আমি কিছুই বুঝলামনা
ফোনের রিং বেজে চলেছে ঘরের ভিতরে কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারছি না,কারন আমি এখন বাথরুমে গোসল করতেছি।গোসল সেরে বেরিয়ে দেখি আমার গফের ১২টা মিসড কল। তারাতারি কল ব্যাক করলাম।
রুহি ফোন রিসিভ করেই ঝারি দেয়া শুরু করলো ও রুহি আমার গফ।
রুহিঃওই তুমি ফোন ধরোনা কেন?
আমিঃগোসল করতেছিলাম বাবু,সরি।
রুহিঃআধা ঘন্টার মধ্যে আমার সাথে পার্কে দেখা করবা।
আমিঃআচ্ছা বাবু।তোমার জন্য কি নিয়ে যাবো?
রুহিঃকিছুনা।
আমিঃআচ্ছা,আমি আসতেছি বাই।
রুহিঃবাই।
তারাতারি রেডি হয়ে বের হইলাম বাইক নিয়ে।পৌছানোর আগে আমার পরিচয় টা দেই,আমি আসু।খুব ভালো ছেলে নইলে কি আর সেই ক্লাস এইটের গফ নিয়া এখনো থাকি অবশ্য এর পিছনে কারন আছে একটা তা হইলো আমি এসএসসি তে ১ বার এবং এইচএসসি তে ২বার নিষ্ঠার সাথে ফেল করেছি।কিন্তু গফ আমারে ছেরে যায় নাই,আমার সিনিয়র হয়ে গেছে তবে রিলেশন আগের মতই আছে ইনশাআল্লাহ। ওরে আমি খুব ভালবাসি আর ও আমারে খুব ভালবাসে,নইলে কি আর আমার মত ফেল্টুর সাথে রিলেশন করে।চলে আসছি পার্কে পরে বলি আমার কথা।
আমিঃবাবু নাও তোমার প্রিয় কিটকাট চকলেট।
রুহিঃতুমি কখনো ভুলোনা,তাই তো তোমারে এত্তো ভালবাসি।
আমিঃ হে হে হে এইটা কি ভুলা যায় বলো।
রুহিঃশুনো,আমি ১০-১২ দিন তোমার সাথে দেখা করতে পারবনা আর কথাও হবেনা।
আমিঃকি,কেন?
রুহিঃএকটু সমস্যা আছে বাসায় তাই,আর কিছু জিগেস করবানা একদম।
আমিঃতুমি তো জানো কথা না বললে আমার ভালো লাগেনা।
রুহিঃঢং কইরোনা,আর কালকে সকাল নয় টায় আমার বান্ধবী পুষ্পকে তুমি তোমার ক্যামেরাটা দিয়ে আসবা।
আমিঃকেন?(অতি উচ্চ স্বরে)
রুহিঃগরুর মতো চিল্লায়ও না,আমার এক আত্মীয়ের বিয়ে তাই লাগবে।
আমিঃতোমার কাছে দিয়ে আসবো, তাইলে দেখাও হবে।
রুহিঃযা বলছু তাই করবা,এখন আসি বাই।
আমিঃএখনি যাওয়া লাগবে,বসো না কিছুক্ষণ। (নাটকীয় ভাবে)
রুহিঃপ্যান প্যান করাবানা একদম আসি।
আসি বলেই চলে গেলো।একা একা বসে আছি এমন সময় ফোন বেজে উঠল বের করে দেখি বন্ধু রবি কল করছে।
রবিঃদোস্ত,একটা দাওয়াত আছে তোর জন্য।
আমিঃকিসের দাওয়াত মামা?
রবিঃআকাশ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হইছে সামনের শনিবারে।
আমিঃকি?সত্যি? আকাশ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হইছে তাইলে।
রবিঃহুমম রে সালা।
আমিঃঅবশেষে,ভুড়ি ওয়ালা আকাশ ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হইলো। বউ কেমন ওর মতই কালো নাকি?(তাচ্ছিল্যের স্বরে)
রবিঃদেখি নাই,তবে শুনছি মেয়ে নাকি বাংলা ছবির নায়িকার মতো সুন্দর।
আমিঃএই এক জ্বালা বিসিএস ক্যাডার হইয়া ভুড়ি ওয়ালা লোক গুলা সবার গফ ছিনায় নেয়।
রবিঃবাদ দে,তোর গফ তো আর না,মেয়ের কোনো রিলেশন নাই,মেয়ে নিজে বলছে ভাইয়ারে।
আমিঃওকে,আমি আসবো এখন রাখি।
রবিঃআচ্ছা বাই।
বিয়ের আগের দিন চলে গেলাম রবিদের বাসায়,বিয়ের সব দায়িত্বে যেন আমার আর রবির উপর।সারাদিন সব সাজায় গুছায়,মেহমানদের আপ্যায়ন করেই দিন চলে গেলো।
এদিকে রুহিকে কতবার কল দিলাম ধরেই না,এখন তো আবার দেখি ফোন বিজি দেখাচ্ছে।
থাক,বিয়েতে গেছে মজা করুক আর আমিও একটু মজা করি চার দিকে এতো পরীর ছড়াছড়ি।
পরের দিন যথা সময়ে বরযাত্রী বের হইলাম,মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। বিয়ে পড়ানো শেষ হইলো, মিষ্টি খাওয়ানো শেষ হইলো,খাওয়া শেষে এখন কনেরে নিয়ে আসছে।হঠাৎ করে আমার বুকের বা পাশে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো,সব দেখি অন্ধকার হইয়ে আসতেছে,মাথার উপরে ঠাডা পড়তেছে কিন্তু কারন কি আমি বুঝতেছি না।
এখন বুঝলাম কারন কি,কারণ টা হইলো আমার গফকে বউয়ের সাজে দেখে আমার এমন হইছে।আমি আমার চোখ দুইটা হাতে নিয়ে ঘইষা-টইষা আবার সেট করলাম ভুল দেখলাম নাকি বোঝার জন্য কিন্তু না সেও দেখি আমারে দেইখা ভয়ে চুপসে গেছে,তার মুখের হাসিটা উইড়া গেছে।
রবি তো একবার আমার দিকে তাকায় আর একবার রুহির দিকে ঘটনার আকষ্মিকতায় ও নিজেও কিছু বুঝে নাই।হঠাৎ কিছু একটা পড়ার শব্দ পাইলাম,পাশে তাকায়া দেখি রবি পড়ে গেছে অজ্ঞান হয়ে,আমি বুঝলাম না গফ আমার অজ্ঞান রবি কেন হইলো।জ্ঞান ফিরতেই রবি হাউমাউ করে কানতে শুরু করছে।কারণ জানতে গিয়া যা জানতে পারলাম তা শুনে আমার উপর দ্বিতীয় বার ঠাডা পড়ছে।
রবির সাথে রুহির রিলেশনের চার বছর হইতে যাচ্ছে।
পরে যখন বললাম ও তো আমার গফ এইটা শুনে রবি দ্বিতীয় বার অজ্ঞান হইলো।
এইদিকে রুহিকে বরন করে নিছে বিসিএস ক্যাডার আকাশ ভাইয়ের আম্মাজান।
আমি কিছুই বুঝলাম না।।।
লিখাঃ জেরিন বিনতে জয়নাল