নিম পাতা
সকাল সকাল ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। আমাকে দেখতে সাধারণ ছেলের মতো মনে হলেও সকলের কাছে নাকি আমি কবির মতো। এইতো সকাল বেলা অতিথি ছোট বোনের কাছে একটা চিঠি রেখে গেল। অনু আমার কোনো কিছুতেই হাত দেয় না। মানিব্যাগে হাত দেয় না। কোনো খাবারে হাত দেয় না। বলতে গেলে একদম ভালো স্বভাবের মেয়ে। অনু এসে বলল " ভাইয়া আসার সময় আমার জন্য আচার নিয়ে আসবে। "
কিছু বললাম না।
একটা টমটমে উঠতেই অতিথি কে দেখতে পেলাম। অতিথি আমার দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে। অতিথি মন খারাপ করে বলল " চিঠি টা কি পড়ে ছিলেন ? "
কোনো কথা বলি নি। ভয় করছিল। টমটমে অতিথি সহ আর দু'জন ছিল।
অতিথি কে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই।
তবে অতিথির আবেগ টা কে ভয় পেতে হয়। আবেগের কারণে হয়তো অতিথি আমাকে মারতেও পারে। ভালবাসতে কারণ লাগে না। তবে অতিথির মধ্যে কোনো কারণ খুঁজে পাই নি। সহসা সুরেলা কন্ঠে মেয়েটা হাসি দিয়ে উঠল। বেশ অবাক হলাম। এখানে হাসি দেওয়ার কি হলো। অতিথির দিকে চাইতেই দেখলাম রাস্তার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাকে দেখে হাসি দিয়েছিল। দু'জন আবার খুব চুপ করে বসে আছি। অতিথি আমাকে বলল " মনে মনে কি বকছেন? "
এ কথায় খুব অবাক হলাম। মিথ্যা বলল কেন? "
তবুও উত্তর করলাম " কাউকে বকাবকি করি নি। "
টমটম ব্রেক দিল। পাশের দু'জন লোক নেমে গেল। অতিথি নিরব হয়ে বসে আছে। কয়েকবার আমার দিকে চেয়ে অন্য পাশে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি বকছে। অতিথি ব্যাগ থেকে চানাচুর বের করে খেতে লাগল। আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছু বলে নি। অতিথি আপন মনে খেতে লাগল। অতিথির চোখে চোখ পড়তে মৃদু গলায় বললাম " তোমাকে নাকি ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল?"
বোকার মতো প্রশ্ন করতেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। অতিথির মুখ লাল হয়ে গেল। বেশ লজ্জা পেয়েছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল " তাতে আপনার কি? "
আবার মেয়েটা চানাচুর খেতে মন দিল। দু'জন নিরব হয়ে আছি। একা তাকতে ভালো লাগে না। খুব বিরক্ত লাগে। টমটম কে দাঁড়াতে বলতেই অতিথি বলল " আমার একটা জরুরি কথা আছে। "
ভাড়া দিতে দিতে বললাম " কি তোমার জরুরি কথা শুনি? "
অতিথি বলল " চিঠি টার উত্তর দিবেন না বুঝি? "
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই তোমার জরুরি কথা। খুব হতাশ হলাম। চুপ তাকতে দেখে অতিথি বলল " কিছু বলছেন না যে? "
চুপ হয়ে থাকলাম। চিন্তা করছি কি বলব? কিন্তু কোনো উত্তর খুজে পাই নি। তাই হাঁটতে লাগলাম। অতিথ দাঁড়িয়ে আছে।
.
অনু কে নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। নানু বাড়ি থেকে বাসায় আসছি। এই কয়েক দিন সেখানে অনেক মজা করলাম। অতিথির কথা কয়েকবার মনে হয়েছিল। তবে মনের কথায় পাত্তা দেই নি। অনু আমার দিকে চেয়ে বলল " ভাইয়া তোমাকে পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে। "
সুন্দর মানুষ কে সুন্দর লাগবে এটা নতুন কিছু না। কিন্তু অনুর মুখ টা কালো হয়ে আছে। ভয়ে বুঝতে পারছি ।
অনু বলল " ভাইয়া রাত হয়ে যাচ্ছে? যাব কিভাবে? "
অনু খুব কঠিন কঠিন কথা বলে। এখানে অনেক মানুষ তবুও ভয় পায়।
বিড়বিড় করে বললাম " এবার একটু চুপ কর। বাসায় গেলে তোকে সাথে করে নিয়ে যাব। "
অনু নিরব হয়ে আছে। বুঝতে পারছি রাগ করেছে। একটা ছেলে এসে বলল " ভাইয়া বাদাম খাবেন? "
আমার খাওয়ার ইচ্ছা নেই। তবুও অনুকে খুশি করার জন্য বিশ টাকার বাদাম কিনে বললাম " রাজরানি খাবে? "
অনু অনেক রেগে আছে। গাল ফুলিয়ে নৌকার দিকে চেয়ে থাকল। একটু মজার করার জন্য বললাম " ঠিক আছে বাদাম গুলা আবার বিক্রি করে দিচ্ছি। "
এই কথা বলতেই অনু আমার দিকে চেয়ে বলে " আমার বাদাম দেও। আমার জিনিষ কেন বিক্রি করবে। "
বাদাম নিয়ে খেতে লাগল। চোখের নিচে একটা চুল পড়েছিল। হাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আমার একমাত্র বোন বলে কথা।
বাসায় আসার পর কিছু ভালো লাগেছে না। এদিকে অনু নানুর বাসার গল্প বলতে বলতে হাপিয়ে পড়েছে। মা ওর কথায় হাসছেন। বাহির থেকে বের হওয়ার জন্য একটা বাসের মধ্যে উঠলাম। বাসে উঠে দেখি অতিথি বসে আছে। অতিথির পাশে একজন লোক বসে আছে। সেই লোক টা আবার বাস থেকে নেমে গেল। অতিথির সামনের সীটের মধ্যে তিন জন্য পুরুষ বসে আছে। সবাই বয়স্ক হলেও একজন অতিথির দিকে চেয়ে আছে। অতিথি মেয়েটা আমার দিকে অভিমান নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার পাশে একজন বসে আছে। আমি এই সীট থেকে উঠে গিয়ে একটা ফাকা সীটে বসলাম। চুপ করে বসে আছি। অতিথিও উঠে আমার পাশে বসল। কয়েকদিনের অভিমান জমা করে বসে আছে। আমার তো কিছু করার নেই। অতিথি কে ভালবাসি না। এমন কি কোনো সময় ভালবাসতে পারব কিনা জানি না। অতিথি একটা সীটের দিকে চেয়ে রইল। আমিও লক্ষ্য করলাম। একটা মেয়ে একটা ছেলে বসে আছে। হয়তো তারা একজন আরেকজন কে ভালবাসে। কেউ হাসছে আবার কেউ অভিমান করছে। আমাদের মধ্যে তো এসব নেই। আমাদের ভালবাসা হতে পারে না। দু'জন আলাদা। দু'জনের আলাদা জীবন। অতিথি অনেক অভিমান নিয়ে বলল " কোথায় ছিলেন? "
পকেটে হাত দিয়ে বললাম " নানুর বাসায় ছিলাম। চুপ করে বসে আছি। বাস চলতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নেমে গেছে। আকাশে মেঘের আলো কালো তাই দিনের আলো নেই। বাসের মধ্যে অন্ধকার। মোবাইল বার করে দেখে নিলাম কয়টা বাজে। নেমে যেতে হবে। অতিথি কে জিজ্ঞাস করা হলো না কোথায় নামবে। তবুও বলতে পারি সামনের স্টেশনে নেমে যাবে। সেখানে তার ফুফির বাসা আছে। দু'জন জানালার দিকে চেয়ে আছি।
রাতে ঘুমিয়ে আছি। দু'টার সময় ঘুম ভেঙে গেল। অতিথির কথা মনে পড়ছে। অতিথি মেয়েটা অনেক ভালো। আমাকে এক সময় তো বিয়ে করতে হবে। অতিথি কে বিয়ে করলে কেমন হয়। ভাবতে লাগলাম। হ্যাঁ। অবশ্যই করা যায়। কাল আবির ভাইয়ের বিয়ে। সেখানে সকাল সকাল যেতে হবে। আবির ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি অনেক টাকা পয়সার মালিক। তাদের একমাত্র মেয়ে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতেই অতিথি কে দেখতে পেলাম। খুব অবাক হলাম। সারাদিন কোনো কথা হয় নি সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বাসায় আসতে যাব। অতিথি ডাক দিয়ে বলল " চলে যাচ্ছেন বুঝি? "
মাথা ঘুরিয়ে বললাম " হ্যাঁ। "
অতিথি ঠোঁট কেটে বলল " যাওয়ার আগে বিদায় নেওয়া উচিৎ ছিল না বুঝি? "
লজ্জা পেয়ে বললাম " বড় ভুল হয়ে গেছে। দেখছিলাম তুমি লোকজনের সাথে কথা বলছিলে তাই বিদায় নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা এখন চলি। "
অতিথি অবাক করে বলল " দাঁড়ান। আমিও বাসায় যাব। দু'জন একসাথে বাসায় যাব। "
দু'হাত দিয়ে পরনের শাড়ি টা আলতো করে গুটিয়ে নিল।
খোঁপা টা দেখল ঠিক আছে কিনা তারপর মুচকি হাসি দিল। দু'জন চুপ হয়ে আছি। কোনো কথা বলছি না। অতিথি কে পছন্দ করি এই কথা বলতে ইচ্ছে করছে তবুও বললাম না। বটগাছ তলায় এসে গেছি।
ধীরে ধীরে রাত নামছে।
বিজলী বাতি গুলো জ্বলছে মিটমিট
করে ।
চারপাশের দোকান গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকজন আড্ডা দিচ্ছে। কেউ কেউ গল্প করছে। প্রেমের গল্প। সিনেমার গল্প। খেলার গল্প। অতিথি আমার দিকে চেয়ে বলল " আবির ভাইয়ের মতো কি আমরা বিয়ে করতে পারি না? "
কথার সাথে সাথে হ্যাঁ বলে দিলাম। অতিথি অবাক হয়ে গেল। ভাবতেই পারে নি। আবার বলল " সত্যি? "
হাত টা ধরে বললাম " বিয়ে করা যাবে। তবে প্রেম করা যাবে না। হিহিহিহি। "
লেখা-তামিম আহমেদ অতিথি