₪ ভুল [post no : 49]

ভাবি আপনার চুল তো অনেক সুন্দর।কথাটা বলা মাত্রই নাবিলার আনন্দ হবার কথা ছিল।মেয়েরা নিজের প্রশংসা অন্যের মুখে শুনতে ভালোবাসে কিন্তু নাবিলার মুখটা মলীন হয়ে গেল।নাবিলার পিছনেই দাড়িয়ে আছে জোবায়ের।
রনি হেসে জোবায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলছে কি ভাই বউয়ের প্রশংসা করছি বলে রাগ হচ্ছেন নাতো।
জোবায়ের কোন কথাই বলছেনা।
নাবিলা মাথা নিচু করে চলে গেল।
নাবিলা রান্না ঘরে রান্না করছে।জোবায়ের সিগারেট মুখে নিয়ে বলছে ছাদ এ কাপড় শুকাতে যাও নাকি চুল দেখাতে?
নাবিলা: মানে?
জোবায়ের সিগারেট মেঝেতে ফেলে চলে গেল।
সারাদিন জোবায়ের মুড অফ করে আছে।এরকম টা নতুন না।নাবিলার রূপের প্রশংসা যদি কোন ছেলে করে তাহলে এমন করেই থাকে।বিয়ের পর এমন অনেক ঘটেছে।নাবিলা জোবায়েরের মন রক্ষার জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখার ট্রাই করে কিন্তু তাও পারেনা।
এইতো কয়েক বছর আগে জোবায়েরের বন্ধু বলেছিল নীল শাড়িতে ভাবিকে বেশ মানায়।জোবায়ের রেগে সব নীল শাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
আজ চুলের প্রশংসা করেছে তাই বলে তো আর চুল পুড়িয়ে দিতে পারেনা।
জোবায়ের ভাত খেতে আসো,এই বলে দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে নাবিলা।
জোবায়ের: ভাত খাব না।
নাবিলা: ভাত না খাবার কি আছে?আমি যে কষ্ট করে রান্না করলাম।
জোবায়ের চেঁচিয়ে বলে বললাম তো খাবনা।
নাবিলা কাঁদতে কাঁদতে ড্রয়িং রুমে চলে গেল।
রাত ২:৪৫
জোবায়ের কেঁচি নিয়ে ঘুরছে।নাবিলা ঘুমিয়ে আছে।চাঁদের আলো ওর মুখে পরেছে।মেঘ কালো চুল নাবিলার মুখ প্রায় ঢেকে ফেলেছে।জোবায়ের মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নাবিলার দিকে।এই চাঁদ মুখ টা দেখে কেবল জোবায়ের ই মুগ্ধ হতে চায়।দুনিয়ার আড়াল এ রাখতে পারতাম যদি এই ভেবে জোবায়ের এর চোখ পানি ভর্তি হয়ে গেল।
কেঁচি নিয়ে নাবিলার চুল এর কাছে গিয়েও সরে এলো।এতো বড় বাজে কাজটা করা যায়না এই ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করছে।কিন্তু কারো কু নজর ওই চুলে যে আছে।ওই চুল দেখলেই তা মনে পরে যাবে আমার এই ভেবে রাগে মাথায় ঘাম জমেছে।হাত থেকে কেঁচি ছুড়ে মেঝেতে ফেলে জোবায়ের চলে গেল।
শব্দ শুনেই ঘুম ভেঙে গেল নাবিলার।রুমে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।আলো জ্বালিয়ে মেঝেতে তাকিয়ে দেখে কেঁচি পরে আছে।
নাবিলার বুঝতে আর বাকি নেই জোবায়ের ই এসেছিল অন্ধকারে।
কেঁচি হাতে নিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে নাবিলা।এ কেমন মানুষ জুটলো আমার কপালে!ভালোবাসার চিটে ফোঁটা অভাব নেই, কিন্তু ভালোবাসার চেয়েও সন্দেহ,হিংসায় ভরে গেছে মন।এভাবে একদিন হয়তো ও আমায় ই খুন করে ফেলবে।হয়তো মেরে ফেলে নিজেই পাগল হয়ে যাবে। এ থেকে মুক্তি হয়তো মিলবেনা কোন কালে।
হাতে কেঁচি নিয়ে নাবিলা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।চুল থাকবে যতদিন হয়তো জোবায়ের এভাবেই রাতের ঘুম হারাম করবে নিজের।নারীদের যে সৌন্দর্য তার স্বামীকে ঘুমোতে দেয়না সেই রূপ রেখে কি লাভ!এই ভেবে নাবিলা নিজের এক গোছা চুল হাতে নিল।
চুলগুলি হাতে নিয়ে কাঁদছে নাবিলা।কত সখের চুল ছিল।এমন কি জোবায়েরের ও খুব পছন্দের ছিল এই চুল।
সেবার যখন জোবায়ের প্রথম নাবিলাকে দেখতে গেল নাবিলা হালকা সবুজ শাড়ি আর চুল গুলি এক পাশে ছেড়ে দিয়ে জোবায়েরের সামনে এসেছিল।
আলাদা করে কথা বলতে যখন দিল জোবায়ের এর মাঝে এমন কোন মানুষিক সমস্যা নাবিলা খেয়াল করেনি।বেশ শান্ত একজন মানুষ। লজ্জায় নাবিলার দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারেনি।শুধু বলেছিল আপনার চুল গুলি কি আসল?
নাবিলা হেসে দিয়ে বলে আসল মানে?
জোবায়ের নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলে হুম নকল চুল হয় তো।
একবার কি হল জানেন?
আমার ছোট মামার জন্য মেয়ে ঠিক করা হল। মেয়ে অসম্ভব সুন্দরী। মামা একবার দেখেই প্রেমে পরে যায় তবে আমার মামার মাথায় চুল ছিলনা বললেই চলে।এখন ওই মেয়ে তো আর টাকু ছেলে কে বিয়ে করবেনা।তারপর বুদ্ধি করে নকল চুল লাগিয়ে গেলেন।বিয়েও সেই নকল চুলেই হয়েছিল।বাসর রাতে নাকি মামি তার মাথার চুল খুলে দিয়ে বলেছিল আমি আগেই জানতাম আপনে টাকু হা হা হা।
নাবিলা হাসলো না।মৃদ্যু স্বরে বললো মামার বাসর ঘরে কি হল তা আপনে কি করে জানলেন?
জোবায়ের চোখের চশমা খুলে বললো আরে মামা অনেক টা ফ্রি।আজ ও এসেছেন।ওই যে আমার বাম পাশের এক ভদ্রলোক বার বার মিষ্টি খাচ্ছিলেন উনি।
নাবিলা মাথার ঘোমটা সরিয়ে দিয়ে বললো দেখে নিন চুল আসল না নকল।
জোবায়ের ইতস্তত হয়ে চশমা চোখে দিয়ে বললো এ মা ছিঃ ছিঃ কি করছেন?আমি শুধুই মজা করলাম।
ভাবতে ভাবতেই কেঁচি হাতে নাবিলা ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।এক সময় আসল চুল গুলি আজ ভালোবাসায় ভাঙন ধরাচ্ছে।
নাকি এ ভালোবাসা শুরুতেই ফাটল ছিল!

ঘছ ঘছ করে চুল কেটে ফেললো নাবিলা।মনে হচ্ছে নিজের কলিজা নিজের হাতে কুচি কুচি করছে আর তার শব্দ নিজেই শুনছে।
জোবায়েরের প্রথম অস্বাভাবিক আচরণ নজরে পরে গায়ে হলুদ এর দিনে।
সবাই নাবিলার মুখে হলুদ মাখাচ্ছে।বন্ধুরা একে অন্যকে কাঁদা ছেটাচ্ছে।নাবিলা মুখ নিচু করে বসে আছে।হঠাৎ নাবিলার মামাতো বোন চেঁচিয়ে উঠলো কে কোথায় আছো এখানে ঘাপটি মেরে দুলাভাই বসে আছে।দেখে যাও সবাই।
নাবিলার বুকে ধক করে উঠলো।জোবায়ের নাতো!আর কাকেই বা দুলাভাই বলবে?কিন্তু ও আজ কেন আসবে?আজ তো গায়ে হলুদ?
নাবিলার বাবার মুখ মলীন হয়ে গেল।মেয়ের বাবারা বিয়ের আগে পাত্রকে আশা করেননা।কারন বিয়ের আগে পাত্র আগমনকে তারা ভাবে বিয়ে ভাঙার জন্য এসেছে।আর বিয়ের দিন পাত্রের দেরি সইতে পারেনা।তাও তাদের বুকে বিপদের আশংকা তৈরী করে দেয়।মেয়ের বাবা বলে কথা।
নাবিলার বাবা জোবায়েরের সামনে গিয়ে শান্ত চোখে বললো বাবা তুমি এখানে?সব ঠিক আছে তো?
জোবায়ের থতমত খেয়ে বললো আংকেল চিন্তা করবেন না।আসলে আমি এদিকে দেখতে এসেছিলাম যে সব ঠিক আছে কিনা,এরই মাঝে মামাতো বোন রুবি জোবায়েরের হাত ধরে টানতে টানতে নাবিলার সামনে নিয়ে আসলো,
আসলে দুলাভাই আপনি আপাকে দেখার জন্য এসেছেন তাইনা?
জোবায়ের মাথা নিচু করে আছে,রুবি হেসে বললো এই কে কই আছিস আয় হলুদ মাখা।
এই বলে জোবায়ের কে নাবিলার পাশে বসালো।
সবাই জোবায়ের কে হলুদ মাখায় ব্যস্ত।ঠিক তখন ই নাবিলার ফুপাত ভাই রবিন নাবিলার মুখে হলুদ মাখাতে যাবে এরই মাঝে জোবায়ের উঠে বললো ভাই আর হলুদ মাখাবেন না ওকে।ওর খারাপ লাগছে।
নাবিলা বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে বলে কই খারাপ লাগছেনা।
জোবায়ের: আহা তোমার চেহারা দেখেই বুঝা যায় খারাপ লাগছে তার চেয়ে ভাই আমায় দেন এই বলে রবিনের হাত টেনে নিজের গালে লাগালো।
নাবিলা চিন্তায় পরে গেল।ভেবে পাচ্ছেনা এরকম আচরণ এর কারন।
রবিন চলে যাওয়া মাত্রই জোবায়ের ফিস ফিস করে বললো পর পুরুষ দের থেকে নিজেদের দূরে রাখাই নারীদের কাজ।
নাবিলা রাগান্বিত হয়ে বললো ও আমার ভাই।
জোবায়ের অন্য দিকে তাকিয়ে বলে ভাই ,কিন্তু আপন তো নয় তাইনা?
চোখ বন্ধ করে সাথে যেন নিশ্বাস ও বন্ধ করেই ফেলেছিল।
নাবিলার খুব কষ্ট হচ্ছে।প্রিয় জিনিস বলি দেয়ার কষ্ট মনে হয় এমন ই।
সেদিন তো এই চুল ই জোবায়েরের প্রথম ভালো লাগার একটি ছিল।কি করে ভালো লাগার জিনিস খারাপ লাগায় পরিনত হয়।নাকি একদিন আমিও খারাপ লাগায় পরি অত হবো এই ভাবতে ভাবতে কান্না করতে লাগলো নাবিলা।

সকাল হতেই জোবায়ের সারাঘরে নাবিলাকে খুঁজছে। কোথাও না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে নাবিলা দাড়িয়ে আছে মাথায় কাপড় দিয়ে।
জোবায়ের: এখানে তুমি?নিজের বারান্দায় মাথায় কাপড় না দিলেও চলবে।
নাবিলা জোবায়েরের দিকে ফিরলো।
নাবিলার শুক্ন মুখ দেখে জোবায়ের থমকে গেল।মনে হয় কতকাল না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে মেয়েটা।
জোবায়ের: এই কি হয়েছে?
নাবিলা মাথার কাপড় সরিয়ে দিল।কোমড় সমান চুলগুলি আজ ঘাড়ের কাছে এসে বিদ্রুপ করছে।
জোবায়ের: এই কি করেছো তুমি?
নাবিলা: তুমি তো কাল রাতে এটাই চেয়েছিলে তাইনা?আর কেউ চুল সুন্দর বলবেনা খুশি তুমি?
জোবায়ের চুপ করে আছে।চশমার ফ্রেমকে ঘৃনার ধোঁয়া ঝাপ্সা করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত

নাবিলা চুপ করে চলে গেল।খুব স্বাভাবিক ভাবে রান্নাঘরে কাজ করতে লাগলো।বাসায় একদম নিরবতা।জোবায়ের রান্না ঘরের বাইরে দাড়িয়ে নাবিলাকে দেখছে।
জোবায়ের: আমায় ক্ষমা করে দেও নাবিলা।
নাবিলা চুপ হয়ে আছে।কিছুক্ষণ বাদে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল জোবায়েরের হাতে।
চলে যেতে নিবে ঠিক এমন সময় ই জোবায়ের হাত ধরলো নাবিলার।
নাবিলা মাথা নিচু করে বলে ছাড়ো
জোবায়ের: না আগে কথা বলো
নাবিলা চুপ হয়ে আছে
জোবায়ের: আমি এমন কেন বলতে পারো?আমার ভিতরে হারানো ভয় কাজ করে খুব
নাবিলা হেসে দিল
জোবায়ের: হাসছো?
নাবিলা: প্রায় ১বছরের সংসার জীবনে আমি আমার পুরো স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছি।এখন কেবল বাকি আছে মরে যাওয়া। যেই মেয়ে একসময় লেখা পড়ায় ভালো ছিল যার ইচ্ছে ছিল চাকরি করা সে এখন করেনা।শুধু এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য
জোবায়ের: এগুলো তো ভালোবাসা নাবিলা
নাবিলা: কোনটাকে ভালোবাসা বলে?রাতে ওয়াশ রুমে গেলেও দরজার বাইরে কান পেতে শুনা যে আমি কারো সাথে ফোনে কথা বলি কিনা?নাকি আমার ফোনে আননোন নম্বর থেকে কল আসলে আমায় সন্দেহ করা?বলো? আমি অনেক টা ঘর বন্ধি হয়েই আছি।ঠিক বন্ধী পাখির মতন।মাঝে মাঝে মরতে খুব ইচ্ছে হয় জানো।
জোবায়ের: থামো প্লিস।যাও আমি আর কিছু করবোনা।তুমি যা বলবা তাই করবো
নাবিলা: তাই করবে?
জোবায়ের: হুম।
নাবিলা: আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবা?
জোবায়ের এর মলীন মুখ যেন ক্রমাগত ভাবে লাল হয়ে গেল।মাথার এক পাশটায় ঘাম টপ টপ করে পরছে।
তুমি কি আমায় পাগল ভাবছো?
নাবিলা: মোটেও তাই নয়।তুমি কিঞ্চিৎ অসুস্থ।তাই ডাক্তার এর কাছে যাওয়া উচিৎ
জোবায়ের হাত থেকে চায়ের কাপ মেঝেতে ছুড়ে ফেলে চলে গেল.
এভাবে রাগ করেছিল বিয়ের প্রথম দিন ই।গায়ে হলুদের রাতের পর নাবিলার মনে অজানা ভয় বাসা বাঁধে।জোবায়ের এর বিহেভিয়ার একেবারেই ভালো লাগছেনা।
নাবিলা বিছানায় শুয়ে আছে।গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত ১১টা বেজে গেছে।নাবিলার বিয়ের দিনের কথা ভাবা উচিৎ ছিল।কিন্তু বার বার ভাবছে জোবায়ের কেন এলো আজ।
নাবিলার বাবা মেয়ের রুমে এলেন।মাথার কাছে বসে মাথায় হাত দিয়ে বললেন ঘুমিয়েছিস মা?
নাবিলা: না বাবা
মা রে কাল তো তুই চলে যাবি। একে একে সবাই আমারে ছেড়ে চলে যায়। তোর মায়ের কি উচিৎ ছিল এতো জলদি আমারে মুক্তি দেয়া?মহিলা চিরকাল নিজের কথাই ভাবলেন।আমার কথা তার ভাবার আর সময় কই?
নাবিলা: বাবা তুমি এমন ভাবে বলছো যেন মা বেড়াতে গেছে।মায়ের কি ইচ্ছে হয়েছিল মরে যেতে? সেবার হাসপাতালে যেদিন মাকে শেষ দেখা সেদিন মা আমায় কি বলেছিল জানো বাবা?
-কি?
নাবিলা: বলেছিল আমি আল্লাহর কাছে যা চাইছি সব ই পেয়েছি।চেয়েছিলাম আমার স্বামী আমার সন্তান এর আগে যেন আমার মরণ হয় দেখ আমি যাচ্ছি,
নাবিলার বাবা তার চোখে পানির উপস্থিতি টের পাচ্ছেন।
নাবিলা বাবার বুকের উপর মাথা রেখে বললো বাবা আমিও চাই আল্লাহ যেন তোমার আগে আমায় নেয়
বাবা নাবিলাকে শক্ত করে ধরে বললো তোরা মা মেয়ে মিলে কেন আমায় শাস্তি দিতে চাস?আজ এসব কথা না।তুই বল তোর মনে আক্ষেপ নেই তো যে মা থাকলে হয়তো এটা হতো যেটা আমি করিনি?
নাবিলা: হুম আছে তো
কি বল?
নাবিলা: জোবায়ের এমন হুট করে এসে পরলো তুমি কিছুই বললেনা?আমার ওর কিছুই ভালো লাগছেনা বাবা
-আরে বোকা মেয়ে জামাই বাবা একদম আমার মতন।তোর মাকে যেদিন বিয়ে করলাম তোর নানা বললেন যেদিন তুলে নিতে পারবো সেদিন ই মেয়েকে তুমি দেখবে।
কিন্তু আমার মাইনে তখন কম ছিল।মসজিদ এ বিয়ে করে এসেছি।তুলে নেয়া সম্ভব ছিলনা।আমার তো তোর মাকে দেখতে খুব মন চাইতেছে।কি করলাম জানিস ভিক্ষুক সেজে তোর নানা বাড়ি ভিক্ষা করতে গেলাম।
কি মসিবত! ভিক্ষা দিতে আসলো তোর নানী। তোর মা কোন চুলোয় ছিল কে জানে?
আমি তোর নানুরে জিজ্ঞেস করলাম আম্মা বাড়িত কেউ নাই?
সে হেসে বলে আছে আমার মেয়ে আর মেয়ে জামাই।
আমি ভাবলাম জামাই দেখি ভিক্ষুক এখন তাইলে কোন জামাই?
আমি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম জামাই?
সে হেসে বলে এই যে ভিক্ষুক জামাই।আমি মেয়ের মা।পাত্র দেখার সময় কিঞ্চিৎ ফাঁক ফোকর রাখিনি।তুমি যে সাজেই আসো না কেন আমি খুব চিনতে পারবো এই বলে সে কি হাসি।
কি যে লজ্জায় পরেছিলাম হো হো হো
নাবিলা তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।এই ঘটনা হাজার বার শুনেছে ওর বাবার কাছে।তাও বাবা কোন আড্ডা দিতে বসলেই এই কথা বলবেই।হয়তো খুব আনন্দ পায়।এই কথা বলার সময় ই বাবাকে প্রান খুলে হাসতে দেখে নাবিলা।
বাবার এ হাসি মলীন করতে চায়নি তাই আর জোবায়েরের কথা উঠায়নি।

বিয়ের রাত নাবিলা বাসর ঘরে বসে আছে।একে একে সবাই নতুন বউকে দেখতে আসছে।
সবাই একে একে যাবার পর জোবায়ের রুমে ঢুকলো।নাবিলার পাশে বসে একবার বিছানার চাদর টেনে টুনে ঠিক করছে।আবার উঠে পানি খাচ্ছে।কিছুক্ষন পর পর চোখের চশমা খুলছে আবার চোখের চশমা পরছে।
নাবিলা: আপনার কি অসুস্থ লাগছে?
জোবায়ের: কই না আমায় দেখে অসুস্থ লাগছে?
নাবিলা: না তা নয়।
জোবায়ের:কাল রাতে কল দিলাম কতবার রিসিভ করলেনা কেন?
নাবিলা: ঘুমিয়ে পরেছিলাম
জোবায়ের: সকালে দেখো নি?
নাবিলা: হুম কিন্তু ব্যস্ত ছিলাম
জোবায়ের: কি করতে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে?
নাবিলা: মানে?
জোবায়ের: কিছুনা।
এরই মাঝে দরজায় কড়া নেড়ে কেউ চেঁচিয়ে বললো শালাবাবু দরজা এতো জলদি দিয়ে দিলে হবে?বউ রে আমাদের দেখাবানা?
জোবায়ের চুপ করে আছে
নাবিলা: দরজা টা খুলুন গিয়ে
জোবায়ের: শুনো উনি আমার কাজিন এর বর।শিমুল।ব্যাটা লুজ।
নাবিলা: লুজ মানে?
জোবায়ের: লুজ মানে চরিত্র ভালো না।ভেবে কথা বলবা।
নাবিলা: চরিত্রহীন দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তো জানা নেই
জোবায়ের: আহা এভয়েড করবা
দরজা খুলতেই এক বয়স্ক লোক হাসতে হাসতে নাবিলার পাশে এসে বসলো।বয়স একদম নাবিলার বাবার বয়সী।
এই মেয়ে আমি কিন্তু দুলাভাই হই তোমার
নাবিলা উঠে সালাম দিল।
মনে মনে ভাবছে এই বয়স্ক লোকের সম্পর্কে জোবায়ের কি না বললো
নাবিলা: জ্বি দুলাভাই জানি
জোবায়ের খাট এর পাশে দাড়িয়ে আছে
শিমুল: তো শালা বাবু বউ তো মাশাআল্লাহ পরী। আমি তো প্রেমেই পরে গেলাম হা হা হা।বউরে সাবধানে রাইখো পালায়া যাইতে পারি
জোবায়ের: দুলাভাই আপনার বয়স কি দিন দিন কমতেছে?কয়দিন পর মেয়ে বিয়ে দিবেন আর এখন এসব লো ক্লাস রসিকতা
শিমুল: নতুন বউ তুমি ই বলো আমার বয়স কি বেশি?বিয়া করলে করতে পারিনা?
নাবিলা: হুম
জোবায়ের: দুলাভাই যান গিয়ে ঘুমান।ক্লান্ত আপনে।
শিমুল হাসতে হাসতে বললো বুঝা শেষ। গেলাম, এখন তো তোমাদের সময়।এই বলে রুম থেকে চলে গেল
নাবিলা: এসব বলার কি দরকার ছিল?
জোবায়ের: তোমার ও বা এতো ঘেঁষাঘেষির কারন কি?
নাবিলা: মানে! কি সব ভাষা ইউজ করছেন?
এই বলে পাশে টেবিল এ রাখা দুধের গ্লাস এর দিকে চোখ পরলো নাবিলার।বার বার তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে জোবায়ের আসলেই ওকে দিতে।
গ্লাস হাতে নিয়ে জোবায়েরের কাছে তুলে ধরে বলে ওনাকে যেতে না বললেও যেত কি ভাবলো বলুন?
জোবায়ের: আচ্ছা তোমার তার সাথে থাকতে ভালো লাগছে?তাহলে বলো আমি রুম থেকে বের হয়ে তাকে পাঠিয়ে দেই।
নাবিলা থ হয়ে দাড়িয়ে আছে।নাবিলার হাত থেকে দুধের গ্লাস নিজের হাতে নিয়ে জোবায়ের মেঝেতে ফেলে দিল।
ভাঙা গ্লাস দেখে কাঁদতে কাঁদতেই পার করেছিল ফুলসজ্জার রাত।
এমন হয়তো কোন মেয়ের জীবনেই হয়নি।

চায়ের কাপের ভাঙা টুকরো গুলি তুলতে তুলতে নাবিলা ভাবলো সেদিন রাস্তার পাশে একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট এর নাম সাইনবোর্ড এ দেখতে পেয়েছিল।
সাইনবোর্ড এ বড় বড় করে লেখা ছিল মনের অজানা রোগ এখানেই উপড়ে ফেলা হয়।লেখা টা হাস্যকর লাগলেও নাবিলা, তার কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
জোবায়ের অফিস যাওয়ার সাথে সাথেই নাবিলা বেরিয়ে পরলো।সাইনবোর্ড দেখে নেমে পরলো রাস্তায়।সরু গল্লির সামনে সাইনবোর্ড। ভিতরে যাবার কথা বলা হয়েছে।
কিছুদূর গিয়েই একটি পুরানো বিল্ডিং দেখা গেল।সেখানেও একই সাইনবোর্ড। একজন মধ্যবয়স্ক লোক দেখা গেল দোতলার বারান্দায় লুঙি পরে দাড়িয়ে ব্রাশ করছেন।
নাবিলা: আচ্ছা রেজাউল সাহেবের চেম্বার কি এখানে?
লোকটি চোখ বড় বড় করে সেকেন্ড খানেক তাকিয়ে বলে হুম।মনে রোগ বেধে থাকলে উপরে চলে আসুন এই বলে বারান্দা থেকে লোকটি ভিতরে চলে গেল।
নাবিলার তার ব্যবহার পাগলের মতন ই লাগলো।হয়তো উনিও রুগী। ৪০%মাথা ঠিক আছে তাই হয়তো পাগলা গারদ এ যায়নি আরকি এই ভেবে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল.

দোতলায় গিয়ে দেখতে পেল দরজা খোলা নাবিলা বাইরে দাড়িয়ে কাশির ভঙ্গি করে বলছে ভিতরে কেউ আছেন?
ভিতর থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো আসুন আসুন।
নাবিলা ভিতরে গিয়ে বসলো।আশে পাশে তাকাতেই রুম এর ভিতর থেকে সেই লোক বের হলো শুধু লুঙী পরিবর্তন করে পাজামা পরে এসেছেন।
নাবিলা: রেজাউল সাহেব কে ডেকে দেয়া যাবে?
লোকটা হু বলে নাবিলার সামনা সামনি বসলো।
নাবিলা ভয় পাচ্ছে লোকটার কার্য কলাপ ভালো লাগছেনা।
নাবিলা ভারি গলায় বললো কি রেজাউল সাহেব নেই?
লোকটি ভ্রু বাঁকিয়ে বলছে আপনি কি তার চেহারা চিনেন?
নাবিলা: না
তাহলে কিভাবে বুঝলেন যে আমি রেজাউল নই?আমি ই রেজাউল।এখন বলুন এই রোগে কবে থেকে ভুগছেন?
নাবিলা: কিসের রোগ?
রেজাউল: আহা এই যে মানুষ কে নিজের কল্পনা দিয়ে ভাবা।এই যেমন আপনি ভেবেছেন রেজাউল সাহেব হয়তো গোঁফ,দাড়ি ওয়ালা নিতান্তই ভুড়ি বিশিষ্ট মানুষ হবে।এটাও এক প্রকার রোগ।আমাদের প্রতিটি মানুষ এর ই কিছু উদ্ভট মানুষিক রোগ থাকে।এই যেমন কয়েক মাস আগের এক রোগীর কথাই বলি।রোগী প্রেমে পরেছে এক রিকশাচালক এর।প্রেম এর কারন হলো সে দেখতে কিছুটা সালমান খানের মতন।তার সেই নায়ক খুব পছন্দ।এখন তার মাথার ভিতর কাজ করছে ওকে বিয়ে করলেই সালমান কে বিয়ে করা হবে।কি মজার বেপার না তাইনা হা হা হা
তারপর তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম ধরুন সেই রিকশাচালক সালমান ভাই একদিন ট্রাক এর তলায় চাপা পরে তার মুখের বিকৃতি ঘটেছে।তখন তাকে সালমান তো ভালো তার কংকাল এর মতন ও লাগছেনা তখনো কি আপনার ভালোবাসা থাকবে?
মেয়ে উঠে বলে না।
বললাম ভালোবাসা আর ভালোলাগা এক না।ভালোলাগা দিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায়না। সে সালমান খানের মতন আপনার বডি গার্ড হতে পারবেনা দেখবেন দু একমাস পর অভাবে ভালোলাগাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
সেই রোগী সেদিন আসছিলো আমার সাথে দেখা করতে।আমাকে ধন্যবাদ দিতে।কিন্তু আমি জানি ও আবার কারো প্রেমে পরবে আর সেটা ভুল মানুষ এর ই।কারন এই টাইপ এর মানুষ ভুল বার বার করে।
নাবিলা লোকটির দিকে নজরহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।একে দেখে একদম ই পাগল মনে হচ্ছে।হয়তো এসব রোগীর সাথে ওঠা বসা করতে করতে এমন হয়েছে?
রেজাউল সাহেব এর মাঝেই উঠে বললো ভয় পাবেন না আমি পাগল নই।এখন বলুন চা না কফি?
নাবিলা থতমত খেয়ে ভাবছে এ মা উনি মন ও পড়তে জানেন নাকি?আমি যা ভাবছি তাই ই বলে দিল।
চা খাবনা ধন্যবাদ।
রেজাউল: আমি খাব কিন্তু একা একা তো খাওয়া যায়না দু কাপ ই আনতে বললাম বলে শমির এদিকে চা দিস দুটা
নাবিলা: আন্টি থাকেন না?
রেজাউল: না তার সাথে ছেপারেট এ আছি।সে তার সন্তান এর সাথে ইউ.কে তে থাকে।
নাবিলা: ছেপারেট?
রেজাউল: হুম বিয়ের ২৭বছর পর মনে হল আমার মাথায় প্রব্লেম আছে তাই ছেড়ে গেছে হা হা হা
লোকটার কথায় কথায় হাসিটা কেমন যেন সাধারণ নয়।মনে হচ্ছে জোর করে হাসছে ভাবতে ভাবতে নাবিলা বললো স্যার আমি খুব জটিল প্রব্লেম নিয়ে এসেছি।প্লিস আমায় পথ দেখান
রেজাউল: ভাববেন না I will try to my best. আমি সব কিছুই আমার বেস্ট ট্রাই করি যেমন এই যে আমি হাসি তাও আমার সব স্বত্বা দিয়ে।হার্ট ব্লকড ডাক্তার বলেছে দেহ থেকে প্রান যাওয়ার আগ অবধি ঠোঁটের কোন থেকে হাসি সরানো যাবেনা তাই হাসি সব কথায় হা হা হা।
ধরুন আমি এখন ই কথা বলতে বলতে মারা গেলাম।হাসি অবস্থায় ই মারা গেলাম।বাই চাঞ্জ আমার মৃত্যুর যন্ত্রনায় হাসি ধরে রাখতে পারলাম না।তখন ও কিছু মানুষ আমার মলীন মুখ দেখেই বলবে লোকটা অনেক কষ্টে মারা গেছে।কেউ কেউ বলবে লোকটা পাপি ছিলেন।এই যে আমরা মানুষ এর বাহ্যিক দেখে ভিতরের মানুষটাকে ব্যখা দেই তাও এক ধরনের রোগ।বলতে গেলে আমরা জন্ম থেকেই সবাই রোগী।যাক আমার কথায় বিরক্ত হবেন না।সারাদিন কথা বলার মানুষ আপনারাই।কথা বলার ফাঁকেই আমায় হাসি খুঁজে নিতে হবে।এখন বলুন আপনার কি রোগ?
নাবিলা: আমার নয় আমার স্বামীর
রেজাউল: তাহলে আপনি কেন এসেছেন?আমাকে রোগীর রোগ টা আইডেন্টিফাই করতে হবে তার জন্য আমার রোগীকে দরকার।
নাবিলা মুখ মলীন করে বললো রোগীর রোগটাই তো আমি।
রেজাউল সাহেব চা মুখে নিয়ে বললেন আপনি রোগ?বাহ ইন্টারেস্টিং তো।আমার কেরিয়ার এ এই প্রথম রোগী না এসে রোগ পাঠিয়ে দিয়েছেন।
নাবিলা চুপ হয়ে আছে।
রেজাউল: তা বলুন কি ধরনের উপদ্রব আপনি সৃষ্টি করেন?
নাবিলা: স্যার আমি আসলেই মজা করছিনা।হয়তো আপনি আমায় ই পাগল ভাবছেন তবে তা নয়।আমার বর হলো রোগী আর সে স্বীকার করতে চায়না যে সে অসুস্থ।তাই সে আসবেওনা কখনো। প্লিস হেল্প মি স্যার।
মেয়েটির বোরকার আড়াল থেকে কেবল চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে। আর তা কথা বলতে বলতে পানিপূর্ন হয়ে যাচ্ছে। রেজাউল তা ভালো করে লক্ষ করছেন
রেজাউল: আচ্ছা বুঝলাম।তা বলুন তার ভিতর কি সিমটম দেখতে পান?সে কি টর্চার করে?
নাবিলা: হুম মানুষিক। সে আমায় সন্দেহ করে।অকারনে সন্দেহ করে
রেজাউল: তা প্রথম কবে নাগাত লক্ষ করলেন?
নাবিলা: বিয়ের আগের দিন থেকেই।আমার কাজিনদের সাথে মিশতে দেয়না।একবার আমার নীল শাড়ির প্রশংসা করায় সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।আমি বিয়ের পর থেকেই বোরকা পরেই বের হই।তারপরের বাসায় থাকা অবস্থায় আমি একা কোন রুমে থাকতে পারিনা তাহলেই সে আমার উপর গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকবে মনে হয় আমি কোন অপরাধ করেছি।এছাড়া ও আমার বেড এর পাশের জানালার পর্দাও আমি দিনে খোলা রাখতে পারিনা।
রেজাউল: তিনি কি কখনো আপনার গায়ে হাত তুলে?
নাবিলা: না তবে তার সন্দেহ করা তার মুখেই ফুটে উঠে। খানিকের ভিতর ই রুড হয়ে যায়। এরপর আমাকে এভয়েড করতে থাকে। নরমাল হতে খুব সময় নেয়।
রেজাউল: এগুলো হয় আসলে দুটি কারনে।এক পরিবেশ এর খারাপ বেপার গুলি তাকে খুব আকর্ষন করে আর না হয় সে হারানোর ভয় থেকে এসব করছে।
নাবিলা: এমন চলতে থাকলে হয়তো একদিন আমার ই মরে যেতে হবে।সেবার মরতে চেয়েছিলাম জানেন?
রেজাউল: মৃত্যু সমাধান হলে ডাক্তার রা ওষুধ দেয়ার পরিবর্তে বিষ দিত।
নাবিলা: বাবা আমার বিয়ের তিন মাসের মাথায় ই মারা যায়। আমি তার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি যাই। একমাত্র মেয়ে আমি আমাকে আমার বাবার মৃত্যুর দু দিনের মাথায় ই ও নিয়ে আসে।আমি তখন খুব আপসেট হয়েছিলাম।বাবা চলে যাবার পর মাথার উপর ভরসার হাত ই চলে গেল।তার উপর আমার বর্তমান আস্থার জায়গা আমার বর হলেও আমি সেটা নিরাপদ মনে করিনি।তাই মৃত্যুর চেষ্টা করেছি।তবে সেদিন বেচে গিয়েছিলাম।তার পর ও কিছুদিন স্বাভাবিক ছিল।আবার কয়েকদিন পর আগের মতন ই করতে লাগলো।
আমার মনে হয় কি জানেন?ও ঠিক হয়ে যাবে তবে আমি মরার পর।

রেজাউল সিগারেট হাতে নিয়ে বললো সিগারেট এ প্রব্লেম নেই তো?
নাবিলা: না ঠিক আছে।তবে এসব ভালো না আপনার শরীরের জন্য।
আর শরীর এই বলে রেজাউল সাহেব উঠে দাড়ালেন।সিগারেট এর ধোঁয়ায় যেন ভিতরের চাপা দীর্ঘনিশ্বাস উড়িয়ে দিচ্ছেন।
একটা ঘটনা বলি তোমায়।তুমি বললাম। তুমি আমার মেয়ের বয়সী ই হবা।শোন আমি আগে প্রচুর সিগারেট খেতাম।তোমার আন্টির একদম ই পছন্দ ছিলনা এটা। প্রথম প্রথম কসম দিত।আমি দু একদিন খুব কষ্ট করে থাকতাম।যেই চিন্তা ভর করতো ওমনেই কসম ভুলে গিয়ে দু একটা টান দিয়ে ফেলতাম।পরে যদিওবা অনুতপ্ত হতাম।বাসায় আসার আগে চকলেট খেয়ে আসতাম আবার গায়ে পারফিউম দিয়ে আসতাম।তোমার আন্টির ঘ্রান শক্তি ছিল বেশ প্রখর।সে বুঝে ফেলতো।
ধীরে ধীরে ও আমাকে বকা ঝকা কমিয়ে দিল।ভাবলাম ও হয়তো এসবের সাথে মানিয়ে নিয়েছে।ভালোবাসার মানুষ এর প্রতি মায়া যে খুব খারাপ জিনিস তা তার বাজে দিকের প্রতিও অন্ধ করে ফেলে।আমি আবার আগের মতন সিগারেট এ মগ্ন হতে লাগলাম।
সেবার আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হলেন।একদিন বাসায় এসে দেখি তোমার আন্টি ছোপায় বসে পায়ের উপর পা তুলে স্মোক করছে।
আমি পুরাই স্থির হয়ে গিয়েছিলাম।ভাবলা
ম অসৎ সংঘে সর্বনাস হয়েছে।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম এমন করছো কেন?আমাদের সন্তানের ক্ষতি হবে তো
ও আমায় বললো সন্তানের ভালো রাখার দায়িত্ব কি কেবল আমার।তাছাড়া আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।আমার সিগারেট এর ঘ্রান খুব ভালো লাগে বিলিভ মি
আমি তারপর আমার সন্তানের কথা ভেবে ছাড়তে বাধ্য হলাম
বাচ্চা হবার পর তোমার আন্টি কি বলে জানো?
সেদিন নাকি অভিনয় করেছিল।ওটা নাকি আমায় নেশা ছাড়ানোর টোপ ছিল হা হা হা
এখন এটা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি কিছু রোগ সারাতে গেলে টোপ ফেলতে হয়।বিষে বিষে বিষোক্ষয় তেমন ই।
নাবিলা: এখন স্মোক। কেন করেন?আন্টির সেদিন বলা উচিৎ হয়নি সত্যটা
রেজাউল: না স্মোক করি হার্ট ব্লক হবার পর।স্মোক ছেড়ে দিলাম তাও অসুস্থ হলাম তাই রাগ করে।আর তোমার আন্টিও নাই।নাক না থাকলে সর্দির আর কিসের ভয় হা হা হা
নাবিলা ভাবছে লোকটা আসলেই খুব রসিক এবং রহস্যময় তার সাথে কথা বলে অনেক কিছুই শিখা যায়।
এরই মাঝে রেজাউল উঠে বললো আমার স্ত্রীর দাবি আমি একদম ই বেরসিক একজন মানুষ
নাবিলা থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল।কি করে বুঝে ফেলে মনের কথা!
এরই মাঝে ঘরির কাটার দিকে চোখ পরতেই নাবিলার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে প্রায়।১১টা বেজে গেল জোবায়ের কিছুক্ষণ বাদেই বাসায় আসবে।এই ভেবে উঠে দাড়ালো।
রেজাউল: কই যাচ্ছো?
নাবিলা: আমার এখন ই বাসায় যেতে হবে
রেজাউল: আমার যে আরো কিছুসময় লাগতো
নাবিলা: আরেকদিন আসবো স্যার এই বলে যেতে নিল।এরই মাঝে রেজাউল ডাক দিয়ে বললেন আমার কার্ড টা রাখো।ফোন নম্বর আছে।আসতে না পারলে কল দিও।
নাবিলা: আচ্ছা স্যার
নাবিলা তরিঘড়ি করে হেটে চলছে।রিকশা গাড়ি কিছুই নেই এ সময়।বোরকার ভিতর থেকে মাথার ঘাম টপ টপ করে গড়িয়ে পরছে।কি বলবে জোবায়ের জিজ্ঞেস করলে!এই ভাবতে ভাবতেই সামনে থামিয়ে থাকা অটোর সাথে ধাক্কা খেল।
১১:২০ বাসার সামনে গিয়ে নাবিলার বুকের ঢিপঢিপানি বেড়ে যাচ্ছে ক্রমানয়ে।
বাসার সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা।
পা টিপ টিপ করে যেতেই দেখছে মেঝেতে সব জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা।মনে হচ্ছে ঘরের উপর দিয়ে যেন ঘূর্নিঝড় বয়ে গেছে।
নাবিলা ঘরে ঢুকলো এরই মাঝে জোবায়ের ভিতর থেকে এসে নাবিলার সামনে এসে দাড়ালো।
নাবিলা বার বার কেঁপে উঠছে।জোবায়েরের চোখের দিকে তাকাতে চোখ টা কেমন রক্ত জমাট বেধে আছে।মনে হচ্ছে মানুষ খেয়ে ফেলতে পারে এক নিমিষেইই
নাবিলা মাথা নিচু করে কাঁদছে। হয়তো আজ জোবায়ের রাগের মাথায় খুন ই করে ফেলবে।হয়তো আজ ই শেষ দিন।আচ্ছা আমার মা বাবার সাথে কি দেখা হবে?একবার যদি হতো এই ভাবতে ভাবতে নাবিলার হাত পা শিতল হয়ে আসছে।।
এমন হাত পা শিতল হয়েছিল দুবার।সেবার মা মারা গেল চোখের সামনেই।হাত পা কেমন অবশ হয়ে গিয়েছিল।
আর বাবা মারা যাবার সপ্তাহ খানেক আগ থেকেই হাত পা কেমন বরফ হয়ে যেত। হয়তো বিপদের আভাস।
জোবায়ের কিছু বলছেনা।রাগী চোখে এক দৃষ্টিতে এইদিকেই তাকিয়ে আছে।

কই গিয়েছিলে?
কথাটা এমন ভাবে জোবায়ের বললো যেন দেয়াল কম্পিত হয়ে সারাঘর কেঁপে উঠলো
নাবিলা নিজের অজান্তেই কাঁপছে।
জোবায়ের আবার জিজ্ঞেস করলো কই গিয়েছিলে?
নাবিলা কাঁপা ভয়েস এ বললো খালার বাসায়।
জোবায়ের চেঁচিয়ে বললো একদম মিথ্যে বলবানা।আমি তাকে কল দিয়েছি।পাখা গজিয়েছে তোমার?
নাবিলা: আমি তো বোরকা পরেই গিয়েছি?
কথা বলা শেষ না করতেই জোবায়ের নাবিলার গালে চর বসিয়ে দিল।
নাবিলা মাথা নিচু করে কাঁদছে আর জোবায়ের ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
রাস্তার মোড়েই চায়ের দোকানে বসলো জোবায়ের।মামা কড়া লিকার দিয়ে চা দেও।এই বলে বসে আছে।
এই প্রথম নাবিলার গায়ে হাত তুললাম?আমি কি পশু হয়ে যাচ্ছি দিন কে দিন?হলে হলাম।পুরুষ মানুষ এর মেচি বিড়াল হলে চলে না।বউর কাছে দূর্বলতা দেখালে সে পার পায়।
আচ্ছা ও যদি আমায় ছেড়ে দেয়?এই ভেবে জোবায়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো।গরম চা এক চুমুকে মুখে নিয়ে ভাবছে,যেতে চাইলেই দিব নাকি?ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো।
চায়ের দোকানদার এরই মাঝে বলে উঠলো মামা সিগারেট দিব?
জোবায়ের: না।
মামা খবর হুনছেন?
জোবায়ের: কি?
ওই যে সামনের বাসা ওই বাসার ম্যাচে একটা মাইয়া গলায় দড়ি দিছে কাল।
জোবায়ের কথাটা শুনেই যেন বুকটার ভিতর থেকে পাজর বের হবার উপক্রম।
বার বার নাবিলার মলীন মুখ টা ভেসে আসছে।ও আবার কোন ভুল করে বসবেনাতো এই ভেবে চায়ের কাপ রেখে দৌড়ে বাসায় চলে গেল।
বাসায় যেতেই মেঝেতে একটা কার্ড পরা দেখে,উঠালো জোবায়ের।
কার্ডে রেজাউল সাহেব এর ঠিকানা। তার মানে নাবিলা আমার জন্যই ডাক্তার খুঁজতে গিয়েছিল!
দৌড়ে ভিতরের রুমে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা।জোবায়ের মাথায় হাত দিয়ে চুল টানছে।কি করে এত বড় ভুল ও করলো।
নাবিলা,এই নাবিলা দরজা খুলো।জান মাফ করে দেও।যাও আর করবোনা এমন।
এই নাবিলা কান ধরেছি আমি।দরজা খুলে দেখো আমি কান ধরেছি।তুমি ও আমায় দরকার পরলে চর মারো।
নাবিলা এই কথা শুনছো?
দরজা অনবরত ধাক্কাছে জোবায়ের।নাবিলার কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। ভয়ে জোবায়ের নিজের ভিতর সেদিয়ে যাচ্ছে।
চিন্তা করলো দরজা ভেঙেই ফেলবে।কিন্তু ওপাশের ভয়াবহ রূপ দেখার মতন সাহস যে জোবায়েরের বুকে নেই।
নাবিলা দরজা না খুললে ভেঙে ফেলবো কিন্তু কথাটা বলা মাত্রই নাবিলা দরজা খুলে দিল।
সারাঘর অন্ধকার করে রেখেছে মেয়েটা।অন্যপাশ ফিরতেই জোবায়ের নাবিলাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্লিস আমায় ক্ষমা করে দেও।তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?
নাবিলা কথা বলছেনা
জোবায়ের: তুমি এখনো বোরকা খুলনি কেন?
নাবিলা কোন উত্তর ই দিচ্ছেনা।
জোবায়ের জানালার পর্দা সরাতে যাবে ঠিক তখন ই নাবিলা জোবায়েরের হাত চেপে ধরে বললো এই না।একদম না।পর্দার ওপাশ টায় কেউ আছে।
জোবায়ের: কে আছে?ওপাশে তো খালি জায়গা।
নাবিলা: না না ওপাশ থেকে আমাকে দেখতে চায় লুকিয়ে লুকিয়ে।বদ নজর লোকটার।
জোবায়ের: এই নাবিলা কি বলছো তুমি?বোরকা খুলে ফেলো গরম অনেক।ঘামিয়ে গিয়েছে?
নাবিলা আতংকিত হয়ে বলছে এই না না।
চাপা গলায় স্থীর স্বরে বলছে ওরা আমার শরীর এর দিকে তাকিয়ে থাকে। কি লোভী চোখ ওদের!
জোবায়ের: কারা।
নাবিলা খিক খিক করে হেসে বলছে তুমি জানোনা।ওরা আমাদের বাসার চারদিকে লুকিয়ে থাকে।আমার চুল দেখে।আমার চেহারা দেখে।
জোবায়েরের কাছে নাবিলার ব্যবহার মোটেও সুবিধার লাগছেনা।কেমন অদ্ভুত আচরণ যা আগে কখনো করেনি।ও কি মানুষিক ভাবে ভেঙে পরেছে?
জোবায়ের ভাবতে ভাবতে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।
নাবিলার হাত ধরে বলছে এই তুমি বিছানায় আসো তোমার ঘুম দরকার।
নাবিলা জোবায়েরের হাত থেকে নিজের হাত ছারিয়ে নিয়ে বললো,না ওই লোক খাটের তলায়
জোবায়ের খাটের নিচে তাকিয়ে বলে এই দেখো কেউ নেই।তুমি আসো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নাবিলা শুয়ে আছে।জোবায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।জোবায়েরের মাথায় এক হ্রাস চিন্তার ছাপ।কি হলো ওর!ও এমন আচরণ কেন করছে।
কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা জোবায়ের।নাবিলার বাসার সবাইকে জানানো উচিৎ! তারাও বা কি করবে।
সব দোষ ই আমার।আমার এমন অতিরিক্ত প্রেশার এর কারনে ও আজ এমন হয়েছে।ওর কিছু হলে আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করবো এই ভাবতে ভাবতে সিগারেট একের পর এক শেষ করতে থাকে জোবায়ের।
এরই মাঝে ঘরের ভিতর থেকে নাবিলার চিৎকার।
জোবায়ের দৌড়ে ঘরে গেল।নাবিলা বিছানার এক পাশে কুঁজো হয়ে বসে কাকে যেন হাত ইশারা করে বলছে, এই একদম কাছে আসবিনা?এই ওভাবে তাকাবিনা একদম আমার দিকে।
জোবায়ের নাবিলার পাশে বসে বলছে এই নাবিলা এই তুমি কাকে বলছো কেউ ই তো নেই।
নাবিলা আঙুল নিজের মুখের কাছে নিয়ে বলছে এই চুপ।ওর হাতে কেঁচি আছে দেখো না আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
হাঁউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলে ও আমার চুল কেটে দিবে।
জোবায়ের নাবিলাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলছে এই কি হয়েছে তোমার?আমার খুব ভয় হচ্ছে।
নাবিলার মুখ হাতে নিয়ে আলিঙ্গন করে বলছে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবোনাতো নাবিলা?
নাবিলা এক স্থীর দৃষ্টি নিয়ে জোবায়েরের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এই দৃষ্টির কোন জায়গায় ই জোবায়ের নেই।একদম অচেনা একেবারেই।
রাত ১১:৪৫,ধীরে ধীরে নাবিলার শরীর এর অবনতি হচ্ছে।জোবায়ের ভেবে পাচ্ছেনা কি করা উচিৎ ওর।ভাবতে ভাবতেই রেজাউল সাহেবের কথা মাথায় এসে গেল।সকাল হলেই তার কাছে যাবে তাই মনস্থির করেছে।কি অদ্ভুত! যেখানে আমায় নিবে বলে ভেবেছিল মেয়েটা সেখানে আজ ওর জন্য যেতে হচ্ছে!

নাবিলা ঘুমাচ্ছে।জোবায়ের পাশে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নাবিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কল ক্লান্তির ছাপ ঘুম মাখা মুখে ভেসে উঠছে।
জোবায়ের নাবিলার মুখ থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা।নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।পাশে রাখা টেবিল ল্যাম্প এর মৃদ্যু আলো নাবিলার মুখে পরছে।
এত মায়াভরা মুখ আগে কখনোজোবায়ের খেয়াল করে দেখেনি।বাহিরের নজর থেকে আড়াল করতে গিয়ে কখন যে নিজেই সুন্দর কিছু উপভোগ করা ভুলে গিয়েছে কে জানে!
বার বার মনে হচ্ছে এ মায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে জোবায়ের।এ মুখের আদোলের মায়ার জালে জোবায়ের জরোসরো হয়ে গুটিয়ে যাচ্ছে। বার বার অজানা ভয় বুকের এক পাশ থেকে আরেকপাশে ছটফট করে পাইচারি করছে।
এইতো কখন যেন এই ঘোর কেটে অমাবস্যা নেমে আসে চারদিকটায়।সেখানে কেউ নেই কেউ না একদম একা।
ভাবতে ভাবতে চোখটা লেগে গেল জোবায়ের এর।

বিশাল এক সাগর।বিকালের সূর্যটা এক নিমিষেই টুপ করে সাগরে ঝাঁপ দিবে হয়তো।নাবিলা আর জোবায়ের দুজনে হাটছে। গায়ের চাদর টা অসহ্য বাতাসে উড়ে চলে গেল।নাবিলা তার পিছনে ছুটছে।জোবায়ের চেঁচিয়ে বলছে যেও না।সন্ধ্যা হলো পানির জোয়ার এসে যাবে।আর ভিতরে যেওনা।
দূর থেকে ঢেউয়ের বিশ্রী হুংকার শুনা যাচ্ছে। তার যেন কাজ ই হল লন্ডভন্ড করা।নিমিষেই নাবিলা চোখের আড়াল হয়ে গেল।এক ডলফিন আকৃতির ঢেউ চলে গেল মাথার উপর থেকে।কোথাও নেই নাবিলা।অন্ধুকার চারদিন..একদম ছুনছান নিরবতা।
হাঁপাতে হাঁপাতেই ঘুম ভেঙে গেল জোবায়েরএর।চেয়ারেই ঘুমিয়ে পরেছিল রাতে।সারা গায়ে ঘামে ভিজে গেছে।মনে হচ্ছে ভরা সাগরে ডুব দিয়ে এসেছে।
কি বিশ্রী স্বপ্ন দেখলাম আমি। নাবিলার কোন ক্ষতি হতে পারেনা এই ভেবেই নাবিলার দিকে তাকালো।ঘুমাচ্ছে এখনো। ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলাম রাতে।এতে ঘুম হবে অনেকক্ষণ কিন্তু আমাকে এর মাঝেই রেজাউল এর কাছে যেতে হবে।
নাবিলাকে দেখলেই স্বপ্নের কথা মনে পরে যায় বার বার। নাবিলার কপালে চুমো দিয়ে অনুভব করলো জোবায়েরের চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে নাবিলার চোখে পরছে আর চোখের পাতা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
এমন কখনো হয়নি আগে।অনেক কিছু অনুভব হচ্ছে যা আগে হয়নি।জোবায়েরের ধীরে ধীরে নিজেকে নতুন মানুষ লাগছে।নিজের কাছেই অচেনা একেবারে অচেনা।
দরজা নক করতেই খুললেন রেজাউল।
জোবায়ের: স্লামলাইকুম।রেজাউল সাহেব আছেন?
রেজাউল: জ্বী আমি ই।ভিতরে আসুন
জোবায়ের ভিতরে গিয়ে বসলো
রেজাউল: আপনাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে।পানি খাবেন?
জোবায়ের: না থাক।স্যার আমার খুব বিপদ।
রেজাউল: হুম তা শোনাই তো কাজ।তা এমন অস্থির হয়ে থাকাই কি রোগের লক্ষন?
জোবায়ের: না আমি আমার জন্য আসিনি।এসেছি আমার স্ত্রীর জন্য।
রেজাউল মনে মনে ভাবছেন ইদানীং কি আমার নাম যশ করে যাচ্ছে নাকি!যে রোগী আসেনা।কাউকে পাঠায়।
তা বলুন কার হয়ে এসেছেন।আগেই বলে দেই রোগী ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবোনা।শুধু বেপার টা আন্দাজ করতে পারি
জোবায়ের রুমাল বের করে মুখ মুচছে।রুমে পাখা থাকা সত্ত্বেও সে অনবরত ঘামছে।
স্যার আমি আমার স্ত্রী কে পাগল বানিয়ে দিয়েছি।আমার স্ত্রী এখন বলতে গেলে আমায় চিনেনা।বলতে বলতে জোবায়ের এর চোখ রক্তবর্ন হচ্ছে।
রেজাউল চেঁচিয়ে বললেন ১টা চা আর ১টা ঠান্ডা দিয়ে যাও।
আপনি কি করেছেন?
জোবায়ের: বিয়ের পর থেকেই আমার মনে হত ও আমায় ছেড়ে যাবে।কেবল যে ওর প্রতি আমার এ ধারনা তা নয় সব মেয়েদের চরিত্র আমার একই মনে হয়।
আমার স্ত্রী কে কেউ প্রশংসা করলে আমি নিতে পারতাম না।মাঝে মাঝে ঘৃনা লাগতো ওকে।
একবার আমার বন্ধু এসেছে বাসায়।ও চা দিতে গেল।বন্ধু ফট করেই উঠে বলে ভাবিকে তো এখনো বিয়ে দেয়া যায়। আমার মেজাজ তখন গরম হয়ে গেল।কেন যেন বন্ধুর বলার কারন আমি আমার স্ত্রী কে দায়ী ভাবলাম।ও আমায় কেন চা দিতে বলেনি বা ওর ইচ্ছে ছিল বন্ধুর সামনে যাওয়া তাই ওকে ঘৃনা লাগলো।ওরসাথে খারাপ আচরণ করতাম।
এমন অনেক হয়েছে আরকি
রেজাউল:আপনার স্ত্রী কি আসলেই এসব প্রশ্রয় দেয়?আই মিন তার এমন কোন শক্ত প্রভু পেয়েছেন আপনি যে তার আচরনে খারাপ ইনটেনশন আছে তা বুঝা যায়?
জোবায়ের: না
রেজাউল: বিয়ের আগে কি তার এমন কোন রেকর্ড পেয়েছেন যেমন ধরুন সে রিলেশন করতো এমন?
জোবায়ের: না,
রেজাউল: তাহলে তার উপর আপনার আস্থা চলে যাবার কারন কি?অকারনে কাউকে আপনি সন্দেহ করতে পারেন কি?
জোবায়ের চুপ হয়ে আছে।
রেজাউল ১২টা মোমবাতি নিয়ে আসলো।১টি জ্বালিয়ে সেই আলো দিয়ে বাকিগুলি জ্বালালো।
এখন জোবায়ের সাহেব বলুন কি দেখছেন?
জোবায়ের: ১টি মোম তার আলো সবাইকে দিয়ে দিচ্ছে
রেজাউল হা হা হা করে হেসে দিলেন
জোবায়ের: কি হয়নি?
রেজাউল হাসি মুখে বললেন না।ভিতরের ছেলেটাকে ডাক দিলেন।
সমির: খালু কন,
রেজাউল সব মোমগুলি নিভিয়ে পূর্নরায় আগের নিয়মে জ্বালালি জিজ্ঞেস করলেন সমির বল তুই এখানে কি দেখছিস?
সমির: খালু অনেকগুলা মোমবাতিরে আলোকিত করে দিল।
রেজাউল: তুই যা।কি জোবায়ের সাহেব বুঝলেন কিছু?মোম এর আলো শেষ হয়না কাউকে দিলে।তেমন আপনার স্ত্রীর সৌন্দর্য আরেকজন কে মুগ্ধ করতে পারে তাই বলে কি আপনার স্ত্রীর সব বিসর্জন দিল?
শুনুন একটা কাহিনী বলি।আমি তখন খুব ছোট।পাশের বাসায় এক বুড়ো লোক থাকতো তার সব আইটেম এর ফুল গাছ ছিল।বাহারি ফুল।আমার দেখতে ভালো লাগতো।
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দেখতাম আর বলতাম বাহ কি সুন্দর ফুল।
এই কারনে কিন্তু ওই বুড়ো লোক তার ফুল আমার হয়ে গেছে ভেবে সব ছিড়ে ফেলেনি।
দেখুন বউকে সেইফ করার দায়িত্ব আপনার।যেমন সেই বৃদ্ধ লোক তার ফুলগাছ সেইফ এ রাখতো।
আপনি তাকে ভুল বুঝলে অন্যরা সুযোগ নিবেনা?
জোবায়ের:আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমার নিজেকে আরো স্বাভাবিক করতে হবে।
রেজাউল:আমি সব ধরনের চেষ্টা করবো।
জোবায়ের: আমার স্ত্রী আমার জন্য নিজের চুল কেটে ফেলেছিল এই বলে জোবায়ের চোখ মুছতে লাগলো।
ও আমার মনের মতন হবার কম চেষ্টা করেনি
রেজাউল: যাক আজ থেকে আপনি তার মনের মতন হয়ে যান। এখন বলুন তার অবস্থা কি রকম?
জোবায়ের: ও গতকাল থেকে অদ্ভুত আচরণ করছে।ভয় পাচ্ছে।ভাবছে কেউ দেখছে ওকে।সারাক্ষণ বোরকা পরে আছে বাসায়।
রেজাউল: আমি কি তাকে একবার দেখতে যেতে পারি?
জোবায়ের: ও ভিষন ভয় পেয়ে আছে।আজ না আরেকদিন।আমি এখন কি করলে ও সুস্থ হয়ে যাবে?
রেজাউল: তার উপর মন থেকে ভরসা আস্থা আনুন সে ঠিক হয়ে যাবে।এভাবে চলতে থাকলে সে মারাও যেতে পারে,
জোবায়ের মুখ মলীন করে বললো স্যার আসি আমি।এই বলে উঠতে নিল।
রেজাউল সিগারেট এর প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে বললো আসল কথাই তো বললেন না আপনি?
জোবায়ের: মানে বুঝলাম না,
রেজাউল: আপনি আমার কাছে কিছু লুকোচ্ছেন। তা না জানলে কিছুই হবেনা
জোবায়ের মুখ মলীন করে পূর্নরায় চেয়ারে বসলো...

রেজাউল একটা সিগারেট জোবায়েরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন নিন।
জোবায়ের সিগারেট হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে বললো আমার মা মৃত নয়।
রেজাউল কিঞ্চিত অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকালেন জোবায়েরের দিকে।
মা আছে!তাও মৃত বলতেছেন?
ইকবাল আমতা আমতা করে বলছে আজ উঠি আমার ওয়াইফ একা বাসায়।
রেজাউল: মানুষ তার দূর্বলতা কারো কাছে শেয়ার করতে ভয় পায়।এমন কি নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষ এর কাছে।সে ভাবে তারা এটাকে নিয়ে তামাশা করবে বা তাকে ছোট করবে।
তাহলে শুনুন,আমি আমার একটা উইক পয়েন্ট আপনাকে বলি।এটা আমার ওয়াইফ ও জানতো না।
জোবায়ের আগ্রহ নিয়ে রেজাউল এর দিকে তাকালো।
রেজাউল মুচকি হাসি দিয়ে বললো আমার একমাত্র সন্তান কিন্তু সে আমাদের সন্তান নয়।
আমার ওয়াইফ বা আমার সন্তান কেউ ই সেটা জানেনা।হয়তো জানবেওনা।তবে এখন আমি আপনার কাছে ধরা হা হা হা।
জোবায়ের: আপনার ওয়াইফ আসলেই জানেন না?
রেজাউল: না, আবার সে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারলেও মেয়ের সাথেই থাকে।
আমার ওয়াইফকে আমি তেমন ভাবে কখনো সময় দেইনি।আসলে আমার সংসার করাটা কেমন পেইনফুল লাগতো।একা একা থাকতে বেশ ভালোবাসতাম।সে যেদিন বাপের বাড়ি যাবে সেদিন আমার ইদ ছিল আরকি।সারাদিন ঘরে হাত পা ছরিয়ে শুয়ে থাকতে পারতাম।যেন পাখি মুক্ত আকাশে উড়ছে।
তো সে এসে আমায় বললো সে প্রেগন্যান্ট। আমি বেপারটায় খুব ই আনন্দ পেয়েছিলাম।হয়তো এই ও ওর বাচার অবলম্বন পেয়ে যাবে।বাচ্চাটা ডেলিভারির সময় ই মারা যায়। ওর খুব ক্রিটিকাল অবস্থা।কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতে আমার বন্ধু আমায় বললো এক বাচ্চাকে ২দিন হল তার মা ফেলে রেখে গেছে।টাকা পেইড করার ভয় ও হতে পারে বা বাচ্চা টা অবৈধ।আমি রাজি হয়েছিলাম এডপ্ট করতে।এরপর আমি প্রায় বছর খানেক ই ওয়েট করেছিলাম ওর মায়ের।হয়তো সে আসবে বাচ্চাকে নিতে।কিন্তু আসেনি।আমার ওয়াইফ ও খুশি।কিন্তু বার বার ই বলেছিল আমি বেহুশ ছিলাম ক দিন?আমার বাচ্চাটা মনে হয় কতদিন মাকে না পেয়ে শুকিয়ে গিয়েছে।
মেয়ে তো!
জোবায়ের: যদি আসল মা এসে যেত তাহলে কি করতেন?
রেজাউল: আমি জানতাম সে আসবেনা।কারন যে মা পালানোর সময় বাচ্চাকে ইজিলি নিয়ে পালাতে পারতো সে বাচ্চাকে রেখে গেছে।সে ফেরার জন্য রেখে যায়নি।
কিন্তু আল্লাহর একটা অদ্ভুত রহমত হল যে মেয়ের গায়ে আমার তিল পরিমান রক্ত নেই সে মেয়ে কেন যেন অনেক টা আমার মতন হয়েছে।যেটা আমার স্ত্রীর ধারণা আমি বুঝিনা।কিছু ঝটলা আসলেই খোলার সাধ্য আমাদের কারো নাই
-তো এখন বলুন,আপনার উইকনেস কি আমার টার চেয়ে পাওয়ারফুল?
জোবায়ের: যে ছেলেকে তার মা তিন বছর বয়সে রেখে অন্য পুরুষ এর সাথে ভেগে যায় তার উইকনেস তখন ই কেটে যায়।
রেজাউল: আই সি...
জোবায়ের: দেখুন ওই মহিলা আই মিন আমার মায়ের দোষ এর চেয়েও বড় দোষ আমার বাবার।সে অন্ধ আস্থা রেখেছিল তার প্রতি। বিদেশে সারাকাল খুয়িয়েছে টাকার নেশায়।আর মা সেই টাকা ব্যয় করেছে তার প্রেমিকের পিছনে।কড়া শাসনে রাখলে হয়তো এমন হতোনা।
রেজাউল: আপনার বাবা কোন স্টেপ নেন নি?
জোবায়ের: না সে হল সরল মানুষ। সে ভেঙে পরেছিল এতটাই সে ঘটনার ৩মাসের মাথায় ই মারা যান এই বলে জোবায়ের সিগারেট পায়ের নিচে পিষে ফেলল।
রেজাউল: আমি আপনার মায়ের পাপ দেখিনা।দেখি শুধু অন্যায়।
জোবায়ের হেসে বলে আপনি সবাইকে দোষের বাইরে ভাবতে ভালোবাসেন।
রেজাউল: হয়তো।পজেটিভ ভাবনা মানুষ কে বেশিদিন বাঁচার ইচ্ছা জাগায়।
ধরুন একটা মেয়ে আরেকটা ছেলে।দুজন দুজনকে ভালোবাসে,সম্মান করে এক সাথে সংসার করে এটা সাধারণ নাকি দুজন এর মাঝে সম্পর্ক বলতে গেলে বিয়েটাই।না আছে টান না আছে ভালোবাসা,আস্থা বা সম্মান তাও নিজের চাওয়া পাওয়া বিসর্জন দিয়ে সমাজের কথা ভেবে চোখ মুখ বন্ধ করে সংসার করা এটা সাধারণ?
শুনুন আপনার মা বাহ্যিক বিচার না করে শুধু নিজের চাওয়াকে বড় করে কিছুটা সেলফিস হয়েছে।এটা পাপ নয়।ছোট জীবনে কিছুটা সেল্ফিস না হয় হলই।
তবে তার অন্যায় হল সে বেপারটাকে অন্য ভাবে ট্রিট করতে পারতেন।সে আগে বিচ্ছেদ করতেন তার বিবাহিত জীবন।তার উচিৎ হয়নি আপনার বাবাকে এভাবে ধাক্কা দেয়া।তার উচিৎ ছিল তার চাওয়াকে বা তার ইচ্ছাকে জানানো সেটা জানার রাইট ছিল আপনার বাবার।তবে এটা তার পাপ নয়।অন্যায়।
জোবায়ের: আমার প্রতি কাজ টা কি সে ঠিক করেছিল?
রেজাউল:না সেটা ঠিক করেনি। সন্তান চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে থাকে।হয়তো আপনার সিকিউরিটির কথা ভাবতেই এমন করেছে।এই বেপার টা তাকেও ঘুমাতে দেয়না এটা নিশ্চিত থাকুন।
আচ্ছা একটা বেপার আপনি ই দেখুন।ধরুন আপনি একটা বই পড়তেছেন।কিছুদূর পড়ার পর আপনি ওই বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বা বই টা আপনাকে টানছেনা।বরং পাশে রাখা অন্য বই আপনাকে বার বার টানছে তখন কি করবেন?
জোবায়ের: ওই বই টা রেখে যেটা পড়তে ইচ্ছে করে সেটা পড়বো।
রেজাউল: এটা কি পাপ হবে?আপনি বই নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষ করলেন না কেন তার জন্য কি আপনাকে ফাঁসির আসামী ভাবা যাবে?নিশ্চইনা।আ
পনার মা ও একই কাজ করেছে।তার ভুল কেবল সে আগের বই খুলে রেখেই আরেকটি বই পড়তে শুরু করে দিয়েছে।তার উচিৎ ছিল আগের টা বন্ধ করে আরেকটা পড়া শুরু করা।এটাই তার ভুল।এই ভুল ই তাকে অনেক ভোগায় মে বি।
জোবায়ের: জানিনা তবে এরপর আমার মামার ফেমিলি থেকেই আর তার সাথে যোগাযোগ করেনি।আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল আমার বিয়ের সময় যেহেতু সবাই জানে সে মৃত তাই আমি চাইনি।আর যাই হোক আমার বাবার মৃত্যু আমি মানতে পারবোনা।
রেজাউল: হুম সে তার একটা অন্যায়ের ফল আজীবন বহন করবেন।
জোবায়ের রেজাউল এর দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে মানুষ কে বশ করার ক্ষমতা আছে লোকটার।
রেজাউল: কি ভাবছেন?শুনুন আপনার মায়ের ভুলের শাস্তি স্ত্রী কে দিয়েন না।এটা মারাত্মক ভুল হবে। বেপার টা হবে এমন যে জীবনে একটা বই পড়ে আপনার খুব অনিয়া আসলো তাই আপনি বই পড়া ই বাদ দিলেন।বা সব বই ই খারাপ তাই ভাবলেন।
সবাই এক নয়।আপনি বললেন আপনার স্ত্রী কে আপনি অনেক প্রেশার দিয়েছেন।তার চুল কাটতেও বাধ্য করেছেন।এখন বলুন এগুলি কি আপনাকে ছেড়ে যাবার জন্য কোন কারন নয়?
ছেড়ে যাবার ইচ্ছে থাকলে কারণ খুঁজতো এতবড় কারন কে সে হজম করে ফেলেছে এর মানে বুঝতে হবে তার উইকনেস কিছুটা হলেও আপনি?
বুঝতে পেরেছেন?
কথাটা বলা মাত্রই নাবিলার অসুস্থ মুখ ভেসে উঠলো জোবায়েরের মনে।চোখ দুটি ছল ছল করতে লাগলো
জোবায়ের রেজাউল এর হাত ধরে বলছে স্যার ও কি আর আগের মতন হবেনা?আমি নিজেকে কি করে ক্ষমা করি?
রেজাউল: অবশ্যই সুস্থ হবে।আপনি তার মনে জমে থাকা ভয় কে জয় করুন।এখন যান বাসায়।আমার শরীর টাও আজ খারাপ লাগছে না হলে আমিও যেতাম
জোবায়ের উঠে দরজার কাছে যেতেই রেজাউল ডাক দিয়ে বললো স্ত্রী কে নিয়ে সাগর বা পাহাড় দেখতে যান। মন হালকা হবে
জোবায়ের মুখ মলীন করে বললো গতরাত স্বপ্নে দেখেছি ও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে তাই ভয় হচ্ছে।
রেজাউল হেসে বলে আপনার মতন ভরসার বর থাকতে কিছুই হবেনা।
জোবায়ের চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে এলো।নিজেকে ভরসার,আস্থার করে গড়ে তোলার জন্য এই হয়তো উপযুক্ত সময় এসে গেছে ভাবতে ভাবতে রাস্তায় হাটছে জোবায়ের।

হাতে ছুড়ি নিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে নাবিলা।দরজা খোলার শব্দ পেয়েই হিংস্রাত্মক হয়ে ওত পেতে বসে আছে যেন।
-নাবিলা ঘুমাও এখনো? এই বলে রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল বিছানায় নাবিলা বসে আছে।হাতে ছুড়ি
জোবায়ের: কি হয়েছে?
নাবিলা: আমার কাছে আসবানা।মেরে ফেলবো।
জোবায়ের জলদি গিয়ে নাবিলার পাশে বসা মাত্রই নাবিলা নিজের হাতে ছুড়ি বসিয়ে দিল।
কি করলে তুমি এই বলে জোবায়ের ছুড়ি টেনে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল।
হাত থেকে টপ টপ রক্ত পরছে নাবিলার।জোবায়ের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে।নাবিলা শব্দ করে হেসেই যাচ্ছে আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে পানি।
নাবিলার এমন আচরণ দেখে জোবায়ের হেস্কি তুলে কাঁদছে
নাবিলা হাসি থামিয়ে জোবায়েরের চোখ মুছে দিয়ে বলছে কাঁদছো কেন?
জুবায়ের উৎফুল্ল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,চিনেছো আমায়?
নাবিলা ঠোঁটের কাছে আঙুল দিয়ে বললো চুপ!কান্না করোনা।ওরা শুনছে।
জোবায়ের: কারা?
নাবিলা: খাটের তলায় আছে।দেখোনা আমার হাত কেটে দিয়েছে তারা।
জোবায়ের নাবিলার মাথা নিজের বুকে চেপে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো ও নাবিলা তুমি নিজেই কাটলে আর নিজেই ভুলে গেলে?আমি কি করবো?কোথায় গেলে তুমি সুস্থ হবে?আমার কিচ্ছু মাথায় আসছেনা।
নাবিলা ও শক্ত করে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে...

সোমবার ভোর ৫টায় হোটেল থেকে রওনা হলো জোবায়ের নাবিলাকে নিয়ে সমূদ্র ভ্রমনে।
চারদিক শো শো বাতাস।নাবিলা এক অদ্ভুত ভাবনায় ডুবে আছে যা খেয়াল করছে জোবায়ের।
বেশ কয়েকদিন ধরে হাসেনা আবার কাঁদেওনা।কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে নাবিলা।
জোবায়ের ১০টা প্রশ্ন করলে একটা উত্তর দেও তাও স্পষ্ট না।
-নাবিলা সাগর কেমন লাগছে?
আচ্ছা পানিতে পা ভিজাবে?আচ্ছা শোন তুমি কিন্তু আমার হাত ছারবেনা কেমন?
নাবিলা: হু
জোবায়ের: ভালো লাগলে আরো কিছুক্ষণ থাকবো কেমন?
নাবিলা আনমনে সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে।
পানি...খুব তৃষ্মা পেয়েছে এই বলে নাবিলা একবার ও জোবায়েরের দিকে তাকালোনা।
জোবায়ের আশপাশ টা দেখে কাউকে দেখলোনা যে পানি পাওয়া যাবে।কিছু পথ হেটে গেলে হয়তো পানি পাব চলো যাই এই বলে নাবিলার দিকে তাকালো।
নাবিলা: না এখানেই থাকি তুমি যাও।
নাবিলার কথা অনেক টা স্বাভাবিক লাগছে।হয়তো সেদিন এর চড় এর কথা মনে পরেছে তাই অভিমান করে চুপ হয়ে আছে।তাও এক ঝিলিক আনন্দ জোবায়ের অনুভব করছে।রেজাউল সাহেব রিয়েলি জিনিয়াস।হি অলসো ডিজার্ভস থ্যাংস।গিয়েই জানাবো এই ভেবে জোবায়ের নাবিলাকে বললো দাড়াও।একদম নড়বেনা আমি যাব আর আসবো।
কিছুক্ষন বাদে ফিরে এসে দেখে নাবিলার পাশে এক ভদ্র লোক দাড়িয়ে আছে।
জোবায়েরকে দেখতেই নাবিলা ইতস্তত হয়ে সরে দাড়ালো।
হাই আমি শোভন এই বলে লোকটি হাত বাড়িয়ে দিল জোবায়েরের দিকে
জোবায়ের ও হেসে হাত বাড়ালো।
শোভন: আপনার স্ত্রী একা দাড়িয়ে ছিলেন ভাবলাম একটু কথা বলি।
জোবায়ের: যাক আমি ভাবলাম ও একা একা কি করছে তাও তো কাউকে পেল।
নাবিলা জোবায়েরের হাসিমাখা মুখ দেখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।কত পরিবর্তন।
শোভন: আচ্ছা গেলাম। আর ভাই এমন সুন্দরী বউকে একা রেখে যাবেন না সবাই কিন্তু আমার মতন ভালো না।হা হা হা
জোবায়ের: খারাপ হলেও আমার স্ত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
শোভন: বাহ ভালো লাগলো আচ্ছা বাই,
নাবিলা জোবায়েরের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে পানির ঝাপ্টা দিল মুখে।কৌশলে মেয়েরা চোখের পানি আড়াল করতে বেশ ভালোই পারে।
সাগরের গর্জন হঠাৎ বেড়ে গেল। জোবায়েরের সেদিনের রাতের স্বপ্নের কথা মনে পরছে বার বার।ভয়ে নাবিলার আচল শক্ত করে ধরে আছে।
নাবিলা সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে, বউয়ের আঁচল সু পুরুষ রা ধরেনা।
জোবায়ের ইতস্তত হয়ে আঁচল ছেড়ে দিল।
নাবিলা: সু পুরুষ রা বউকে একা ছেড়েও দেয়না।কি বড় ঢেউ আসছে মনে হচ্ছে ওটা আমায় ভাসিয়েই নিয়ে যাবে।
জোবায়ের নাবিলার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো।এতটা কাছে যে সেখানে সাগরের নোনা জল পৌঁছোনোর স্বাধ্য নেই

ঢাকায় ফিরেই প্রায় মাস খানেক সব নরমাল।সব পরিবর্তন।জোবায়ের আর আগের জোবায়ের নেই।নাবিলাও অনেক টা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
জোবায়ের ভাবলো রেজাউল সাহেবের কাছে যাওয়া দরকার।তাকে আজ নিজ হাতে মিষ্টি খাওয়াবে।তার বুদ্ধি ওসুধের চেয়েও শক্তিশালী।
আমার আস্থাই নাবিলাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
এই আমি অফিস গেলাম।অনেকদিন ছুটি কাটিয়েছি।আসতে লেইট হবে।আসার পথে বন্ধুর বাড়ি হয়ে আসবো তুমি খেয়ে নিও এই বলে জোবায়ের বের হয়ে গেল।
অফিস থেকে ফেরার পথে হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে রেজাউল সাহেবের বাড়ুতে গেলেন,তড়িঘড়ি করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে । দরজার কাছে যেতেই চেনা মানুষ এর হাসির শব্দে থমকে যায় জোবায়ের।
দরজার আড়ালে দাড়িয়ে দেখে নাবিলা রেজাউল সাহেব কে মিষ্টি দিয়ে বলছে আংকেল আমি বাবা হারানোর পর একজন কে পেলাম যে আমার প্রব্লেম সলভ করতে পারে এক তুরিতে।
রেজাউল: তা মা এত আনন্দ বুঝি বর এর মাথার ভুত নামাতে পেরে?
নাবিলা: হেসে বললো আংকেল আপনার চেয়ে আন্টির ভূমিকা অনেক
রেজাউল সাহেব মিষ্টি মুখে নিয়ে বলছেন কিভাবে?
নাবিলা: ওই যে আন্টি সিগারেট এর মিথ্যে অভিনয় করে আপনার ব্যাড হেবিট ছাড়িয়েছিল।আমিও সেই ভাবেই অভিনয় করে ওকে সুস্থ করতে পারলাম।টানা ১মাস অভিনয় করা কিন্তু কম কষ্টের নয়।
রেজাউল সাহেব হো হো করে হাসছেন।
আর দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আছে জোবায়ের।হঠাৎ যেন সব কিছু মিথ্যে মনে হতে লাগলো।
ঘৃনা ভিতর থেকে কান্না হয়ে ঝড়তে লাগলো
বাসায় ফিরে এসে রকিং চেয়ারে শুয়ে আছে জোবায়ের।
এত অভিনয়!এত মিথ্যে আমার সাথে!এত প্রতারণা করলে তুমি নাবিলা।এ কটা দিন আমি কিসের মাঝে ছিলাম তা বুঝেও না বোঝার ভান করলে?
তুমিও তাহলে আমার মায়ের মতন।যে কটা বছর বাবার সাথে ছিলে শুধু অভিনয় করে গিয়েছে আর তুমিও?
জানি সবার আমার মায়ের মতন সমাজের বুকে লাথি মেরে নিজের চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়ার সাহস থাকেনা।তোমার ও হয়তো নেই।কিন্তু ভেবনা আমি মুক্তি দিয়ে দিব তোমায়।
ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো।
জোবায়েরের এখন ভিষন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সব চাওয়া কি পাওয়া হয়?
নাবিলা: আংকেল আমি এত খুশি তার আরেকটি কারন আছে।আমার তো খুশিতে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রেজাউল: এত খুশির কারন কি?
নাবিলা: আন্দাজ করুন?আপনি তো মন পড়তে পারেন।
রেজাউল মিষ্টির প্যাকেট থেকে মিষ্টি উঠিয়ে নাবিলার মুখের সামনে ধরে বললো নেও খাও বাচ্চা কিন্তু মিষ্টি ই হবে
নাবিলার চোখে পানি ছল ছল।বাবা থাকলে কি খুশি ই না হতো?
আচ্ছা এত সুখ সইবেতো!ভাবতে ভাবতেই
রেজাউল সাহেব উঠে বললেন নেও খাও।ভেবনা সব ভালো ই হবে।
নাবিলা বিদায় নিয়ে আসতে নিলেই রেজাউল সাহেব পিছন থেকে বললো আবার আসতে বলবোনা।কারন এখানে রোগ ছাড়া কেউ আসেনা।ফ্রি থাকলে আমায় খবর দিও আমি দেখতে যাব যদি আপত্তি না থাকে।আসলে এক সময় একা থাকতে বেশ লাগতো কিন্তু এখন বয়স বেড়েছে তাই ভয় ও চেপেছে মরার।মানুষ এর ভিতর থাকতে ভালো লাগে।
নাবিলা: অবশ্যই যাবেন। ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিব
রেজাউল সাহেব রহস্যময় হাসি দিলেন
নাবিলা: আর আপনার তো একের পর আরেক রোগী।এর পর ই হয়তো আসবে নতুন কেউ
রেজাউল: তা আসুক তবে তুমি শোন মন দিয়ে,বরের জন্য ভালোবাসা রাখবা,সম্মান রাখবা,শ্রদ্ধা রাখবা,বিনয় হবা কিন্তু কখনো তার মনের মতন হতে গিয়ে চুল কাটা, তার পছন্দের কাজ কিন্তু তোমার ভালো লাগেনা তা করবানা কখনো
নাবিলা: চুল কেটেছি আপনি জানলেন কি করে?আমি তো বলিনি
রেজাউল সাহেব হেসে বললো ওই যে মন পড়ে ফেলি।
নাবিলা হাসি দিয়ে নেমে এলো।
বাসায় ঢুকলো নাবিলা।এই তুমি বাসায় এসেছো?হা করো তো নেও মিষ্টি খাও।
জোবায়ের চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে
এই হা করবা তো
হাত সরাতেই দেখলো জোবায়েরের চোখ ফুলে গিয়েছে।
নাবিলা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো এই কি হয়েছে?তুমি কাঁদছিলা?
-না।
নাবিলা: তাহলে?
জোবায়ের: মিষ্টি কিসের?সেরা অভিনয় এর মেডেল পেয়েছো সেই আনন্দে?
নাবিলা: মানে?
জোবায়ের মিষ্টির প্যাকেট হাত থেকে নিয়ে ফেলে দিল মেঝেতে।
নাটক করো?কিছু জানোনা?
আমি কি ঘাস এ মুখ দিয়ে চলি?দুনিয়ার কিছুর হুশ নেই আমার?
এখন ই তুমি ঘর থেকে বের হয়ে যাবা। মুক্তি চাই আমি।
নাবিলা শিউরে উঠছে জোবায়েরের এই হিংস্র মুখ দেখে।
তুমি আবার আগের মতন করছো?আবার শুরু করলা?
জোবায়ের: ও আমি শুরু করি এই বলে নাবিলারএ হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দরজার বাইরে নামিয়ে দরজা দিয়ে দিল।
জোবায়ের ভাবছে আর আমার প্রতি দয়া দেখাতে দিবনা আমি।তুমি আমার মায়ের মতন নিজের সুখ খুঁজে নেও।
নাবিলা ভয়ে গুটিয়ে আছে।প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়েছে পেটে।
আচ্ছা ভয় পেলে নাকি বাচ্চার ক্ষতি হয়?আমার বাচ্চার কিছু হবেনাতো?এই ভাবতে ভাবতেই সামনে ধীরে ধীরে আগাচ্ছে নাবিলা।
হসপিটাল থেকে বের হলো নাবিলা।মলীন মুখ যেন রক্ত হীনতায় ফ্যকাসে হয়ে গেছে।
সম্পদ পেয়েও যে ধরে রাখতে পারেনি সে।
বার বার কানে বাজছে রেজাউল সাহেবের কথা বরকে ভালোবাসা মানে তার অন্যায়কে ভালোবাসা না।
যে বর মায়ের থেকে সন্তান কে কেড়ে নেয় সেই বর দিয়ে আর কি হবে!
না সব কিছুই শেষ করে দিব আর না এই ভেবে বাসার দিকে রওনা হলো নাবিলা
বাসায় ঢুকতেই জোবায়ের বের হয়ে গেল।
নিজেকে আজ আসলেই পাগল পাগল লাগছে নাবিলার।অন্ধকারে থাকতে মন চাইছে ভিসন।
রুম অন্ধকার করে ফুঁপিয়ে কাদছে।
এরই মাঝে জোবায়ের এলো।বাহ আবার রুম বন্ধ করে নাটক হচ্ছে এই বলে শুয়ে পরলো নিজের জায়গায়।
ভোর হতেই জোবায়ের সারা ঘর খুজেও পেল না নাবিলাকে।
ছাদে গিয়েও দেখলো নেই।হাঁপিয়ে ঘরে ফিরতেই টেবিল এর উপর কাগজ রাখা দেখে হাতে নিয়ে দেখলো চিঠি।নাবিলাা রেখে গেছে।
মিষ্টিটা যখন ছুড়ে ফেলে দিলে তখন ই আমি টের পেয়েছিলাম আমার পেট থেকে কে যেন আমার সন্তান কে টেনে সরিয়ে নিল।
আমি আমার প্রথম সন্তান কে হারিয়ে ফেলেছি।তুমি জানো ওকে আমি রোজ কল্পনা করে বুকে লালন করতাম।কিন্তু আজ সেই বুকের কলিজাইই ছিড়ে দিলে।অতিরিক্ত ভয় পেয়ে আমার বাচ্চাকে আমি হারিয়েছি কাল।বলবে হয়তো এটা ও অভিনয়।তবে জানিনা বাবা হয়ে সন্তানকে মেরে ফেলার কষ্ট তুমি কি করে সইবে?
আমি আর ফিরবোনা।মরতে পারতাম তবে মরে গেলে তো আর সব শেষ হবেনা।তুমি আগের মতন ই থাকবে।তার চেয়েও বড় কথা তুমি যেমন ই থাকো আর আমি তোমার ভালো বা খারাপ কিছুই চাইবোনা।নিজের পায়ে দাড়াতে হবে আমায়।আর পারলে ডিভোর্স দিও।আমি একটু মুক্তি চাই।খুব ক্লান্ত আমি, খুব।
ভালো থেকো।
জোবায়ের চিঠিটা পড়া মাত্রই কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল।মেয়েদের মতন হাউমাউ করে চাইলেই কাঁদতে পারেনা ছেলেরা।
আমার ভুলে আমি আমার সন্তান কে হারালাম?না না ভুল কি?এটা খুন।I killed my baby.I killed. সব কিছুই শেষ করে দিলাম আমি নিজের হাতে।সবকিছু...
রেজাউল সাহেব কাগজে লিখছে নতুন কেস....
 রোগীর নিজের ভিতর জ্বীন এর অস্তিত্ব অনুভব করেন।
লিখতে লিখতেই জোবায়ের দরজায় দাড়িয়ে আসবো স্যার?
রেজাউল: ও হো ইয়াং ম্যান প্লিস কাম।
চেহারার এমন শুকনো কেন?এখন তো ভালো থাকার কথা
জোবায়ের: আপনি জানতেন আমার সন্তান হবার কথা?কিন্তু আমি আমার সন্তান কে মেরে ফেলেছি।
রেজাউল সাহেব চেয়ারে বসা থেকে দাড়িয়ে বললো হোয়াট?আর ইউ ম্যাড?
জোবায়ের বিদ্রুপ এর হাসি দিয়ে বললো সে আর নতুন কি?একটা হেল্প করবেন?
রেজাউল: কি?
জোবায়ের একটা খাম রেজাউল এর হাতে দিয়ে বললে এটা নাবিলাকে দিবেন। খামে ঠিকানা লিখা আছে
রেজাউল: কি এটা?
জোবায়ের: ডিভোর্স পেপার।আমি সাইন করে দিয়েছি।
রেজাউল: ইউ আর আউট অফ ইয়োর মাইন্ড।প্লিস বসো মাথা স্থির করো
জোবায়ের: না স্যার আমায় যেতে হবে।
রেজাউল: কোথায়?
জোবায়ের: খুনিদের জায়গা জেল এ হয়।আর নিজের সন্তান কে খুন যে করে সে পাগল ই হয়।আর তার জায়গা পাগলা গারদে।এই বলে জোবায়ের চলে গেল।
চারদিকে মানুষ এর হৈ চৈ।জোবায়ের বসে আছে রুমের এক কোনে।হয়তো এ পরিবেশ এ থাকলে নিজেকে ১০০%পাগলের কাতারে ফেলা যাবে।পাগল হওয়াই মনে হয় ভালো।তাদের কোন কষ্টের স্মৃতি থাকেনা।তারা যে যার রাজ্যে সুখী মানুষ।
-এখানে জোবায়ের কে?কথাটা শুনে জোবায়ের লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো আমি।
-আপনি আসলেই জোবায়ের?
জোবায়ের: মানে কি আমি ই জোবায়ের।
-না এখানের সবাই ই এমন ই বলে।
জোবায়ের: ওই মিয়া ফালতু কথা কেন বলো আমি জানিনা আমি কে?
-আহা চটছেন কেন?অবশ্য আপনাদের এই একটা সমস্যা এই রাগ আবার আই পানি
জোবায়ের চুপ হয়ে ভাবছে আমি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছি।।!
-চলুন আপনাকে কে যেন দেখতে এসেছেন।
জোবায়ের: কে?প্লিস বলুন
-লোকটি হেসে বলে ভাই আপনে কি বেশি পড়া লেখার চাপ না নিতে পেরে পাগল হয়ে গেছেন?
জোবায়ের রাগী চোখ নিয়েও অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে শান্ত গলায় বললো আমি পাগল নই
-মিয়া তামাশা করেন?তাইলে এইখানে কেন?ওমন সবাই ই বলে।খুনি,চোর,আর পাগল নিজেদের অস্তিত্ব মানতে পারেনা।স্বীকার করেনা।চলেন এখন অনেক সময় নষ্ট করছেন।
খুনি শব্দ টা শুনতেই বুকের ভিতর মোচর দিল জোবায়ের এর।সকাল থেকে নাবিলার মুখ টা মনে পরছে বার বার।
চিপা একটি রুম আর তাতে একটি ছোট জানালা যা দিয়ে আপন দের সাথে দেখা করে এখানের মানুষ।পাগল দের কাছে আপন রা আসতেও হয়তো ভয় পায়।ঠিক যেন চিড়িয়াখানায় খাঁচায় আটকানো পশু।
জোবায়ের জানালার কাছে যেতেই দেখলো রেজাউল সাহেব।
ও আপনি?খুঁজে পেলেন কি করে?
রেজাউল: মন দিয়ে খুঁজলে নাকি আল্লাহ কেও পাওয়া যায়।
জোবায়ের হেসে বললো আমাকে কেউ আবার মন দিয়েও খুঁজে?
রেজাউল এর আড়াল থেকে নাবিলা বের হলো।মাথা নিচু করে বলছে আমি তো খুঁজেছিলাম। মন থেকে চেয়েছিলাম তুমি সুস্থ হয়ে যাও। কিন্তু এ কি করলে তুমি?
রেজাউল সাহেব সরে গেলেন।
জানালার গ্রিল এ জোবায়ের হাত রেখে দাড়িয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে
নাবিলা হাতের উপর হাত রেখে বললো তুমি আমার চেয়েও ভালো অভিনয় করো জানো?এই যে এখানে কি ভালো ই আছো।
বউ রাগ করে চলে গেলে কই তার মান ভাঙাবে তা না
জোবায়ের এর চোখ ছলছল।
আমি আসলেই পাগল হয়ে গিয়েছি।
নাবিলা হেসে দিল
জোবায়ের: হাসছো?
নাবিলা: এই প্রথম এক পাগল যে কিনা নিজেকে পাগল বলছে।
জোবায়ের: আমি খুনি সেটা তো মানো?
নাবিলা: ভুল ছিল।দুজনের ই ভুল ছিল যার কারনে আমরা শাস্তি পেয়েছি।
জোবায়ের: তুমি ফিরে যাও। নতুন করে আর ভুল করোনা
নাবিলা: হুম যাব। ডিভোর্স পেপার নিয়ে এসেছি।সিগনেচার ও করেছি।
জোবায়ের অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বলছে দেও।
নাবিলা আগে বের হও রুম থেকে।রেজাউল স্যার পারমিশন নিয়েছে।বের হও
জোবায়ের বের হলো
নাবিলা জোবায়েরের হাতে খাম টা দিল।
জোবায়ের কাঁপা হাতে খুলে দেখলো নাবিলার সিগনেচার এর জায়গায় লিখা, মিসেস পাগল।কেয়ার অফ পাবনা।
জোবায়ের এর ভিতর থেকে কান্না চলে আসছে।কোন ভাবেই থামাতে পারছেনা।
নাবিলা জোবায়েরকে শক্ত করে ধরে বললো পাগল বাসায় চলো।বাকি জীবন টা না হয় দুজন বাসাকেই পাগলাগারদ বানিয়ে ফেলবো।
১০বছর পর...
আনাফের ৫বছর পূর্ন হলো।জোবায়ের তার ছেলের জন্মদিন খুব বড় ভাবে আয়োজন করেছে এবার। কারন তার ছেলে স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
নাবিলা এক বাটি পায়েস তুলে দিল জোবায়েরের বন্ধুর হাতে।
বন্ধু উঠে বললো ভাবির বাচ্চা হয়েছে বুঝাই যায়না। আবার বিয়ে দেয়া যায় বলতে না বলতেই আনাফ ঘুষি লাগিয়ে দিয়ে বললো আমার মাকে এসব বলবানা।
ঘর ভর্তি বাচ্চা আনাফের কান্ড দেখে হো হো করে হেসে দিল।
নাবিলা জোবায়েরের কাছে গিয়ে বলছে ছেলে বাপের রূপ ই ধারণ করবে হয়তো।
জোবায়ের হাসছে।
কেক কে ঘিরে সবাই দাড়িয়ে আছে।আনাফ ওর বাবাকে খুঁজছে। জোবায়ের এক মহিলার সাথে কথা বলছে দাড়িয়ে তা দেখে রাগে ফোস ফোস করছে আনাফ।
পাপা চলো তাড়াতাড়ি চলো বলে হাত টেনে নিয়ে গেল।
জোবায়ের আনাফ কে কোলে নিয়ে বলছে বাবা টেনে আনলে আন্টি কি ভাবলো?
আনাফ: পাপা তুমি মাকেই শুধু দেখবা।তুমি মায়ের সাথেই কথা বলবা শুধু আর কারো সাথে না।
নাবিলা থ হয়ে তাকিয়ে শুনছে।তার ছোট বাচ্চা এ কি বলছে!
জোবায়ের: কি কার মতন হয়েছে?নাকি তোমার ভিতর সুপ্ত হিংসেও আমার ছেলে পেয়েছে?হা হা হা
নাবিলা হেসে ছেলেকে কোলে নিয়ে চুমো দিয়ে বললো ভয় নেই। আর ভুল নয় রেজাউল আংকেল তো আছেন ই।

*সমাপ্ত*


writer:- Md Jobayer Ahmmed


Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]