ইচ্ছে

বাইরে থেকে বাসায় পা রাখতেই ছুটে এলো মিতুল।
"ভাইয়া,তাড়াতাড়ি এদিকে আয়'
বলে আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই হাত ধরে টেনে বাবার রুমের সামনে নিয়ে গেলো।
মা মেঝে থেকে পিরিচের ভাঙা অংশ হাতে তুলছেন।বাবার মুখ থমথম করছে।
"চা ঠান্ডা হবে কেন শুনি? চিৎকার করে উঠলেন।এগুলোকে চা বলে।
মা চুপচাপ ভাঙা টুকরো গুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলেন।
মিতুলের দিকে তাকিয়ে পুনরায় খেকিয়ে উঠলেন বাবা " সমস্যা কি হা,এখানে কি তামাশা দেখা হচ্ছে?"
আমাকে নিয়ে বলা শুরু করার আগেই মিতুলের হাত ধরে রুমে চলে আসলাম।
বাবার রুম থেকে কথা ভেসে আসতে লাগলো।
"নবাবপুত্তুর একেকজন।নাওয়া খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।খালি বসে বসে বাপের টাকার অন্ন ধ্বংস করা।
উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।মিতুলের চোখের পানি দেখেও না দেখার ভান করে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।
" জানিস ভাইয়া বাবা আজ আবার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে।"
চুপ করে রইলাম।কিছু বলার নেই।নিতান্ত প্রসঙ্গ বদলাবার জন্য বললাম"নাসেম ভাই বাসায় আসেনি এখনো?
"এসেছিল।দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে গেল আর আসেনি। "
"রিয়াদি?"
"রুমে।"
"মিতুল যাওয়ার আগে লাইটটা অফ করে দিয়ে যাস।"
আর কোনো কথা না বারিয়ে মিতুল চুপচাপ উঠে গেল।

অন্ধকারে শুয়ে থাকতে ভাল্লাগছে। প্রচন্ড ভাবে মাথা ধরেছে।হাস্নাহেনার সৌরভ ভেসে আসছে জানালা দিয়ে।এই গাছটা বাবা বহুবার কেটে ফেলতে চেয়েছেন।আমি দেইনি।সবসময় বলতেন "মুকুল এই ফুলের গাছের জন্যই দেখবি সাপ আসবে"। আমি হাসতাম।বাবা আসলে আসুক।ফুলে মধু থাকবে আর তাতে মৌমাছি বসবে না তা কি হয়।
একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।বাসায় আসার পর একবারও খাওয়া হয়নি।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ১০:৩০ বাজে।এখন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে কেমন হবে।একা একা খালি পায়ে রাস্তায় হাটবো।ক্ষুধা লেগেছে খুব।কিন্তু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
একটা বয়সের পর না চাইলেও পরিবারের বোঝা মনে হয় নিজেকে।লকডাউনের আগে কয়েকটা টিউশন করে ভার্সিটি মোটামুটি চালিয়ে নেয়া যেত।খেয়ে না খেয়ে বাসায়ও কিছু দেয়া যেত।চিরকাল ছোট চাকরি করে আসা বাবার সঞ্চয় প্রায় নেই বললেই চলে।ভেবেছিল ছেলে আছে দুটো নিশ্চয়ই সংসারের হাল ধরবে।নাসেম ভাইয়ের সারাদিন খোজ থাকে না।খাবার টেবিলে একবার দেখা যায় শুধু। একটা মেয়ে একটা ছেলে সহ ভাবী এখানেই থাকেন।ভাইয়ার বেসরকারি একটা চাকরি ছিল।কর্মী ছাটাই তে তাও চলে গেছে আজ ২মাস হল।

দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।আজ বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।কেমন হবে যদি সারারাত রাস্তায় ঘুরে বেরাই।আব্বা অনেক চিৎকার চেচামেচি করবে।নাসিম ভাইকে পাঠাবে খোজ নিতে।ছোটো বেলা থেকেই আব্বাকে দেখতাম ধমক ছাড়া কথা বলতে পারেন না।ভালো কোনো কথাও সে বলবে ধমকে উঠে।একবার রিয়াদি স্কুলের গানের উৎসব এ ২য় হয়ে পুরস্কার নিয়ে এলো বাসায়।স্যাররা নাকি জেলা পর্যায়ে কোথায় গাইতে নিয়ে যাবে,কিন্তু রাত্রে থাকতে হবে।
বাবা ধমকে উঠলেন।মগের মুল্লুক নাকি। পড়াশোনার খবর নেই আবার গান।কোথাও যাওয়া লাগবে না।
সেদিন রাগে অভিমানে দি খেতে আসলেন না।বাবা হুংকার ছাড়লেন,এসব ন্যাকামো তার বাড়িতে চলবে না।
আবেগ অনুভূতি কখনো তাকে স্পর্শ করতো না।বড় হয়ে বুঝতে পারলাম বাবার চাকরিটা ছিল ছোটোখাটো। অন্যদের ঝাড়ি শুনে এসে বাসায় আমাদের উপর রাগ ঝাড়তেন।অনেকটা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে।
হেটে হেটে প্রায় মাঝ রাস্তায় চলে এসেছি।সামনে কোনো দোকান পেলেই সিগারেট কিনবো।
বিরক্ত লাগছে নিজের উপর। মাস্টার্স প্রায় শেষ এখনো চাকরি জোগাড় হল না।পরিবারে ছেলে থাকলেই সবাই ভাবে বাপের কোনো চিন্তা নেই।কিন্তু কতোটা বোঝা মাথার উপর থাকে তা কেউ বোঝেনা।মধ্যবিত্ত পরিবার মানেই বড় হওয়ার আগেই বড় হয়ে যেতে হয়।কবে বাবাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দেবো।মাকে একটা শাড়ী। এবার ইদে ও সেই আদিকালের পাঞ্জাবি টা আয়রন করিয়ে বাসায় নিয়ে আসলেন।
ইচ্ছে করছিল তখনই একটা কিনে এনে দিয়ে বলি বাবা দেখতো এটা গায়ে লাগে কিনা?
এইসব ইচ্ছে পূরণ করতেই বেচে থাকা এই অবসাদগ্রস্থ পৃথিবীতে।
সামনে ল্যাম্পপোস্ট এর হাল্কা আলোতে ২ জন লোক হেটে আসতে দেখলাম।পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একজন পকেটে হাত দিলো।ঝটকা মারলাম একটা। ততক্ষনে পাশের জন আমাকে ঠেলে রাস্তায় ফেলে দিলো।উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেলো।ব্যাস পৃথিবী টা হঠাৎ করেই নিকষ আধারে ছেয়ে গেল।

আমার উপরে কয়েকজন মানুষ ঝুকে আছে।বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।মাথার যন্ত্রণায় আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম।হাসনাহেনা
ফুলের তীব্র গন্ধ ভেসে আসছে কোথা থেকে যেন।


লিখাঃ Farha Zanin

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]