₪ শেষ আবদার [Post no :- 30]

কলিংবেল এর শব্দে দরজা খুলে যাকে দেখলাম তাকে এভাবে দেখার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।আমি চোখে ভুল দেখছি না তো?না সত্যিই আমার সামনে এখন ফলমূল আর মিষ্টি হাতে মেঘলা দাড়িয়ে আছে।হ্যা, এটা সেই মেঘলা যার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল ৪ বছর আগে।
"আমাকে কি ভেতরে যেতে বলবে না?"
মেঘলার কথায় আমার ভাবনাতে ছেদ পড়ল।ওকে সোফায় বসতে দিয়ে আমিও মুখোমুখি হয়ে বসলাম।মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করে আছে।কি জানি,এখনো হয়ত অপরাধবোধ কাজ করছে ওর মাঝে।
ঠিক ৪ বছর আগে এই মেয়েটাকে নিয়েই আমি হাজারো স্বপ্ন দেখতাম।অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়েছি এই মেঘলার সাথে।কেন জানি ওর সবকিছুতেই আমি ভালোবাসা খুজতাম-ওর রাগ,অভিমানটাও আমি ভালোবাসা হিসেবেই নিতাম।ওর কথাবার্তা,আচার ব্যবহারে মনে হত সে আমায় অনেক ভালোবাসতো।আমি বেকার ছিলাম বলে মাঝ পথে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল।আজ সেই মেঘলা আমার সামনে বসা কিন্তু এই মেঘলাকে নিয়ে আমার আর স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই।২ বছর আগে শুনেছিলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
"কেমন আছো, নীরব?"
মেঘলার কথায় একটু লজ্জিত হলাম-অনেক্ষণ হলো ওকে বসিয়ে রেখেছি একটা কথাও বলা হয়নি।
"এই তো আছি ভালোই।তুমি কেমন আছো?"
মেঘলা কিছু না বলে মলিন মুখে আমার দিকে তাকালো।ওর চাহনি দেখেই বলে দিতে পারছি ও ভালো নেই।
"এতোদিন পর তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারছি না।"
"তোমাকে ছেড়ে যাব সেটাও তো একসময় ভাবতে পারো নি।"
"হুম, আমাদের জীবনে ভাবনার বাহিরেও অনেক ঘটনাই ঘটে।ওসব কথা বাদ দাও না।বলো হঠাৎ আমার বাসায় কেন?"
"তোমার কাছে একটা আবদার নিয়ে আসছি।"
"এই সময়ে আমার কাছে আবদার?"
"হ্যা, ২ দিন আগে যাকে আসামী হিসেবে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে তিনি আমার স্বামী।"
"কি? খুনি শরীফ উদ্দিন তোমার স্বামী?"
মেঘলা মাথা নিচু করে আস্তে করে বলল,
"হুম, ২ বছর আগে ওনার সাথেই আমার বিয়ে হয়েছিল।"
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না।দুজনেই নীরবতা পালন করছি।মেঘলা নীরবতা ভেঙ্গে বলল,
"আমি যতদূর জানি ওনার ফাঁসি হবে।তুমি কি কিছু করতে পারবে?"
যখন দুজন রিলেশনশিপ-এ ছিলাম তখন মেঘলার সব আবদার রাখতাম,সবসময় ওকে খুশি রাখার চেষ্টা করতাম।আজ সে দায়িত্ব আর আমার নেই।নিজের মনকে শক্ত করে বললাম,
"দেখ মেঘলা, উনি অনেক বড় একটা অন্যায় করেছেন।এর শাস্তি ওনাকে পেতেই হবে।"
আমার কথা শুনে মেঘলা কিছু না বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।মুখটায় এতটুকুও রক্ত আছে বলে মনে হচ্ছে না।ভেতরে ভেতরে ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারছি।
"জানি আমার স্বামী অনেক বড় অন্যায় করেছেন কিন্তু তবুও তুমি যদি কিছু করতে।"
"মেঘলা, আমি হয়ত তোমার আবদারটা রাখতে পারব না,দু:খিত।"
মেঘলা শাড়ির আচলে চোখের পানি মুছে বলল,
"ভাবিকে দেখছি না যে-বাবার বাসায় নাকি?"
আমি কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে রইলাম।
"আজ তাহলে উঠি" বলেই মেঘলা চলে গেল।
মেঘলাকে কষ্ট দেয়ায় রাতে আর ঘুম হল না।ঘুমাতে চাইলেই মেঘলার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
আজ নিজের কাছে জানতে মন চাচ্ছে আমি কি সত্যিই মেঘলাকে ভালোবাসি?
মেঘলা ঝাল খেতে পছন্দ করত বলে আমি আজ ঝাল পছন্দ করি, মেঘলার ফুল পছন্দ ছিল বলে আমার পুরো বাসা ফুলের টবে ভর্তি,মেঘলার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারব না বলে আজও বিয়ে করি নি।
আমি তো সবসময় অনুভব করি মেঘলাকে অনেক অনেক ভালোবাসি তাহলে আজ কেন তাকে কষ্ট দিলাম?ইশ্, ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিলে নিজের কষ্ট অনুভব হয় কেন?কেন তার কষ্টে নিজের এত খারাপ লাগে?কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে এমনটাই তো স্বাভাবিক।
আজ মেঘলাকে যখন দেখলাম তখনই টের পেয়েছিলাম ও প্রেগন্যান্ট।তার মানে শরীফ সাহেবের ফাঁসি হলে মেঘলার অনাগত শিশু পিতৃহারা হবে।নাহ্ এত ভাবলে হবে না।আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অবশেষে, শরীফ সাহেবের খুনের রায় দেয়া হল কয়েক বছরের জেল।শরীফ সাহেবের খুনের চার্জশীটে লিখা ছিল তিনি নিজের জীবন বাঁচাতে খুন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।ফলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হয়ে কয়েক বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
চার্জশীটের নীচে লিখা ছিল, তদন্তকারী এসআই নীরব।



লিখাঃ- এফ এম কাওসার অালী

Popular posts from this blog

₪ সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম [post no:-22]

হ্যাপি কাপল

₪ ছেলেটি মেয়েটাকে অনেক ভালোবসতো [post no:-18]

বড় বোন থাকার ১৫টি মজার দিক

₪ বুদ্ধিমান মানুষ চেনার উপায় [post no:-16]

মাইকেল জ্যাকসন 150 বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন

অবহেলা

₪ ছোট বোনের থেকে টাকা ধার [post no:-27]

ডিপ্রেশন

এক চালাক ব্যক্তি [ post no: 11 ]