₪ দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান [post no: 45]
ঐ কাউ টালির মা শুনছি কিছু?
না গো রত্না ভাবী, বিহান বেলা, থেকে মেলা কাম করছি মুই। কি হইছে তোমরা শোনাও।
ঐ যে মাষ্টারের বড় ছেলের, পোয়াতি বৌর বাচ্চা হইছে। ওর নাকি একখান হাত নাই।
ইয়া আল্লাহ, এইডা কি কইলেন। হাত নাই, কার পাপে যে এমন হইল। মাষ্টারের বাড়ির সবাই তো খুব ভালো।
হ্যা ঠিক কথা কহিল, নিশ্চিত কোন পাপের কারণে এমন হইছে। যাও মুই ফের সবাইকে জানিয়ে দেও।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়ল এই কথা। আমির মাষ্টারের ছোট বউমার ছেলে হইছে, একখান হাত নেই।
আমির মাষ্টারের বাড়ি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। আমির মাষ্টার মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সব লোক দেখে গেল, সন্ধ্যায় বড় করে এক মিটিং ডাকল আমির মাষ্টার।
আরমান তুমি কি এই সন্তান কে রাখবে না মেরে ফেলবে। কথাটি বলে অন্যান্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে রইল আমির মাষ্টার।
সবাই এক স্বরে বলল না ঐ পাপের ফসল আমাদের ঘরে জায়গা হবে না।
আরমান নিচু স্বরে বলল শুধু সাতদিন সময় দেন বাবা আমার সন্তান ও আমার স্ত্রী কে নিয়ে চলে যাব বাবা। তা নিয়ে আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা এই ইচ্ছা যে এই মানব শিশু আমার ঘরে দিয়েছে। আমি খুব খুশি আলহামদুলিল্লাহ।
আর বাবা প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে আমাকে মানসিক অত্যাচার নির্যাতন করেছ সবাই। আফরা কে করেছেন শারীরিক অত্যাচার। তবে কি জানেন বাবা কঠিন সময়ে আপনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন ভাবতে পারি নাই।
আপনি তো শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। আজ আমার সন্তানের একটা হাত নেই বলে এভাবে বলছেন। আপনার কাছে যেমন সন্তানের মুল্য আছে। আমারও কাছে ঠিক তেমনি।
আর বাবা পাপের জন্য নয়। শিশু অটিজম হয় অসচেতনতার কারণে। এ ব্যাপারে ডা. সাঈদ এনাম বলেন।
অটিজম বা প্রতিবন্ধী কী কারণে হয় এটি সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন । নানান কারণে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। এর মধ্যে কিছু জেনেটিক এবং কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে।
বিভিন্ন জেনেটিক ডিজঅর্ডারে অটিজম দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রেট সিনড্রোম, ফ্রেজাইল এক্স সিনড্রোম, ডাউন সিনড্রোম, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট বা অনাকাঙ্ক্ষিত জেনেটিক মিউটেশন উল্লেখযোগ্য।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে- গর্ভাবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণ, ক্ষতিকর ঔষধ সেবন, গর্ভস্থ জটিলতা, পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ বা রেডিয়েশনের প্রভাবে অনেক সময় গর্ভস্থ ভ্রুণের মস্তিষ্ক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অটিজম হতে পারে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়েদের
রক্তক্ষরণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, হাই প্রেশারের জন্যও নবজাতকের অটিজম দেখা দিতে পারে।
কোনো ধরনের ভ্যাক্সিনের প্রভাবে শিশুদের অটিজম হবার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অটিজম ছেলে সন্তানদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
পরিবারের একটি সন্তানের অটিজম হলে পরবর্তী সন্তানের অটিজম হবার আশংকা বেশি থাকে। কখনো কখনো অটিস্টিক শিশুদের মা বা
বাবার আচার আচরণেও কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকা বিচিত্র নয়।
সময়ের আগেই জন্ম নেয়া নবজাতকের যাকে প্রি-টার্ম বেবী বলে তাদের মধ্যে অনেক সময় অটিজম হবার আশংকা বেড়ে যায়। তাছাড়া মা বা
বাবার অত্যাধিক অল্প বয়স কিংবা অত্যাধিক বয়সে জন্ম নেয়া সন্তানদের মধ্যে অনেক সময় অটিজম বেশী দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতায় অটিজম হওয়ার শংকা বেড়ে যায় বলে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সুষম খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মস্তিষ্কের বিকাশে
সহায়ক নানান রকম ভিটামিন মিনারেল সেবন, যেমন ফলিক এসিড, আয়রন, নুন্যতম চারবার শারীরিক চেক আপ ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির মাধ্যমে নবজাতকের অটিজম হবার আশংকা বহুলাংশে কমানো যায়।
আমি চলে গেলেও, আমার কর্তব্য পালন হবে ইনশাআল্লাহ। কর্তব্য পালনে ত্রুটি দেখলে জানাবেন।
সাতদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় আফরা ও আরমান। পাড়ার সবাইকে জবাব দিয়েছিল সেদিন।
আজ পঁচিশ বছর পর সেই গ্রামে যাচ্ছে আবার মাথা উঁচু করে। আজ তার সেই ছেলে মস্ত বড় ডাক্তার, একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ।
বিশ্ব অটিজম সচেতন দিবস উপলক্ষে সকল অটিজম মানুষের প্রতি আমার প্রেম নিবেদন। সর্বোপরি বলা যায় দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করুন, সমাজ পাল্টে যাবে। ওদের অবহেলা করবেন না এরা আমাদের সমাজের।
লিখাঃ- মাসুদ রানা তাসিন
না গো রত্না ভাবী, বিহান বেলা, থেকে মেলা কাম করছি মুই। কি হইছে তোমরা শোনাও।
ঐ যে মাষ্টারের বড় ছেলের, পোয়াতি বৌর বাচ্চা হইছে। ওর নাকি একখান হাত নাই।
ইয়া আল্লাহ, এইডা কি কইলেন। হাত নাই, কার পাপে যে এমন হইল। মাষ্টারের বাড়ির সবাই তো খুব ভালো।
হ্যা ঠিক কথা কহিল, নিশ্চিত কোন পাপের কারণে এমন হইছে। যাও মুই ফের সবাইকে জানিয়ে দেও।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়ল এই কথা। আমির মাষ্টারের ছোট বউমার ছেলে হইছে, একখান হাত নেই।
আমির মাষ্টারের বাড়ি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। আমির মাষ্টার মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সব লোক দেখে গেল, সন্ধ্যায় বড় করে এক মিটিং ডাকল আমির মাষ্টার।
আরমান তুমি কি এই সন্তান কে রাখবে না মেরে ফেলবে। কথাটি বলে অন্যান্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে রইল আমির মাষ্টার।
সবাই এক স্বরে বলল না ঐ পাপের ফসল আমাদের ঘরে জায়গা হবে না।
আরমান নিচু স্বরে বলল শুধু সাতদিন সময় দেন বাবা আমার সন্তান ও আমার স্ত্রী কে নিয়ে চলে যাব বাবা। তা নিয়ে আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা এই ইচ্ছা যে এই মানব শিশু আমার ঘরে দিয়েছে। আমি খুব খুশি আলহামদুলিল্লাহ।
আর বাবা প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে আমাকে মানসিক অত্যাচার নির্যাতন করেছ সবাই। আফরা কে করেছেন শারীরিক অত্যাচার। তবে কি জানেন বাবা কঠিন সময়ে আপনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন ভাবতে পারি নাই।
আপনি তো শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। আজ আমার সন্তানের একটা হাত নেই বলে এভাবে বলছেন। আপনার কাছে যেমন সন্তানের মুল্য আছে। আমারও কাছে ঠিক তেমনি।
আর বাবা পাপের জন্য নয়। শিশু অটিজম হয় অসচেতনতার কারণে। এ ব্যাপারে ডা. সাঈদ এনাম বলেন।
অটিজম বা প্রতিবন্ধী কী কারণে হয় এটি সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন । নানান কারণে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। এর মধ্যে কিছু জেনেটিক এবং কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে।
বিভিন্ন জেনেটিক ডিজঅর্ডারে অটিজম দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রেট সিনড্রোম, ফ্রেজাইল এক্স সিনড্রোম, ডাউন সিনড্রোম, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট বা অনাকাঙ্ক্ষিত জেনেটিক মিউটেশন উল্লেখযোগ্য।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে- গর্ভাবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণ, ক্ষতিকর ঔষধ সেবন, গর্ভস্থ জটিলতা, পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ বা রেডিয়েশনের প্রভাবে অনেক সময় গর্ভস্থ ভ্রুণের মস্তিষ্ক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অটিজম হতে পারে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়েদের
রক্তক্ষরণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, হাই প্রেশারের জন্যও নবজাতকের অটিজম দেখা দিতে পারে।
কোনো ধরনের ভ্যাক্সিনের প্রভাবে শিশুদের অটিজম হবার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অটিজম ছেলে সন্তানদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
পরিবারের একটি সন্তানের অটিজম হলে পরবর্তী সন্তানের অটিজম হবার আশংকা বেশি থাকে। কখনো কখনো অটিস্টিক শিশুদের মা বা
বাবার আচার আচরণেও কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকা বিচিত্র নয়।
সময়ের আগেই জন্ম নেয়া নবজাতকের যাকে প্রি-টার্ম বেবী বলে তাদের মধ্যে অনেক সময় অটিজম হবার আশংকা বেড়ে যায়। তাছাড়া মা বা
বাবার অত্যাধিক অল্প বয়স কিংবা অত্যাধিক বয়সে জন্ম নেয়া সন্তানদের মধ্যে অনেক সময় অটিজম বেশী দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতায় অটিজম হওয়ার শংকা বেড়ে যায় বলে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সুষম খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মস্তিষ্কের বিকাশে
সহায়ক নানান রকম ভিটামিন মিনারেল সেবন, যেমন ফলিক এসিড, আয়রন, নুন্যতম চারবার শারীরিক চেক আপ ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির মাধ্যমে নবজাতকের অটিজম হবার আশংকা বহুলাংশে কমানো যায়।
আমি চলে গেলেও, আমার কর্তব্য পালন হবে ইনশাআল্লাহ। কর্তব্য পালনে ত্রুটি দেখলে জানাবেন।
সাতদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় আফরা ও আরমান। পাড়ার সবাইকে জবাব দিয়েছিল সেদিন।
আজ পঁচিশ বছর পর সেই গ্রামে যাচ্ছে আবার মাথা উঁচু করে। আজ তার সেই ছেলে মস্ত বড় ডাক্তার, একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ।
বিশ্ব অটিজম সচেতন দিবস উপলক্ষে সকল অটিজম মানুষের প্রতি আমার প্রেম নিবেদন। সর্বোপরি বলা যায় দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করুন, সমাজ পাল্টে যাবে। ওদের অবহেলা করবেন না এরা আমাদের সমাজের।
লিখাঃ- মাসুদ রানা তাসিন