নারীদিবসে নারী হয়েও কিছু নারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে আজ বাধ্য হচ্ছি।
নারীদিবসে নারী হয়েও কিছু নারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে আজ বাধ্য হচ্ছি।
১/ দশ বছর বয়স থেকে হিজাব পরা শুরু করেছিলাম।কিন্তু আফসোস! উৎসাহ না দিয়ে তখন কিছু নারীরা বলেছিলেন, "এইটুকুন মেয়ে হয়ে পর্দা করছো কেন?"
অথচ, তখন অনেক পুরুষ বলেছিলেন, "মাশাআল্লাহ! তুমি এভাবেই থেকো মা!"
২/ নিজেকে সম্পূর্ণ আবৃত করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকবার মেয়েদের থেকেই শুনতে হয়েছে, "উফ!এত খ্যাঁত"।
অথচ, নেশাখোর গুন্ডা ছেলেগুলোও সরে গিয়ে আমায় রাস্তা দিয়েছিল।
৩/ এখনোও মনে পড়ে, পাঁচ তলা ভবন থেকে একটা মেয়ে একটা বাচ্চাকে লক্ষ্য করে বলেছিল," ঐ দেখ কালো ভূত!কান্না বন্ধ করো নয়তো তোমার ঘাড় মটকে দেবে।"
একই সাথে মনে পড়ে,এমন অনেক গাড়ি চালকদের কথা। যারা আমার থেকে গাড়ি ভাড়া নেয় নি, আমায় পর্দা করতে দেখে বলে।
৪/ একবার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু অনাবৃত মেয়েদেরকে দেখেছি।যাদের দিকে তাকিয়ে কিছু ছেলেরা চোখ টিপে হাসছে।ভয়ে যখন আমি থমকে গেছি, তখন ছেলেগুলো মাথা নত করে বলল "সরি আপু!আপনি চলে যান।"
৫/ ১ সপ্তাহ আগের কথা। এমনি এক মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "What! কিন্তু তার সাথে থাকা ছেলেটি মেয়েটাকে ধমকে উঠিয়ে আমায় সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
আমি ভুলি নি, অনেক ভীড়ে যখন পুরুষেরা সরে গিয়ে আমায় জায়গা করে দিয়েছিল।
ভুলি নি, সব'চে বাজে ছেলেগুলো ও আমার দিকে চোখ না তুলে মাথা নুয়ে সরে গিয়েছিল।
আমি সেই বৃদ্ধ ফেরিওয়ালার কথাও ভুলি নি।যার থেকে কিছু জিনিস ক্রয় করার পর টাকা রাখতে চান নি।মৃদু হেসে বলেছিলেন," তুমি মাদ্রাসার ছাত্রী।তোমাকে ছাড় দিলে সৃষ্টিকর্তাও আমায় ছাড় দিবেন।আমার জন্য দোয়া করিয়ো মা"
আমি ভুলি নি, একজন বৃদ্ধা ভিখারিনীর কথা। যখন কারো দৃষ্টি উনার পরে নি, তখন আমি কিছু টাকা উনার হাতে বাড়িয়ে দিতেই উনি বলেছিলেন, "তোমার থেকে নিতে লজ্জা লাগছে।গুনাহ হবে। আমার জন্য দোয়া করিও।"
আমি ভুলতে চাই, সেইসব নারীদের কথা, যারা বলেছিল "এত পর্দা করার কী দরকার? ভুলতে চাই তাদের কথা, " বোরকা পরলেই তো হয়,
"মুখ ঢাকতে হয় নাকি?"
"হাত-পা ঢাকার কী প্রয়োজন?"
ভুলতে চাই, "পর্দার বিরুদ্ধে তাদের হাজারো যুক্তি।"
আমি ভুলতে চাই, সেইসব নারীদের কথা।যারা নিজেও আবৃত হয় না,আমাদেরকেও আবৃত চোখে দেখতে পারে না।যারা এখনোও প্রতিটা মূহুর্তে আমাদের হিজাব নিয়ে ঠাট্টা করছে।
নারীই নারীদের সব'চে বড় শত্রু। পুরুষ তো নারীর রক্ষক এবং উৎসাহ প্রদানকারী।
আজ নারী দিবসে টাইমলাইনে নারীদের অধিকার নিয়েই ছড়াছড়ি। কিন্তু, একজন নারী হয়েও যে আরেকজন নারীর মনোবল ভেঙ্গে দিচ্ছে, সেটার দায়ভার কে নিবে?
দয়া করে আপনারা থামুন! আমরা আপনাদেরকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।আপনি পর্দা করলেন কি না সেটাও আমাদের দেখার বিষয় না।অন্ততপক্ষে যারা পর্দা করে তাদেরকে তাদের মত করে থাকতে দিন।
লেখক: Samiha Jannat