লজ্জা কমানোর ওষুধ

 বিয়ের গেইট ধরেছে কনে পক্ষরা৷ গেইটে ধরার টাকা হাতে নিয়ে জামাই পক্ষরা আইসক্রিম গানে ড্যান্স করছে৷ বর এর বন্ধুদের হাতে টাকা, দিতে চাচ্ছে কিন্তু দিচ্ছে না৷ হাত নাড়িয়ে, কোমর দুলিয়ে ড্যান্স করছে৷ অন্য দিকে কনের বান্ধবীরা টাকা নেয়ার জন্য হাত পেতেছে, কিন্তু নিচ্ছে না৷ তারাও হাত ঘুরিয়ে, কোমর দুলিয়ে নাচ্ছে৷ কি অদ্ভুত কান্ড!


আমি কোন রকম এই অদ্ভুত কান্ডের পাশ কাটিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর প্রবেশ করেছি৷ 


পোলাও রোস্টের ঘ্রাণে বুক কেমন যেন করে উঠল৷ 

বাঙালির বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার এই একটা জিনিস ভীষণ প্রিয়.. খাবারের লাজবাব ঘ্রাণ, আহ! চোখ বন্ধ করে ঘন এক শ্বাস টানতেই নাকে এলো সুস্বাদু কতসব খাবারের ঘ্রাণ৷


হঠাৎ কানে এলো চিৎকারের শব্দ! ‘চুপ! একদম চুপ! আপনার লাখ লাখ টাকায় আমি পেশাব করি৷’


আমি খানিকটা বায়ে ঘাড় বাকালাম৷ চল্লিশোর্ধ দু’জন লোক তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়েছে৷ একজন চেচিয়ে বলছে, আপনার লাখ টাকায় আমি পেশাব করি৷

আরেকজন বলছে, আপনার ক্ষমতায় আমি থুথু ফেলি থুহ! 


কয়েক জন মহিলা এংগ্রি অল্ড ম্যানদের থামানোর চেষ্টা করছে৷


বঙ্গ দেশের বিয়েতে ঝগড়া করাটা যেন ঐতিহ্য হয়ে গেছে৷ পথে ঘাটে দু’জন মানুষের ঝগড়া অস্বাভাবিক কিছু তবে বিয়েতে এমন ঝগড়া খুবই তুচ্ছ ব্যাপার৷ পার্ট অফ এ ম্যারিজ প্রোগ্রাম৷ ঝগড়া না হলে যেন বিয়ের অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷


আমার আর এই সাইডে থাকার ইচ্ছে করল না৷ আপাতত তারা থুথু আর পেশাব ফেলার মধ্যেই আছে৷ পরে যে আরো কত কি ফেলতে চাইবে! আমার খাবারের রুচি নষ্ট করতে চাইলাম না৷ প্যান্টের দুই পকেটে হাত রেখে সরে আসলাম অন্য সাইডে৷


খাবার দিতে এখনো ঘন্টা খানিক দেরি হবে৷ আটটার প্রোগ্রাম৷ আমি আগেই চলে এসেছি কাজ থেকে৷ সারাদিন কামলা খেটে সেভাবেই বিয়েতে এটেন্ড করেছি, আশে পাশে মানুষদের দেখে কিছুটা আনইজি লাগছে৷


চারপাশে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে৷ কেউ পড়নে লেহেঙ্গা, কেউ শাড়ি৷ কোনটি বউ, কোনটি বোন, কোনটি বান্ধবী.. বুঝা খুবই মুশকিল৷ সব মেয়ে এত বেশি মেকাপ করেছে যে অনেক চেনা মুখও চেনা যাচ্ছে না৷


মেয়েরা বোধহয় জানেনা একটা ব্যাপার, অতিরিক্ত মেকাপে মুখের মায়াটা মরে যায়৷ তখন আর তাদের প্রতি মুগ্ধ হওয়ার কিছুই থাকে না৷ হয়তো জানে কিন্তু মানতে চায় না৷ ত্যাড়া জাতি৷


আমার মুগ্ধ হতে ইচ্ছে করছে৷ চারপাশে আরেকটু ভালো করে তাকাতেই চোখে পড়ল ডান দিকের এক খাবার টেবিলের প্রথম চেয়ারে এক মেয়ে বসে আছে৷


বাকিদের তুলনায় কম মেকাপ করা৷ হাতে খুব ঘন করে মেহেদি দেয়া৷ লাল রং এর লেহেঙ্গা পড়নে৷ 

ছোট বাচ্চা মেয়েরা মন খারাপ করলে যে ভঙিতে বসে থাকে ঠিক সেভাবে বসে আছে৷


আমি যেন মেয়েটিকে দেখলাম না৷ না দেখে টেবিলটির দিকে এগিয়ে গেলাম৷ চেয়ার টেনে বসে তাকালাম মেয়েটির দিকে৷ দূর থেকে দেখে যতটা সুন্দর মনে হয়েছিল, কাছ থেকে সেই সৌন্দর্য খুব বেশি মনে হচ্ছে৷ 


মেকাপ খুবই অল্প করেছে৷ অন্তত এখানে উপস্থিত বাকিদের তুলনায়৷ ভারি মিষ্টি চেহারা৷ কপালে ছোট ছোট কিছু ব্রণ৷ অনেক মেয়ের মুখেই ব্রণ মায়া বাড়িয়ে দেয়৷


ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে৷ বোধহয় কারো উপর চাপা কোন রাগ আছে৷ রাগ ঝাড়তে পারছে না বলে একা বসে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে৷


মক্ষম সুযোগ কথা বলার৷ জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্টেজে বউ দেখছি না৷ এখনো বোধহয় আসেনি পার্লার থেকে৷’


মেয়েটি আমার দিকে তাকাল৷ আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কয়েকবার চোখ ঘুরাল৷ ফেইক পাপড়ি পড়ার কারনে চোখ ঘুরানো খুব স্পষ্ট বুঝা গেল৷


এবার মেয়েটির প্রশংসা করার পালা৷ বললাম, ‘আজকাল বিয়েতে সবাই এমন সাজে যে আসল বউ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হাহা! আপনার সাজ ডিফারেন্ট৷ ভালো দেখাচ্ছে৷’


মেয়েটি ঠোঁট বেকে কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘সব মেয়ে দেখা শেষ?’


আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম কথাটা শুনে৷ ভীষণ লজ্জা৷ বাকি কথা বলার মুখটা বন্ধ হয়ে গেল৷ এখন আর কি বলা যায় বুঝতে পারছি না৷


মেয়েটির দিকে আবার তাকালাম৷ মেয়েটিও তাকাল৷ এবার একটু চওড়া হাসল৷ খোঁচা মেরে কথাটা বলে তার মন যেন কিছুটা হালকা হয়েছে৷ বললাম, ‘আপনার কি কোন কারনে মন বিষন্ন?’

—‘বুঝলাম না!’

—‘মন খারাপ হয়ে আছে?’

—‘ওহ! হু, খুব খারাপ হয়ে আছে৷’

—‘ওমা! কেন!’

—‘আছে কিছু কারন৷’

—‘বলতে পারেন৷ সলিউশন দিচ্ছি৷ খাবার দিতে আরো আধা ঘন্টা৷ তাছাড়া মেয়েদের কোন বিয়ের দিন মন খারাপ করতে নেই৷ অন্যের বিয়েতে মেয়েরা যত হাসবে, নিজের বিয়েতেও ততটাই মন ফুরফুরা থাকবে৷’

—‘আপনি কি আমাকে চেনেন?’

—‘সম্ভবত না৷’

—‘এখানের কাউকে কি চেনেন?’

—‘উহু! আপাতত চেনা জানা কাউকে দেখছি না৷’

—‘আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে৷ ইচ্ছে করছে বিয়ের সব কিছু ভেঙে ফেলি!’

—‘আমার কথার কারনে?’

—‘নাহ! ঐযে দেখছেন মিষ্টি রঙের শেরওয়ানি পড়ে যে ছাগল ছবি তুলছে৷ সেই ছেলের কারনে রাগ৷’

—‘সেই ছেলে কি করেছে! ওতো জামাই৷’

—‘হু জামাই৷ আমার জামাই৷ আর আমিই বউ৷ ছাগলটাকে বলছিলাম সাদা রঙের শেরওয়ানি পড়তে৷ পড়ে আসছে মিষ্টি৷ কোন মানে হয়! আমি করব না কাবিন নামায় সই৷’


সই করবে না কথাটা এতই জোর দিয়ে বলেছে যে আশেপাশের সবাই তাকাল মেয়েটির দিকে৷ জামাই হাসতে হাসতে এলো মেয়েটির কাছে৷ বলল, ‘লক্ষি বউ আমার রাগ করে না....!’


লজ্জায় আমি আর বসে থাকতে পারলাম না৷ ক্ষুধা মরে গেছে৷ এই অনুষ্ঠানে আর এক সেকেন্ড থাকা সম্ভব না৷ বউ এর সাথে এতক্ষণ আমি .. ছিহ!


দ্রুত হোল রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম৷ দরজার পাশে জামাই বউ এর নাম লেখা৷ সেখানে তাকাতেই নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে গাধা শ্রেণীর এক মানুষ মনে হলো৷ 


যাদের বিয়েতে এসেছি, ওদের অনুষ্ঠান চতুর্থ ফ্লোরে! আমি আর উপরের ফ্লোরে উঠলাম না৷ লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে গেছে৷ নীচে নামার সিঁড়ি ছাড়া চোখে আর কিছুই দেখছি না৷ সোজা নেমে গেলাম নীচে৷


রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালালাম ঠোঁটে৷ আমার ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে৷ লজ্জা কমানোর ওষুধ কি পৃথিবীতে আছে ...?




লেখাঃ রাব্বানী মাসায়েখ পনি


Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]