₪ সময়ের প্রতিশোধ [post no: 37]
রফিক সাহেব একজন ব্যাংকার। তার স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে তুলিকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসারে সুখের কমতি ছিলো না। তুলি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। যেমন সুন্দরী তেমনি বুদ্ধিমতি মেয়ে তুলি!
রফিক সাহেবের অনেক স্বপ্ন মেয়েকে নিয়ে, মেয়েকে মেডিকেলে পড়াবে তার অনেক দিনের শখ।
হঠাৎ একদিন তুলি কোচিং করে আর বাসায় ফিরে নি। প্রতি দিন সন্ধ্যার আগেই চলে আসে কিন্তু আজ ফিরে নি, রফিক সাহেব আর স্ত্রী সালেহা বেগম খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
মেয়েকে খুজতে রফিক সাহেব রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন।
কোচিং রাস্তা বন্ধু বান্ধবের বাসা সব জায়গাই খুজলেন কিন্তু কোথাও তার মেয়েকে খুজে পেলেন না
বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করলেন।
আশে পাশের মানুষ বলতে লাগলো হয়তো পালিয়ে গেছে, কিন্তু রফিক সাহেব ও তার স্ত্রী তা মানতে নারাজ।
এভাবেই রাত কেটে গেলো।
পরের দিন ভোরে পুলিশ রফিক সাহেব কে ফোন করে একটা হসপিটালের এড্রেস দেন আর দ্রুত সেখানে আসতে বলেন।
রফিক সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে হাসাপাতালে গিয়ে দেখেন তাদের মেয়ে তুলি আই সি ইউ তে।
হুম কিছু বখাটে ছেলে তার আদরের মেয়েটিকে ধর্ষন শেষে রাস্তায় ফেলে যান, পুলিশ যখন বর্ণনা দিচ্ছিলেন রফিক সাহেব তখন থরথর করে কাপছিলেন।
তার মেয়েটা আজ এতো টা কষ্ট পাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর একজন ডাক্তার রফিক সাহেব কে তার চেম্বারে ডেকে পাঠান, রফিক সাহেব চেম্বারে গিয়ে অসহায়ের মতো আকুতি মিনতি করে কাদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, প্লিজ আমার মেয়েটাকে বাচান প্লিজ ওর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না আমার।
ড. রিনা তখন রফিক সাহেব কে বললেন স্যার আমাকে কি চিনতে পেরেছেন?
পরিচিত কন্ঠ শুনে রফিক সাহেব চমকে উঠলেন, রিনার দিকে তাকিয়ে তিনি কেপে উঠলেন।
রিনা বলতে লাগলেন আজ থেকে ১৫ বছর আগে ঠিক এভাবেই আপনিও এক কিশোরী কে একা বাসায় পড়াতে গিয়ে নির্মম ভাবে ধর্ষন করে ছিলেন মনে আছে?
রফিক সাহেব লজ্জায় মাথা নিচু করে কাদতে লাগলেন।
রিনা বলতে লাগলো, স্যার হয়ে আপনি সেদিন যে কাজটি করেছিলেন আজ তারই পাপের ফল ভোগ করছে আপনারই মেয়ে।
আমি সেদিন আত্মহত্যা করিনি, আল্লাহ এর কাছে শুধু এর বিচার চেয়েছিলাম আর তার বিচার এতো বছর পর নিজের চোখে দেখবো ভাবিনি।
রফিক সাহেব কোনো কথা বললেন না, শুধু কেদে গেলেন অনুশুচনায় আজ সে ভরাক্রান্ত।
রিনার কথা গুলি সালেহা বেগম বাহির থেকে শুনছিলেন। তিনি তার কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না, তার স্বামী ও একজন ধর্ষক।
সেদিন আর সালেহা বেগম কিছুই বলেন নি।
তার ১ মাস পরে তুলি যখন মোটামুটি সুস্থ সালেহা বেগম রফিক সাহেব কে কিছু না জানিয়ে তুলিকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যায়।
কোথায় গেছে কেনো গেছে তার কারন বলে যায় নি।
সেই থেকে রফিক সাহেব বিরহে একাকীত্বে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
মানুষের কর্মের ফল তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে হোক সেটা দুনিয়ায় বা আখিরাতে।
লিখাঃ- সিনথিয়া অরয়া