সীমিত আকারে বন্ধুত্ব

আজ সকাল থেকে আমার বাসায় টানটান উত্তেজনা পূর্ণ মিটিং শুরু হয়েছে। মিটিং এ উপস্থিত আছে আমার উকিল বাবা, তার প্রতিটা যুক্তি খন্ডন করে দেয়া আমার মা, আমার ছোটো বোন, দাদী আর স্বয়ং আমি নিজে।

ইদানিং আমার বাসায় অদ্ভুত এক কান্ড শুরু হয়েছে। আমার দাদা যার বয়স কম করে হলেও সত্তর সে নিয়ম করে একটা নির্দিষ্ট সময়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আবার ঘণ্টা খানেক পর ফিরে আসে। এই কাজ তিনি দিনে দুইবার করেন। গত তিনদিন যাবৎ এসব শুরু হয়েছে। লকডাউন এর সময়ে এমন বয়স্ক একজন মানুষ রীতিমত নিয়ম করে বাইরে যাওয়া শুরু করেছে, এতো একটা আতঙ্কের ব্যাপার।
তো যাই হোক, এটাই আজকে আমাদের মিটিং এর মূল কারণ।
এই ঘটনার মূল উৎপত্তি স্থল মানে আমার দাদীকে তার মূল্যবান বক্তব্য পেশ করতে বলা হলো। আমার দাদীর বক্তব্য দাদা তাকে সন্দেহ করছেন তিনি নাকি ফেইসবুকে 'ড্যাশিং সুলেমান' নামক এক আইডি ধারীর সাথে রীতিমত প্রেম শুরু করেছেন, দাদা নাকি তার প্রমান স্বরূপ তার কাছে কিছু স্ক্রীন শট ও ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দাদীর বক্তব্য তিনি নির্দোষ। তাকে স্ক্রীন শট এর মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।

দাদা ফিরে এলে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আমাদের সবার ফোনেই দাদীর আইডি এবং ড্যাশিং সোলেমান এর আইডির কিছু প্রণয় মিশ্রিত স্ক্রীন শট পাঠিয়ে দেন। দাদার বক্তব্য যেহেতু এই বাষট্টি বছর বয়সে এসেও দাদী এইসব কান্ড করেছেন তাই তিনি প্রতিদিন দুবেলা করে দাদীর সাথে সীমিত আকারে ব্রেকআপ করেন আর সেই সময় দাদীর থেকে দূরে থাকেন। তার বক্তব্য পেশ করে দাদা দ্বিতীয় দফায় সীমিত আকারে বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু দাদীর বক্তব্য তিনি কোনো ড্যাশিং সোলেমান কে চিনেন না। নিশ্চয় তার কোনো শত্রু (মানে দাদীকে যারা ইনবক্সে অনেক বিরক্ত করেন কিন্তু দাদী পাত্তা দেন না) তার আইডি হ্যাক করে তাকে চরম ভাবে ফাঁসিয়েছে। এইদিকে দাদা দাদীর এইসব কাণ্ডের কথা শুনে এখন আমার বাবা মায়ের মধ্যেই ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে । তারা এখন একে অপরের ফেইসবুক আইডি চেক করা শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দাদীও তার রুমে চলে গেছেন তার বেস্টফ্রেন্ড ফরএভার "অ্যাঞ্জেল মালেকার" সাথে তার এই দুঃখ শেয়ার করার জন্যে। সাথে নাকি আবার কিছু স্ট্যাটাস ও দিতে হবে, অনেক কাজ এখন দাদীর।
বলা বাহুল্য কোয়ারেন্টিন সুষ্ঠুভাবে কাটানোর জন্যে এবং বাইরে যাওয়া থেকে আটকানোর জন্যে দাদা এবং দাদীকে এই সময়ে ফেইসবুক আইডি খুলে দেওয়া হয়েছিলো এবং সেই কাজ করেছিলাম আমি নিজেই। তাই আজ সেই জীবন মরণ সমস্যার সমাধান ও আমার নিজেকেই করতে হবে।
সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম দাদার পিছু নিতে। দেখলাম দাদা সিগারেট হাতে। এরপর যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। সেইদিন দাদার আইডি থেকে "অস্পর্শী বালিকা খালেদা" নামক যে আইডিতে "কিউট এর ডিব্বা" লিখে কমেন্ট করে দিলাম সেই বালিকা মানে মহিলা আমার দাদার সাথে দাঁড়িয়ে।
ঘটনা বুঝতে আর কিছু বাকি রইলো না। সালার ভার্সিটি পর্ব চুকিয়ে ফেলছি প্রায় তাও একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না আর এই বুড়া এই বয়সে এসেও কি সুন্দর গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে লকডাউন এনজয় করছে।।।

যাই হোক টুক করে দাদার কিছু ছবি তুলে নিয়ে এই রহস্য উদঘাটন করে বিখ্যাত ডিফেন্স উকিল কে.ডি পাঠকের মতো কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বাসায় ফিরলাম। নিজের রুমে না যেয়ে সোজা দাদার রুমে ঢুকে সাক্ষ্য প্রমাণ সব নিয়ে দাদার অপেক্ষা করতে থাকলাম। দাদী তখন বারান্দায় ভিডিও কলে মহা ব্যস্ত।
কিছুক্ষণ পরেই দাদা ফিরে আসলো। ফোনটা বের করে যেই দাদাকে ছবি গুলো দেখাতে যাচ্ছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তেই দাদা বলে উঠলো ছবিগুলা নাহয় পরে দেখা আগে নিজের ইনবক্স চেক কর। দাদার কথা শুনে তাড়াতাড়ি নিজের ফোন বের করে মেসেঞ্জার এ ঢুকলাম।
এরপর যা দেখলাম তাতে আমি আগামী তিন মাস পাগল থাকবো। বিভিন্ন চিপায় দাঁড়িয়ে নানা অঙ্গভঙ্গিতে আমার সিগারেট খাওয়া কিছু দুর্লভ ছবি যার খবর আমিই জানি না। শুধু তাই নয় পাশের বাসার মেয়ে, আমার বাবার কলিগ এর মেয়ে, ভাড়াটিয়ার মেয়ে সবার সাথে আমার চরম প্রেমময় প্রত্যাখ্যানের কিছু স্ক্রীন শট। বুঝলাম দাদা বিভিন্ন অজুহাতে আমার ফোনটা যখন নিতো তখনি এই কাজ করেছে।

এসব দেখে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এবার দাদা শুরু করলেন ----- চয়েজ এখন তোমার। আমার ছবিগুলো সবাইকে দেখিয়ে পাছার ছাল উঠাবে নাকি নিরব থাকবে।

আমি সাথে সাথে দ্বিতীয় শর্তে রাজি হয়ে গেলাম।

কাহিনী এখানেই শেষ নয়। এখন প্রতিদিন নিয়ম করে দাদার সাথে আমিও যাই। বাসায় বলেছি দাদার যাতে সীমিত আকারে ব্রেকআপে থাকাকালীন অবস্থায় কোনো অসুবিধা না হয় তাই আমার এই সিদ্ধান্ত।
তবে এতে আমার লাভ বয়ে ক্ষতি কিছু হয়নি। এখন দাদার সাথে নিয়ম করে আমিও দুবেলা ফ্রি তে সিগারেট খাই সাথে অস্পর্শী বালিকার নাতনি তো আছেই। আহা, আর কি লাগে জীবনে? ও আর একটা কথা......

আমি আর দাদা এখন কোয়ারেন্টিনে সীমিত আকারে বন্ধু!


লিখাঃ আলেয়া আলীম অমি

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]