দুই জীবন
আম্মু কোন দিনই আমাকে রান্না ঘরে যেতে দিতেন না।
বলতেন আমি নাকি কালো হয়ে যাবো।
যদি বলতাম তাতে কি?
তখন উত্তর দিতেন,তখন কোন রাজপুত্র আর তোকে বিয়ে করবেনা।
আমি বলতাম,ইশ!বিয়ে আমি করলেই তো।তোমাদের ছেড়ে কোত্থাও যাবোনা আমি।
রান্না ঘরে আম্মু কোন দিন যেতে দেন নি যদি হাতে পায়ে তেল ছিঁটে পুড়ে যায়,এই জন্য।আর উপরোক্ত কথাটা বলতেন মজার ছলে।
আজ বছর পাঁচেক পর আমি বিয়ে করে ঠিকই অন্যের ঘরে এসেছি।
এখানে ঘুম থেকে উঠেই আমার রান্না ঘরে ঢুকতে হয়।
সকালে শাশুড়ির জন্য রুটি,দেবর ননদের জন্য খিচুড়ি,বিভিন্ন পদের ভর্তা বানাতে হয়।একেক দিন একেক আইটেম তৈরী করতে হয়।
আবার ফোনে স্বামীকে সময়ও দিতে হয়।
দুপুরে আবার ভাত তরকারি,ভাজি ডাল সব রান্না।
আবার রাতে শাশুড়ির রুটি।
সবই একা হাতে করতে হয়।
বিয়ের আগে ছিলো এক জীবন।
বিয়ের পর হলো আরেক জীবন।
সত্যিই মেয়েদের জীবন একটা না।
মেয়েদের দুই জীবন।
সংসারের চাপে পড়ালেখা টাও বাদ দিতে হয়েছে আমার।
অথচ আমার ননদ আর আমি একই সাথে পড়তাম।
ও আমার চোখের সামনে পরীক্ষা দেয়।আর আমি ওর জন্য সকালে জল খাবার তৈরী করে রেডি করে দেই।যাতে তাড়াতাড়ি করে খেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারে।
তবুও নাকি আমি অন্য বাড়ীর বউ এর মত না।
অন্য বাড়ীর বউ এরা কত ভালো।
রোজার মাসে,
আম্মু বলতেন,তুই শুধু নামাজ পড়।
বাকি সব আমি দেখে নিবো।
রোজা রাখলে কি যে খুশি হতেন আম্মু।
আর বলতেন,আমার মেয়েটা আজ রোজা কেউ ওকে কোন কাজ দিবি না।
আর আজ আমি রোজা রেখে সমস্ত কাজ নিজে হাতে করেও মন পাইনা।
তরকারি কিংবা বেগুনীতে লবণ একটু কম হলেই শুনতে হয়,
তোমার মা কি তোমাকে এগুলো কোন দিন খাওয়ায় নি?
কোথায় কি পরিমাণ লবণ দিতে হয় সেটাও জানোনা।
হায়রে মা!
সারাজীবন তোমাকে খাটিয়েও গেলাম।
আবার এখন সারাজীবন কথা শোনানোরও দায়ভার নিলাম।
আচ্ছা মা বলোতো,
আমার শাশুড়িও তো তোমার মতই একজন মা।
তবে সে কেন তোমার মত না?
#বিঃদ্র;প্রতি টা শাশুড়ির উচিৎ তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মত দেখা।
আর ছেলের বউ এর উচিৎ তাদের শাশুড়ি কে নিজের মায়ের মত দেখা।
বিশ্বাস করুন,তবে সংসারে কোন দিন অশান্তি দেখা দিবেনা।
কোন দিন না।
লিখাঃ নিহিন ইলিয়ানা।
₪ [ post no: 61 ]