ওরে বাটপার

প্রচন্ড গরমে মেজাজটা এমনিতেই খারাপ হয়েছিল, তার ওপরে আবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির ফোনালাপ শুনে মেজাজটা আরো বিগড়ে যাচ্ছিল। ছেলেটি ফোনে বলছিলো...

–না জান আমি তা বলিনি, প্লিজ বেবি রাগ করেনা। বললাম তো সরি। তুমি আমার কিউট বেবিনা, প্লিজ প্লিজ এমন করোনা।আর এমন হবেনা।

প্রতিদিনের মতো আমি কলেজ থেকে বাসে করে ফিরবো । বাসে উঠেই ফাঁকা একটি সিটে বসে পরেছিলাম। বাস ছাড়ার অপেক্ষায় আছি। যখন বাসে উঠেছিলাম তখন অনেকগুলো সিট ফাঁকা ছিল। ৩/৪ মিনিটেই মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ। সিট তো ফাঁকা নেই এখন উল্টে বাসের রড ধরে দাঁড়িয়ে পরলো অনেকেই।

এই প্রচন্ড গরমেও বাসের হেল্পার ছেলেটা চেচিয়ে চেচিয়ে বলছে...
–দুই মিনিট আছে মাত্র আর তারাতাড়ি উঠুন। আসুন আসুন... শিক খালি, শিক খালি আছে।
একটা মধ্যবয়সী লোক বাসে উঠেই হেল্পার ছেলেটির সাথে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিল।

– এই ছোকরা কই সিট খালি? চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া বলছিস সিট খালি! কোথায় ফাঁকা সিট দেখা!
–কাকু আপনি ভুল শুনছেন আমি কইছি শিক খালি। শিক ধইরা দাঁড়াইয়া যাইতে পারবেন।
মধ্যবয়সী লোকটা রেগেমেগে নেমে গেল।
আমি মনে মনে বললাম, ওরে বাটপাড়!

আমার ঘারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির ফোনালাপ এখনো চলছেই। আমার আন্দাজ ছেলেটি আমার থেকে ২/৩ ইয়ারের জুনিয়র হবে।
বাস ছেড়ে দিল আর এরই মধ্যে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো। এমন কাঠফাটা রোদ্দুর উবে গিয়ে যে ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে আগে বুঝিনি। আমার সাথে কোনো ছাতা নেই একটু টেনশনে পরলাম। বাস থেকে নেমে একটা সরু গলি দিয়ে ৪/৫ মিনিট হেঁটে আমাকে বাসায় যেতে হবে। কিন্তু এই প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে এইটুকু পথ যেতে গেলে তো ভেঁজা কাক হয়ে যাব। ভাবলাম আম্মু কে একটা ফোন দিয়ে ছাতা নিয়ে এসে এগিয়ে থাকতে বলি।ফোন দিতে গিয়েই দেখলাম আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই৷ নো টেনশন আমার ব্যাগে একটা মিনিট কার্ড ছিল। আমি মিনিট কার্ডটা ঘষে ফেললাম। তারপর গোপন নাম্বারটি তুলে ডায়াল করলাম। কিন্তু আমি ব্যর্থ হলাম। ভাবলাম নেটওয়ার্ক প্রব্লেম তাই আবার এবং বারবার চেষ্টা করলাম আর প্রতিবারই ব্যর্থ হলাম।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি এখনো ফোনে কথা বলে চলেছে। ভাবলাম ছেলেটার কাছে ওর মোবাইলটা চেয়ে আম্মুকে একটা ফোন দেই।
–ভাইয়া আপনার ফোনটা একটু দেবেন?
ছেলেটা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো মনে হলো তার মাথায় মস্ত আকাশটা ভেঙে পড়েছে। তারপর আমি আমার পাশে বসে থাকা বয়স্ক লোকটার থেকে তার মোবাইলটা চেয়ে নিয়ে বাড়িতে ফোন দিলাম।

প্রায় একসপ্তাহ পর...
কলেজ শেষে বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটছি। মনে হলো কে যেন আমাকে পিছন থেকে ডাকছে আপু আপু করে । আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সেদিনের সেই ছেলেটা। আমি দাঁড়ালাম, ছেলেটি আমার সামনে আসলো আর বললো..

–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
–মানে! কেনো?
–আসলে সেদিন বাসে আমি ফোনে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম। ও খুব রেগে ছিল। তখনই রাগ না ভাংলে আমাদের ব্রেকাপ হয়ে যেত পারতো।
–আরে অবাক কান্ড! তাহলে আমাকে কেনো ধন্যবাদ দিচ্ছেন?
_আসলে আপু সেদিন আমার মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তখনই দেখলাম আপনি মিনিট কার্ড ঘষছেন । আমি আপনার কার্ডের গোপন নাম্বার গুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। কোন উপায় না দেখে আপনার আগে আমিই নাম্বারটি ডায়াল করে দেই।
–আমার সাথে এত বড় চালাকি । এত বড় বোকা বানানো। তুমি জানো পরেরদিন আমি ফ্লেক্সিলোডের দোকানদারের সাথে ঝগড়া করেছি। আমাকে কেনো এমন কার্ড দিয়েছে সে!
–আপু আমি অত্যন্ত দুঃখিত। অনেক অনেক সরি। সেদিন আপনি যখন আমার মোবাইলটা চেয়েছিলেন আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আপনি সব বুঝে গিয়েছেন। ভরা বাসের মধ্যে যদি চড় থাপ্পড় মেরে বসেন। তাই সেদিন আর টাকাটা ফেরত দেওয়ার সাহস হয়নি। আপু এই নিন আপনার বিশ টাকা।

আমি মুচকি হেসে বললাম লাগবেনা ভাইয়া রেখে দিন। আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমার তরফ থেকে বাদাম কিনে দিয়েন।
মনে মনে বললাম ওরে বাটপাড়।


লেখাঃ আলাইনা শেখ

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]