সংজ্ঞা

সবেমাত্র এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।অফুরন্ত সময় । শুয়ে বসে সময় কাটাই ।বাবা-মা যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত । বাবা নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন । ব্যবসা দাড় করাতে ব্যস্ততার অন্ত নেই । আমাকে নিয়ে বেড়ানোর সময় কারো নেই । বাসায় একপ্রকার অবরুদ্ধ সময় কাটাচ্ছি । এমন সময় হুট করে ছোট ফুফু দেশে চলে এলেন । কানাডায় নাকি উনার মন বসে না । লেখাপড়া ছেড়েছুড়ে তাই চলে এসেছেন । দাদু রেগে আগুন । বাবাকে খবর পাঠালেন বাড়ি যেতে । ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাবা আমাকে আর মাকে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন । সেখানে গিয়ে এলাহী কান্ড । দাদু ছোট ফুফির বিয়ের আয়োজন করেছেন । আত্মীয় স্বজন সবাই সেঁজেগুঁজে বিয়ে খেতে এসেছেন । ছোট ফুফির মধ্যেও অমতের কোনো লক্ষণ নেই । আমি তখন সদ্য কৈশোর বেড়িয়ে যৌবনে পা দিয়েছি । মনে মধ্যে শত শত রোমাঞ্চকর কল্পনা ভেসে বেড়ায় । ভেবেছিলাম ছোট ফুফি বিয়েতে অমত করবেন । নাটক সিনেমার মতো দাদুর পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবেন না বলে জেদ করে বসে থাকবেন । তবে সেসবের কিছুই হলো না । ফুফি লক্ষি মেয়ের মতো বিয়ে করে শশুড় বাড়ি চলে গেলেন । অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম আমি।বিয়েতে হুট করে শুভব্রত নামে একটা ছেলেকে ভালো লেগে গেলো। বাবার দু:সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে । আমার থেকে বছর ছয়েকের বড় । লম্বা চওড়া আর মাথাভর্তি কোঁকড়ানো চুলের ছেলেটার মধ্যে কি খুঁজে পেলাম জানি না । তবে মায়াবী চেহারার ঐ ছেলেটাকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি সেটা নিশ্চিত ছিলাম । এর ফল হলো ভয়াবহ । শুভব্রতকে চোখে হারাতে শুরু করলাম । এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ভুলে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়লো । দাদুবাড়িতে থাকা সাতটি দিন সাত সেকেন্ডেই যেন শেষ হয়ে গেলো । সাতটি দিন শত চেষ্টা করেও আমি শুভব্রতকে জানাতে পারলাম না তাকে নিয়ে আমার শত শত কল্পনার কথা । তারপর আমার রেজাল্ট বের হলো । রেজাল্ট খুব ভালো না হলেও খারাপ হলো না । কলেজে ভর্তি হলাম । নতুন অনেক বন্ধু-বান্ধবী হলো।তাদের আড্ডায় শুভর কথা ভুলে থাকার চেষ্টা চালাতে থাকলাম । তবে এতে লাভের লাভ কিছুই হলো না । শুভকে আমার কোনোক্রমেই ভুলে থাকা সম্ভবপর হলো না । সারাক্ষণ মনে হতো এই বুঝি শুভব্রত মিষ্টি করে স্মিতা বলে আমাকে ডাকছে।

সময় এগিয়ে চললো । শুভর ততদিনে লেখাপড়া শেষ । দাদু বাড়িতে গেলে মাঝেমধ্যে দেখা হতো । কথা হয়নি কখনো । এর মধ্যে হুট করে দাদুর মনে হলো তিনি আর বাঁচবেন না । একমাত্র নাতনি হিসেবে আমাকে তিনি বেছে নিলেন তার ইচ্ছা পূরণ করতে । আমার বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলো । বাবা একের পর এক পাত্র দেখছেন । একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা! এত সবের মধ্যেও আমি বাবা বা দাদু কাউকেই আমার পছন্দের কথা মুখ ফুটে বলতে পারলাম না । মা হয়তো মেয়ের মুখ দেখে কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন । জানতে চাইলেন আমার পছন্দ অপছন্দের কথা । তবে জীবন সিনেমার মতো নয় । ভেবেছিলাম মা নিজের মেয়ের পছন্দকে মেনে নিবেন । কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না । শুভব্রতের কথা শুনে মা নাক সিঁটকালেন । বাধ্য হয়ে আমাকে দাদুর কাছেই যেতে হলো । আমি জানতাম বাবার কাছে কিছু বললে সেটা শেষপর্যন্ত দাদুর কাছে গিয়ে থামবে । তাই দাদুর কাছে যাওয়াই আমার সমীচীন মনে হলো । দাদীমা তখন বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে কাজটা আমার সহজ হতো । দাদীমা ছিলেন চতুর মহিলা । নাতনির ইচ্ছা-অনিচ্ছার একটা মূল্য ছিলো তার কাছে । আমার কাছে চিরকাল মনে হতো মানুষের জীবন উপন্যাস আর সিনেমার মতো হয় না । তবে যেদিন শুভব্রতের সাথে আমার বিয়ে হলো সেদিন মনে হলো জীবন সিনেমার মতো । সিনেমার মতো না হলেও কালো কালিতে লেখা উপন্যাসের মতো । তাই যদি না হতো তাহলে চিরকাল গোঁড়ামি আর কুসংস্কারে আগাগোড়া মোঁড়ানো প্রেম ভালোবাসার তীব্র বিরোধী আমার দাদু আমাকে কখনো শুভর হাতে তুলে দিতেন না । অথবা হতে পারে জীবন উপন্যাসের মতো নয় । হয়তো একতরফা ভালোবাসা আমার দাদুর কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত নয়।

আমার আর শুভর বিয়ের এত বছর পরও আমি মনোবিজ্ঞান নিয়ে ভাবি । আমার দাদুকে বুঝতে চেষ্টা করি যদিও দাদু আর এই অপূর্ব সুন্দর পৃথিবীতে নেই ।

লিখাঃ তাবাসসুম তালুকদার

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]