স্বপ্ন

সেদিন সাতসকালে ভয়ংকর চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখলাম ভাতিজা কান্না করছে।

- এই, এদিকে আয়। সকাল সকাল এতো জোরে কান্না করছিলি ক্যান? তুই জানোস না নবাবের ব্যাটার এখন ঘুমের টাইম?
- অ্যাঁ.......অ্যাঁ
ভাতিজা কোন কথার জবাব না দিয়ে কান্না করতে লাগলো।

আমাদের চৌদ্দগুষ্টিতে কোন নবাবের ছিঁটেফোঁটা নেই। কিন্তু, আমার মায়ের মতে আমার মধ্যে নবাবের ব্যাটাদের কিছু স্বভাব রয়েছে। যেমন- সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠা।

- আম্মা, সুন্দর আলী কান্দে ক্যান?
- ওর মা ওরে মারছে।
- সকাল সকাল মারার কি কারন ছিলো?
- ও নাকি কি যেন স্বপ্নে দেখছে।

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। সামান্য একটা স্বপ্ন দেখার অপরাধে এরকম মারধর করা কি ঠিক?
এই ছেলে কখনও বড় হবার স্বপ্ন অদৌ দেখবে কিনা সন্দেহ আছে।

- ভাবি, ও ভাবি!
- কি হইছে মুরাদ ভাই? চিল্লাইতেছেন কেন?
- সকাল সকাল সুন্দর আলীরে মারধর করছেন কেন? মানুষ কি স্বপ্ন দেখা পাপ? কি মাসুম চেহারা বাচ্চাটার!
- মানুষ স্বপ্ন দেখা পাপ না। কিন্তু এই ছেলে যা স্বপ্নে দেখছে তা আসলেই পাপ। ছিঃ! ওসব কথা মুখে আনতে পারব না আমি।

এই বাচ্চা ছেলে কি এমন স্বপ্ন দেখল?
সকাল সকাল এতো সাসপেন্স নিতে পারছিলাম না। বিষয়টার একটা বিহিত করা দরকার, এমনিতেও আমার হাই প্রেশার। বেশি সাসপেন্স নিতে গেলে অক্কা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
আমি যতদূর জানি সুন্দর আলীর একটা দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে দোকানে নিয়ে এক প্যাকেট চিপস কিনে হাতে দিলেই সব হড়হড় করে বলে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ, তাকে দোকানে নিয়ে চিপস কিনে কোলে এনে বসালাম।

- চাচ্ছুরে বল তো, কি দেখছস রাতে?
- আম্মু বলছে এসব শরমের কতা, কাউরে না কইতে।
- আরে বল, বললে আরেক প্যাকেট চিপস কিনে দিবো।

এবার সুন্দর আলী সুন্দরমত বলতে শুরু করল।
- আমি দেখলাম একটা বিশাল মাঠে আমি, কাইল্লা আর মোটকা মিলে খেলা করছি। মাঠের পাশে একটা ছোট ঘর ছিলো।
- তারপর?
- হঠাৎ মাঠের পাশের ঘরটা আছে না?
- হ্যাঁ আছে।
- ওটাতে আগুন ধরে গেলো।
- তারপর?
- তারপর আমরা দৌড়ে ঘরটার কাছে চলে গেলাম। গিয়ে.....
- এটা তো খারাপ কিছু না। একটা মানুষের স্বপ্নে এসব হতেই পারে। তারপর কি করলি?
- কল চিপে পানি এনে আগুনে দিচ্ছিলাম। পুরোপুরি শেষ না হতেই মায়ের বকুনিতে ঘুম ভাঙ্গলো।

এসব শুনার পর আমার সুন্দর আলীর জন্য ব্যপক কষ্ট লাগছিলো। এই ছেলে আমার ভাতিজা, ভাবতেই পানি চলে আসছিলো। কি অমায়িক একটা ছেলে! ছেলেটা আসলেই আমার মত হইছে। মানুষের উপকারের কথা স্বপ্নেও দেখে সে।

আজ ভাবির একদিন, কি আমার একদিন!

বাড়িতে এসে বকার মুড এনে ভাবিকে ডাক দিলাম।
- ভাবি... ও ভাবি!
- মুরাদ ভাই? আসছেন ভালোই হইছে। তোশকটা বাহির করতে হইবো। একলা পারতেছিলাম না।
সুন্দর আলী ক্লাস টু'য়ে পড়ে, তাও বিছানায় এসব করে।
আচ্ছা, আপনি তো সবসময় গর্ব করে বলেন আপনার ভাতিজা আপনার মত হইছে। আপনিও কি এসব করতেন?

আমি ঘটনার আকষ্মিকতায় বেশ শক খেয়ে গেলাম। ভালোমত তাকিয়ে দেখি তোশকের মাঝখানে অনেকটা জায়গাজুড়ে ভেজা।


লিখাঃ Sheikh MD Murad

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]