₪ গার্মেন্টস কর্মী [post no: 32]
'রঙধনু হোটেলে যুবতীর রহস্যজনক মৃত্যু।'
পত্রিকার পাতাতে চোখ বুলাতেই চমকে উঠে অাশফাক। সারা শরীর অনেকটা ঘামতে থাকে তার। মেয়েটার লাশটা দেখে গা শিউরে উঠছে বারবার। মেয়েটার অাকুতি বারবার তার কর্ণকুহরে ঢুকছিলো,
'আপনি আমার সাথে বেঈমানী করলেন? যান চলে যান। আপনাকে আর সহ্য হচ্ছে না আমার।'
রাতের দৃশ্যগুলো চোখে ভাসার সাথে সাথেই গা বেয়ে দরদর করে ঘাম বের হতে লাগলো। শীতকাল আসছে, চারদিকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। ঠান্ডার মধ্যেও সিলিং ফ্যানটা ফুল ভোল্টে চালিয়ে দিলো সে। গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে অাসছে।
.
'স্যার ডেকেছেন?'
নিলুর অাওয়াজ শুনে মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকায় অাশফাক সাহেব। নিজের কাজ করা বাদ দিয়ে বলে,
'আজকে না আমাদের বাইরে ডিনার করতে যাওয়ার কথা?'
স্যারের কথায় কিছুটা ইতস্তত করতে থাকে নিলু। এই গার্মেন্টসে দেড় মাস হলো সে জয়েন করেছে। গরীব মায়ের সংসারে এই বেতনের টাকাটা কিছুটা হলেও কাজে লাগে।
যবে থেকে সে এখানে জয়েন করেছে তবে থেকে সে অাশফাক সাহেবের লোলুপ দৃষ্টির বলি হচ্ছে।
তার কলিগরা তাকে বলে,
'তুই যাই বলিস নিলু, স্যার খুশি থাকলে তোর বেতন সাত হাজার থেকে দশে গিয়ে ঠেকবে। ডিনারের অফার করেছে মানে বুঝতে পারছিস? এবার একটু খুশি করতে পারলে দুই মাসেই প্রোমোশন।'
নিলু অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে, স্যার তো ডিনারের অফার করেছে, খারাপ কিছুর তো অফার করেনি।
'কী ব্যাপার নিলু? যাবে না?'
কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বলে উঠলো,
'আমার বাসা যাওয়া দরকার। মা খুব অসুস্থ।'
কিছুক্ষণ হেসে নেয় অাশফাক সাহেব। তারপর বলে,
'ডিনার শেষে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো। এবার খুশি তো?'
শেষপর্যন্ত স্যারের কথায় সায় দেয় নিলু।
পুরো নাম নিলুফা ইয়াসমিন। তার বাবার দেয়া নাম। ভাগ্যের কারণে আজ সে গার্মেন্টস কর্মী।
অাশফাক সাহেব চটাচট খাবারগুলো গিলছে। অপরদিকে নিলু খাবারগুলো শুধু নেড়েই যাচ্ছে। কিছুটা রাগতঃস্বরে অাশফাক বলে উঠে,
'খাচ্ছো না কেন? খাও।'
মুখটা বাকা করে নিলু। বলে,
'খেতে ইচ্ছে করছে না আমার। আপনি খান স্যার।'
চারদিক তাকায় অাশফাক। তারপর বলে,
'খবরদার আর স্যার বলবা না। বাইরে নাম ধরে ডাকবা। স্যার ডাকলে মানুষ কী ভাববে বলো তো?
'আচ্ছা।'
'আচ্ছা খাবার না খাও, জুসটা অন্তত খাও।'
'আচ্ছা।'
অাশফাকের কথায় জুসটা খেতে থাকে নিলু। তার চোখে-মুখে অজানা এক ভয়ের সংকেত। বারবার সে অাশফাকের দিকে তাকাচ্ছে। নাহ! লোকটা তার দিকে তাকিয়ে নেই। চুপচাপ নিজের খাওয়া খাচ্ছে।
তারপর আর কিছুই মনে নেই নিলুর। নিজেকে অাবিষ্কার করলো কোনো এক হোটেলের বেডরুমে। তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে অাশফাক। নিজেকে খুব অাপত্তিকর অবস্থায় মনে হলো নিলুর। সত্যি তো, তার শরীরে পোশাক নেই। খুব দ্রুত অাশফাককে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের কাপড় পরতে লাগলো সে। অাশফাক ঘুমন্ত চোখে বলে উঠলো,
'আরে করছো কী? এভাবে উঠে পড়লে যে!'
'আপনি আমার ইজ্জতটুকু কেড়ে নিলেন? আপনাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু আপনি সেটা ছারখার করে দিলেন!'
বলেই নিলু কাঁদতে লাগলো। অাশফাক তাকে কাছে টেনে বললো,
'তোমাকে খুব ভালোবাসি নিলু। আমার ছোট বউ বানাবো তোমাকে।'
'আপনি চলে যান আমার সামন থেকে। আপনি একটা প্রতারক। আপনি এখন আর এক মুহূর্ত থাকলে আমি চিৎকার করবো না হলে অাত্মহত্যা করবো। আপনাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না।'
'আচ্ছা যাচ্ছি।'
পত্রিকার পাতায় চোখ যেতেই ফের চমকে উঠলো সে। লাশটা যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মুখটা বারবার ভয়ানক দৃশ্যে পরিণত হচ্ছে। এমনটা দেখার সাথে সাথে পত্রিকার পাতাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।
একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে। একি! গলা অাঁটকে যাচ্ছে কেন?
সেই পরিচিত মাথাটা বের হয়ে যেন বলছে,
'আমাকে মেরে ফেলে তুই বাঁচবি? তোকেও আমি মেরে ফেলবো। হাহাহাহাহাহাহা। তোকে আমি বাঁচতে দেব না।'
শরীরবিহীন মাথার বিভৎস হাসি দেখে অাশফাক বলে উঠলো,
'নিলু আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর এ ভুল করবো না।'
মাথাটা ফের বিভৎস হাসি দিয়ে বললো,
'তোর ক্ষমা নেই শয়তান। তুই আরও মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছিস। সত্যি করে বলতো, তুই মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কান্না শুনতে পাস না?'
কাঁদতে কাঁদতে অাশফাক বললো,
'হ্যাঁ পাই। আমাকে ছেড়ে দাও নিলু। আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য তোমার সাথে রুম ডেট করেছি।'
'মিথ্যে বলছিস তুই। সবাইকে তুই একই কথা বলতিস। তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সায়মা, মিলি, জুলেখা, স্বপ্না, রাবেয়া এদের কথা মনে করতে থাক।'
এই বলে গলাটা খুব জোরে টিপে ধরলো মাথাটা। খুব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো অাশফাক।
'স্যার আপনার কী হয়েছে? এমন করছেন কেন?'
কেয়ারটেকার রাজুর কথায় তার দিকে তাকালো সে। নাহ! কোনো মাথা তো নেই। নিলুও নেই। তবে তার শরীর যে ঘেমে গেছে এটা সে ঢের বুঝতে পারছে।
'স্যার পানি খাবেন? আপনি মনে হয় কোনোকিছু সম্পর্কে খুব টেনশন করছেন।'
'হ্যাঁ। এক গ্লাস পানি দাও তো।'
রাজু জগ থেকে এক গ্লাস পানি স্যারের দিকে এগিয়ে দিলো। গ্লাসের পানিটুকু হাতে নিয়ে মুখে ধরতেই চমকে উঠলো অাশফাক। পানি নয়, এ যেন রক্ত!
ছুঁড়ে মারলো রাজুর দিকে। আর চিৎকার করে বলে উঠলো,
'রক্ত!'
রাজু কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
'স্যার কোথায় রক্ত? এ তো পানি!'
ঠিকই তো! ফ্লোরে পানি পড়ে অাছে। রক্ত কোথায়! নিজে নিজে একটা ঢোক গিললো অাশফাক। রাজুকে যেতে বললো সে। রাজু চলে যাওয়ার পর ফ্লোরে পড়ে থাকার পানি অংশটুকু রক্তে পরিণত হলো। আবারও অাশ্চর্য হলো সে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,
গলাটা ঠিক করে ফোনটা তুললো অাশফাক।
'অাশফাক সাহেব বলছেন?'
'হ্যাঁ বলছি।'
'আমি রঙধনু হোটেল থেকে বলছি। আপনি যে রুমটা গতকাল বুক করেছিলেন সেখানে একজন যুবতীর লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ আপনাকে..........'
লোকটার কথা শেষ হতে না হতে ফোনটা কেটে দিলো অাশফাক। ফের একটা বিভৎস হাসির অাওয়াজ শুনতে পেল সে। চারদিকে তাকালো, নাহ! কিছুই নেই।
হঠাৎ চোখ গেল ফ্যানের দিকে, ফ্যানটা যেন তার দিতে তেড়ে অাসছে। অাবারও খুব জোরে চিৎকার দিলো সে।
রাজু আবারও ছুটে অাসলো। এসে দেখলো, অাশফাক ফ্লোরে পড়ে আছে।
স্যারকে ফ্লোর থেকে তুলে বললো,
'স্যার আপনি মনে হয় কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন। আজ বাসা গিয়ে রেস্ট করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
রাজুর কথায় সায় দিলো অাশফাক। রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে গাড়ি বের করলো সে। চারপাশে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে সে। কী করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
এদিকে রেশমা যদি জানতে পারতে তার স্বামী কোনো মেয়েকে নিয়ে রুম বুক করেছিলো তাহলে নিশ্চিত সেও অাত্মহত্যা করবে। সবদিকেই বিপদ। অাপাতত বাসা যাওয়া যাক। পরে পুলিশ অাসলে দেখা যাবে। এমনটা ভেবে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো সে।
একি! গাড়ি ব্রেকফেইল করেছে! বুকের হৃদস্পন্দন বহু গুন বেড়ে গেছে। গাড়ির সামনে যা পাচ্ছে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। ভাগ্যিস লোকগুলো গাড়ির এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে পালাচ্ছে আর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ সে দেখতে পেল সামনে নিলু! গাড়ি কনট্রোল করতে পারলো না। তার উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দিলো।
নাহ! নিলু তো মরেনি। ফের সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। আবার যেন সে তার উপর দিয়েই গাড়িটা চালিয়ে দিলো।
এবার মনে হচ্ছে তার জীবনের স্তর সাঙ হতে চলেছে। খুব শীঘ্রই সে একটা ব্রিজের নিচে গাড়িসহ পড়তে চলেছে। চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো অাশফাক।
রেশমা দৌড়ে এসে বললো,
'একি! কী হয়েছে তোমার? এভাবে চিৎকার করছো কেন?'
অাশফাক চোখ খুললো। নাহ! অাশেপাশে তো কোনো ব্রিজ নেই। এতক্ষণ সে যা দেখছিলো পুরোটাই স্বপ্ন। বুকের ভেতরটা এখনো দুরুদুরু করছে। রেশমা তাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে ভয়ে বললো,
'না না, আমি পানি খাবো না।'
কথাটা বলেই ঘড়ির দিকে তাকালো সে। সাতটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এখন তাকে উঠতে হবে। রেশমাকে বলে উঠলো,
'আজ কী বার রেশমা?'
'কেন? সোমবার আজ। ভুলে গেলে?'
'ওহ!'
রেশমা চলে গেল। অাশফাক বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো, 'আজই তো নিলুকে সে ডিনারে অফার করেছে। তাহলে এতক্ষণ যা দেখছিলো তা কী তারই পূর্বাভাষ!' আপাতত কোনোকিছু বুঝে আসে না অাশফাকের। শুধু এতটুকুই বুঝতে পারছে, সে যা ইতিপূর্বে করছিলো তা খুবই খারাপ ছিলো এবং আজকে যা করতে যাচ্ছিলো সেটাও তার অনুরূপ। আপাতত এসব থেকে তাকে বেঁচে থাকতে হবে।
(সমাপ্ত)
লিখাঃ- সাজ্জাদ অালম বিন সাইফুল ইসলাম
পত্রিকার পাতাতে চোখ বুলাতেই চমকে উঠে অাশফাক। সারা শরীর অনেকটা ঘামতে থাকে তার। মেয়েটার লাশটা দেখে গা শিউরে উঠছে বারবার। মেয়েটার অাকুতি বারবার তার কর্ণকুহরে ঢুকছিলো,
'আপনি আমার সাথে বেঈমানী করলেন? যান চলে যান। আপনাকে আর সহ্য হচ্ছে না আমার।'
রাতের দৃশ্যগুলো চোখে ভাসার সাথে সাথেই গা বেয়ে দরদর করে ঘাম বের হতে লাগলো। শীতকাল আসছে, চারদিকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। ঠান্ডার মধ্যেও সিলিং ফ্যানটা ফুল ভোল্টে চালিয়ে দিলো সে। গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে অাসছে।
.
'স্যার ডেকেছেন?'
নিলুর অাওয়াজ শুনে মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকায় অাশফাক সাহেব। নিজের কাজ করা বাদ দিয়ে বলে,
'আজকে না আমাদের বাইরে ডিনার করতে যাওয়ার কথা?'
স্যারের কথায় কিছুটা ইতস্তত করতে থাকে নিলু। এই গার্মেন্টসে দেড় মাস হলো সে জয়েন করেছে। গরীব মায়ের সংসারে এই বেতনের টাকাটা কিছুটা হলেও কাজে লাগে।
যবে থেকে সে এখানে জয়েন করেছে তবে থেকে সে অাশফাক সাহেবের লোলুপ দৃষ্টির বলি হচ্ছে।
তার কলিগরা তাকে বলে,
'তুই যাই বলিস নিলু, স্যার খুশি থাকলে তোর বেতন সাত হাজার থেকে দশে গিয়ে ঠেকবে। ডিনারের অফার করেছে মানে বুঝতে পারছিস? এবার একটু খুশি করতে পারলে দুই মাসেই প্রোমোশন।'
নিলু অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে, স্যার তো ডিনারের অফার করেছে, খারাপ কিছুর তো অফার করেনি।
'কী ব্যাপার নিলু? যাবে না?'
কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বলে উঠলো,
'আমার বাসা যাওয়া দরকার। মা খুব অসুস্থ।'
কিছুক্ষণ হেসে নেয় অাশফাক সাহেব। তারপর বলে,
'ডিনার শেষে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো। এবার খুশি তো?'
শেষপর্যন্ত স্যারের কথায় সায় দেয় নিলু।
পুরো নাম নিলুফা ইয়াসমিন। তার বাবার দেয়া নাম। ভাগ্যের কারণে আজ সে গার্মেন্টস কর্মী।
অাশফাক সাহেব চটাচট খাবারগুলো গিলছে। অপরদিকে নিলু খাবারগুলো শুধু নেড়েই যাচ্ছে। কিছুটা রাগতঃস্বরে অাশফাক বলে উঠে,
'খাচ্ছো না কেন? খাও।'
মুখটা বাকা করে নিলু। বলে,
'খেতে ইচ্ছে করছে না আমার। আপনি খান স্যার।'
চারদিক তাকায় অাশফাক। তারপর বলে,
'খবরদার আর স্যার বলবা না। বাইরে নাম ধরে ডাকবা। স্যার ডাকলে মানুষ কী ভাববে বলো তো?
'আচ্ছা।'
'আচ্ছা খাবার না খাও, জুসটা অন্তত খাও।'
'আচ্ছা।'
অাশফাকের কথায় জুসটা খেতে থাকে নিলু। তার চোখে-মুখে অজানা এক ভয়ের সংকেত। বারবার সে অাশফাকের দিকে তাকাচ্ছে। নাহ! লোকটা তার দিকে তাকিয়ে নেই। চুপচাপ নিজের খাওয়া খাচ্ছে।
তারপর আর কিছুই মনে নেই নিলুর। নিজেকে অাবিষ্কার করলো কোনো এক হোটেলের বেডরুমে। তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে অাশফাক। নিজেকে খুব অাপত্তিকর অবস্থায় মনে হলো নিলুর। সত্যি তো, তার শরীরে পোশাক নেই। খুব দ্রুত অাশফাককে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের কাপড় পরতে লাগলো সে। অাশফাক ঘুমন্ত চোখে বলে উঠলো,
'আরে করছো কী? এভাবে উঠে পড়লে যে!'
'আপনি আমার ইজ্জতটুকু কেড়ে নিলেন? আপনাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু আপনি সেটা ছারখার করে দিলেন!'
বলেই নিলু কাঁদতে লাগলো। অাশফাক তাকে কাছে টেনে বললো,
'তোমাকে খুব ভালোবাসি নিলু। আমার ছোট বউ বানাবো তোমাকে।'
'আপনি চলে যান আমার সামন থেকে। আপনি একটা প্রতারক। আপনি এখন আর এক মুহূর্ত থাকলে আমি চিৎকার করবো না হলে অাত্মহত্যা করবো। আপনাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না।'
'আচ্ছা যাচ্ছি।'
পত্রিকার পাতায় চোখ যেতেই ফের চমকে উঠলো সে। লাশটা যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মুখটা বারবার ভয়ানক দৃশ্যে পরিণত হচ্ছে। এমনটা দেখার সাথে সাথে পত্রিকার পাতাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।
একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে। একি! গলা অাঁটকে যাচ্ছে কেন?
সেই পরিচিত মাথাটা বের হয়ে যেন বলছে,
'আমাকে মেরে ফেলে তুই বাঁচবি? তোকেও আমি মেরে ফেলবো। হাহাহাহাহাহাহা। তোকে আমি বাঁচতে দেব না।'
শরীরবিহীন মাথার বিভৎস হাসি দেখে অাশফাক বলে উঠলো,
'নিলু আমাকে ছেড়ে দাও। আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর এ ভুল করবো না।'
মাথাটা ফের বিভৎস হাসি দিয়ে বললো,
'তোর ক্ষমা নেই শয়তান। তুই আরও মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছিস। সত্যি করে বলতো, তুই মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কান্না শুনতে পাস না?'
কাঁদতে কাঁদতে অাশফাক বললো,
'হ্যাঁ পাই। আমাকে ছেড়ে দাও নিলু। আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য তোমার সাথে রুম ডেট করেছি।'
'মিথ্যে বলছিস তুই। সবাইকে তুই একই কথা বলতিস। তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সায়মা, মিলি, জুলেখা, স্বপ্না, রাবেয়া এদের কথা মনে করতে থাক।'
এই বলে গলাটা খুব জোরে টিপে ধরলো মাথাটা। খুব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো অাশফাক।
'স্যার আপনার কী হয়েছে? এমন করছেন কেন?'
কেয়ারটেকার রাজুর কথায় তার দিকে তাকালো সে। নাহ! কোনো মাথা তো নেই। নিলুও নেই। তবে তার শরীর যে ঘেমে গেছে এটা সে ঢের বুঝতে পারছে।
'স্যার পানি খাবেন? আপনি মনে হয় কোনোকিছু সম্পর্কে খুব টেনশন করছেন।'
'হ্যাঁ। এক গ্লাস পানি দাও তো।'
রাজু জগ থেকে এক গ্লাস পানি স্যারের দিকে এগিয়ে দিলো। গ্লাসের পানিটুকু হাতে নিয়ে মুখে ধরতেই চমকে উঠলো অাশফাক। পানি নয়, এ যেন রক্ত!
ছুঁড়ে মারলো রাজুর দিকে। আর চিৎকার করে বলে উঠলো,
'রক্ত!'
রাজু কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
'স্যার কোথায় রক্ত? এ তো পানি!'
ঠিকই তো! ফ্লোরে পানি পড়ে অাছে। রক্ত কোথায়! নিজে নিজে একটা ঢোক গিললো অাশফাক। রাজুকে যেতে বললো সে। রাজু চলে যাওয়ার পর ফ্লোরে পড়ে থাকার পানি অংশটুকু রক্তে পরিণত হলো। আবারও অাশ্চর্য হলো সে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,
গলাটা ঠিক করে ফোনটা তুললো অাশফাক।
'অাশফাক সাহেব বলছেন?'
'হ্যাঁ বলছি।'
'আমি রঙধনু হোটেল থেকে বলছি। আপনি যে রুমটা গতকাল বুক করেছিলেন সেখানে একজন যুবতীর লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ আপনাকে..........'
লোকটার কথা শেষ হতে না হতে ফোনটা কেটে দিলো অাশফাক। ফের একটা বিভৎস হাসির অাওয়াজ শুনতে পেল সে। চারদিকে তাকালো, নাহ! কিছুই নেই।
হঠাৎ চোখ গেল ফ্যানের দিকে, ফ্যানটা যেন তার দিতে তেড়ে অাসছে। অাবারও খুব জোরে চিৎকার দিলো সে।
রাজু আবারও ছুটে অাসলো। এসে দেখলো, অাশফাক ফ্লোরে পড়ে আছে।
স্যারকে ফ্লোর থেকে তুলে বললো,
'স্যার আপনি মনে হয় কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন। আজ বাসা গিয়ে রেস্ট করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
রাজুর কথায় সায় দিলো অাশফাক। রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে গাড়ি বের করলো সে। চারপাশে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে সে। কী করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
এদিকে রেশমা যদি জানতে পারতে তার স্বামী কোনো মেয়েকে নিয়ে রুম বুক করেছিলো তাহলে নিশ্চিত সেও অাত্মহত্যা করবে। সবদিকেই বিপদ। অাপাতত বাসা যাওয়া যাক। পরে পুলিশ অাসলে দেখা যাবে। এমনটা ভেবে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো সে।
একি! গাড়ি ব্রেকফেইল করেছে! বুকের হৃদস্পন্দন বহু গুন বেড়ে গেছে। গাড়ির সামনে যা পাচ্ছে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছে। ভাগ্যিস লোকগুলো গাড়ির এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে পালাচ্ছে আর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ সে দেখতে পেল সামনে নিলু! গাড়ি কনট্রোল করতে পারলো না। তার উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দিলো।
নাহ! নিলু তো মরেনি। ফের সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। আবার যেন সে তার উপর দিয়েই গাড়িটা চালিয়ে দিলো।
এবার মনে হচ্ছে তার জীবনের স্তর সাঙ হতে চলেছে। খুব শীঘ্রই সে একটা ব্রিজের নিচে গাড়িসহ পড়তে চলেছে। চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো অাশফাক।
রেশমা দৌড়ে এসে বললো,
'একি! কী হয়েছে তোমার? এভাবে চিৎকার করছো কেন?'
অাশফাক চোখ খুললো। নাহ! অাশেপাশে তো কোনো ব্রিজ নেই। এতক্ষণ সে যা দেখছিলো পুরোটাই স্বপ্ন। বুকের ভেতরটা এখনো দুরুদুরু করছে। রেশমা তাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে ভয়ে বললো,
'না না, আমি পানি খাবো না।'
কথাটা বলেই ঘড়ির দিকে তাকালো সে। সাতটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এখন তাকে উঠতে হবে। রেশমাকে বলে উঠলো,
'আজ কী বার রেশমা?'
'কেন? সোমবার আজ। ভুলে গেলে?'
'ওহ!'
রেশমা চলে গেল। অাশফাক বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো, 'আজই তো নিলুকে সে ডিনারে অফার করেছে। তাহলে এতক্ষণ যা দেখছিলো তা কী তারই পূর্বাভাষ!' আপাতত কোনোকিছু বুঝে আসে না অাশফাকের। শুধু এতটুকুই বুঝতে পারছে, সে যা ইতিপূর্বে করছিলো তা খুবই খারাপ ছিলো এবং আজকে যা করতে যাচ্ছিলো সেটাও তার অনুরূপ। আপাতত এসব থেকে তাকে বেঁচে থাকতে হবে।
(সমাপ্ত)
লিখাঃ- সাজ্জাদ অালম বিন সাইফুল ইসলাম