ভ্যালেন্টাইন ডে [post no:-12]
ভ্যালেন্টাইন ডে
কাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।বিশ্বভালোবাসা দিবস।
বিকাল বেলায় আমি আর আমার বন্ধু মেহেদি , কলেজ মাঠে বসে আছি।
--- দোস্ত আমাকে ৫০০০ টাকা দিস তো বিকালে।( মেহেদি)
--- টাকা চাইতে হবে কেনো? আমার বিকাশের পাসওয়ার্ড জানিস না? তুলে নিস। (আমি)
--- দোস্ত তুই আমার খুব বড় একটা উপকার করলি রে। (মেহেদি)
--- আরে এইটা কোনো বিষয় হলো। তো কি এমন জরুরি দরকার তোর ? কি করবি টাকা দিয়ে? (আমি)
--- কালকে ভেলেন্টাইনস ডে না? রিয়া কে নিয়ে ঘুরতে যাবো। অনেক কষ্ট রাজি করিয়েছি ওকে। ৪ বছর ধরে আমাদের প্রেম অথচ এতদিনে একটা কিস পর্যন্ত করতে দেয়নি। এইবার বুজবো মজা। কালকের দিনটা আমি ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। অনেক কষ্ট করে ম্যানেজ করেছি। যা করার কালকেই করতে হবে। এইটাই সুযোগ।(মেহেদি)
--- কি বলিস এইগুলা? আচ্ছা একটা সত্য কথা বলতো। তুই কি সত্যি রিয়া কে বিয়ে করবি? (আমি)
--- হাহাহা। কি যে বলিস না। কালকের পর থেকে ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্কই থাকবেনা। শুধু কালকের দিনটার জন্য অপেক্ষায় আছি। সেই জন্যই তো তোর কাছ থেকে এতগুলো টাকা নিলাম। (মেহেদি)
মেহেদির কথা শুনে আমি পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলাম। বলার মতো আমার কিছু রইলোনা। এই কি আমার সবচেয়ে ভালোবন্ধু? মেহেদি তো এতটা নিচ ছিলোনা। হঠাৎ করেই ও এতোবড় নোংরা একটা কাজের সিদ্ধান্ত কেমনে নিলো? ও তো আমাকে না জানিয়ে একটা ভাতের নলাও মুখে দেয়না। ভাবতেই খারাপ লাগছে। মেহেদি এমন একটা ছেলে যে কিনা কখনো সিগারেট খাওয়া লোকদের পাশ দিয়ে যেতোনা। পরে অবশ্য রিয়া মেয়েটা ওর এই ভদ্রতা এবং আচার ব্যবহার দেখে রিলেশনের প্রস্তাব দেয়। মেহেদি আমাকে বলেছিলো, জিবনে একটাই বিয়ে আর ও একজনকেই বিয়ে করবে সে হলো রিয়া। রিয়াকে ও নিস্বার্থভাবে ভালোবাসে। ওর কথা শুনে আমিও ওদের পক্ষেই ছিলাম।
কিন্তু আজ একি? আমি কি শুনছি এগুলো।
আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।
--- দেখ মেহেদি তুই আমার ভালো একটা বন্ধু। সবচাইতে ভালোবন্ধু। কিন্তু আমার আজকে এতটা খারাপ লাগছে যে, আমার বন্ধুর মুখে এইসব কি শুনছি আমি? আচ্ছা তুই আমাকে বল যে তোর কি ছোট বোন নেই? তুই আজকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস , এতে রিয়ার কতটা ক্ষতি হবে জানিস তুই? ছি মেহেদি ছি। একটা মেয়ে তোকে মন থেকে ভালোবাসে আর তুই ওর আত্মসম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলবি? কাল যদি তোর বোনের বড় একটা ক্ষতি হয়ে যায়? তোর বোন তো আমারও বোন। তাকে যদি এইভাবে কেউ ধোকা দেয়? না পারবে ও কথাগুলো আমাদের কে বলতে , না পারবে চুপ থাকতে। এই কাজটা কি ঠিক হচ্ছে তোর?(আমি)
কথাগুলো বলতে বলতে আমার চোখে পানি এসে পড়লো। আমি মেহেদির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখেও পানি। ও হয়তো ওর নিজের ভুলটা বুজতে পেরেছে।
--- আমার কথায় তুই কোনো আঘাত পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আসলে আমার কথাগুলো বলা ঠিক হয়েছে কিনা আমি জানিনা, তবে এইটা মনে রাখিস যে ওই কাজটা করার পরে রিয়া আর কোনোদিন কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করবেনা। না পারবে সমাজে মাথা উচু করে চলতে। আমাকে ক্ষমা করে দিস ভাই। (আমি)
কথাগুলো বলেই উঠে হাটতে লাগলাম।
--- এই দ্বারা। কোথায় যাচ্ছিস তুই? (মেহেদি উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। )
--- আমি অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম । আমাকে তুই ক্ষমা করে দে । আমি রিয়াকে ঠকাবোনা। এখনই ফোন করে না করে দিবো ওকে। কাল কোথাও যাবোনা। (মেহেদি)
--- সত্যি বলছিস তো? (আমি)
--- হুম। একদম সত্যি। (মেহেদি)
--- তুই রিয়াকে জোর করে রাজি করিয়েছিলিনা? (আমি)
--- হুম।(মেহেদি)
--- এখন তুই ওকে ফোন করে না করে দেখ, ও অনেক খুশি হবে।তোর প্রতি ওর ভালোবাসাটা অনেক বৃদ্ধি পাবে। (আমি)
--- হুম।এখনি ফোন করছি। (মেহেদি)
আমি চোখের পানি মুছলাম। খুব ভালো লাগছে এখন। একটা সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ি হলো। নয়তো কালকের পর থেকে দুইজন দুদিকে রাস্তা মাপতো। নষ্ট হয়ে যেতো দুটি মন।
উপদেশঃ ভাই আমরা পুরুষ জাতি। মেয়েরা আমাদের মা-বোন। আমরা কেনো তাদের জিবন নষ্ট করবো? আজকে একটা মেয়ের জিবন নষ্ট করলাম, কাল হয়তো সেইটা আমার বোনের সাথেও হতে পারে। আসুন আমরা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই। ভালোবাসা দিবস যেনো ঠিক ভালোবাসা দিয়েই পালিত হয়, কোনো নষ্টামি নোংরামি দিয়ে ভালোবাসা দিবস অপবিত্র যেনো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখি। আর মেয়েদের প্রতি বলবো, তোমরা ওইসকল ছেলেদের থেকে দুরে থাকো যারা ভদ্রবেশে শয়তান, তোমাকে নিয়ে খেলা করবে। নিজের আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলোনা। সমাজে মাথাউচু করে চলার মুলমন্ত্র হারিয়ে ফেলোনা।
বিদ্রঃ অনেকেই আমাকে বলবেন যে জ্ঞান দিতে এসেছে। আসলে জ্ঞান না ভাই। কথাগুলো একটু, একটু মন দিয়ে ভেবে দেখেন তো, আপনি কি ঠিক করছেন কিনা ভুল করছেন?
গার্লফ্রেন্ড আমারও আছে । চাইলেই আমিও পারবো বাপের টাকা উড়িয়ে মেয়েদের সম্মান নিয়ে খেলা করতে। কিন্তু আমার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, পরিবার, সমাজ আমাকে সেইটা শিক্ষা দেয়নি।
________________
(সংগ্রহীত)