₪ কন্যা [post no: 48]
বিকাল ৩ টার দিকে ব্যাংক ছুটি হতেই ব্যাংক থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়লাম। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা লাগতেছিল তাই।
তাই তাড়াহুড়া করে রাস্তা পার ঠিক তখনি একটা সাইকেলের সাথে ধাক্ষা লাগে। পেটের ক্ষুধায় মাথার ঠিক নাই, তাই সামনে পেলাম একটা আধলা ইটের টুকরা, সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম যে সাইকেল ওয়ালার মাথার বারটা বাজাব বলে।
পিছন ফিরে চেয়ে দেখি একটা ফুটফুটে সুন্দর পরীর মত মেয়ে। মেয়েকে দেখে পেটের ক্ষুধা মিটে গেল।
আমি অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি, আর ভাবছি মেয়েটাকে আল্লাহ কী দিয়া বানাইছে। মেয়েটার বয়স আনুমানিক ১৯ বছর হবে। মেয়েটা এত সুন্দর যে মেয়েটাকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। এদিকে মেয়েটির ঝাড়ি মারা কথায় আমার হুশ ফিরে এল?
" কী ব্যপার এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? " (মেয়েটি)
"দেখছি , পরীকে দেখছি" (আমি)
" ফাজলামু বন্ধ করেন আর, ধাক্কার জন্য সরি" (মেয়েটি)
"ঠিক আছে"(আমি)
"আচ্ছা তুমি এত গুলোমুলো কেন?" (মেয়েটি)
দিলত আমার মেজাজটা নষ্ট করে। এই সবাই কেন আমাকে গুলোমুলো ডাকে আমি নিজেও জানি না,
তাই আর কোন কথা না বলে উল্টো দিকে হাটা শুরু করলাম। মেয়েটি পিছন থেকে ডাকছিল, আমি কোন সারা দেই নি।
বাড়িতে এসে হনহন করে ডুকলাম। ডুকেই অফিসের ব্যাগ ছুড়ে মারলাম একদিকে আর কোট টা একদিকে, মায়ের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আজ নিশ্চিত কেউ আমাকে গুলোমুলো বলেছে।
আম্মুঃ কী হইছেরে বাপ, তোকে এমন দেখাচ্ছে?
আমিঃ জানি, না?
আম্মুঃ কেউ তোমাকে গুলোমুলো বলেছে?
আমিঃ তুমিও বলছ,??
আম্মুঃ নারে বাপ, মা হয়ে কখনও ছেলেকে, এভাবে বলতে নেই?
আমিঃ আচ্ছা মা সবাই আমাকে গুলোমুলো বলে কেন?
আম্মুঃ আমার ছেলে খুব সুন্দরত তাই সবাই গুলো মুলো বলে।
মা আমাকে এভাবে বুঝ দিয়ে আমার জন্য খাবার আনতে গেলেন। তাৎক্ষনিক আমার রাগটা কিছু কমছিল। তাই ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে মা এসে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিল।
[এখন আমার পরিচয়টা দেই, আমি জোবায়ের,পরিবার বলতে আম্মু-আব্বু আর ভাইয়া & আপু আছি। আর আপনারাত আর জানেন অই আমি একটু সুন্দর টাইপের হওয়ায় সবাই আমাকে গুলোমুলো ডাকে, এই নামে কেউ ডাকলে আমার পায়ের রাগ মাথায় উঠে যায়।]
ফ্রেশ হয়ে গিয়ে গুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে রাত প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল। আসলে এই ঘুমের জন্যই হয়ত আমি দিন দিন গুলোমুলো হয়ে যাচ্ছি ।
রাতে খাবার শেষ করে এসে ফেইসবুকে ডুকলাম। ডুকে একটু হোম পেইজ চ্যাক করছি, ঠিক সেই সময় একটা মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে! আমি আর এক্সেফট করি নি। কারন যেই দেখে সেই আমাকে গুলোমুলো বলে। তাই পরিচিত দশ বারজন ছাড়া আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আর কেউ নাই। তাই রিকুয়েস্ট টা জুলিয়ে রাখলাম।
তারপর দুইদিন পার হয়ে গেল। দুইদিন পর ঠিক এই সময় ফেইসবুকে ডুকলাম ডুকে দেখি মেসেজ রিকুয়েস্ট আসছে। গিয়ে দেখি দুই দিন আগের রিকুয়েস্ট পাটানো মেয়েটাই মেসেজ রিকুয়েস্ট দিছে।
আমি কিছুক্ষন ভেবে রিকুয়েস্ট এক্সেফট করলাম, তারপর দিন দিন আমাদের মধ্যে কথা বার্তা হতে থাকে, পরিচিত হলাম। একটা সময়, আমাদের রিলেশনটা জমেই গেল,
কিন্তু মজার বিষয় কী জানেন, আমি মেয়েটাকে আজঅব্ধি দেখি নি। আমি পিক বা ভিডিও কলে কথা বলতে চাইলে, সে না করত। বলত সে বাস্তবে দেখা করবে। আমি যেতাম না লজ্জা করত, আর আমাকে দেখে যদি গুলোমুলো বলে। তাই আর যাই না। অহ হ্যা মেয়েটার নামই ত বলা হয় নি, মেয়েটার নাম নাবিলা।
তা আজকে আমাদের ব্যাংক অফিসের অনুষ্টান ছিল ২০ বছর ফুর্তি উপলক্ষে। তাই আজকে আমি হলুদ একটা পাঞ্জাবি পরে গিয়েছিলাম সেই অনুষ্টানে ।
আমি অনুষ্টানে প্রবেশ করতেই সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। না জানি কেন সবাই আমার দিকে চেয়ে আছেন। তখন আমাদের অফিসের বস রাইসা মেডাম এসে আমার সামনে দাড়ালেন।
বসঃ মিঃ গুলোমুলো সাহেব আজ খুব সুন্দর লাগছেত আপনাকে।
আমিঃ আচ্ছা আপনারা আমাকে গুলোমুলো ডাকেন কেন?
বসঃ আসলে আপনি খুব চুইট ত তাই। যদি বিয়ের আগে আপনার সাথে দেখা হত তাহলে আমি আপনাকেই বিয়ে করতাম।
আমিঃ এত শখ হয়েছে । তাহলে ছেড়ে চলে আসুন আমার কাছে।
বসঃ সত্যি আমি কালই ব্যবস্থা করছি।
তারপর অনুষ্টান শেষ হতেই নাবিলাকে ফোন দিলাম আমি।
তারপর নাবিলাকে বললাম আমি তাকে দেখতে চাই। তাই সে বলল, আমাকে মীর বাজার চৌরাস্তার মোড়ে দাড়াই তে। সাথে নীল পাঞ্জাবি পড়ে।
আমি তার কথা মত পরেরদিন সেখানে দাড়ালাম। কিন্তু আমি তাকে দেখতে পেলাম না। আমি হিমুর মত দাঁড়িয়ে আছি কড়া রৌদ্রের মধ্যে। কিন্তু নাবিলার ত কোন খবর নাই।
আশ পাশ চেয়ে দেখলাম আমাকে এই কড়া রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখে দুই তলা থেকে একটা মেয়ে আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। আমি মনে মনে বুঝলাম, এটাই হয়ত নাবিলা।
এভাবে আমি মেয়েটাকে দেখতে প্রতিদিন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর মেয়েটি আমাকে দেখে খুব হাসত।
এখন আমার মন সব সময়ই ভালো থাকে, মা আমাকে খুশি থাকতে দেখে নিজেও খুশি থাকেন।
এদিকে, একদিন আমি সেই চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর সেই মেয়েটাকে দেখছি । কিন্তু আজ মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না।তাই অনেক ক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
তখন আমি সেই মেয়েটাকে দেখে একটা হুচট খেলাম। মেয়েটা একটা ছেলের হাত ধরে বাসা থেকে বেরুচ্ছে। আমি তখন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা। তাই নিরবে সেখান থেকে চলে আসলাম।
এসে বাড়িতে মন খারাপ করে ডুকলাম, এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। মা আমাকে মন খারাপ দেখে জিজ্ঞাস করলেন।
আম্মুঃ কিরে বাজান কী হইছে?
আমিঃ কই নাত কিছু নাহ?
আম্মুঃ কিছুত একটা হয়েছে, নাহলে আমার ছেলে এভাবে মন খারাপ করে এখনত বাড়িতে আসে না।
আমিঃ মা আমার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে তাই হয়ত এমন দেখাচ্ছে। আচ্ছা আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।
তারপর মা আমাকে রুমে রেখে চলে যায়। এদিকে মা যেতেই নাবিলা আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু আমি নাবিলার ফোন ধরি নাই। কিন্তু নাবিলা শতাদিক বার ফোন দিয়েছিল। রাতে ফেইসবুকে ডুকে স্ট্যাটাস দিলাম।
" আজকের পর থেকে আর ফেইসবুকে আসব না, আর সাথে কোন মেয়ের সাথেও কথা বলব না, আজ থেকে আমার কাছে মেয়ে মানেই কেবল প্রতারক, এরা প্রেম করে একজনের সাথে আর ডেটিং করে আরেক জনের সাথে"
তারপর ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে এলাম।
প্রায় সাত দিন পার হয়ে গেল। এই সাত দিন আমি ঘর থেকেই বের হইনি। এই সাত দিন খুব কষ্টে পার করেছি । নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল সেদিন। আমি খুব কষ্ট নিয়ে ফেইসবুকে ডুকলাম। সেই সময়টা ছিল দুপুর দুইটা।
আমি ফেইসবুকে ডুকে দেখি নাবিলার আইডি থেকে অনেক মেসেজ এসেছে।
প্রথম মেসেজটা ছিল:
" আজ যতক্ষন না আসবে নাবিলা ততক্ষন তোমার জন্য অপেক্ষা করবে"
দ্বিতীয় মেসেজ: জানিনা তুমি আমাকে ইগোনোর করছ কেন, আমি কী করেছি সেটা অন্তত্য আমাকে বলে যেতে পারতে,
তৃতীয় মেসেজঃ তুমি হয়ত আমাকে ভুল করছ কিন্তু এর জন্য একদিন পস্তাতে হবে। আমার ভেতরটা এখন কেমন যেন শূন্য শূন্য হয়ে গেছে!
চতুর্থ মেসেজ:
ভালবাসার মানুষ এত স্বার্থ পর কেন, যে মানুষকে সাথে সাথেই কষ্ট দিয়ে দেয়।
পঞ্চম মেসেজঃ কষ্টের দাম না জানি কত? মানুষত ফ্রীতেই দিয়ে দেয়,
ছয়তম মেসেজঃ তুমি কার সাথে পেয়েছ আমাকে? আর তুমিত আমাকে কখনই দেখ নি তাহলে বুঝলে কী করে আমি অন্য কারও সাথে রিলেশন করি।
সপ্তম মেসেজঃ তুমি আজ ফোন ধরলে না, হয় একদিন এই ফোনের জন্যই কাদবে।
আমি এই মেসেজগুলো পড়ে বুঝলাম যে আসলে আমি নাবিলাকে ভুল বুঝেছি। আমার ভুল শুধরাতে হবে বলেই ঘর থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেলাম চৌরাস্তার দিকে।
আমি চৌরাস্তার পৌছে গিয়ে অবাক হলাম সেখানে অনেক মানুষের ভিড় রয়েছে।
আমি নাবিলাকে কোথাও খুজে পেলাম না, তাই মানুষ জড়িত হওয়া স্থানে গেলাম। ভিড়ের ভিতরে ডুকতেই অবাক হয়ে গেলাম।
একটা নীল শাড়ী পড়া মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে অজ্ঞান অবস্থায়। আর সেই মেয়ে অন্য কেউ নয়। যেই মেয়ে আমাকে সাইকেল দিয়ে ধাক্ষা মেরেছিল সেই মেয়ে। আমার আর বুঝার বাকি রইল না। এই মেয়েটাই নাবিলা।
আমি সেখানে কয়েকজন লোককে জিজ্ঞাস করলাম, এই মেয়েটার কী হয়েছে। তখন একজন উত্তর দিল।
" জানিনা ভাই তবে এই মেয়েকে প্রত্যেকদিন এই জায়গায় কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকত। আজ হয়ত রোধ সহ্য করতে পারেনি তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে।"
এই কথা শুনার পর আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমি সাথে সাথেই নাবিলাকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম।
হসপিটালে যাওয়ার পর আমি নাবিলাকে ভর্তি করলাম। ঘন্টা খানেক পর নাবিলার জ্ঞান ফিরল। তখন সেই কথা ডাক্তার সাহেব এসে আমাকে একটা কথা বললেন।
নাবিলা নাকি কাকে ডাকছে ঘুমের ঘুরে। আর তার নাম হচ্ছে জোবায়ের!
আমি এই কথা শুনে দৌড়ে নাবিলার পাশে গেলাম।
আমি নাবিলার পাশে বসে আছি তখনি নাবিলা আমাকে বলে উঠল।
নাবিলাঃ জোবায়ের তুমি এসেছ?
আমিঃ হ্যা,! এখন কেমন আছ?
নাবিলাঃ ভাল? আমাকে ছেড়ে যাবে নাত?
আমিঃ নাহ? আমি এক্ষুনি বিয়ে করে তোমাকে বউ করে বাড়ি নিয়ে যাব!
নাবিলাঃ কিন্তু তোমার আম্মু কী আমাকে মেনে নিবে?
আমিঃ মেনে নিবে না মানে?
নাবিলাঃ আমিত এতিম?
আমিঃ তো এতিম হয়েছত কী হয়েছ আমার মা আছেন না।
ভালোই হলো ঝগড়া হলে বাপের বাড়ির ভয় দেখাতে পারবে না।
এদিকে মাও হসপিটালে চলে এসেছেন। এসে পিছন থেকে আমাদের কথা শুনছেন আমরা বলতেই পারিনি । তখন মা এসে আমাদের দুজনকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। দুইদিন পর ধুমধাম করে বিয়ে দেন।
বাসরাতে আমি নাবিলার কাছে গিয়ে পিছনের সাত দিনের জন্য ক্ষমা চাই। আর সাথে সব কিছু খুলে বলি। আমার এইসব কথা শুনে নাবিলা হাসতে হাসতে বলল, আসলেই তুমি গুলোমুলো।
কিন্তু আজকে আর নাবিলার উপর রাগ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এটা ভালোবাসার ডাক। যা অটুট থাকুক সারাজীবন।
তারপর আমি নাবিলাকে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে রাখলাম।
(সমাপ্ত)
Writer:- Md Jobayer Ahmmed
তাই তাড়াহুড়া করে রাস্তা পার ঠিক তখনি একটা সাইকেলের সাথে ধাক্ষা লাগে। পেটের ক্ষুধায় মাথার ঠিক নাই, তাই সামনে পেলাম একটা আধলা ইটের টুকরা, সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম যে সাইকেল ওয়ালার মাথার বারটা বাজাব বলে।
পিছন ফিরে চেয়ে দেখি একটা ফুটফুটে সুন্দর পরীর মত মেয়ে। মেয়েকে দেখে পেটের ক্ষুধা মিটে গেল।
আমি অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি, আর ভাবছি মেয়েটাকে আল্লাহ কী দিয়া বানাইছে। মেয়েটার বয়স আনুমানিক ১৯ বছর হবে। মেয়েটা এত সুন্দর যে মেয়েটাকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। এদিকে মেয়েটির ঝাড়ি মারা কথায় আমার হুশ ফিরে এল?
" কী ব্যপার এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? " (মেয়েটি)
"দেখছি , পরীকে দেখছি" (আমি)
" ফাজলামু বন্ধ করেন আর, ধাক্কার জন্য সরি" (মেয়েটি)
"ঠিক আছে"(আমি)
"আচ্ছা তুমি এত গুলোমুলো কেন?" (মেয়েটি)
দিলত আমার মেজাজটা নষ্ট করে। এই সবাই কেন আমাকে গুলোমুলো ডাকে আমি নিজেও জানি না,
তাই আর কোন কথা না বলে উল্টো দিকে হাটা শুরু করলাম। মেয়েটি পিছন থেকে ডাকছিল, আমি কোন সারা দেই নি।
বাড়িতে এসে হনহন করে ডুকলাম। ডুকেই অফিসের ব্যাগ ছুড়ে মারলাম একদিকে আর কোট টা একদিকে, মায়ের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আজ নিশ্চিত কেউ আমাকে গুলোমুলো বলেছে।
আম্মুঃ কী হইছেরে বাপ, তোকে এমন দেখাচ্ছে?
আমিঃ জানি, না?
আম্মুঃ কেউ তোমাকে গুলোমুলো বলেছে?
আমিঃ তুমিও বলছ,??
আম্মুঃ নারে বাপ, মা হয়ে কখনও ছেলেকে, এভাবে বলতে নেই?
আমিঃ আচ্ছা মা সবাই আমাকে গুলোমুলো বলে কেন?
আম্মুঃ আমার ছেলে খুব সুন্দরত তাই সবাই গুলো মুলো বলে।
মা আমাকে এভাবে বুঝ দিয়ে আমার জন্য খাবার আনতে গেলেন। তাৎক্ষনিক আমার রাগটা কিছু কমছিল। তাই ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে মা এসে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিল।
[এখন আমার পরিচয়টা দেই, আমি জোবায়ের,পরিবার বলতে আম্মু-আব্বু আর ভাইয়া & আপু আছি। আর আপনারাত আর জানেন অই আমি একটু সুন্দর টাইপের হওয়ায় সবাই আমাকে গুলোমুলো ডাকে, এই নামে কেউ ডাকলে আমার পায়ের রাগ মাথায় উঠে যায়।]
ফ্রেশ হয়ে গিয়ে গুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে রাত প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল। আসলে এই ঘুমের জন্যই হয়ত আমি দিন দিন গুলোমুলো হয়ে যাচ্ছি ।
রাতে খাবার শেষ করে এসে ফেইসবুকে ডুকলাম। ডুকে একটু হোম পেইজ চ্যাক করছি, ঠিক সেই সময় একটা মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে! আমি আর এক্সেফট করি নি। কারন যেই দেখে সেই আমাকে গুলোমুলো বলে। তাই পরিচিত দশ বারজন ছাড়া আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আর কেউ নাই। তাই রিকুয়েস্ট টা জুলিয়ে রাখলাম।
তারপর দুইদিন পার হয়ে গেল। দুইদিন পর ঠিক এই সময় ফেইসবুকে ডুকলাম ডুকে দেখি মেসেজ রিকুয়েস্ট আসছে। গিয়ে দেখি দুই দিন আগের রিকুয়েস্ট পাটানো মেয়েটাই মেসেজ রিকুয়েস্ট দিছে।
আমি কিছুক্ষন ভেবে রিকুয়েস্ট এক্সেফট করলাম, তারপর দিন দিন আমাদের মধ্যে কথা বার্তা হতে থাকে, পরিচিত হলাম। একটা সময়, আমাদের রিলেশনটা জমেই গেল,
কিন্তু মজার বিষয় কী জানেন, আমি মেয়েটাকে আজঅব্ধি দেখি নি। আমি পিক বা ভিডিও কলে কথা বলতে চাইলে, সে না করত। বলত সে বাস্তবে দেখা করবে। আমি যেতাম না লজ্জা করত, আর আমাকে দেখে যদি গুলোমুলো বলে। তাই আর যাই না। অহ হ্যা মেয়েটার নামই ত বলা হয় নি, মেয়েটার নাম নাবিলা।
তা আজকে আমাদের ব্যাংক অফিসের অনুষ্টান ছিল ২০ বছর ফুর্তি উপলক্ষে। তাই আজকে আমি হলুদ একটা পাঞ্জাবি পরে গিয়েছিলাম সেই অনুষ্টানে ।
আমি অনুষ্টানে প্রবেশ করতেই সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। না জানি কেন সবাই আমার দিকে চেয়ে আছেন। তখন আমাদের অফিসের বস রাইসা মেডাম এসে আমার সামনে দাড়ালেন।
বসঃ মিঃ গুলোমুলো সাহেব আজ খুব সুন্দর লাগছেত আপনাকে।
আমিঃ আচ্ছা আপনারা আমাকে গুলোমুলো ডাকেন কেন?
বসঃ আসলে আপনি খুব চুইট ত তাই। যদি বিয়ের আগে আপনার সাথে দেখা হত তাহলে আমি আপনাকেই বিয়ে করতাম।
আমিঃ এত শখ হয়েছে । তাহলে ছেড়ে চলে আসুন আমার কাছে।
বসঃ সত্যি আমি কালই ব্যবস্থা করছি।
তারপর অনুষ্টান শেষ হতেই নাবিলাকে ফোন দিলাম আমি।
তারপর নাবিলাকে বললাম আমি তাকে দেখতে চাই। তাই সে বলল, আমাকে মীর বাজার চৌরাস্তার মোড়ে দাড়াই তে। সাথে নীল পাঞ্জাবি পড়ে।
আমি তার কথা মত পরেরদিন সেখানে দাড়ালাম। কিন্তু আমি তাকে দেখতে পেলাম না। আমি হিমুর মত দাঁড়িয়ে আছি কড়া রৌদ্রের মধ্যে। কিন্তু নাবিলার ত কোন খবর নাই।
আশ পাশ চেয়ে দেখলাম আমাকে এই কড়া রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখে দুই তলা থেকে একটা মেয়ে আমাকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। আমি মনে মনে বুঝলাম, এটাই হয়ত নাবিলা।
এভাবে আমি মেয়েটাকে দেখতে প্রতিদিন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর মেয়েটি আমাকে দেখে খুব হাসত।
এখন আমার মন সব সময়ই ভালো থাকে, মা আমাকে খুশি থাকতে দেখে নিজেও খুশি থাকেন।
এদিকে, একদিন আমি সেই চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর সেই মেয়েটাকে দেখছি । কিন্তু আজ মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না।তাই অনেক ক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
তখন আমি সেই মেয়েটাকে দেখে একটা হুচট খেলাম। মেয়েটা একটা ছেলের হাত ধরে বাসা থেকে বেরুচ্ছে। আমি তখন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা। তাই নিরবে সেখান থেকে চলে আসলাম।
এসে বাড়িতে মন খারাপ করে ডুকলাম, এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। মা আমাকে মন খারাপ দেখে জিজ্ঞাস করলেন।
আম্মুঃ কিরে বাজান কী হইছে?
আমিঃ কই নাত কিছু নাহ?
আম্মুঃ কিছুত একটা হয়েছে, নাহলে আমার ছেলে এভাবে মন খারাপ করে এখনত বাড়িতে আসে না।
আমিঃ মা আমার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে তাই হয়ত এমন দেখাচ্ছে। আচ্ছা আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।
তারপর মা আমাকে রুমে রেখে চলে যায়। এদিকে মা যেতেই নাবিলা আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু আমি নাবিলার ফোন ধরি নাই। কিন্তু নাবিলা শতাদিক বার ফোন দিয়েছিল। রাতে ফেইসবুকে ডুকে স্ট্যাটাস দিলাম।
" আজকের পর থেকে আর ফেইসবুকে আসব না, আর সাথে কোন মেয়ের সাথেও কথা বলব না, আজ থেকে আমার কাছে মেয়ে মানেই কেবল প্রতারক, এরা প্রেম করে একজনের সাথে আর ডেটিং করে আরেক জনের সাথে"
তারপর ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে এলাম।
প্রায় সাত দিন পার হয়ে গেল। এই সাত দিন আমি ঘর থেকেই বের হইনি। এই সাত দিন খুব কষ্টে পার করেছি । নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল সেদিন। আমি খুব কষ্ট নিয়ে ফেইসবুকে ডুকলাম। সেই সময়টা ছিল দুপুর দুইটা।
আমি ফেইসবুকে ডুকে দেখি নাবিলার আইডি থেকে অনেক মেসেজ এসেছে।
প্রথম মেসেজটা ছিল:
" আজ যতক্ষন না আসবে নাবিলা ততক্ষন তোমার জন্য অপেক্ষা করবে"
দ্বিতীয় মেসেজ: জানিনা তুমি আমাকে ইগোনোর করছ কেন, আমি কী করেছি সেটা অন্তত্য আমাকে বলে যেতে পারতে,
তৃতীয় মেসেজঃ তুমি হয়ত আমাকে ভুল করছ কিন্তু এর জন্য একদিন পস্তাতে হবে। আমার ভেতরটা এখন কেমন যেন শূন্য শূন্য হয়ে গেছে!
চতুর্থ মেসেজ:
ভালবাসার মানুষ এত স্বার্থ পর কেন, যে মানুষকে সাথে সাথেই কষ্ট দিয়ে দেয়।
পঞ্চম মেসেজঃ কষ্টের দাম না জানি কত? মানুষত ফ্রীতেই দিয়ে দেয়,
ছয়তম মেসেজঃ তুমি কার সাথে পেয়েছ আমাকে? আর তুমিত আমাকে কখনই দেখ নি তাহলে বুঝলে কী করে আমি অন্য কারও সাথে রিলেশন করি।
সপ্তম মেসেজঃ তুমি আজ ফোন ধরলে না, হয় একদিন এই ফোনের জন্যই কাদবে।
আমি এই মেসেজগুলো পড়ে বুঝলাম যে আসলে আমি নাবিলাকে ভুল বুঝেছি। আমার ভুল শুধরাতে হবে বলেই ঘর থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেলাম চৌরাস্তার দিকে।
আমি চৌরাস্তার পৌছে গিয়ে অবাক হলাম সেখানে অনেক মানুষের ভিড় রয়েছে।
আমি নাবিলাকে কোথাও খুজে পেলাম না, তাই মানুষ জড়িত হওয়া স্থানে গেলাম। ভিড়ের ভিতরে ডুকতেই অবাক হয়ে গেলাম।
একটা নীল শাড়ী পড়া মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে অজ্ঞান অবস্থায়। আর সেই মেয়ে অন্য কেউ নয়। যেই মেয়ে আমাকে সাইকেল দিয়ে ধাক্ষা মেরেছিল সেই মেয়ে। আমার আর বুঝার বাকি রইল না। এই মেয়েটাই নাবিলা।
আমি সেখানে কয়েকজন লোককে জিজ্ঞাস করলাম, এই মেয়েটার কী হয়েছে। তখন একজন উত্তর দিল।
" জানিনা ভাই তবে এই মেয়েকে প্রত্যেকদিন এই জায়গায় কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকত। আজ হয়ত রোধ সহ্য করতে পারেনি তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে।"
এই কথা শুনার পর আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমি সাথে সাথেই নাবিলাকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম।
হসপিটালে যাওয়ার পর আমি নাবিলাকে ভর্তি করলাম। ঘন্টা খানেক পর নাবিলার জ্ঞান ফিরল। তখন সেই কথা ডাক্তার সাহেব এসে আমাকে একটা কথা বললেন।
নাবিলা নাকি কাকে ডাকছে ঘুমের ঘুরে। আর তার নাম হচ্ছে জোবায়ের!
আমি এই কথা শুনে দৌড়ে নাবিলার পাশে গেলাম।
আমি নাবিলার পাশে বসে আছি তখনি নাবিলা আমাকে বলে উঠল।
নাবিলাঃ জোবায়ের তুমি এসেছ?
আমিঃ হ্যা,! এখন কেমন আছ?
নাবিলাঃ ভাল? আমাকে ছেড়ে যাবে নাত?
আমিঃ নাহ? আমি এক্ষুনি বিয়ে করে তোমাকে বউ করে বাড়ি নিয়ে যাব!
নাবিলাঃ কিন্তু তোমার আম্মু কী আমাকে মেনে নিবে?
আমিঃ মেনে নিবে না মানে?
নাবিলাঃ আমিত এতিম?
আমিঃ তো এতিম হয়েছত কী হয়েছ আমার মা আছেন না।
ভালোই হলো ঝগড়া হলে বাপের বাড়ির ভয় দেখাতে পারবে না।
এদিকে মাও হসপিটালে চলে এসেছেন। এসে পিছন থেকে আমাদের কথা শুনছেন আমরা বলতেই পারিনি । তখন মা এসে আমাদের দুজনকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। দুইদিন পর ধুমধাম করে বিয়ে দেন।
বাসরাতে আমি নাবিলার কাছে গিয়ে পিছনের সাত দিনের জন্য ক্ষমা চাই। আর সাথে সব কিছু খুলে বলি। আমার এইসব কথা শুনে নাবিলা হাসতে হাসতে বলল, আসলেই তুমি গুলোমুলো।
কিন্তু আজকে আর নাবিলার উপর রাগ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এটা ভালোবাসার ডাক। যা অটুট থাকুক সারাজীবন।
তারপর আমি নাবিলাকে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে রাখলাম।
(সমাপ্ত)
Writer:- Md Jobayer Ahmmed