রিভার্স সাইকোলজি

১৮+ গল্প। বাচ্চারা দূরে থাকুন। ১৮ বছরের নিচে কেউ পড়বেন না প্লিজ।
কি ব্যাপার? মানা করলাম না? তারপরও পড়তে আসছেন? আবারও বলছি, বাচ্চারা দূরে থাকুন।
উপরের কথাগুলো কেন বললাম তার উত্তর আমি দিব না। গল্পের শেষে নিজেরাই উত্তর দিবেন।
তার আগে আসুন কিছু জিনিস আপনাদের মনে করিয়ে দেই।
১.দেওয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ। 
২.এখানে প্রস্রাব করিবেন না। প্রস্রাব করলে জরিমানা দিতে হবে। 
৩.এখানে বাস থামাবেন না।
৪.ফুল ছিঁড়বেন না।
৫.WWE খেলা দেখানোর সময় বলে দেয় Dont try this at home
৬.বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।
এইযে উপরে ছয়টা নিষিদ্ধ কাজের কথা বললাম এটা কিন্তু আমরা সবাই জানি, দেখেছি। খেয়াল করে দেখবেন, এই কাজগুলোই করতে আপনার বেশি ইচ্ছে হয়। অনেক সময় করেও ফেলেন। আর আত্নতৃপ্তি পান।
আমার মনে আছে, কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়ে ম্যামের বাসা থেকে বের হতেই দেখতাম একটা বাসার সামনেই ফুলের বাগান। আর সেখানে লিখা আছে, ফুল ছিঁড়া নিষেধ। ধরতে পারলে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। আমি প্রায় প্রতিদিন ই সেই বাগান থেকে ফুল ছিঁড়ে দৌড় দিতাম। আশেপাশের আরও অনেক বাসায় ফুলের বাগান ছিলো। সেখানে "নিষেধ, জরিমানা" এমন কিছু লিখা ছিলো না। আমার সেসব বাসা থেকে ফুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হত না। কেন জানি ঘুরে ফিরেই একই বাসা থেকে ফুল চুরি করতাম।
টিভিতে রেসলিং খেলা দেখতাম। সেখানে স্পষ্ট লিখা থাকতো, বাসায় প্র‍্যাক্টিস করবেন না। কিন্তু খেলা দেখা শেষ করেই আমি আর আমার ছোট ভাই রেসলিং খেলা শুরু করে দিতাম।
ছোটবেলায় মেলায় গেলে দেখা যেতো, এমন একটা জিনিস আমি পছন্দ করেছি যেটা আমার বাবা কিনে দিতে চান না। হয়তো সেটা বড়দের জিনিস নয়তো সেটা কিভাবে চালাতে হয় আমি পারবো না। তখন বাবার ইশারায় দোকানদার বলত, "এটা পঁচা, ময়লা। তুমি নিও না এটা।" কিন্তু আমি মানতাম না। যতক্ষন এটা কিনে না দিবে ততক্ষন কান্না করতাম।
বাচ্চাদের দেখবেন, যেই কাজটা করতে আপনি নিষেধ করবেন সেই কাজটিই তারা বারবার করবে, করতে চায়। আপনার নিষেধ উপেক্ষা করে সেই কাজটা করতে পারলে সে অনেক খুশি হয়। যতবার আপনি রাগ দেখাবেন ততবার এই কাজ করে সে হাসবে,পুলকিত হবে।
সিগারেটের প্যাকেটে লিখা থাকে "ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে গর্ভবতী মায়ের ক্ষতি হয়"! কিন্তু তারপরও দেখবেন সিগারেটখোরের সংখ্যা কমছে না। সিগারেটের দাম অহরহ বাড়ালেও তারা ঠিক ই ধূমপান করছে।
একজন মেয়ে একটা কথা সর্বোচ্চ ৪৭ ঘন্টা চেপে রাখতে পারে। এরপর সে সেই কথা কাউকে না কাউকে বলবেই। এটা পরীক্ষিত। ব্যাতিক্রম থাকতেও পারে। আপনি যদি কাউকে একটা কথা বলার পর নিষেধ করে দেন যাতে কাউকে না বলে তাহলে সে সেই কথাটি অবশ্যই বলে দিবে। এই কথা না বললে সে যদি ৫ ঘন্টা চেপে রাখতে পারত, আপনি মানা করার পর সে ২ ঘন্টার পর ই বলে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবে।
এইযে আমি আপনাকে না করলাম প্লিজ ১৮ বছরের নিচে কেউ পড়বেন না তারপরও আপনি পড়ছেন। অনেক কৌতুহল নিয়ে পড়ছেন। মনে মনে ভাবছেন, দেখি তো, কি আছে গল্পের শেষে!! আপনাকে এখন বলে দিলাম গল্পের শেষে ১৮+ কিছু নেই। তারপরও আপনি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
ফেইসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে আমরা নানান ধরনের লিংক দেখতে পাই। তাদের শিরোনাম থাকে খুব চমকপ্রদ। আপনার মনোযোগ কাড়ার মতো। দুয়েকটা উদাহরণ দেই।
১.পরীমনিকে বাসায় একা পেয়ে কি করলো হিরো আলম?
২.চলে গেলেন ওবায়দুল কাদের।
৩.দেখুন সিয়ামের বাসররাতের কাহিনী।
এই ধরনের শিরোনাম দেখলে আপনি এই লিংকে ঢুকার সম্ভাবনা ৮০%। এটা একটা কৌশল। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে তারা হাজার হাজার টাকা ইনকাম করছে।
এবার একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপারে জানাই। আপনি কি জানেন ইউটিউবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ভিউ হয়েছে কোন ভিডিও টা?
হয়তো ভাবছেন আরমান আলীফের অপরাধী গান টা। কিন্তু না। এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভিউ। তাহলে প্রথম কোনটা?
joshna Media এর "বিদেশীর বউকে বাসায় একা পেয়ে কি করলো তিন যুবক?" এই ভিডিও টা তে সর্বোচ্চ ভিউয়ার। আপনার সম্পর্কে একটা সত্য কথা বলি? এই গল্প শেষ করার আগেই অনেকেই সার্চ করবেন সেই ভিডিও টা। আর অনেকেই গল্প শেষ হবার সাথে সাথেই সার্চ করবেন।
এতক্ষন আমরা কি দেখলাম? নিষিদ্ধ, চমকপ্রদ শিরোনামের প্রতি আমাদের আকর্ষণ অনেক বেশি। এইযে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়।
হযরত আদম ও হাওয়া আঃ কে আল্লাহ গন্দম ফল খেতে নিষেধ করেছিল। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সেই ফল খায়।
এইযে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের এত আকর্ষণ একে বলা হয় "রিভার্স সাইকোলজি "। বাংলায় বিপরীত মনোবৃত্তি। এটা আমাদের প্রায় সবার ই আছে। সেই সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় সবার ই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ আছে। আমাদের এই আকর্ষণ কাজে লাগিয়ে অনেকেই আমাদের দিয়ে বিজনেস করছে, কোটি কোটি টাকা ইনকাম করছে, অথচ আমরা টের ই পাইনা।
আপনি কিন্তু চাইলেও এই রিভার্স সাইকোলজি কারো উপর প্রয়োগ করে তাকে কন্ট্রোল করতে পারেন। পদ্ধতিগুলো বলে দিচ্ছি।
১. ধরেন, আপনার ছোট ভাই/বোন/বাচ্চা ইংরেজি পড়তে চায় না। আপনি যদি তাকে বলেন থাক, তোমার ইংরেজি পড়তে হবে না, ইংরেজি খারাপ, পাশের বাসার সাদী ইংরেজি পড়ে অনেক বড় জর্জ, ব্যারিস্টার, ডাক্তার হবে, হোক। তোমার ইংরেজি পড়তে হবে না। এটা বলবেন ঠিক ই। কিন্তু তার সামনে ইচ্ছে করেই ইংরেজি বই দিবেন বারবার। তখন সে চিন্তা করবে, আমাকে ইংরেজি পড়তে মানা করছে কেন? কি আছে ইংরেজি বইয়ে? দেখি তো পড়তে পারি কিনা? তখন সে অন্য বই রেখে ইংরেজি নিয়েই পড়ে থাকবে। এভাবে আপনি তাকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। ততদিন পর্যন্ত পারবেন যতদিন না সে আপনার টেকনিক ধরে ফেলে। যদি বুঝে ফেলে তখন কি করবেন? তার মাইন্ড আপনিই কন্ট্রোল করতে পারবেন। তখন শুধু কথা বলার স্টাইল টা পরিবর্তন করবেন। আগের উদাহরণ বাদ দিয়ে নতুন উদাহরণ দিবেন। কাজ করার সম্ভাবনা প্রচুর।
২. আপনার ছোট বাচ্চা দুধ খেতে চায় না। অথচ ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন দুধ খেতে হবে। আপনি অনেকভাবে দুধের গুণাগুণ বুঝিয়েছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। হিতে বিপরীত হচ্ছে। দুধ দেখলেই কান্না করছে। আপনি তার সামনে দুধ দিবেন। দিয়ে বলবেন, খবরদার, তুমি দুধ খাবা না। এটা তোমার বাবার জন্য রেখেছি। তুমি খাইলে মাইর দিবো কিন্তু। এভাবেই নতুন নতুন টেকনিক কাজে লাগাবেন। তখন তার মাইন্ডে কাজ করবে, আমাকে কেন নিষেধ করবে? আমি খাইলে কি সমস্যা? একদিন দুদিন সে খাবে না। তৃতীয়দিন সে চুরি করে হলেও দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবে।
বাচ্চাদের চাইতে এডাল্ট দের মাইন্ড কন্ট্রোল করা আরও সহজ। যেমনভাবে অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব ভিডিও এর টাইটেল আমাদের মাইন্ড কন্ট্রোল করে ফেলে।
আপনি কাদের কন্ট্রোল করতে পারবেন?
--যারা অতিরিক্ত রাগী, একরোখা, ঘাড়ত্যাড়া, ইগোয়িস্টিক আপনি খুব সহজেই তাকে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
কিভাবে?
আপনি যদি তাকে একটা কাজ দিয়ে বলেন, আমি জানি তুমি এটা পারবা না, তোমাকে দিয়ে জীবনেও এই কাজ হবে না, তুমি তো ঘাড়ত্যাড়া, পারলে এই কাজটা করে দেখাও তো!! ব্যাস। সে সব চেষ্টা করবে কাজটা করার জন্য। সে কখনোই আপনার কাছে হারতে চাইবে না। নিজের ইগো ধরে রাখার জন্য সে এটা করবেই। এট এনি কসট।
আমি একজনের উপর এই রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করেছিলাম। এবং সেই জেদি, একরোখা মানুষকে আমার সাইকোলজি বশে নিজের কাজটা করিয়েছিলাম। কিভাবে করেছিলাম জানেন?
--ছেলেটার নাম ছিল রবিন। তার গফ সানিয়া। আমার বান্ধবী। তাদের বিকেল ৫ টায় দেখা করার কথা ছিলো। দুপুরে তাদের সামান্য ব্যাপারে ঝগড়া হয়। ইগোয়িস্টিক রবিন কোনভাবেই দেখা করবে না। সে যাই বলে তাই করে সব সময়। সানিয়া রবিনকে বললো, আমি জানি তুমি পাঁচটায় আসতে পারবা না। তুমি চাইলেও আসতে পারবা না। আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারি তুমি আজ রুম থেকেই বের হতে পারবা না। যদি পারো তাহলে এসে দেখাইয়ো। তুমি হারবা আমি নিশ্চিত। কথাগুলো আমরা সহজেই বুঝতে পারি কেন বলা হচ্ছে। কিন্তু ইগোয়িস্টিক রবিনের মাথায় এটা ঢুকে নি। তার মনে হচ্ছিল, কি? আমি যেতে পারব না? আমাকে চ্যালেঞ্জ করছে? আমি কখনো হারব না। আমি যাবই। সেদিন রবিন আগে এসে সানিয়াকে ফোন করে দেখা করে। ব্যাপারটা খুব সিম্পল। আপনি ততদিন কাউকে কন্ট্রোল করতে পারবেন যতদিন সে আপনার টেকনিক বুঝতে না পারে।
হাই স্কুলে থাকতে একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল আমাদের ব্যাচের। অনন্যা নাম। সবাই মেয়েটাকে পছন্দ করত। অনেকেই প্রপোজ করে, চিঠি দেয়। সে কোন চিঠি খুলেও দেখতো না। সবার সামনেই ছিঁড়ে ফেলে দিতে। আমার বন্ধু জাহিদ তখন এক কাজ করল। অনন্যাকে একটা ডায়েরি দিল, আর বলেও দিল, "খবরদার, ডায়েরি খুলবা না, অনেক কবিতা আছে, পড়লে তুমি আমার প্রেমে পড়ে যাবা, খুইলো না কিন্তু।"
পরদিন অনন্যা স্কুলে এসে জাহিদকে খুঁজে বের করে। ডায়েরি জাহিদের হাতে দিয়ে বলে, "প্রতিটি পৃষ্ঠা তন্যতন্য করে খুঁজলাম। কোন চিঠি পেলাম না। কোথায় তোমার চিঠি? "
সেদিন থেকে তাদের কথাবার্তা শুরু হয়। জাহিদ রিভার্স সাইকোলজি টেকনিক প্রয়োগ করে অনন্যার কাছাকাছি চলে যাওয়ার রাস্তা পেয়ে যায়।
কোন মেয়েকে যদি সবাই পাত্তা দেয়, সবাই তার পিছনে ঘুরে, সারাক্ষন গুনগান করে, আপনি তাকে ইগ্নোর করুন, দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যান। সে সারাক্ষন আপনার কথাই ভাববে। কেন আপনি কথা বলেন না? কি সমস্যা তার? এসব ভাববে। এটাই রিভার্স সাইকোলজি।
কেন এমন হয়?
--হিউম্যান ব্রেইন খুবই অদ্ভুত। আমাদের ব্রেইন চায় স্বাধীনতা। এর মধ্যে যখন হস্তক্ষেপ আসে তখন আমাদের স্বাধীনতার চিন্তাটা হুমকির মুখে পড়ে। তাই আমরা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাই বিদ্রোহ । উপরের কাজগুলোতে খেয়াল করে দেখেন, সবগুলোতেই কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আছে। এই নিষেধাজ্ঞাই মানুষের স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে প্রমাণ করতেই হয়তোবা নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই। যেটা করতে মানা করা হচ্ছে তার প্রতি উল্টো আগ্রহী হয়ে উঠি। এটাকে বলা যায় আমাদের ব্রেইন বিদ্রোহী আচরণ (rebellious behavior) করছে।
এই পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করে আমরা কিভাবে রিয়েক্ট করছি তার উপর। একে বলে Reactance theroy. এ থিওরি অনুযায়ী, যেসব মানুষ মনে করে যে তাদের sense of freedom হুমকির মুখে বা তাদের নিজস্ব কন্ট্রোল আর থাকছে না, তখন তারা প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাদের কন্ট্রোল, স্বাধীনতা ফেরত পাওয়ার জন্য বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এবং সেই কাজটাই করে যেটা তাদের করতে মানা করা হয়েছে। কারণ ঐটার প্রতিই তারা তখন আকৃষ্ট হয়।
এভাবেই রিভার্স সাইকোলজি আমাদের ব্যাক্তিগত কাজে প্রভাব ফেলে। তবে সবার ক্ষেত্রে কাজ করবে এমন কথা নেই।


লেখাঃ জহিরুল হক জাবেদ

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]