কন্যা ও জননী
ভাবী আজ ও খাওয়ার সময় চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো।
কলেজ থেকে এসে খেতে বসেছিলাম।
প্লেট হাতে ড্রইং রূমে চলে এলাম। শব্দ করে ওর বেডরুমের দরজা বন্ধ করলো।
কলেজ ফেরত আমার ভীষণ খিদে পায় রোজ।খিদের ও তেমন দোষ নেই।
সকাল ছয়টায় উঠে ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছে, সকালের নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে তবেই ভাবীর হাত থেকে নিস্তার।
না হয় কথার তোড়ে মা মেয়ে পেরে উঠি না।
খালু মানে আমার সৎ বাবা সারাদিন ই পান চিবাতে থাকে।
ভাইয়া ভাবীর অত্যাচার দেখে এবং শুনে নিবিড়ভাবে পান চিবানোর গতি ই বাড়ে শুধু আর কোন প্রতিউত্তর আসে না।
ফলে দিন দিন আমরা কোণঠাসাই হচ্ছি ।
তাড়াহুড়ো করে দুটো রূটি চায়ে চুবিয়ে গলাধঃকরণ করে নাজমুল স্যারের ব্যাচ এ পড়তে যাই।
রিকশায় গেলে বিশ টাকা ভাড়া।
হাতে বিশ মিনিট সময় নিয়ে তাই শর্টকাট গলির ভেতর দিয়েই চলে যাই।
কোচিং শেষে কলেজ।
ক্লাস শেষে একটা ডাল পুরী আর হাফ লিটার পানি খেয়ে খিদে টাকে বশে আনি।
ওখান থেকে চকবাজারের টিউশনি সেরে বাসায় ফিরতে দুপুর তিন টে বেজে যায়।
ততক্ষণে পেটে ছুঁচোর দৌড় শুরু হয়।
দিনে একটার বেশি নাস্তা কিনতে ও ইচ্ছে করে না।টিউশনির টাকাটা জমাতে ভালো লাগে।
আম্মুর শাড়ি, আমার ড্রেস কিনতে টাকাগুলো খুব কাজে দেয়।
আম্মুর পোস্ট অফিসে সন্চিত টাকার ইন্টারেস্ট এ আমার পড়ার খরচ চলে।
খুব হিসেব করে চলতে হয় মাসের প্রথম থেকেই। না হয় মাস শেষের দিন গুলোতে একটা ডালপুরি কেনার টাকা ও থাকে না।
আম্মুর একটাই স্বপ্ন কখন আমি বি.বি.এস, এম.বি.এস শেষ করে চাকরী যোগাড় করে এখান থেকে উদ্ধার পাবো দুজনে।
শুনে অতি দুঃখে ও আমার হাসি পায়,
এই পরিবেশে এতো লম্বা পথ কিভাবে যে পাড়ি দিবো !
আমি মিলি, এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি ।
এই ঘরে মা'র দ্বিতীয় বিয়ে।
আগের সংসারে মা সব নিজের হাতে সাজিয়েছিলো।
প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করতো,পাশাপাশি ঘর সংসার ও সামলাতো সুনিপুণ হাতে।
চাকরির টাকা দিয়েই একটু একটু করে সংসার সাজিয়েছিলো।
গর্ভকালীন জটিলতার কারণে মা হতে পারছিলো না।
খুব মানসিক কষ্টে দিন কাটতো তাঁর।
তবু সংসার টিকিয়ে রাখতে মনের কষ্ট টা ছাইচাপা দিয়ে রাখতো।
ষোল বছরের সংসারে মা'র শুধু একটা চাওয়াই ছিল। একটা সন্তান ,একটু মা ডাক শোনা।
এসব অবশ্য আমার জানার কথা নয়।
আমি মায়ের পালিত কন্যা।
খালা মামী রা যখন একত্রে হতো নানু বাড়ি বোয়ালখালী তে, গল্পের আসর বসতো ভাত ঘুমের সময়টাই।
ঘুমন্ত আমি কে সত্যিই ঘুমিয়েছি ভেবে পুরনো কথার আগল ভেঙে একে একে বহু অজানা তথ্য আমার কর্ণ গোচর হতো।
সেই সময় পুরনো সংসার,সম্পর্কের কথা বলতে বলতে মা'র গলা বুজে আসতো।
তখনই শুনি, আমি আম্মুর নিজের মেয়ে না!
সবাই কে নিষেধ ও করতো, কেউ যেন আমাকে এ ব্যাপারে না জানায়।
যখন কোনভাবেই আগের স্বামী কে একটা বাচ্চা পালক নেয়ার জন্যে রাজি করাতে পারেনি ,
স্বামীর মুখের ভাষা ও পরিবর্তন হয়ে যখন শারীরিক নির্যাতনে পরিণত হয়,তখন আমার স্বাবলম্বী মা এক কাপড়ে ঘর ছাড়ে।
আমার বড় খালার কাছে আশ্রয় নেয়।
খালার তখন একার সংসার।
সমস্যা ছিলো না থাকার জায়গার।
দুই মাসের শিশু নিয়ে অন্যের সংসারে শুরু হয়
আম্মুর একার নতুন যাত্রা।
এইবার আমার পরিচয় টা বলি।
বোয়ালখালীর হতদরিদ্র চাষীর ঘরে ফুটফুটে যমজ মেয়ের একজন আমি।
মামাদের আগে থেকেই বলা ছিল আত্মীয়ের মধ্যে দত্তক নিলে জানাজানি হবে, তাই অপরিচিত কোন ছোট শিশু যেন জোগাড় করে দেয়।
সেই সুবাদে আমার আম্মুর কোলে আসা।
আমার আসল মা ও মনে হয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে,ভবিষ্যতে একটা পেটের ভার কমে যাওয়ায়।
বহু আকাংখিত ছোট শিশু পাওয়ার আনন্দে আর নতুন দায়িত্বের স্বাদ পেয়ে মা তখন সরকারি চাকরি টা ছেড়ে দেয়।
আমাকে নিয়েই তার সময় ব্যস্ততায় কেটে যায়।
খালা,মামা, খালাতো বোনের বাসা মিলিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমার দুই বছর বয়স হয়ে যায়।
এর ওর বাড়ী তে থাকতে থাকতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মায়ের বিয়ের প্রস্তাব আসে।
বয়স আটত্রিশ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
সৌন্দর্য তেমন ম্লান হয়নি।
খালার ছেলেদের ও বিয়ের সময় হয়েছে।
কতদিন আর আশ্রিত হয়ে থাকবে।
মামা দুজনের একজন মারা গিয়েছেন।
আরেক জন খুব অসুস্থ ।
মায়ের একটাই শর্ত ছিলো,যেখানেই যাবে আমি সহ যাবো।
এই রকম বাচ্চা ওয়ালা মহিলা বিয়ে দেয়ার ঝামেলা ও অনেক।
অবশেষে খালুর পরিচিত এক লোকের সাথে বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হলো।
পাত্রের বয়স ষাট।
ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে, একা থাকা কষ্টকর।
একজন সেবা করার মানুষ লাগবে।
একাকী জীবনের সংগী নয়, স্রেফ সেবা করার মানুষ।
এবং আমি সহ থাকতে পারবো।
আমাকে আম্মুর পাশাপাশি সমান আদর যত্ন করবে। এই শর্তে বাইশ বছরের বয়সের পার্থক্যে বিয়েতে রাজী হলো আম্মু।
মায়ের হাতে আর কোন অপশন ছিলো না,নিজের একটা আশ্রয় দরকার ছিলো।
কিছু সন্চিত টাকা তো আছেই।
আম্মুর মুখে শোনা, বিয়ের পর প্রথম দিকে তিন মেয়ে কে একসাথে নাইয়র আনতো খালু।
আম্মুর দায়িত্ব ছিলো দুপুরের মেনু তে
গরুর মাংসের কালো ভুনা ,গলদা চিংড়ির দোপেঁয়াজা, ইলিশ মাছ ফ্রাই, পোলাও আর জামাইদের জন্যে
জনপ্রতি আস্ত মুরগির রোস্ট !
তিন ফুট বাই দুই ফুটের ছোট্ট কুঠুরির মতো রান্নাঘরে ভোর থেকে এইসব রান্না করতো মা।
নতুন সংসারে থিতু হওয়ার জন্যে সব কষ্ট একা করতো।
তবু খাওয়ার আগে গোসলে গেলে কেউ ডাকতো না একসাথে খেতে বসতে।
ভাব করতো ,সবাই ভুলে গেছে ওনার কথা। মেয়েরা খাওয়ার প্রশংসা করতো ফিসফিস করে আর খুঁত ধরতো উঁচু গলায়।
আর খালু সাহেব যাকে আমার বাবা ডাকা উচিৎ, তার ভূমিকা থাকতো সবসময়ই নিরপেক্ষ।
মেয়েরা আশেপাশে থাকলে উনি নির্লিপ্ত থাকে।
ভাবখানা এমন , যেমন আছো তেমনই মানিয়ে নাও। কি দরকার সবাই কে চটানোর !
ঝামেলা বেশি বাঁধলো অবিবাহিত ছেলে নিয়াজ এর বিয়ের পর।
নিয়াজের বউ আম্মু কে শ্রদ্ধা করেনা তেমন।
এতে খালুর মেয়েদের ভূমিকা ও অনস্বীকার্য।
ওরা তিনবোন ই কেন যেন আম্মু কে মন থেকে মেনে নিতে পারলো না।
অথচ খালুর ডায়বেটিস বা প্রেসার হাই হলে কিংবা পাইলসের অপারেশন হলে আম্মু কেই রাত জেগে দেখাশোনা করতে হয়।
মেয়েরা তখন সবাই নিজেদের সংসারের দোহাই দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।
নিয়াজ ভাই এর বিয়ের আগে আমরা চারজন মানুষ সুখে দুঃখেই চলছিলাম।
এখন যোগ হয়েছে অশান্তি।
গত পাঁচ বছর যাবৎ ই চলছে।
এস.এস.সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে হাফ বেতনে সরকারি কলেজে ভর্তির পরই এমন অত্যাচার এর মাত্রা বেড়েছে।
স্যার,ম্যাডাম রা স্নেহের দৃষ্টিতে দেখলে ও ভাবি আমার সাথে বিভৎস আচরণ করে।
ওর ক্লাস থ্রি পড়ুয়া বাচ্চা ছেলে কে সন্ধ্যার পর রূমের দরজা বন্ধ করে পড়তে বসায়।
দরজা খুলে একেবারে রাত দশটায়।
এইটুক ছেলে মায়ের পড়ার চাপে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা।
তবু বেচারার রেজাল্ট ভালো হয় না।
আমি তখন আমার টিউটোরিয়াল রেজাল্ট এর কথা বাসায় প্রকাশ্যে বলি না।
শুনলে সিয়ামের উপর আবার পড়ার অত্যাচার না বাড়িয়ে দেয়।
কলেজ লাইফ থেকেই খেতে বসলে পাশে ময়লার বিন এনে রাখে।
ভাতের পাতিলে ভাত থাকে অল্প একটু।
মাছের ভালো পিস থাকে না।
আম্মু আশে পাশে না থাকলে অন্য মনস্কের ভাবে পানির জগে ধাক্কা দিয়ে আমার কামিজ ভিজিয়ে দেয়।
দেখার কেউ নেই।
এই বাসার রূম চার টা বেশ ছোট।
ড্রইং রূমে ছোট সোফা,আমার ছোট বিছানা আর টিভি রাখতেই হাঁটার জায়গা নেই।
পাশের রূমে কম ভলিউমে টি.ভি অন করলে আমি পড়তে পারি না।
সিয়াম মোটু পাতলু দেখে হাই ভলিউমে।
সামনে টেস্ট পরীক্ষা, আমার নিরিবিলি তে পড়তে হয়, আম্মু এই কথাটা ভাবীকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলার পর ফল হয়েছে উল্টো।
আগে যে সময় টিভি অফ থাকতো এখন ঐ সময়ে সিরিয়াল চলে।
পড়ার টেবিলে বসে আমার বুক ফেটে কান্না পায়।কি দোষ করেছি আমি ,কেন আমাকে সহ্য করতে পারে না !
আম্মু ও এই বয়সে কতো অসহায়।
ছাপ্পান্ন বছর বয়সেই আর্থ্রাইটিস এর কবলে পড়ে আগের মতো সাবলীল ভাবে কাজ করতে পারে না।
বিরতি নিয়ে কাজ করে।
ব্যাথা বেশি বাড়লে সেদিন শুয়ে বসেই কাটায়।
আমরা অন্য কোথাও থাকতে পারি না আম্মু?
আম্মু বলে,' বাসা ভাড়া তো একটা বড় খরচ।তাছাড়া তুই বড় হয়েছিস, কোন পুরুষ গার্ডিয়ান ছাড়া একা তোকে নিয়ে বাসায় থাকা ও নিরাপদ না।'
সৎ বাবা কে আমাদের তিন জনের জন্যে আলাদা বাসা নিতে বললে বলে,
"দরজা খোলা আছে, তোমাদের যেখানে ইচ্ছা যাও।আমাকে এর মধ্যে টানা টানি করি ও না !"
ঘরের যন্ত্রণা অসহ্য বোধ হলে রাস্তার ওপারে বড় খালার বাসায় কয়েকদিন থাকতে যাই।
ওখানে ভাইয়া বিয়ে করে সংসারী হয়েছে ,বেশি দিন থাকতে ও লজ্জা লাগে।
আম্মুর আগের মতো শক্ত মানসিকতা নেই।অল্পতেই কেঁদে ফেলে।
কবে যে মা কে নিয়ে বীরপুরুষ কবিতার মতো অনেক দূরে চলে যেতে পারবো আল্লাহ ই জানে।আমার খুব ইচ্ছে করে এই অশান্তি ,এই নরক থেকে মায়ের মুক্তি দিতে..।
#
এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তিন মাস হলো।
এক সকালে আম্মুর ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভাঙলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, হাতে আজকের পেপার।
ঘুম জড়ানো চোখে শুনলাম, আমি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি।
মোটামুটি সব বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার ও নাকি পেয়েছি!
এই বছর সারাদেশে সব বিভাগে যারা এমন রেজাল্ট করেছে তাদের জন্যে সরকার বৃত্তির ব্যবস্হা করেছেন।
পরবর্তী ধাপে ডিগ্রী অর্জনে সরকারি তহবিল সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে!
কলেজের নাজমুল স্যার ফোন করলো, কলেজে সাংবাদিক পৌঁছে গেছে।
আমার বাসায় নাকি আসবে সাক্ষাৎকার নিতে !
প্রিন্সিপাল স্যার ও আসবেন বাসায়।
এতো চমক একসাথে আমার এই নিরানন্দ জীবনে কখনোই আসেনি !
কি রেখে কি করবো বুঝতে পারছি না।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একটা ভালো জামা পড়লাম।
ড্রইং রূম টাকে বসবার উপযোগী বানালাম।ভাবীদের আশে পাশে কোথাও দেখলাম না।
আজ তো ছুটির দিন সিয়ামের স্কুল ও নেই।
আম্মু বললো, "তোর রেজাল্টের খবর টা সবাই কে বলার পর বৌ সপরিবারে নিয়াজের বোনের বাসায় বেড়াতে চলে গেল"!
সাংবাদিক দের সাথে এলাকার মেয়র ও এলেন এলাকার কৃতি সন্তান কে দেখতে !
সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্ন উত্তর আর ফটোসেশন শেষ হলো। সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে এখনো।
আম্মু কিছুদিন আগে খালাতো ভাইয়ের সাথে মেয়র সাহেব এর সাথে দেখা করেছিলো।
আমাদের সমস্যার কথা বলার জন্যে।
উনি এ্যাসিসট্যান্ট মারফত নাম আর ঠিকানা লিখে রেখেছিলেন।
এবার আম্মু কে দেখেই চিনলেন।
ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,' আপনার কথা আমার মনে আছে আপা, আপনাদের অসহায়ত্বের গল্প আমাকে
ভাবিয়েছিল ।
প্রতিদিন এতো মানুষ আসে, এতো সমস্যা নিয়ে কয় জনের ই বা সমাধান দিতে পারি।
আজ মিলির সাফল্য আমাকে খুব অবাক করেছে।
এতো ছোট বাসায়,এতো সংঘাত পূর্ণ পরিবেশে ও হতাশায় উচ্ছনে ও তো যেতে পারতো।
তা না হয়ে মিলি মেধা তালিকায় দশজনের একজন হলো !
আপনার সাথে সাথে ও আমার এলাকা কে ও
সম্মানিত করলো।
আমার ছেলের ও আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে, কোনমতে টেনেটুনে জিপি এ ফোর পেল।
তাতেই কত খুশি।
সন্ধ্যায় পার্টি দিবে বন্ধুদের সাথে।
আমার কাছে বেশ মোটা অংকের টাকা চেয়েছে পার্টি বাবদ।
মেয়রের ছেলে যেনো তেনো ভাবে তো আর পার্টি দিতে পারে না!
যে ছেলে অভাব কি জিনিস জানে না, যাকে পড়তে বসার জন্যে দামি গ্যাজেট উপহার দিতে হয় কয়েক মাস পর পর, সে পাশ করে পার্টি দেয়ার জন্যে এতো টাকা চাইতেই পারে।
তাহলে মিলির মতো পরিস্থিতির করূণ শিকার
মেধাবী মেয়ে কেন আমার কাছ থেকে উপহার পেতে পারে না!
ওর জন্যে উপহার হিসেবে আমি সামান্য একটা চেক আনলাম।
আজ আমার ছেলে যদি এতো ভালো রেজাল্ট করতো,এলাকায় আমার সম্মান বাড়াতো ,না জানি খুশিতে আমি ওকে কি উপহার দিতাম !
আমার হাতে দুই লক্ষ টাকার চেক দিয়ে উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
বললেন, "আমি একজন সাহসী সৈনিক কে উপহার টা দিলাম।
জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হবে।সাহসের সাথে সমস্যার মোকাবেলা করবে।
তোমার দূর্বলতা যদি কারো আনন্দের কারণ হয়,তবে তাকে তা বুঝতে দিবে না।
মানুষ কে ভালোবেসো।
অসহায় মানুষ কে আরো বেশি ভালোবাসবে।জানবে তাতে সৃষ্টিকর্তা খুশি হন।
..আমার দরজা তোমার জন্যে সবসময় খোলা থাকবে। "
খালি বাসায় মা কে জড়িয়ে বসে আছি আমি।দুজনে অনেকক্ষণ এভাবেই বসে আছি।
কান্না শেষ হয়েছে আগেই।
আম্মুর হাত জড়িয়ে ভাবছি, আমাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
আম্মু যেন কখনোই বুঝতে না পারে আমি আম্মুর নিজের মেয়ে না, পালিত কন্যা..।
লেখাঃ নিগাত জাহান