এটেন্ডেন্স সমাচার
ছোট থেকেই ঢাকা শহর নিয়ে খুব ভয়ানক রকমের আগ্রহ কাজ করে আমার। ঢাকার কোথায় কোন খাবার পাওয়া যায়, কোন গলি কোথায় গিয়ে উঠেছে, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হলে কোন গলিতে ঢুকলে কিভাবে কম সময়ে, কম টাকায় এবং কম জ্যামে যাওয়া যাবে এসব জ্ঞান অর্জন করার একটা মারাত্মক ড্রাইভ কাজ করে নিজের ভিতর।
কলেজে উঠে আর সবার মত আমারও নতুন নতুন পাখা গজায়। স্কুলে থাকতে সম্ভব না হলেও কলেজে উঠে কিছুটা স্বাধীনতাও পাই আর পকেটেও কিছু মালপানি থাকত তখন। এই দুইয়ের মিলনে এই শখ তখন নেশা হয়ে যায় একরকম। প্রায়ই কলেজ বান্ক দিয়ে ঢাকার রাস্তায়-রাস্তায় হাঁটতাম। রাস্তা ঘাট চিনার চেষ্টা করতাম হেটে হেটে, পকেটে টাকা থাকলে হোটেলে গিয়ে খেতাম আর না হলে কোন একটা রোডের ব্রীজে উঠে মানুষ দেখতাম। কি যে ভালো লাগত!
কিন্তু এই আনন্দের ভিতর বাধ সাধত কলেজের এটেন্ডেন্স সিস্টেম। ৮৫% থাকা লাগবে। তাই জহরলাল স্যারের দেওয়া অংকের জ্ঞান কাজে লাগাতাম। হিসাব করতাম কবে কয়টা ক্লাস মিস দিলে এটেন্ডেন্স একদম ৮৫%ই থাকবে আবার ল্যাব,কুইজ এসব নিয়ে বড় কোন প্যারাও খাওয়া লাগবে না। এভাবেই আনন্দে ঘুরেফিরে দিন কাটতো আমার।
আম্মুর অফিস ছিল মতিঝিল, বিমান অফিসের পিছনে। আম্মুর অফিসে যাওয়া-আসার রাস্তায় কলেজ হওয়ায় আর কলেজ থেকে দূরত্ব কম হওয়ায় অনেক এক্সট্রা সুবিধা নিতাম আম্মুর থেকে।
একদিন বায়োলজি ল্যাবের ডিসেক্টিং বক্স ফেলে আসছি বাসায়। আম্মুকে বললাম তুমি অফিস যাওয়ার সময় ওটা নিয়ে আস আর কলেজের সামনে এসে ফোন দিও, আমি এসে নিয়ে যাব। আম্মু কলেজের সামনে এসে আর আমাকে ফোন দিল না, দারোয়ান মামাকে বলল ওটা রাখতে। দারোয়ান মামা সেই দ্বায়িত্ব না নিয়ে আম্মুকে গাইডেন্সের রুমের রাস্তা দেখিয়ে দিল। এরপর যা হওয়ার তাই হল। আম্মুকে গিয়ে বসল গাইডেন্সে। আমাকে ডেকে পাঠানো হল ক্লাস থেকে। গাইডেন্সের ডাক শুনেই তো তখন "বিচি কান্ধে"।
আমার ক্লাস থেকে আসতে যতক্ষণ, এর মধ্যেই গাইন্ডেন্সের স্যার আম্মুর থেকে আমার রোল নিয়ে এটেন্ডেন্স আর কুইজের মার্ক্স বের করে প্রিন্ট করে ফেলসেন। আমি রুমে ঢুকতেই আম্মুকে বলল, "আপনার ছেলে তো হিসাব করে ক্লাস মিস দেয়। একদম ৮৫% ওর। ওরে তো আমি ধরতেও পারতেসি না। ওর নামে রিপোর্ট করা দরকার।" ব্যাস, আর কই যাই।
এভাবে কট খাবো কোনদিন কল্পনাও করি নাই। এই ঘটনার পর অনেকদিন পর্যন্ত আমার 'ঢাকা হন্টন' কর্মসূচি স্থগিত ছিল। পরে অবশ্য ফাঁকফোকর খুঁজে আবারও চালু হয়েছিল সেই কর্মসূচি।
বলা বাহুল্য, ওইদিন বাসায় গিয়ে ভালো ধোলাই হয়েছিল এবং গাইন্ডেন্সের সুনজরেও ছিলাম বহুদিন।
লিখাঃOmar Jayed