₪ বুয়া কাহিনী [post no: 40]
রম্য গল্পঃ
গল্পঃবুয়া কাহিনী
"সকালে ভিডিও কল করার কথা ছিলো করোনি..এখন আমি ব্যস্ত আছি,যাও..."(অভিমানের স্বরে)কথাটা বললো আমার বুয়া..
আমার বাসার কাজের বুয়া
যারে ভাবতাম পেটে বোমা মারলেও একটা শুদ্ধ কথা বের হবে না।অথচ এতোদিন পর তার মুখে স্পষ্ট উচ্চারণের কথা গুলো শুনে আমি যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না....
হা করে বুয়ার দিকে তাকিয়ে আছি..বুয়া আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো-
" আফা,আমার বফ কল দ্যাছিলো..."বলেই আমার ঘরে রাখা চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জে লাগিয়ে কাজ করতে গেল..
আমি হা করে তাকিয়ে ভাবছি....
আমার বাসার কাজের বুয়া..মেয়েটার বয়স আঠারো কি উনিশ হবে..পড়ালেখা করছে নাকি ক্লাস ফোর পর্যন্ত..দেখতে শুনতে মোটামুটি...
ও সাজতে পছন্দ করে..আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে বারবার নিজেকে দেখে.আমি আবার শখ করে কয়েকবার ওকে সাজিয়েও দিয়েছি..তারপর থেকে আমার ঘরে বেশু ঘুরঘুর করে..
যাই হোক..ও আবার আমার রুমে আসার পর আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম-
"তোরে যে গত সপ্তাহে একটা খাম দিয়েছিলাম,পাশের বাসার ছেলেকে দেওয়ার জন্য দিয়েছিলি...??"
ও মাথা চুলকায়,
"দ্যাছিলাম তো আপা..."
-ঠিক মানুষ টাকেই দিয়েছিলি তো??
-হ..হ্যারেই দ্যাছিলাম..
আমি আর কিছু বললাম না..ছেলেটা আমাদের ঠিক পাশের বিল্ডিংয়েরই।আমার বারান্দা থেকে সরাসরি দেখা যায়..ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লাগে..অনেক সুন্দর গান গায়..প্রায় সন্ধ্যাতেই গিটার হাতে গান ধরে..ভারী সুন্দর লাগে শুনতে..এমন ভাবে আমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে গায়,মনে হয় যেন আমার জন্য গাইছে..
অনেক দিন ধরেই খুব ইচ্ছে হয় কথা বলি..কিন্তু চেঁচিয়ে তো আর কথা বলা যায় না.।তাই আমার বুয়াকে দিয়ে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম, যে তার সাথে কথা বলতে আমি আগ্রহী...
সে প্রায় এক সপ্তাহ আগের কথা..বুয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরাতে আমি ছেলেটার কথা ভাবা শুরু করলাম..
বুয়া যদি সত্যিই চিঠি দিয়ে থাকে ঠিক ছেলেকেই,তবে ছেলেটা উত্তর দিলো না কেন???মনোযোগ দিয়ে ভাবছি..ঠিক ওই সময় বুয়ার ফোনে টুংটাং করে ম্যাসেজের শব্দ আসলো..আমার চিন্তা ভাঙলো.একটু বিরক্ত হলাম..একের পর এক ম্যাসেজ বোধ হয় আসতেই আছে...
আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বুয়াকে চেঁচিয়ে ডাকলাম...
বুয়া আসলো..আমার সামনেই মোবাইল টা উঠিয়ে নিলো...
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি..আজ এ কি ঘটতেছে.একবার শুদ্ধ ভাষায় কথা,আবার এতো ম্যাসেজ..আমার ফোনেও তো এতো ম্যাসেজ আসে না...!!.
ওর চেহারার অস্থির ভাব দেখে আমি আরো কৌতুহলী হয়ে উঠছি..
হঠাৎ করেই দেখি ও ওর কোমরে পেঁচানো ওড়না টা খুলে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গায়ে মেলিয়ে পরলো..
তারপর মাথার একেবারে উপরে উঠানো খোঁপা খুলে চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করলো..সব চেয়ে বেশি অবাক করলো আমাকে,যখন আমার ড্রেসিং টেবিলে থাকা লিপস্টিক টা আমার অনুমতি ছাড়াই ঠোঁটে দিচ্ছিলো...আমি আরো বড় হা করে তাকালাম ওর দিকে...
কৌতুহল মেটাতে জলদি প্রশ্ন করলাম,
"কি রে,তোর হয়েছে কি আজকে বলতো...??"
-আফা আমারে ইট্টুসখানি টাইম দেন...
আমি চুপ হয়ে গেলাম..মনে হলো ও আমার কথা শোনার জন্য না,আমি ওর কথা শোনার জন্য...
এসব করে ফিটফাট হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি মেয়ে আমার বারান্দায় যায়..ওর এমন ভাব দেখে আমার মনেই সন্দেহ হলো "ও আসলেও বুয়া নাকি এ বাসার মেয়ে...!!"
কি যেন মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখলাম,
ও বাবা.।।আমাকেই কাজের মেয়ে লাগছে..
মাথা যেন আরো বিগড়ে গেল..ফাউ চিন্তা বাদ দিয়ে আসলে ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে দেখার জন্য ওর পেছন পেছন গিয়ে এক পাশে দাঁড়ালাম..
গিয়েই যা দেখলাম তাতে আমার মাথার বড়সড় রকমের একটা বাজ পড়লো যেন...
দেখি আমার পছন্দের সেই ছেলেটা কানে ফোন নিয়ে আমার বারান্দায় মুখ করে দাঁড়িয়ে ভীষণ খোশ মেজাজে কথা বলছে..আর আমার কাজের বুয়া টাও লজ্জা পাওয়া লুক নিয়ে ছেলেটার দিকে একবার তাকাচ্ছে আর একবার নিচে তাকাচ্ছে....
একদিকে অবাক হচ্ছি,আর একদিকে মাথা গরম হচ্ছে..
আমার মেজাজ একেবারে মাথার উপরে উঠে গেছে.এই তাহলে উত্তর না আসার কারণ..??.প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।।আমি বুয়াকে ডাক দিলাম আর ও আমাকে বলে উঠলো--
"আহা...! আসছি তো.."
ওরে বাবা একি??চোরের মার দেখছি বড় গলা..আমি রাগে ক্ষোভে আম্মা আম্মা চেঁচিয়ে আম্মাকে ডাকতে গেলাম..বিরাট অন্যায় হয়ে গেছে,বিচার করা ছাড়া কথা হবে না..আম্মাকে টানতে টানতে এনে দেখি আমার বারান্দায় বুয়া আর নেই..এমনকি পুরো বাসাতেও নেই..তারপর থেকে বুয়া আর আসে না আমাদের বাসায়..এমনকি তার ফোন নাম্বার টাও বন্ধ..আর সেই ছেলেটা????
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিনারের বিখ্যাত গানটা ধরে--
"তুমি কোথায় আছো,আমি কোথায় আছি,
কেন যে দুজন আজ দুদিকে ভাসি...".
আর আমি মনের দুঃখে,জ্বালায় দরজা বন্ধ করে বসে বুয়াকে বকা দেই মনে মনে...
লেখাঃ আফসানা জামান তুলতুলি
গল্পঃবুয়া কাহিনী
"সকালে ভিডিও কল করার কথা ছিলো করোনি..এখন আমি ব্যস্ত আছি,যাও..."(অভিমানের স্বরে)কথাটা বললো আমার বুয়া..
আমার বাসার কাজের বুয়া
যারে ভাবতাম পেটে বোমা মারলেও একটা শুদ্ধ কথা বের হবে না।অথচ এতোদিন পর তার মুখে স্পষ্ট উচ্চারণের কথা গুলো শুনে আমি যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না....
হা করে বুয়ার দিকে তাকিয়ে আছি..বুয়া আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো-
" আফা,আমার বফ কল দ্যাছিলো..."বলেই আমার ঘরে রাখা চার্জার দিয়ে মোবাইল চার্জে লাগিয়ে কাজ করতে গেল..
আমি হা করে তাকিয়ে ভাবছি....
আমার বাসার কাজের বুয়া..মেয়েটার বয়স আঠারো কি উনিশ হবে..পড়ালেখা করছে নাকি ক্লাস ফোর পর্যন্ত..দেখতে শুনতে মোটামুটি...
ও সাজতে পছন্দ করে..আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে বারবার নিজেকে দেখে.আমি আবার শখ করে কয়েকবার ওকে সাজিয়েও দিয়েছি..তারপর থেকে আমার ঘরে বেশু ঘুরঘুর করে..
যাই হোক..ও আবার আমার রুমে আসার পর আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম-
"তোরে যে গত সপ্তাহে একটা খাম দিয়েছিলাম,পাশের বাসার ছেলেকে দেওয়ার জন্য দিয়েছিলি...??"
ও মাথা চুলকায়,
"দ্যাছিলাম তো আপা..."
-ঠিক মানুষ টাকেই দিয়েছিলি তো??
-হ..হ্যারেই দ্যাছিলাম..
আমি আর কিছু বললাম না..ছেলেটা আমাদের ঠিক পাশের বিল্ডিংয়েরই।আমার বারান্দা থেকে সরাসরি দেখা যায়..ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লাগে..অনেক সুন্দর গান গায়..প্রায় সন্ধ্যাতেই গিটার হাতে গান ধরে..ভারী সুন্দর লাগে শুনতে..এমন ভাবে আমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে গায়,মনে হয় যেন আমার জন্য গাইছে..
অনেক দিন ধরেই খুব ইচ্ছে হয় কথা বলি..কিন্তু চেঁচিয়ে তো আর কথা বলা যায় না.।তাই আমার বুয়াকে দিয়ে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম, যে তার সাথে কথা বলতে আমি আগ্রহী...
সে প্রায় এক সপ্তাহ আগের কথা..বুয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরাতে আমি ছেলেটার কথা ভাবা শুরু করলাম..
বুয়া যদি সত্যিই চিঠি দিয়ে থাকে ঠিক ছেলেকেই,তবে ছেলেটা উত্তর দিলো না কেন???মনোযোগ দিয়ে ভাবছি..ঠিক ওই সময় বুয়ার ফোনে টুংটাং করে ম্যাসেজের শব্দ আসলো..আমার চিন্তা ভাঙলো.একটু বিরক্ত হলাম..একের পর এক ম্যাসেজ বোধ হয় আসতেই আছে...
আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বুয়াকে চেঁচিয়ে ডাকলাম...
বুয়া আসলো..আমার সামনেই মোবাইল টা উঠিয়ে নিলো...
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি..আজ এ কি ঘটতেছে.একবার শুদ্ধ ভাষায় কথা,আবার এতো ম্যাসেজ..আমার ফোনেও তো এতো ম্যাসেজ আসে না...!!.
ওর চেহারার অস্থির ভাব দেখে আমি আরো কৌতুহলী হয়ে উঠছি..
হঠাৎ করেই দেখি ও ওর কোমরে পেঁচানো ওড়না টা খুলে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গায়ে মেলিয়ে পরলো..
তারপর মাথার একেবারে উপরে উঠানো খোঁপা খুলে চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করলো..সব চেয়ে বেশি অবাক করলো আমাকে,যখন আমার ড্রেসিং টেবিলে থাকা লিপস্টিক টা আমার অনুমতি ছাড়াই ঠোঁটে দিচ্ছিলো...আমি আরো বড় হা করে তাকালাম ওর দিকে...
কৌতুহল মেটাতে জলদি প্রশ্ন করলাম,
"কি রে,তোর হয়েছে কি আজকে বলতো...??"
-আফা আমারে ইট্টুসখানি টাইম দেন...
আমি চুপ হয়ে গেলাম..মনে হলো ও আমার কথা শোনার জন্য না,আমি ওর কথা শোনার জন্য...
এসব করে ফিটফাট হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি মেয়ে আমার বারান্দায় যায়..ওর এমন ভাব দেখে আমার মনেই সন্দেহ হলো "ও আসলেও বুয়া নাকি এ বাসার মেয়ে...!!"
কি যেন মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখলাম,
ও বাবা.।।আমাকেই কাজের মেয়ে লাগছে..
মাথা যেন আরো বিগড়ে গেল..ফাউ চিন্তা বাদ দিয়ে আসলে ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে দেখার জন্য ওর পেছন পেছন গিয়ে এক পাশে দাঁড়ালাম..
গিয়েই যা দেখলাম তাতে আমার মাথার বড়সড় রকমের একটা বাজ পড়লো যেন...
দেখি আমার পছন্দের সেই ছেলেটা কানে ফোন নিয়ে আমার বারান্দায় মুখ করে দাঁড়িয়ে ভীষণ খোশ মেজাজে কথা বলছে..আর আমার কাজের বুয়া টাও লজ্জা পাওয়া লুক নিয়ে ছেলেটার দিকে একবার তাকাচ্ছে আর একবার নিচে তাকাচ্ছে....
একদিকে অবাক হচ্ছি,আর একদিকে মাথা গরম হচ্ছে..
আমার মেজাজ একেবারে মাথার উপরে উঠে গেছে.এই তাহলে উত্তর না আসার কারণ..??.প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।।আমি বুয়াকে ডাক দিলাম আর ও আমাকে বলে উঠলো--
"আহা...! আসছি তো.."
ওরে বাবা একি??চোরের মার দেখছি বড় গলা..আমি রাগে ক্ষোভে আম্মা আম্মা চেঁচিয়ে আম্মাকে ডাকতে গেলাম..বিরাট অন্যায় হয়ে গেছে,বিচার করা ছাড়া কথা হবে না..আম্মাকে টানতে টানতে এনে দেখি আমার বারান্দায় বুয়া আর নেই..এমনকি পুরো বাসাতেও নেই..তারপর থেকে বুয়া আর আসে না আমাদের বাসায়..এমনকি তার ফোন নাম্বার টাও বন্ধ..আর সেই ছেলেটা????
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিনারের বিখ্যাত গানটা ধরে--
"তুমি কোথায় আছো,আমি কোথায় আছি,
কেন যে দুজন আজ দুদিকে ভাসি...".
আর আমি মনের দুঃখে,জ্বালায় দরজা বন্ধ করে বসে বুয়াকে বকা দেই মনে মনে...
লেখাঃ আফসানা জামান তুলতুলি