একটি ডিপ্রেশনের গল্প
বিয়ের প্রথম দিনেই শ্বাশুড়ি আমার হাতে একটা কুন্চি ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, বউমা আমার ছেলেটা অবুজ।মাঝে-মধ্যে ওই নাটক-টাটোক দেখে একটু পাগলামো করে। যদি সামলাতে না পারো কুন্চিটা ব্যবহার কইরো।
আমি ও সম্মান সূচক হাসি দিয়ে বলেছিলাম,আম্মা একদম চিন্তা করবেন না।এখন আমি এসে গেছি আপনার ছেলে আর কোন পাগলামি করবে না। ওটা বরং আপনার কাছেই রাখুন।কিন্তু শ্বাশুড়ি নাছোড় বান্দা।কুন্চিটা দিয়েই তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
জামাই দরজার কাছে এসেই চিল্লাতে লাগলো, কি করছেনটা কি? ঘোমটা দিন, ঘোমটা দিন।
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে চুপসে গেছি।ভয়ে বিছানার তলা থেকে কুন্চি খুঁজতে লাগলাম। শ্বাশুড়ি আম্মা হয়তো এই জন্যই কুন্চিটা দিয়ে গেছে।কুন্চিটা নিয়ে এখুনি মারা শুরু করবো কি না ঠিক বুঝতে পারছি না।
তারপর জামাই নিজে এসে আমার হাতটা ধরে মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে বললো, জানেন আমার ভিষণ শখ বউ ঘোমটা দিয়ে থাকবে আমি এসে ঘোমটা খুলবো।আপনি একটু লজ্জা পাবেন। আমিও পাবো। একটা নাটকে দেখেছিলাম,ব্লা ব্লা....
জামাই নাটকের গল্প শুরু করেছে।আপাততো কুন্চিটা আর কোন কাজে লাগেনি। কত সহজ সরলভাবে জামাই নাটকের গল্প করছে। আমিও মুদ্ধ হয়ে শুনছি।
বলতে বলতে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলো।আমি ভয় পেয়ে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে পড়তে বুকে ফু নিলাম।তারপর খাট থেকে নেমে গিয়ে সিনেমা স্টাইলে বলা শুরু করলো,দেখুন আপনাকে আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।প্লিজ আপনি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।বলেই কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সব কিছু মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে।এইতো এত সময় রোমান্স করছিলো।হঠাৎ গার্লফ্রেন্ড আসলো কোথা থেকে।অত ভেবে লাভ নাই। সকালে দেখি কি হয়।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য রান্না করলাম।জামাই খাবার টেবিলে এসে খাবার খেতে খেতে বললো, কি আর করার সব তো আমার বউ রেঁধেছে। ভালো না হলেও আমাকেই খেতে হবে। টেবিলে রাখা সব খাবার একা খেয়ে শেষ করলো। উঠে যাওয়ার সময় বললো, শোন এবার রান্না করার সময় মায়ের সাহায্য নিয়ে রান্না করবে।তাহলে সবাই খেতে পারবে।
এটাও বুঝলাম না মাথার উপড় দিয়ে গেলো।শ্বাশুড়ি আম্মাতো রান্না খেয়ে বললো,বেশ হয়েছে খেতে।তাহলে আবার সাহায্য লাগবে কেন?
রাতে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম।জামাই এসে পেছন থেকে চোখ ধরে বললো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ছাদে চলো। ছাদে গিয়ে দেখি ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে ছাদটা সাজানো।আমিও খুশিতে গদোগদো হয়ে জামাইকে জাপটে ধরে বললাম,কে বলেছে আপনি অবুঝ।তবে আম্মা এটা ঠিক বলেছে আপনি পাগলামো করেন।আপনার পাগলামোটা আমার বেশ লেগেছে।
জামাই সাথে সাথে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো, ভুল করছো তুমি।এ সব কিছু তোমার জন্য নয়।এই সবকিছু আমার ভালোবাসার জন্য।চলে যাও এখান থেকে।
আমি রীতিমত টাসকি খেয়ে গেলাম।ব্যাটা বলে কি এই মাত্রইতো নিজে আমাকে ছাদে নিয়ে এলো।আবেগ নিয়ে জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।নাটক দেখাই ব্যস্ত।মন খারাপ করে ছাদ থেকে নিচে নামছি এমন সময় মনে হলো, শ্বাশুড়ি আম্মা ঠিকই বলেছিলো,নাটক দেখে পাগলামো করে।যাই হোক এর একটা বিহিত করতেই হবে।
পরের দিন সকালেই জামাই অফিসে যাওয়ার সময় বললো,চিন্তা করো না।তোমাকে আমি মুক্ত করে দিব।আমার ভালোবাসার তো কোন দাম নেই।যাই হোক তুমি তোমার প্রিয় মানুষটাকে নিয়েই থেকো।
আমি আর কিছু বললাম না।ভ্রু কুঁচকে শুধু জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বুঝতে বাকি রইলো না এটাও হয়তো কোন নাটকের ডাইলোক।
শ্বাশুড়ি আম্মার কাছ থেকে জানতে পারলাম,তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়েছে শুধুমাত্র নাটকের জন্য।প্রথম গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয় বড় ছেলে নাটক দেখে।দ্বিতীয়টার সাথে হয় এ্যাপার্মেন্ট লেটার নাটক দেখে।তার ইচ্ছা তার জীবন নাটকের মত হবে।আমাকে বিয়ে করেছে ও নাকি নাটক দেখে।
বুঝতে বাকি রইলো না,শ্বাশুড়ি আম্মা বিয়ের দিন কুন্চি কেন দিয়েছিলেন।রাতে জামাই বাসায় এসে হাতে একটা কাগজ দিয়ে বললো,আমি এতে সাইন করে দিয়েছি। আজ থেকে আপনি মুক্ত।
আমি কাগজটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললাম।সাথে সাথে জামাই বলে উঠলো আরে আপনি করছেনটা কি? নাটকে তো এমন কোন সিন ছিলো না।আমরা আলাদা হয়ে যাব তারপর আবার আমাদের দেখা হবে।কি করলেনটা কি আপনি?
আমি শ্বাশুড়ির দেওয়া কুন্চিটা বের করতে করতে বললাম, আজ একটা নাটক দেখেছিলাম।নাটকে একটা চরিত্রে বউ তার জামাইকে কুন্চি দিয়ে মেরেছিলো।আমারও না শখ হয়েছে কুন্চি দিয়ে মারবো।
জামাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।হয়তো ভেবেছিল আমি মজা করছি কিন্তু যখন সত্যি সত্যি মারা শুরু করলাম,তখন বলতে লাগলো,"ছেড়ে দাও গো আর নাটক দেখবো না"।
লিখাঃ Sadia Afrin Laboni