শৈশব

টেবিলে খেতে বসেছি৷ বাবা কখন পিছনে এসে দাড়িয়েছে সে খেয়ালের বালাই নেই। আমি টপাটপ গিলে চলেছি। পিছনে চোখ পরতেই গিলার স্পিড আশি পার আওয়ার থেকে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে নিলাম। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম; কি হইছে! এমনে চোখ বড়বড় করে তাকাই রইছো ক্যান? বাবা ভনিতার স্বরে টেনে টেনে বললো; আহা বাজান তুমি খাওন বন্ধ করলা ক্যান? খাও খাও আমি চোখ জুড়াইয়া তোমার খাওন দেখি। ইস কতো সুন্দর কইরা নিশ্চিন্তে আমার অকর্মা পোলাডা বইসা বইসা গিলছে তো গিলেই চলছে। গিলে গিলে আমায় ধ্বংস করতাছে। দেইখা-ই আমার চোখ জুড়াই যাইতাছে... তাৎক্ষণিক আমি খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খটাস করে দাঁড়িয়ে গিলার স্পিড নব্বইতে উঠিয়ে বললাম; নেও হইছে! বইসা খাইলে তো তোমার চোখের উপর ঠাডা পরে, এইযে এহন খাড়াই খাড়াই খাইতাছি, হইছে এইবার শান্তি? বাপে চোখ গরম করে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলো....

৪র্থ শ্রেনীতে উঠেছি তখন। এক রাত্রিবেলা বাবা আমায় টেনে এনে তার পাশে বসালো। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো; শোন বাজান জীবনে তোরে আমার চেয়েও বড় হইতে হইবো বুচ্ছোস? বাবা সাধারত আমার সাথে এতো নমনীয় হয়ে কথা বলে না। সব সময় দৌড়ানির উপরেই রাখে। মা'কে নালিশের গোডাউন বানিয়ে ফেলে; তোমার পোলা এই করে ঐ করে, পড়াশোনা করে না, তোমার রায় পেয়ে এমন হইছে ইত্যাদি ইত্যাদি... বাপের হঠাৎ এমন নরম ব্যবহারে আমি খুব আবেগি হয়ে উঠলাম। মনে মনে শপথ নিলাম, আমি বাপের চেয়ে বড় হয়ে দেখাবোই দেখাবো। আমাদের বাড়ির পিছনে একটা আম গাছ আছে। বেশ বড় আমগাছ। ডালপালাও বেশ ভালোই ছড়িয়েছে। আমি নিজেকে বড় করার ক্ষেত্রে সেই আম গাছকেই বেছে নিলাম। মাথা নিচের দিকে দিয়ে দু পায়ে গাছের ডাল প্যাঁচিয়ে বান্দরের মতো সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝুলতে লাগলাম। এভাবে ঝুলে ঝুলে বড় হওয়াটা খুব কষ্টের, কিন্তু বাবা বলেছে তার চেয়ে বড় আমায় হতেই হবে, তাতে যতো কষ্টই হোক। সন্ধ্যা গড়ালে মা আমায় খুঁজায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন। 'অর্ণইব্বা ঐ অর্ণইব্বা' বলে জোরেশোরে ডাকতে লাগলেন। আমি ঝুলন্ত অবস্থায় মায়ের ডাকে সারা দিলাম; এই যে মা আমি আম গাছে.. মা দৌড়ে আসলেন। আমার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললেন; ঐ হারামজাদা তুই ভরসন্ধ্যায় ওমনে গাছে উইঠা বান্দরের মতন ঝুলতাছোস ক্যান, নাম নাম এক্ষুনি...আমি ঝুলতে ঝুলতে বললাম; নামবো মা নামবো আরেকটু পরই নামবো, না ঝুললে বাবার চেয়ে বড় হবো কেমনে? মায়ের চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো। গাছ থেকে আমায় টেনেহিঁচড়ে পাজা কোলে করে নামালেন। কান ধরে টেনে এনে পড়ার টেবিলে বসিয়ে বললেন; তোর আর তোর বাপের চেয়ে বড় হওয়া লাগবে না, তুই পড়তে বয়....


লেখাঃ Arnob

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]