাবো এটা মিস নাই ওরাও জানে।মাঝে মাঝে তো কোচিং এর বেত বিক্রি করে দিতাম লাইব্রেরীতে আর সেই টাকায় গেমস খেলতাম।

ছোটবোনের স্কুল ছিল দূরে।আমাকে রিকশা ভাড়া দিতো। রিকশায় যাবো আর রিকশায় আসবো।আমি হেলেদুলে হাইটা যাইতাম।গিয়া দেখতাম বোন আমার বলদের মত বসে আছে।চেহারা দেখে মনে হয় দুনিয়ায় কেউ নাই।ক্ষিদায় মুখটা আমসি দিয়ে যাইতো।আমি কোলে করে চকলেট,ফুসকা সব খাওয়াতাম।টাকা অবশ্য ওর থেকেই নিতাম।ব্যাগ আমার কাধে থাকতো, টাকা কখন নিতাম টের পাইতো না। খাওয়ায়ে বিল দিয়ে কোলে করে বাসায় আনতাম।রিকশা ভাড়ার সব টাকা আমার পকেটে চালান হয়ে যেতো।

একবার গেমসের প্যাঁড়া উঠলো।কোথাও টাকা পাইলাম না।ছোটবোনকে হাতেপায়ে ধরে ৫ টাকা নিলাম।বলেছি,কাল দিয়ে দিবো। সেই টাকা দিতে আমার ১ মাস সময় লাগে।ছোট বোন অংকে খুব পাকা।সুদের হিসাবটাও জানে।৫ টাকা ১ মাসে সুদে ৫০০ টাকা হইছে।
তখনের বয়সে,৫০০ টাকার নোট দেখতে কেমন তাই তো জানতাম না।প্রতিদিন এক টাকা,তিন টাকা করে দিয়েই যাচ্ছি,দিয়েই যাচ্ছি ৫০০ টাকা আর শেষ হয়না।দিন যত যাচ্ছে সুদ তত বাড়তেছে। প্রতিমাসে আমাকে সুদের টাকার পরিমাণ শোনাতো।আমিও শুনতাম।

৪ মাস হলো ছোটবোনের বিয়ে দিলাম।নিজের টাকাতে ফার্নিচার বানিয়ে দিলাম,গহনা বানিয়ে দিলাম।
তাও ৫ টাকার ঋণ শোধ হলোনা।জামাই বাড়ি গেছে তাও প্রতিমাসে আমার থেকে হাত খরচ নেয়।কি এক অবস্থা।

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]