আমারী গল্প।
সাল ২০১৫,
তখন একটি মেয়ে আমার জীবনে দেখা দিল। আমি তখন ক্লাস নাইন পড়ি,আর মেয়েটা ক্লাস সেভেন। কখনো ভাবি নাই যে,আমি প্রেমে পড়বো। তাকে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। দু জনাই একি স্কুলে পড়তাম। প্রতিদিন কোচিং আর স্কুলের
সামনে দেখা হতো, তাকে বুঝতে দিতাম না,যে আমি তাকে ফলো করি। আর এভাবে দেখতে দেখতে কয়েক মাস কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু আর অপেক্ষা করতে পারছি না। তাকে বলতে হবে যে আমি তাকে অনেক পছন্দ করি। কোন উপায় মাথায় আসছে না, ঠিক করলাম স্কুল ছুটির পর ও যে রাস্তায় দিয়ে যায়, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবো।
কয়েকদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর সে বুঝতে পারলো যে আমি তাকে পছন্দ করি।
একদিন ওর পিছু নিলাম।
অবশ্য সেদিন একটু বৃষ্টি হতে ছিল। সে একটু করে যাচ্ছে আর পিছন ফিরে তাকিয়ে একটা হাসি দিচ্ছে। তারপর থেকে আমাকে দেখলে পেছন ফিরে এমন একটা হাসি দেয়, তখন মনে হয় আমি আর পৃথিবীতে নেই। পাগল হয়ে যেতাম তার হাসি দেখে। শুরু হলো তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা। মেয়েটাও একটু একটু করে ঘুমের মধ্যে আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো, সে ঘুমানোর সময় আমাকে নিয়ে ভাবা আর তার একটু একটু করে হেসে ওঠার কারনটাও আমি হয়ে গেলাম। এরপর থেকে যেখানে দেখা হয় সে আমার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে থাকতো। আর তার সেই পাগল করা হাসি তো থাকতই।
এভাবে চলতে থাকে কয়েকদিন। কিন্তু আর পারছি না। এভাবে কত দিন তাই ভাবলাম তার আরো কাছে যেতে হবে, ঠিক তখনি বন্ধুরা এসে বললো অনা (কাল্পনিক নাম) তোর সাথে দেখা করতে চাই মানে কথা বলতে চাই।
তখন যা খুশি লাগতে ছিল তা বুঝানো যাবে না।
তার একদিন পর,
সেদিন ছিল ১৪ অক্টোবার ২০১৫, দিনটা বুধবার। অনেক ভোরে উঠলাম,ফ্রেশ হচ্ছি তখন মা বললো, কি রে বাবা ? এতো সকালে তো কোন দিন উঠতে দেখি নাই? কোচিং তো ৮টায়,কোথায় যাবি ? এতো সকালে কি কোচিং ? কোন কিছু না ভেবে বলে দিলাম, হুম মা। তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে অনা যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যায় সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম। দাঁড়নোর কিছু ক্ষন পরে তাকে আসতে দেখলাম। এমনিতে অনাকে দেখলে বুকের বাম পাজর টায়, কেমন যেন একটা অদ্ভুত মোচর দিয়ে উঠে। সে যত আমার দিকে এগিয়ে আসছে ততো যেন আমার দেহের মধ্যে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুকের মধ্যে ধরফরটা বেড়েই চলেছে। অনাকে দেখলে কেমন জানি একটু ভয় লাগে। কিন্তু সেদিন সব ভয়কে জয় করে সাহস নিয়ে তার কাছে গেলাম।
সূর্য মামা তখনো পূর্ব আকাশে তেমন ভাবে জ্বলে ওঠেনি। দুজন পাশাপাশি, দুজনার মুখে তখন মুচকি হাসি। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না,
এ এক অসম্ভব ভালোলাগা, কি এক নিরবতা।
৫ মিনিট পর তখন মনে হয় ৬টা বেজে ২০-৩০ মিনিট মধ্যে হবে। অনেক কষ্ট করে মুখ ফুটে বললাম,
- “Sorry”
আর সাথে সাথে সে উত্তর দিলো
- Sorry কেন..?
- আমি বললাম সেদিন কার জন্য !
- সেদিন মানে ?
- আজ থেকে ৭ দিন আগে আমি স্কুলের মধ্যে দাড়িয়ে ছিলাম আর পড়া ছুটি হওয়ার পর আমাই ইশারাই ডাকছিলে তাই ।
- সেদিন আসলে না কেন.?
- আমি বললাম এমনিতে,
তার কিছু দূর যাওয়ার পরে যখন তার কোচিং এর কাছে আসলাম।
ঠিক তখনি,
সে বললো যা বলার তাড়াতাড়ি বলো আমার পড়া আছে ।
ভেবে পাচ্ছি না কি বলবো সব যে গুলিয়ে ফেলেছি।
অনেক কষ্ট করে চোখ দুটি বন্ধ করে
পিছন থেকে বললাম,
- “I Love You”
- বলার কিছু সময়ের মধ্যে বলল এর উত্তর কি দিতে হয় ?
- আমি বললাম জানি না,
- সে উত্তর দিল “I love you too”
- আমি বললাম আমি শুনি নাই।
- সে একটু জোরে বললো “I love you too”
- আবার আমি বললাম এ বারো শুনি নাই।
- সে এবার আরো জোরে বললো “I love you too”
তারপরে অনা কোচিং এ চলে গেল একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে।
আমিও সাইকেল চালিয়ে আসলাম স্কুলের দিকে। যা খুশি লাগতে ছিলো বোঝানো যাবে না।
খুশি তে সাইকেল রাস্তার এ পাশ থেকে ওপাশ,
কখনো এরা হাতে আবার কখনো থামিয়ে,
নিজে নিজে মুচকি হাসি দিয়ে আবার চলতে থাকি।
এভাবে প্রতিদিন সকালে চলতে থাকে আমাদের প্রেম আলাপ। একদিন সকালে গ্রামের এক বাড়ির সামনে ফুল গাছ ছিল, চুরি করে ফুল তুললাম। সাইকেল করে নিয়ে যেতে দেখি ফুলের পাপড়ি একটাও নাই !!
তারপর বন্ধুর হাতে থাকা আরেকটা ফুল নিয়ে সেদিন তাকে দিলাম।
এভাবে চলতে থাকলো একটা বোকার প্রেম।
কিছুদিন পর তাকে একটা চিঠি দিলাম,
চিঠিটা তেমন সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা ছিল না।
সে চিঠিঠা পড়ার পর আমাকে আদর করে নাম দিলো “পাগল”
তারপর থেকে আমার নাম পাগল হয়ে গেল।
ফেসবুকে তখন নাম দিয়ে ছিলাম পাগল।
চিঠিটা দেওয়ার পর তার সাথে কয়েকদিন দেখা করি নাই। কারন,চিঠির উত্তর পাইনি বলে।
কয়েকদিন পরে দেখা করতে গেলাম,
তখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মন খারাপ করে হাটছে।
- বললাম sorry কয়েকদিন আসেনি বলে।
তখনো কোন কথা বলছে না…
হাতে তার পটেটো স্ফি প্যাকেট ছিল,
প্যাকেটের মাঝখানে টেনে ছেরে রাস্তায় ফেলে দিল।
এতো অভিমান,
যে সারা রাস্তা কোন কথা বললো না।
আমি তো sorry বলেই যাচ্ছি ।
কিছু দূর যাওয়ার পর আমার হাতটা ধরলো,
তখন মনে হলো আমি আর আমাতে নাই।
হাত ধরার পর এমন একটা টানদিলো,
আমি একদম তার নাক বরাবর চলে আসলাম।
তখন হাতটা ছেরে দিয়ে বুকের উপর দুই হাত দিয়ে মারছে আর বলছে এ কদিন আসোনি কেন ? তোমাকে আমি অনেক মিস করেছি।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখটা জলে ভিজে গেছে।
আমার মুখে তখন আর কোন কথা নাই।
শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছি।
আর ভাবছি সে আমাকে এতো ভালবাসে.
তারপর আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।
চিঠিটা খুলতে দেখি রক্ত লেখা
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম..!!
চিঠিটায় আমার নাম “Tusar ” রক্ত দিয়ে লেখা।
আমি তখন নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মানুষ মনে করলাম। যে সে আমাকে এতো ভালবাসে।
তারপর কিছু দিন পর তার পরিবার সব জেনে যায়। সে আমাকে এরিয়ে চলতে লাগলো,
এভাবে কয়েক মাস আমাদের সর্ম্পকটা একটা সূতার মতো লেগে ছিল। এই বুঝি ছিড়ে গেলো এমন।
তাঁর কিছু দিন পরে সে অন্য একটি ছেলের প্রেমে পড়ে যায়।
তখন আর বুঝতে বাকি ছিল না যে সে সূতাটা কেটে দিয়েছে।
অনেক কষ্ট পাইছি,অনেক কেদেছি, কখনো জোরে সাউনে গান দিয়ে রুম আটকে কেদেছি,
আবার খুব অস্হিরতাই রাত্রি কাটায়ছি।
তা লেখে বুঝানো যাবে না। বিচ্ছেদের যন্ত্রণা আমাকে প্রায় দেড় বছর পাগল করে রেখে ছিল।
নামাযে দাড়িয়ে সব সময় আল্লাহ কাছে ওকে চেয়েছি। পাই নাই তাকে আর কোন দিন।
আসলে সেটা ছিল তার শুধু অভিনয় ভালবাসা।
আমাকে বলেছে আমি,
তার নখের যোগ্য না, তার পরিবার থেকে বলেছে,
আমি তাকে ডিস্টাব করি। কিন্তু ওকে কে বা কারা ডিস্টাব করে জানি না।
তাকে ভালো রাখার জন্য ভালো দেখার জন্য আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে এসেছি।
লেখকঃ নাঈমুর রহমান তুষার