Posts

Showing posts from August, 2020

বিষন্ন শ্রাবণ

এইমাত্র আমি পাঁচশো টাকার তিনটা নোট ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে কিচেনে গেলাম, এখন দেখি টাকাটা নেই । নাইম,টাকাটা কি তুমি নিয়েছো? ভাবির এই কথা শুনে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো । শেষপর্যন্ত চোর বানিয়ে দিলো আমাকে? ছিঃ!অবশ্য বেকারদেরকে মানুষের অনেক কথা শুনেই বেমালুম হজম করতে হয় । কথায় কথায় পিত্তি জ্বলে উঠলে চলে না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম;না ভাবি, আমি নেইনি  । হয়তো অন্য কোথাও রেখেছো, ভালো করে খুঁজে দেখো। ভাবি বললো, সব জায়গায় খুঁজেছি।কোথাও নেই। তুমি একটু মনে করে দেখো। এমনো তো হতে পারে, তুমি মনের ভুলে নিয়ে মানিব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছো, এখন মনে করতে পারছো না। এবার সত্যি সত্যি মাথায় আগুন চড়ে গেলো । আমি খুব হাল্কা স্বরে বললাম;ভাবি, তুমি যেভাবে আমাকে অপমান করছো, এরমধ্যে যে চূড়ান্ত রকমের একটা ছোটলোকি আছে, তুমি কি তা বুঝতে পারছো? এই কথায় ভাবি শ্রাব্য অশ্রাব্য ভাষায় যা বলা শুরু করলো, তাতে তাকে আর একটা ভদ্র বাড়ির ছেলেবৌ কিংবা কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বলা যায় না। একপর্যায়ে সে বলেই ফেললো, ঢামড়া একটা ছেলে বছরের পর বছর ভাইয়ের ঘাড়ে বসে বসে হাতির মতো গিলছে, চার পয়সা ইনকামের মুরোদ নেই, সে কী না আমাকে বলে ছোটলোক! আ

পরম পাওয়া

 আজ আমার বিয়ে, এইটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে।  পাড়াপ্রতিবেশি এবং যে দু'একজন শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় স্বজনের সাথে  আমার যোগাযোগ আছে তারা  কানাঘুষা করছে কেউ কেউ সামনে  এসে বলছে, ছি ছি এই বয়সে এসে  আবার বিয়ে  করতে লজ্জা করছে  না তোমার?  বিয়েই যদি করবে তাহলে  এতোদিন করোনি কেন? বুড়ো বয়সে এসে ভীমরতিতে পেয়েছে?   আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না ,চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে হলো। বর্তমানে আমার বয়স পঞ্চাশ বছর। আমি জানি এ বয়সে আরেকটা বিয়ে করা দৃষ্টি কটু কিন্তু আমি নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে বিয়ে করছি।একাকিত্ব ও অর্থ কষ্ট যে কতটা ভয়াবহ  তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। প্রথম যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ছিল মাত্র আঠারো বছর ইন্টার মিডেয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম।বাবা মা'র অমতে পালিয়ে জাহিদ কে বিয়ে করি, বাবা মা বিয়েটা মেনে নেয়নি।নেবেই বা কি করে? জাহিদ ছিল মাস্তান। আমি  জানতাম না, বিয়ের পরে জানতে পেরেছি তখন আর কিছুই করার ছিল না।বিয়ের পর জাহিদকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়ি যাই বাবা,মা,আর দুই ভাইয়া গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো আমাদের ঘরে উঠতে দেয়নি  দরজা থেকে বিদায় দেয়। বাবা কর্কশ কণ্ঠে বললেন, আজ থেকে তোমাকে ত্যাজ্যকন্যা করলাম।এখন থেকে জানবো

হাওয়া বদল

 "আরে মিরা না? হোয়াট এ সারপ্রাইজ! চিনতে পারছিস আমাকে?" পার্লারের সরু বিছানায় শুয়ে ফেসিয়ালের ম্যাসাজ নিচ্ছিলাম। মেয়েটা এতো যত্ন নিয়ে ম্যাসাজ দিচ্ছে যে আমি মনেহয় ঘুমিয়ে গেছিলাম আরামে। হঠাৎ নিজের নাম শুনে আমি চমকে তাকালাম। সামনে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিনি বলে মনে হলো না। মসৃণ ত্বক, দীঘল কালো চুল, স্লিম ফিগারে ভীষণ রকম রুচিসম্মত একটা সালোয়ার কামিজ পরনে যা আনকমন ডিজাইনে বানানো, পায়ে স্লিপার। এসব কিছু ছাপিয়ে তার উজ্জীবিত চোখ দুটো নজরে এলো, আত্মবিশ্বাস যেন ঠিকরে পরছে। আমি বোকা বোকা মুখ করে বললাম- "আপনি কে? আমি কি আপনাকে চিনি?" "মডেল স্কুলের মিরা না তুই? হুটহাট ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতি বলে সবাই তোকে মিরাকল মিরা বলতো। তোর বাবা মহিদুল ইসলাম।" "হুম। কিন্তু আপনি কে?" "আরে আমি কংকা, তোদের কংকাবতী। তোর সাথে স্কুলে পড়তাম, তারপর ক্লাস টেনে আচমকা স্কুল ছেড়েছিলাম। আরে পিদিমে দেখা হলো কয়েকবার, তোর চুল কেটে দিয়েছিলাম মনেপড়ে?" আমি সাথে সাথে চিনলাম এবং অবাক হলাম। যে কোনো কাজে কংকাকে সবার আগে আগে পাওয়া যেতো বলে স্কুলে টিচাররা ওকে কংকাবতী বলে ডাকতো। পারিবার

ভালোবাসায় অর্থ

 দরজা খুলতেই দেখলাম বাসার কাজের মেয়ে মরজিনা হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে নুহা (আমার স্ত্রী) দরজা খুলে দেয়। তাতে তার হাতে যতই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকুক না কেনো এই নিয়মের হেরফের হয়না কোনোদিন, তবে আজ কেনো হলো? মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ লাগছে। মরজিনাকে জিগ্যেস করলাম তোর আপামনি কোথায় রে ?  - আফামনি বসার ঘরে এক মহিলার লগে কথা কয়। ও আচ্ছা, বলে আমি ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি ড্রইংরুমে আমার প্রথম পক্ষ আশা বসে আছে, নুহার সাথে কি যেন গল্প করছে আর নুহা হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে একদম। আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বরাবরের মতোই নুহা আমাকে দেখে তার বিখ্যাত হাসি হাসলো। যে হাসি দেখলে আমার মনের অবস্থা যতই কঠিন থাকুক তা তরল অবস্থায় যেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আশা শুধু একবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি দিলো তারপর আবার গল্পের খেই ধরলো। আমি তাদের ডিস্টার্ব না করে বেডরুমে চলে গেলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে নুহার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অফিস থেকে ফিরে আমার ছোট্ট টুকটুকি বউটাকে একবার জড়িয়ে না ধরলে কেমন  যেন হাসফাস লাগতে থাকে। সেও তখন আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায়,বাচ্চাদের মতন স্বভাব একদম।  এখন আশ