ডিয়ার সাবলেট
সপ্নীল ভাই আমাদের বাসায় সাবলেট হিসেবে আছেন প্রায় বছর তিনেক। তবে কিছুক্ষন আগে চলে গেলেন ,খুব খারাপ লাগছে আমার। রাজপুত্রের মতো চেহারা ছিলো ওনার। সারা বাংলাদেশ ঘুরলে এরকম সাতটা ছেলে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ওনার সবই ভালো ছিলো শুধু একটাই সমস্যা। আমি ওনার সামনে আসলে সবসময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যেনো ওনার নজর পড়লে আমি ভস্মীভূত হয়ে যাবো। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় । একটা উড়ো চিঠি লিখে বলতে ইচ্ছে করতো-
ডিয়ার সাবলেট,
সপ্নীল ভাই। আপনি কেনো আমার দিকে তাকান না ? আমি কি যথেষ্ট সুন্দরি নই? নাকি আমাদের বাসার কার্পেট অনেক সুন্দর যে কার্পেটের দিকেই তাকিয়ে থাকেন।
ইতি গুণে অমুগ্ধ ,
‘মনপুরা’।
চিঠি লেখা আর হয়ে উঠলো না। আর মেসেজ দিলে কি মনে করবেন কে জানে? আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ওনার প্রেমে পড়ে গেছি। মোটেও না। আমার প্ল্যান ছিলো আগে ওনাকে বিয়ে করবো তারপর প্রেম করবো।
তবে আজ সকালে কলেজ যাবার পথে মায়ের একটা কথা শুনে আমার শীরদাড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।
“মনপুরা শোন সপ্নীলের অবস্থা। এই পিচ্চি ছেলেটাকে ধরে ওর বাপ মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। সবে মাডিকেল স্টুডেন্ট । ছুটিতে বাড়ি গিয়ে শুনে –কোন আত্মীয়ের মেয়ে যেনো পছন্দ হয়েছে ওর বাবার । তো ওকে জিজ্ঞেস করলাম বউকে খাওয়াবা কী। বলে বউ এখন বাড়িতেই থাকবে, পরে ডাক্তারি করলে শহরে নিয়ে আসবে। দেখ্ বিয়ের কার্ডও দিয়ে গেলো। কি যে অবস্থা , না হেসে পারা যায় না।“আমিও মায়ের মতো হাসি দিয়েই কলেজ রওনা হলাম।
আজ সন্ধ্যা ৭.৩৩ মিনিটে সপ্নীল এর সাথে আমার শেষ দেখা। আজ আর সপ্নীল ‘ভাই’ বলে ডাকবো না। চায়ের কাপটা প্রটিদিন সন্ধ্যা বেলায় ওর পড়ার টেবিলে যেভাবে রেখে আসি আজও ওভাবেই রেখে এলাম। আজ শুধু পার্থক্য এটাই প্রতিদিন চায়ের কাপে আমার ঠোঁট ছুইয়ে দিতাম যেনো অজান্তেই আমার ওষ্ঠের আস্বাদ নিতে পারেন , তবে আজ ছুইয়ে দেই নি। আর ও বরাবরের মতো কার্পেটের দিকে তাকিয়ে।
এতোক্ষণে হয়তো সপ্নীল মারা গিয়েছে। হ্যাঁ, ওর চায়ের কাপে ঠোঁট না ছোঁয়ালেও দু ফোটা পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে দিয়েছি। আমিও চায়ে সবে চুমুক দেবো। স্বার্থপর ভাববেন না আমাকে, আমার কাপেও গুনে গুনে চার ফোটা পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়েছি। আজ ক্যামেস্ট্রি ল্যাব থেকে চুরি করতে গিয়ে কি ঝামেলাটাই না পোহাতে হয়েছে। চা থেকে একটা চমৎকার ঘ্রান আসছে। বাবা শখ করে দার্জিলিং টি আনিয়েছিলেন। সায়ানাইড মিশিয়ে এখন হয়েছে সায়ানাইড টি। তবু গন্ধটা ভালো লাগছে। ভালো থেকো ডিয়ার সাবলেট। চারিদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর ঘ্রান। মৃত্যুরও ঘ্রান আছে।
লেখাঃ শ্রাবণ