₪ অতিথি ও আমি [post no:-24]
চিপস খাচ্ছি আর টম এন্ড জেরি দেখছি আর একটু পর পর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছি ৷ আমার পাশে বসে আম্মু কি যেন করছে আর আমার কান্ডকীর্তি আড়চোখে দেখে বিরক্ত হচ্ছে ৷ মাত্র টম জেরিকে ধরবে তো আমিও হাতটা বাড়িয়ে দিলাম জেরিকে বাঁচাতে ৷ অমনি উঠলো কলিংবেলটা বেজে৷ বাজাচ্ছে তো বাজাচ্ছেই থামার নাম গন্ধ নেই !!মেজাজ আমার চরম পর্যায়ে৷ আমার জেরিকে বাঁচাতে পারলাম না দুষ্টু টমের হাত থেকে !!আম্মু বললো "অরু দেখ গিয়ে কে আসছে!" অনেকটা বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুললাম ,একটা সুদর্শন ছেলে ফর্মাল ড্রেসআপে দাড়িয়ে,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ৷ ভাগ্যিস একটুর জন্য ক্রাশ খাইনি ৷
দেখে বেশ ভদ্র আর হাই ফেমিলির মনে হচ্ছে ৷ চোখে আবার সানগ্লাস ও আছে সাথে একটা ট্রলি ব্যাগ ৷ ওমনি আমার মাথায় আসলো শয়তানি বুদ্ধি ! একদৌড়ে রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে দুইটাকার একটা নোট এনে লোকটার হাতে দিয়ে বললাম "আমার কাছে এই দুইটাকা ছাড়া আর একটাকাও নেই ৷ পরের বার আসলে আরো বেশি দিবো কেমন?" ছেলেটা চশমা খুলে হা হয়ে তাকিয়ে আছে ৷তারপরই বলে উঠলো "মাথার তার কি একটা ছিড়া নাকি সবগুলোই ?"বলেই আমাকে একহাতে সরিয়ে টাকাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেলো ৷ আমি থ মেরে দাড়িয়ে আছি ৷এতবড় অপমান!! এর একটা বিহিত করতেই হবে ভেবেই ছেলেটা কে জানার জন্য দ্রুত ভিতরে গেলাম ৷
দেখলাম আম্মুর সাথে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে ৷ আম্মু আমাকে দেখিয়ে বলতেছে "আমার মেয়ে অরু ৷ ওর কথাই তো বলেছিলাম তোমাকে ৷ ছেলেটা বলে উঠলো " জি আন্টি প্রথমেই বুঝতে পেরেছি,বলেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে ৷ আর আমি খুব রাগ নিয়েই তাকিয়ে আছি ৷ছেলেটা সেটা পাত্তাই দিলোনা !!
আম্মু ওনাকে বসতে বলে নাস্তা আনতে চলে গেলেন ৷আমাকে বলে গেলো কথা বলতে৷ কিন্তু আমি আবারো আমার টম এন্ড জেরি দেখছি আর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছি ৷ আমি আবার অল্পতেই হাসি বেশি ৷ লোকটা যে আমার কান্ড দেখে অবাক হচ্ছে তা আর বুঝতে বাকি নেই ৷
আম্মু এসেই দিলো এক ধমক," অরু কি হচ্ছেটা কি? দাঁতে দাঁত চেপে বললো কথাটা ৷ইশারায় ছেলেটাকে দেখিয়ে একটা রাগি লুক দিলো ৷ বুঝা যাচ্ছে হুলোবিড়ালটা আমার প্রতি মহা বিরক্ত ,খালি মুখে প্রকাশ করছেনা ৷ আমি ওর নামও রেখে দিয়েছি হুলো বিড়াল কারন ওর নাম এখনও আমার জানা হয়নি তাই ৷
একটুপর আম্মু বললো 'অরু শিহাবকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে আমি গিয়ে রান্না বসাই ৷ আমি খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না ,এতটুকু সময়ে ওনার রুমও হয়ে গেছে ? হুলো বিড়ালটা আমাদের বাসাতেই থাকবে ,কিন্তু কেন?!!
রুমটা দেখিয়ে দিয়ে সোজা আম্মুর কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলাম ," এই হুলো বিড়ালটা কে? আর আমাদের বাসাতেই বা কেন থাকবে?"
আম্মু বললো " কি হুলো বিড়াল হুলো বিড়াল করছিস! ওর নাম শিহাব ৷ও তোর বড় মামির ভাইয়ের ছেলে ৷ ওর একসপ্তাহের জন্য এখানে কি মিটিং আছে তাই এ কয়দিন এখানেই থাকবে ৷
যা এখন এখান থেকে বিরক্ত করিস না ৷
রুমে এসে ভাবতে লাগলাম কিভাবে আমার অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়? হুট করে একটা আইডিয়া আসলো মাথায় আর সেটাই কাজে লাগানোর জন্য নেমে পড়লাম মাঠে ৷
দুপুরে আম্মু যখন খাবার রেড়ি করে হুলো বিড়ালকে ডাকতে গেলো দিলাম ওর তরকারির বাটিতে মরিচ গুড়ো মিশিয়ে ৷ নে খা এবার ভালো করে ৷
আম্মু বেশ আদুরে গলায় হুলো বিড়ালকে বললো , নাও বাবা খাওয়া শুরু করো ৷ আমিও শুরু করলাম ৷
বিড়ালটা এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো ৷ আম্মু বললো কি হয়েছে শিহাব? খাও!!
আর আমি মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছি ৷বেচারার ফর্সা মুখটা লাল টমেটো হয়ে গেছে ৷ হুট করেই ও আঁ..আ..আ.. করে চিৎকার করে উঠলো সাথে আমিও আঁ.আ.আ.. বলে তাল মেলালাম ৷ আম্মু কিছুই বুঝতে পারছেনা খালি চেয়ে চেয়ে দেখছে সব ৷ হুলো বিড়াল চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে.. বলে উঠলো ," ঝাল লাগলো আমার তাই আমি চিৎকার করলাম ৷ কিন্তু আপনি চিৎকার করলেন কেন?
আমি কি বলবো ভেবে না পেয়ে উত্তর দিলাম,আপনার চিৎকারের আওয়াজটা খুব বেসুরে লাগছিলো ৷ ভাবলাম এর সাথে আরেকজন তাল মেলালে মন্দ হবেনা বরং সুরটা খুব ভালো হবে তাই বলেই হিহিহি করে হেসে উঠলাম ৷
আম্মু আর হুলোবিড়াল একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো ৷ রুমে এসে দরজা বন্ধ করে হোহোহো করে হাসতেই লাগলাম ..হাসি তো থামেইনা বরং খালি বাড়ে ৷
রাত ১২ টায় আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভূত সাজছি৷ কিন্তু নিজেকে দেখে নিজে না হেসে পারলাম না ৷কারন আমাকে ভূত নয় বরং জোকার লাগছে ৷ তাড়াতাড়ি আব্বুর পান্জাবী পড়ে আর চুলগুলো এলোমেলো করে হুলোবিড়ালের রুমের দিকে এগুচ্ছি ৷ রুমের দরজা খুলে দেখলাম বিচানায় কেউ নেই ৷ যখনিই ভিতরে ডুকেছি পেছন থেকে কে একজন ভেউউউ বলে দিলো বিকট আওয়াজ ৷ আমিও ভয় পেয়ে আ.আ.আ..বলে চিৎকার করছি দেখি কোথ্থেকে এসে হুলো বিড়ালটাও চিৎকার জুড়ে দিলো ৷ এত রাতে চিৎকারের আওয়াজ শুনে আব্বু আম্মু এসে উপস্থিত ৷ আব্বু আমাকে দেখা মাত্রই হা হা হা করে হাসতে শুরু করলো এর সাথে আম্মু আর হুলো বিড়াল ও যোগ দিলো ৷ আব্বু বললো ,কিরে এরকম জোকার সেজেছিস কেন?
"জোকার সাজিনি আব্বু ভূত সেজেছি ৷"
আব্বু আবারো হাসা শুরু করলো
হাসি থামিয়ে হুলো বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে বললো ," শিহাব তুমি শুয়ে পড়ো ৷ আর ওর এহেন পাগলামিতে কিছু মনে করোনা .৷ আম্মুও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো ,আসলে কি হয়েছে বলো তো ওর মাথায় একটু গন্ডগোল আছে৷ ভাবা যায় এগ্লা? নিজের বাবা মা ও পাগল বলে? এত অপমান কই রাখি আমি ৷
হুলো বিড়ালকে জিঙ্গেস করলাম ,আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করলাম ভালো কথা ৷কিন্তু আপনি চিৎকার করলেন কেন? ওই যে আপনার চিৎকার খুব বেসুরে লাগছিলো তাই আমিও তাল মিলিয়ে সুর আনার চেষ্টা করলাম এই আর কি !! আমাকে ভয় দেখাতে এসে নিজেই ভয় পায়, আসছে ভূত সাজতে ৷
আপনি ভয় পাননি?
না মিস তারছেড়া ! আপনি যখন ভূত সাজছিলেন তখন আপনার দরজা খোলাই ছিলো আর আমি বাথরুমে যাওয়ার পথেই সব দেখেছি ৷ তাই বুঝতে বাকি রইলো না আপনি ভূত সাজছেন কেন !! বলেই যেন যুদ্ধ জয় করেছে এমন একটা হাসি দিলো
কি লজ্জা কি লজ্জা !! আমি চলে এসে বিছানায় বসে আবারো ভাবতে লাগলাম হুলো বিড়ালকে আবার কিভাবে শায়েস্তা করা যায় ৷
এবারের কাজ বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে ভেবে একটু মুচকি হাসি দিলাম ৷ অতঃপর ভোর হওয়ার অপেক্ষায়...
_________
সংগ্রহীত