₪ যৌতুকের বিয়ে [post no: 42]

নীলা আপার বিয়ে হচ্ছে না।আলাপ আসে বাড়িতে।খেয়ে দেয়ে চলে যায় বরপক্ষের লোক। বাড়িতে গিয়ে ফোন করে জানায় এই বিয়ে হবে না। আব্বা প্রথম প্রথম অবশ্য জিজ্ঞেস করতেন, কেন হবে না।তারা বলতো,মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়নি।মেয়ে ছোট। চেহারা ময়লা। দাঁত বড় বড়।
এখন আর জিজ্ঞেস করেন না।
নীলা আপা একটু ছোটই।তবে একেবারে ছোট না। দাঁতও খুব বেশি বড় না। চেহারা একটু মলিন।তবে এই চেহারাকে কিছুতেই খারাপ চেহারা বলা যাবে না।তার চেয়ে কম যোগ্য, ছোট খাটো,ময়লা চেহারার মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে এই গ্রামের। ওদের বাচ্চা খাচ্চাও হয়ে গেছে।আপার কেন হচ্ছে না এটা কেউ বুঝতে পারছে না। আত্মীয় স্বজনদের ধারণা কেউ জাদু করেছে আপাকে। আব্বা ফকির কবিরাজও দেখিয়েছেন,কাজ হয়নি।নীলা আপা আজকাল কারোর সাথে তেমন কথা বলে না। চুপচাপ বারান্দার ঘরটিতে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে জানলা খুলে উত্তরের সবুজ ধানখেতে চোখ রাখে। দূরের শিমুল গাছটা দেখে। কোন কোন দিন নিজেকে অপয়া ভেবে কাঁদে।তার কান্নার আবার শব্দ হয় না। সে কাঁদে চাপা স্বরে। কান্নার সময় বালিশের পেটে মুখ ডুবিয়ে দেয়। তারপর আর কিছুতেই বাইরে যেতে পারে না কান্না। কিন্তু একদিন ঠিক আমি দেখে ফেলেছিলাম কাঁদতে।আপার ঘরে গিয়েছিলাম কলম খুঁজতে। গিয়ে দেখি দরজা খোলা।আটকাতে বোধহয় ভুলে গিয়েছিল।দরজা ফাঁক করে দেখি কাঁদছে। খুব করে কাঁদছে। কান্নার সাথে তার পিঠ কেমন উঠানামা করছে।
পাড়া প্রতিবেশীরা নানান কথা বলে। নানান গুঞ্জন।কেউ বলে,আপার কারোর সাথে গোপন সম্পর্ক আছে।কেউ বলে ওর জীবনে খারাপ কিছু ঘটেছে। কিন্তু আসলে কী এটাই?
আমরা কপাল বলে একটা বিষয়ের নাম জানি।কপালের লিখন নামেও একটা বিষয় আছে।এটা মানুষ কন্ডাতে পারে না।
আব্বা খুব চিন্তা করেন ‌।চিন্তায় তিনি আজকাল ভেঙে পড়েছেন। অবশেষে এলো। আপার জন্য আলাপ নিয়ে এলো এলাকার ঘটক।ছেলে পুলিশের কনস্টেবল।দেখতেও ভালো।অর্থ সম্পদ আছে ছেলের। কিন্তু ওদের যৌতুকের দাবী আছে।দের লাখ টাকা কেশ। ফার্নিচার ও লাগবে।অত টাকা আমরা কীভাবে দিবো?
আব্বা চিন্তায় বিভোর হয়ে গেলেন।নীলা আপা বললেন,আমার জন্য অত টেনশনের প্রয়োজন নাই আব্বা।আর কত করবেন? আমি বিয়ে করবো না। টাকার বিয়েতে আমি নাই।
এই কথা আব্বা শুনলেন না। বাস্তবতা অত সহজ না। দুদিন পর নীলা আপার জীবন টা আরো কঠিন হবে। বিয়ে ছাড়া একটা মেয়ের জীবন কতটা অনিশ্চিত তা বড়রা খুব ভালো জানে।
অবশেষে আব্বা জমি বেচার ব্যবস্হা করলেন।জমি বেচে যৌতুকের টাকা জোগাড় করলেন।ফার্নিচার
ের ব্যবস্হা করলেন। বিয়ে হয়ে গেল আপার।নীলা আপা এখন বিবাহিত। পুলিশের বউ। গ্রামের মানুষ এখন আর মন্দ বলে না। কিন্তু কদিন পরই শুরু হলো অন্য যন্ত্রণা। আপার সামান্য ত্রুটি হলেও তার শাশুড়ি খোঁচা মেরে কথা বলতে ছাড়েন না। বলেন,যেমুন চেহারা এমুন কাম!'
দুলাভাই ও তেমন ই।তার ডাকের সাথে সাথে একটা কিছু করতে না পারলেই গায়ে দুরুম দারুম কিল, ঘুষি।ননদদের টিটকারী। চেহারা সুরতের তুলনা।বলে,টাকা দিয়ে অপয়াটাকে পাড় করে দিয়েছে। বাড়িটাকেই অশুদ্ধ করে দিয়েছে।
কী যন্ত্রনা,কী যন্ত্রনা! আপার উপর দিয়ে খুব দখল যায়।
শশুর বাড়ির একটা লোকও তাকে ভালো চোখে দেখে না। মাঝেমধ্যে খোঁটা দেয়।বলে,খাট টা নর্মাল।ফকিরনীর দলে কম টাকায় জিনিস দিছে।
ওদের আত্মীয় স্বজন এলে বলে,ও মা,অত কম টাকায় অমন মেয়েটাকে গছিয়ে দিতে পারলো তোমাদের কাছে!
দুলাভাই আপাকে শুনিয়ে বলেন,তোমায় দিয়ে হচ্ছে না।আরেক বউ লাগবে আমার।
আগে ছিল আমাদের পাড়া প্রতিবেশীদের মুখে নানান গুঞ্জন, টিটকারী। আর এখন তার বরের ঘরে অর্থাৎ নিজের ঘরে।আপা এসে কেঁদে কেঁদে আমাদের বাড়িতে বলেন। এখন আব্বার চিন্তা আরো বেড়েছে। চিন্তার দখল তিনি আর নিতে পারছেন না।শরীর কেমন নেতিয়ে উঠেছে। বোধহয় আর বাঁচবেন না।আপাও কাঁদে।রাত করে বিছানার বালিশ ভিজিয়ে কাঁদে। কাঁদতে গেলেও আবার ভয় করে তার। দুলাভাই এইসব একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। বলেন,ন্যকামু।আমরা আর ভেবে পাই না এখন কী করবো!
তার চেয়ে কী ঘরেই ভালো ছিল না। নিজের ঘরে। এভাবে টাকা দিয়ে অন্যের কাছে নিজেদের ঘরের মেয়েকে তুলে দিয়ে কী লাভ হলো?তারা তো আর ভালোবেসে নেয়নি। পণ্য ভেবে নিয়েছে।পণ্যের সাথে কী আর কেউ ভালো আচরণ করে!
এখন আমরা বুঝতে পারি কী ভুল করেছি আমরা। এরচেয়ে আরো কদিন অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল আমাদের। ঠিক মানুষ এলে আপাকে তুলে দিতে পারতাম আমরা।না আসলে একা থাকতো আপা। এমন পুতুল বিয়ের চেয়ে একা থাকা কী ভালো ছিল না তার?



লিখাঃ- অনন্য শফিক

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

রিয়্যাক্টর কিং

একটি মেয়ের গল্প

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]