গল্প টা আমাদের
অনেক চেস্টা, কস্ট এবং মামলা ধামলা কাটিয়ে শেষমেষ সে আমার বউ এখন
আমি ইয়াসিন।
২০১৮ এর শুরু থেকেই
নিস্তব্ধ অগ্নিলা নামের একটা আই ডি অসম্ভব ভালো লাগতো আমার।প্রতিদিন সময় পেলেই কেন জানি ওর আই ডি তে গিয়ে ঘুরতাম।ভালো লাগতো,কেন জানি না।মাঝে মধ্যে নক দিতাম,
কিন্তু কোন সাড়া পেতাম না।
তবে ও প্রায় সময় অনলাইন থাকতো,সেই কারনে আমাদের বন্ধুদের একটা মেসেঞ্জার গ্রুপে আমি তাকে এড করি।
দেখি ওখানে কত সুন্দর সবার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলে।
গ্রুপের একটা ইস্যু ধরে আবার ইনবক্সে মেসেজ দিলাম।দেখলাম যে রিপ্লাই আসছে,অনেকদিন পর।
বুকের ভেতর কেমন জানি একটা অনুভব।একটা রিপ্লাই পেয়ে মানুষ এত টা খুশি হতে পারে,ওইদিনের অনুভবে বুঝতে পেরেছি।
এরপর মাঝে মধ্যে ইনবক্সে কথা চলতেই থাকে।এরকম বলতে বলতে একদিন ওকে আমি প্রপোজ করে বসলাম।
তারিখ টা ছিলো ২৮-০৯-২০১৮।
সাথে সাথেই রিপ্লাই বন্ধ।
নিজেকে অনেক খারাপ মনে হচ্ছিলো তখন।
কেন করলাম এই কাজ টা,এখন বন্ধুত্ব টাই নস্ট হয়ে গেলো।
রাগে থাকতে না পেরে নিজেকে নিজে কস্ট দিলাম,রক্ত ঝরালাম ইচ্ছে মত।
এই ব্যপারে একটা বন্ধু জানতো।সে ওকে এস এম এস করে সব বলেছে,আমি যে নিজেকে কস্ট দিচ্ছি সেটা।এরপর সে আমাকে আবার মেসেঞ্জারে নক করলো।
বললো ভিডিও কল দিতে,কল দিলাম,কিন্তু ও সামনে আসেনি,শুধু মাত্র আমার রক্ত ঝরানোর কথা টা সত্যি কিনা যাচাই করছিলো।
দেখলো,এরপর অডিও কলে এসে অনেক বকা ঝকা করলো,
এরপর আমাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললো,
আচ্ছা ঠিক আছে,আমি তোমার সাথে কথা বলবো,কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না।তুমি যদি তোমার প্রতি আমাকে দ্রাবিত করতে পারো,তাহলে হবে,না হয় কি হবে জানি না।
আমি তো রাজি হয়ে গেলাম,দিন টা ছিলো ৩০-০৯-২০১৮।
ওহ হ্যা,,
বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,
আমি ওমানে থাকি,
তাকে আমি চিনি না,কোথায় থাকে,কি করে,কিচ্ছু জানি না,
এরপর ২মাস গেলো।কতবার অনুরোধ করেছি একটা ছবি অথবা ভিডিও কল দেওয়ার জন্য।শেষমেষ তাকে দেখার জন্য ২মাস ১০ দিন পর আমি দেশে যাই, তারিখ টা ছিলো ০৯-১২-২০১৮,
বিকাল টাইমে আমি বাড়ি পোছাই,এবং ১০ তারিখেই আমি তার সাথে দেখা করবো স্বীদ্ধান্ত,
ঠিকানা দিলো কি,আমাদের পাশের এলাকার সে,
আমি তো পুরা হতবাক হয়ে গেছি,কে না কে,
প্রথম দিনেই তাকে আমি নেকাপ পড়া অবস্থায় এবং বোরকা পরা অবস্তায় গাড়ি থেকে নামা মাত্র ডাক দিছি।
কেন জানি আমার মনে হয়েছিলো ওটাই সে,
সে এখনো কথা টা বলে সবসময়,
ইয়াসিন!ওইদিন তুমি আমাকে কেমনে চিনেছিলে?
জানি না,এই প্রশ্নের উত্তর আসলেই আমার কাছে নাই।
যাক,তারপর আমরা বাসে করে একটা রেস্টুরেন্টের দিকে যাবো।ওখানে গিয়ে বসলাম।
আল্লাহ যেমন চেয়েছি তেমন টাই আমার জন্য বাছাই করে রেখেছেন।
ছোট বেলা থেকে ঘোলাটে চোখ আমার খুব পছন্দ।
যখনই চোখের দিকে তাকালাম, আমি পুরাই মুগ্ধ।
বললাম কথা টা ওকে,যদিও ওইদিনের জন্য সেটা ও পাম্পিং হিসেবেই নিয়েছে।
এরপর থেকে আমাদের প্রতি একদিন পর পর দেখা হতো।
ঘুরাফেরা,একদিন ওদের বাড়িতে যাওয়ার অফার করলো,তার বন্ধু সেজে।
গেলাম,গিয়ে মন টা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে।
ওহ হ্যা,আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান,
আর ওর পরিবার অনেক শিক্ষিত এবং ধনি,এটা দেখেই মন খারাপ হয়েছে।
সেদিন বাড়ি থেকে আসার পর থেকে আমার কেমন জানি ওর সাথে কথা বলতে মন সাই দিচ্ছে না।
কেমন জানি মনে হচ্ছে ও আমাকে বিয়ে করবে না,
নিজের কস্ট হলেও ধিরে ধিরে সরে আসার চেস্টা করি,
ততদিনে ও আমার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।বিয়ের জন্য চাপ ও নিজে থেকেই দিচ্ছে।
তারপরো ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমি রাজি না হয়ে ০৮-০২-২০১৯ তারিখে আবার ওমানে চলে আসি।
কথা হয়, প্রতিদিন ওর কান্না,বিয়ে টা কেন করিনাই,
আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম,অনেক বেশি।
অনেক বুঝেছি ওকে।ওর কস্ট টা সহ্য হচ্ছিলো না আর,
দেখলাম যে হ্যা,ও আসলেই অনেক একটিভ,
৭মাস পর ১৩-০৯-২০১৯ তারিখে আমি আবার দেশে যাই বিয়ে করার জন্য।
বিয়ের আগের ওর মেঝো আপুর সাথে আমাকে কথা বলাই দিলো,উনি আমার ঘরবাড়ি নিয়ে খারাপ মন্তব্য করলেন,খুব কস্ট পেয়েছি।
এর পর আমরা ২৪-১০-২০১৯ কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করে ফেলি।
তারপর আমাদের ঘুরাফেরা নিয়মিত চলছিলো,নভেম্বর ২৯ তারিখে আমি আবার ওমানে চলে আসি।
আমি আসার এক মাস পুরন না হতেই,২২-১২-২০১৯ ওর ভাই আমাদের বিয়ে ব্যপারে জানতে পারেন,(পেশায় এডভোকেট উনি)
সাথে সাথে গ্রামে গিয়ে আমার বউ কে অনেক মারধর করেন,
এবং জোর জবরদস্তির মাধ্যমে আমার বউ কে রাজি করানোর চেস্টা করেন তালাক দেওয়ার জন্য,
তখনো আমি আমার শাশুড়ী কে ফোন করে অনেক অনুরোধ করে বলি,তালাক কোনদিনো ও দিবে না,আমরা দুজনেই মরে যেতে পারবো।
আমার শাশুড়ী আমাকে উনার এডভোকেট ছেলে আর আত্নীয় স্বজনের বল দেখিয়ে হুমকি দিয়ে অনেক কিছুই বলে ফেলেন,যা আমার বউ ওখানে দাড়ানো অবস্থায় সব শুনে,
ওর খুব বেশি রাগ হয়েছিলো,
যে কারনে ও স্বীদ্ধান্ত নিলো সে বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে চলে আসবে।সাথে সাথে আমি আমার আব্বুকে আমাদের বিয়ের ব্যাপার টা শেয়ার করি।
আমি পরিবারে সবার বড় এবং একমাত্র অবলম্বন বিধায়,আব্বু ব্যপার টা নিয়ে কোন রিয়েক্ট করেনি,
সবকিছু জিজ্ঞেস করে,কি করতে হচ্ছে জিজ্ঞেস করলো,বললাম ও চলে আসবে আমাদের বাড়িতে,সমস্যা আছে?
আব্বু বললো আমাদের মেয়ে আমাদের ঘরে নয়তো কই আসবে?একটু সাহস পেলাম,ওইদিন ২৪-১২-২০১৯ রাতেই ১১ টার সময় সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার পাশে দাড়ায়,এবং,আমার দুই বন্ধুকে আমি ফোন দিয়ে বললে তারা গিয়ে তাকে আমার বোনের শুশুর বাড়িতে নিয়ে আসে।পরদিন সকাল থেকেই শুরু হলো নতুন কাহিনি।আমার বউয়ের বড় ভাই,এডভোকেট সাহেব,গিয়ে আমার আব্বুর নামে করে দিছে অপহরন মামলা,টানা ১৪-১৫ দিন আমাদের ইচ্ছে মত হয়রানি করেছে থানা পুলিশ,এই ১০ -১৫ দিন আমার পরিবার এক জায়গায় ২রাত কাটাতে পারেনি।কতক্ষন বন্ধুর বাড়িতে,কতক্ষন বোনের শশুর বাড়ি,কতক্ষন চাচাতো বোনের শশুর বাড়ি,
তারপর আমার কিছু পলিটিকাল বন্ধু এবং বড় ভাই রা এগিয়ে এলে,আমার বউকে সহ নিয়ে কোর্টে গিয়ে একটা সাধারণ ডায়েরি করে রাখি।
এবং থানায় গিয়ে লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়ে তাকে আমরা ঘরে তুলি।
এখন সে আমার আব্বু আম্মুর সাথে আছে,ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ।
ওর করা কস্ট গুলা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।
আমার সাধ্য মত আমি চেস্টা করবো তাকে সবসময় ভালো রাখার।
লিখাঃ Yasin Arfat
₪ [ post no: 57 ]