স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড

এমন স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড আমি কোন দিন দেখিনি!


আমি নবনী।তখন ইন্টারে সবে মাত্র ভর্তি হয়েছি।আশেপাশে সবাই,এমন কি!আমার বেস্টুও প্রেম করে।তাই আমার প্রেম করা গুরুতর দায় হয়ে পড়ে।ক্লাস টেন উঠার পড় থেকে ওই স্বৈরাচারী মানুষটাকে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি।তাকে আমি পছন্দ করি,সে একটি বার যেন আমাকে প্রপোজ করে বা আমার সাথে কথা বলে।কিন্তু,কোন কাজই হচ্ছেনা। কেমনটা লাগে,এই স্বৈরাচারী মানুষটার জন্য অন্য ছেলেকেও মনে জায়গা দিতে পাচ্ছি নাহ্।স্বৈরাচারী মানুষটার নাম হচ্ছে মুহিব রহমান৷ তাকে কেন স্বৈরাচারী বলছি তা আপনারা একটু পরই বুঝতে পারবেন।


শেষমেশ ইন্টার ফাইনাল দিব তার মাস চারেক আগে তিনি আমাকে গভীর রাতে কল করে। তারপর থেকে শুরু এই স্বৈরাচারী সাথে পথচলা....।প্রেম করার আগে ভাবতাম আহ্ তাকে পেলে জীবনটা কত শান্তিই না পাবে।সারারাত কথা বলব,ঘুরবো ইচ্ছা মত,ঘন্টার পর ঘন্টা রেস্টুরেন্টে কাটাব।কিন্তু এমন কিছুই হয় নাহ্।যখন আমি সেই একটা ঘুমের ঘুরে আচ্ছন্ন থাকি। তখন সে ভোরে ফোন করে বলবে,শারিরীক সমস্যা না থাকলে ঘুম থেকে ওঠে নামাজ পড়ে,বই নিয়ে পড়তে বস।আবার যখন সন্ধ্যায় দিকে খুব মন দিয়ে টিভি দেখি,তখন তিনি ফোন দিয়ে ইমোশনাল ভাবে বলবে,আপনাকে দিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন,আশা করি এইচএসসিতে ভালো ফল করে সেই স্বপ্নের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবেন।আমি জানি আপনি পারবেন।এই কথা শুনার পর কি আর টিভির রুমে বসে থাকে যায়! আবার যখন রাতে ফোনে কথা বলি,তখন ২০-২৫ মিনিট কথা বলার পরই বলবে,কাল ভোরে ওঠতে হবে না?আর এইসব কথা পরিক্ষায় পরেও বলা যাবে। আগে ভালো করে পরিক্ষা দাও।সে ফোনটা কেটে দেয়,আমি ঝিম মেরে বসে থাকি আর ভাবি আমার প্রেম করার আগের জীবনটাই বেশ ছিল৷খাল কেঁটে এখন আমি কুমির এনেছি,নিজের জীবনের বারোটা বাজাতে।


এবার তার বিষয়গুলো বলি, তার যখন আমাকে দেখতে ইচ্ছা করবে তা রাত হোক বা দিন। ফোন করে বলবে একটু বেলকনিতে আসতে পারবা,আমি তোমার বাসার সামনের রাস্তায়।তখন আমি যেই অবস্থাতেই থাকি আমাকে তার দেখতেই হবে।বাসায় লোকজন ভর্তি থাকলেও।তাদের বাসায় সামনে দিয়ে আমাকে কলেজ যেতে হয়।যদি কলেজে যেতে লেট হয় তাহলে সে ঠিকই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলবে আর আমাকে পঁচাবে।


এই স্বৈরাচারী মানুষটার অত্যাচার কিছুটা অন্যরকম।সেইদিন কলেজে থেকে বাসার আসার সময় এক বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে আসতেছিলাম তাকে দেখানোর জন্য। আমি জানি এখন তিনি টং দোকানে বসে থাকবেন।আমি যখনই টং দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম-সে টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে আর আমাকে এক নজরে দেখে যাচ্ছে।তিনিও জানেন,এই বড় ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে।যাই হোক আমি ভাবলাম এই নবনীকে প্যারা দেওয়া,দেখেন এইবার কেমন লাগে।রাতে কথা বলার সময় মনে করেছিলাম-সে একটু জেলাছ হবে আর বলবে ওই ছেলেটার সাথে এত কিসের কথা ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু ওইসব কথা কিছুই বলল নাহ।আমিও কিছুটা অবাক হলাম।তারপরের দিন যখন আমি কোচিং থেকে ফিরতেছিলাম। তখন দেখি তিনি এক মেয়ের সাথে খুব সুন্দর ভঙ্গিমায় কথা  বলছে আর হাসছে।আমার প্রচন্ড রাগ ওঠে। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে আসি।সন্ধ্যায় বেশ কয়েকবার তিনি আমাকে কল দেন,আমি ধরি নাহ্।রাতে আবারও বেশ কয়েকবার কল করার পরে আমি রিসিভ করি। কিন্তু কোন কথা বলিন নাহ্।তখন তিনি শান্ত স্বরে বলেন,দেখ তুমি-আমি, সবাই নিজের প্রিয়জনকে বিশ্বাস করি আর ভাবি সে যার সাথে কথা বলুক আর মিশুক সমস্যা নেই,আমার জায়গাটা আমারই থাকবে।তারপরও খুব কাছের মানুষকে অন্য কারও সাথে ক্লোজ দেখলে কিছুটা কষ্ট লাগেই।সেটা হোক বন্ধু বা অন্যকেউ।আমাকে আর বুঝাতে হয় নাহ্।


স্বৈরাচারী মানুষটার সবচেয়ে খারাপ দিক হল তার প্রচন্ড রাগ।তার কথায় একটু বেশ কম হলেই তিনি প্রচন্ড রাগ দেখাবেন তবে আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করে নাহ্,ফোনটা অফ করে ডুব দিবে দুই-তিন দিনের জন্য।একদিন দেখতে না পেলেই আমার জীবনটা ত্যাছপাতা  হয়ে যায় আর তো ২-৩ দিন। বাধ্য হয়েই তা কথা শুনতে হয়।আবার আমি কোন কারণে রাগ করলে রাগ ভাঙাতেই পারে না ওল্টো তিনি রাগ করে বসে থাকেন।তখন আমাকেই আবার সরি-টরি বলে তার রাগ ভাঙাতে হয়।এমন স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড থাকায় চেয়ে না থাকা অনেক ভালো। মাঝেমধ্যে খুবই অসহ্য লাগে৷


তাকে চাপে রাখায় উওম সময় হল আমার পরিক্ষায় সময়টাতে। এই সময়টাতে তাকে দিয়ে অনেক কিছু করানো যায়।একবার আমার ম্যাথ পরিক্ষা।রাত প্রায় তিনটে আমি তাকে ফোন করে বললাম-আমার পড়ার মন বসছে নাহ্,আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।তিনি বললেন দেখি কি করা যায়। আরও কিছু কথা বলে রেখে দিলাম। তার ঠিক ২৫ মিনিট পর তিনি আমার বাসায় সামনে উপস্থিত।আবার যখন পড়ার ফাঁকিবাজি শুরু করি তখন তিনি ঠিক বুঝে যায়।এমন ভাবে খুঁচা দিয়ে কথা বলবেন। তারপর আর পড়ার টেবিলে না বসে থাকা যায় না।


তার জন্য ঠিক মত কিছুই করতে পারি নাহ্।কোথায়ও ঘুরতে পারি নাহ্,অনেক রাত পযর্ন্ত টিভি দেখতে পারি নাহ্। ফোনে গেম খেলতে পারি নাহ্। মানে আমার জীবনটা পুরাই হেল করে দিছে।আমি একদিন বলেই ফেলি আপনাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না,একটু রেহাই দিবেন। 

সে অনেকটা সময় চুপ করে থাকে তারপর মুচকি হাসি দিয়ে বলে-আচ্ছা ঠিক আছে,তোমাকে স্বাধীনতা ফেরত দেওয়া হল৷


তার কয়েক মাস আমি খুবই আনন্দে কাঁটতে লাগলো।মাঝে মাঝে মিস করলেও তেমন গুরুত্ব পেত নাহ্। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,ঘুরতে যাওয়া,গেম খেলা,টিভি দেখা,গভীর রাত পযর্ন্ত ফেসবুকে থাকা, ক্লাসে লুকিয়ে ঘুম পাড়া ইত্যাদি যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে পড়ে৷     


আর এ দিকে আমার পড়াশোনার বেহাল দশা।হঠাৎ একদিন আমি তাকে ফোন করি,সে স্বাভাবিক স্বরেই কথা বলে। আমি পারি নাহ্। আমার কান্না চলে আসে,আমি শব্দ করে কান্না করি। তিনি ওপাশ থেকে নিশ্চুপ থাকে। তার বেশ খানিক পর তিনি বলেন-খুব কাছের মানুষগুলোর গুরুত্ব তখনই বুঝা যায়,যখন সে হারিয়ে যায়।আমি মনে করি সবারই একবার হারানো দরকার৷তবে তা একেবারের জন্য জন্য নয়।


অতঃপর আমি বুঝতে শুরু করি এমন স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড আমার লাগবেই।খুব আনন্দে চিত্তে সময় কাটাতে না পারলেও, এমন স্বৈরাচারী মানুষের ভালোবাসা পাওয়াটাই অনেক কিছু।এমন স্বৈরাচারী মানুষগুলো হয়তো ওত আহ্লাদি স্বরে কথা বলতে পারে নাহ্,তবে এমন কথা বলতে পারে যাতে আপনার লাইফটাই সুন্দর ভাবে চলে।


আপনি একবার ভেবে দেখুন, আপনার পাশের মানুষটা আপনাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে,কিন্তু তার ব্যবহারে কখনোই দেখতে পাচ্ছেন নাহ্।যদিও বা দেখতে পান তা খুবই কম।আমার কাছে প্রকাশিত ভালোবাসা পাবার থেকে  লুকায়িত ভালোবাসার মানুষটা হওয়াটা মনে হয় বেশি স্বার্থকতা।মেয়েরা বাবা মার পরে সবচেয়ে বেশি বয়ফ্রেন্ডের কথা বেশি শুনে।এমন স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড থাকা মানে নিজের জীবনটা গুছিয়ে দেওয়ার মানুষটা থাকা।এমন স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড থাকা মানে পুরো পৃথিবীটা আপনার অনুকূলে থাকা।আমি চাই আমার মানুষটা সারাজীবনই এইরকম স্বৈরাচারী থাকুক।ভালো থাকুক এই রকম স্বৈরাচারী বয়ফ্রেন্ড নামের মানুষগুলো আর স্বৈরাচারী মানুষের ভালোবাসাগুলো। 



লেখাঃ নাঈমুল ইসলাম নিহিক।

 

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]